সিপিএমের চক্রান্ত করে সাজানো, মন্তব্য মমতার
‘ধর্ষিতা’র পাশে দাঁড়িয়েছে পরিবার, গোটা গ্রামও
ট্রেন থেকে নামিয়ে ধর্ষণের পরে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে গোটা পরিবার। দাঁড়িয়েছেন আত্মীয়স্বজন, পাড়াপড়শি, এমনকী গোটা গ্রাম।
কিন্তু সোমবার সন্ধ্যায় মহাকরণ ছাড়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, ধর্ষণের ডাক্তারি ‘প্রমাণ’ পাওয়া যায়নি। ট্রেনে ডাকাতির অভিযোগে এ দিন ভোরেই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়নি।
গত শনিবার সন্ধ্যায় বর্ধমানের কেতুগ্রামে পাচুন্দি ও অম্বল গ্রামের মাঝে কাটোয়া-আমোদপুর ন্যারোগেজ লাইনের ট্রেন থেকে নামিয়ে কয়েক জন দুষ্কৃতী ওই মহিলাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “ধর্ষণের ডাক্তারি প্রমাণ কিছু পাওয়া যায়নি। সব সিপিএমের চক্রান্ত করে সাজানো।”
বিধানসভার বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্রের পাল্টা প্রতিক্রিয়া, “এ রকম একটা ঘটনা। আর উনি বলে দিলেন, ডাক্তারি পরীক্ষায় কিছু পাওয়া যায়নি! তাতে উনি খুব খুশি? পুলিশমন্ত্রী হিসেবে আইনশৃঙ্খলা তো ওঁরই দেখার কথা। এক কথায় সব উড়িয়ে দিয়ে এখন আমাদের উপরে দোষ চাপাচ্ছেন!” মুখ্যমন্ত্রীর কথায় প্রতিক্রিয়া হয়েছে মহিলার বাড়িতেও। পরিবারের এক জন বলেন, “একটা মেয়ে দু’দিন ধরে লড়াই করছে। তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-ই ওকে নিয়ে থানা-পুলিশ-হাসপাতাল করে বেড়িয়েছেন। গোটা গ্রাম ওর পাশে। এখন মুখ্যমন্ত্রী যা বলছেন, তা আমাদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে একদমই মেলে না। এই সব বলে উনি বরং দোষীদেরই সুবিধা করে দিচ্ছেন।”
আইনের দরজায়
কেতুগ্রামে ট্রেনে ডাকাতির অভিযোগে ধৃত দু’জনকে কাটোয়া আদালতে পাঠাল রেলপুলিশ।
শনিবার গভীর রাতেই মহিলার ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়েছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, মহিলার শরীরে নানা জায়গায় চোট-আঘাত থাকলেও যৌনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলে মেডিক্যাল রিপোর্টে জানানো হয়েছে। তবে মহিলা প্রথম দিনেই পুলিশকে জানিয়েছিলেন, দুষ্কৃতীরা রিভলভার ও ভোজালি উঁচিয়ে তাঁকে ও তাঁর মেয়েকে খুনের হুমকি দিতে থাকায় তিনি ‘আত্মসমর্পণ’ করতে বাধ্য হন। চিকিৎসকদের একাংশের মতে, ভয়ে কেউ ‘আত্মসমর্পণ’ করলে ধর্ষণ সত্ত্বেও তাঁর যৌনাঙ্গে আঘাতের চিহ্ন না-ও থাকতে পারে।
মহিলার পরিবার অবশ্য এই সব চাপানউতোরে যেতেই রাজি নয়। বরং কী ভাবে তাঁকে বাঁচিয়ে রাখা যায়, কী ভাবে ‘সুবিচার’ পাওয়া যায়, সেটা নিয়েই তাঁরা বেশি চিন্তিত। ঘটনার পরেই তাঁর বৃদ্ধা শাশুড়ির মনে পড়ে গিয়েছিল, কাটোয়ার সুয়াগাছিতে তাঁর বাপের বাড়ির গ্রামে পঞ্চাশ বছর আগে মৃত এক বাল্যবান্ধবীর কথা। ‘নির্যাতন’ সহ্য করেও লোকলজ্জার ভয়ে যে মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতে পারেনি। ক’দিন পরে সেচখালে ভেসে ওঠে তার দেহ।
এ দিন কাটোয়া আদালতে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধার মেজো ছেলে বলেন, “ওই রাতেই আমাদের ডেকে মা বলেন, সেজো বউমার উপরে খুব অত্যাচার হয়েছে। বাড়িতে যাতে আর কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে, তা আমাদের সবাইকে দেখতে হবে।” বৃদ্ধার কথায়, “সেজো ছেলে মারা গিয়েছে। তার পর থেকে দুই মেয়ে নিয়ে লড়ে চলেছে বৌমা। সে কোনও অন্যায় করেনি! তাকে আগলে রাখার দায়িত্ব আমাদেরই।” বৃদ্ধার মেজো বৌমা বলেন, “ওর সঙ্গে যা হয়েছে, সেটা অন্য কারও সঙ্গেও হতে পারত। এটা বলেই আমরা ওকে সাহস জোগাচ্ছি।”
শুধু বাড়ির লোকজনই নন, গোটা গ্রাম মহিলার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। ঘটনার পরে মহিলাকে রেলপুলিশের কাছে নিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে সব সময় পাশে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা বিকাশ মজুমদার। তাঁর কথায়, “গোটা গ্রাম ওঁর পাশে আছে।” কেতুগ্রাম হাইস্কুলের পার্শ্বশিক্ষক অমলেন্দু মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সত্তরোর্ধ্ব সনাতন বৈরাগ্যেরা বলেন, “খুবই ভদ্র, শান্ত প্রকৃতির মহিলা উনি। আমরা সবাই ওঁর সঙ্গে আছি।”
আদালতে এলেন ওই ডাকাতির সময়ে যাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ, সেই মহিলাও।
রবিবার জেরার পরে মহিলাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলেন কাটোয়া থানার এক মহিলা পুলিশকর্মী। তাঁর কথায়, “এই সব ঘটনায় অনেক সময়ে পরিবার ও পড়শিদের কাছে গঞ্জনা সহ্য করতে হয় নির্যাতিতাকে। বিধবাদের ক্ষেত্রে তা আরও বাড়ে। কিন্তু গ্রামে গিয়ে দেখেছি, সবাই ওঁকে লড়াই করার সাহস জোগাচ্ছে।” মহিলা নিজেও বলেন, “ওঁরা আছেন বলেই আমি ভরসা পাচ্ছি। পুলিশও খুব সাহায্য করেছে।”
রেলপুলিশ জানায়, কাটোয়ার কেশিয়া মাঠপাড়া থেকে নুর মহম্মদ ও গাঙ্গুলিডাঙা থেকে সেন্টু শেখ নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দিন কাটোয়া আদালতে এসিজেএম অঞ্জনকুমার সরকার তাদের সাত দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। রেলপুলিশ সুপার (হাওড়া) মিলন দাস বলেন, “ডাকাতির ঘটনায় ধৃত দু’জন ধর্ষণেও জড়িত কি না, জেরার পরে জানা যাবে।” আরও কয়েক জনকে আটক করে জেরা চলছে।
রাজ্য পুলিশের হাতে তদন্তভার তুলে দিতে এ দিনই আদালতে আবেদন করেছেন কাটোয়া জিআরপি-র ওসি তুষারকান্তি সর্দার। আজ, মঙ্গলবার তার শুনানি হওয়ার কথা। রেলপুলিশের ডিজি দিলীপ মিত্র বলেন, “আদালত আজই ফরেন্সিক পরীক্ষা করানোর নির্দেশ দিয়েছে। কাল-পরশু তা করানো হবে।”

ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.