কিরণময়ের ফ্রন্টে থাকা নিয়ে সিদ্ধান্ত মুলায়মের
বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টের ভরাডুবির দায় মূলত সিপিএমের বলেই মনে করছে কিরণময় নন্দের নেতৃত্বাধীন সমাজবাদী পার্টির রাজ্য শাখা। খোদ কিরণময়বাবুকেও রায়গঞ্জে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে’ হারিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর দলের। এই অবস্থায় তাদের পক্ষে আর বামফ্রন্টে থাকা সম্ভব নয় বলেই মনে করছে দলের রাজ্য শাখার বড় অংশ। তবে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার ছেড়ে দেওয়া হল দলের জাতীয় কর্মসমিতি ও জাতীয় পরিষদের উপরে। অর্থাৎ শীর্ষ নেতা মুলায়ম সিংহ যাদব যা সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই চূড়ান্ত।
বিধানসভা নির্বাচনে সমাজবাদী পার্টি ৫টি আসনে প্রার্থী দিয়ে একটিতে জিতেছে। বামফ্রন্টের বিপর্যয়ের পরে শনিবার সমাজবাদী পার্টির রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকে দলের বড় অংশই পরাজয়ের জন্য মূলত সিপিএমকে দায়ী করে। সভায় কেউ কেউ এখনই বামফ্রন্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দেন। কেউ আবার দ্রুত কোনও সিদ্ধান্ত নিতে নিষেধ করেন। তবে নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর থেকে শুরু করে সপ্তম বামফ্রন্টের প্রায় সব সিদ্ধান্তই সিপিএম যে একক ভাবে নিয়েছিল, তা নিয়ে দলে কোনও দ্বিমত নেই। বৈঠকের পরে এ দিন কিরণময়বাবু বলেন, “নির্বাচনের আগেই এ রাজ্যে স্যোসালিস্ট পার্টি সমাজবাদী পার্টিতে মিশে গিয়েছে। সুতরাং, আমরা রাজ্যগত ভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। সমাজবাদী পার্টি একটি জাতীয় দল। তাদের রাজ্য শাখা বামফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে আসবে কিনা, সে ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আগরায় জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে।”
সোমবার আগরায় সমাজবাদী পার্টির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক, মঙ্গল ও বুধবার দলের জাতীয় পরিষদের বৈঠক। সেখানে যোগ দিতে এ রাজ্য থেকে ৫৫ জন প্রতিনিধি যাচ্ছেন। কিরণময়বাবু বলেন, “আমরা বামফ্রন্টে থাকব কি না, তা নিয়ে দলে আলোচনা হবে। দলের প্রধান মুলায়ম সিংহ তাঁর মতামত জানাবেন। তার পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” আগামী বছর উত্তরপ্রদেশে নির্বাচন। লখনউয়ের গদির দিকে তাকিয়ে মুলায়ম যদি কংগ্রেসের সঙ্গে ‘সখ্য’ করেন, তা হলে সমাজবাদী পার্টি বামফ্রন্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারে। ১৯৭৭ থেকে একটানা জয়ী কিরণময়বাবু এ বার রায়গঞ্জে কংগ্রেসের কাছে ৫ হাজার ৪০০ ভোটে হেরেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা কোথাও ৮ হাজার, কোথাও ১১ হাজারে হেরেছি। সিপিএমের ‘ওজনদার’ প্রার্থীরা সব ৩০-৩৫ হাজারে হেরেছেন! অর্থাৎ ওঁদের থেকে আমাদের ফল ভাল। কিন্তু সিপিএমের সঙ্গে থাকায় মানুষ আমাদেরও শিক্ষা দিতে ভোটে হারিয়েছেন।”
এরই পাশাপাশি, স্রেফ পরিবর্তন করার জন্যই রাজ্যের মানুষ ‘পরিবর্তনে’র ডাকে সাড়া দিয়েছেন, এমন তত্ত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে। এই বিপুল বিপর্যয়ের পরে বামফ্রন্টের বর্তমান নেতৃত্বকে সামনে রেখে ফের মানুষের আস্থা ফিরে পাওয়া সম্ভব কি না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। কলকাতায় ফ ব-র কেন্দ্রীয় কমিটির দু’দিনের বৈঠকের প্রথম দিনে পশ্চিমবঙ্গ-সহ ভিন্ রাজ্যের প্রতিনিধিরা বলেন, বামফ্রন্ট সরকারের কাজ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই মানুষের মনে ক্ষোভ জমা হচ্ছিল। ক্ষমতায় এসে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার পুনর্গঠন এবং ভূমি সংস্কারের মতো ভাল কাজ করার পরে বামফ্রন্ট সরকার জনকল্যাণমুখী উন্নয়নের সেই ধারা বজায় রাখতে পারেনি। পরিষেবা চেয়ে নাকাল হয়ে ফিরেছেন মানুষ। ফব-র সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাস জবাবি বক্তৃতায় সরকারি কাজে ব্যর্থতা কবুল করে নেন। বিভিন্ন দফতর, এমনকী তাঁদের দলের হাতে-থাকা বিভাগগুলিও যে মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণে ব্যর্থ, তা মেনে নেন তিনি।
আর এক শরিক সিপিআইয়ের রাজ্য কর্মসমিতির বৈঠকেও নির্বাচনী বিপর্যয়ের প্রাথমিক ময়নাতদন্ত হয়েছে। সেখানেও সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের প্রসঙ্গ এসেছে। তবে সিপিআই নেতৃত্ব মনে করছেন, শুধু আসনসংখ্যা দিয়ে কারও ‘প্রকৃত’ জনসমর্থন মাপা যায় না।
বামফ্রন্ট ২০০৬ সালে ৫০% ভোট পেয়ে ২৩৫টি আসন পেয়েছিল, এ বার তৃণমূল-কংগ্রেস জোট ৪৯% ভোট পেয়ে ২২৬টি আসন পেয়েছে। অথচ বামফ্রন্ট এ বার ৪১% ভোট পেয়েও মাত্র ৬২টি আসনে জিতেছে। এখনও ৪১% মানুষের সমর্থন সঙ্গে রয়েছে বলে ‘মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েনি’ বলে মনে করছেন সিপিআই নেতৃত্ব।
Previous Story Rajya Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.