দোষারোপ নয়, কর্মীদের রক্ষাই লক্ষ্য সিপিএমের
বিপর্যয়ের কারণ নিয়ে দোষারোপ বা পাল্টা-দোষারোপ নয়। বরং ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলীয় কর্মীদের তৃণমূলের ‘হামলা-আক্রমণের’ হাত থেকে রক্ষা করাই এখন সিপিএম রাজ্য কমিটির কাছে প্রধান বিষয়।
দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের উপস্থিতিতে শনিবার সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠক শুরু হয়েছে। তাতে জেলা সম্পাদক বা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা প্রত্যেকেই এক বাক্যে বলেছেন মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েছে। দলের ‘ঘুরে দাঁড়ানোর’ স্লোগান কার্যকর হয়নি। একই সঙ্গে তাঁরা বলেছেন, যে ভাবে হামলা-আক্রমণ হচ্ছে, তাতে নিচুতলায় সংগঠন কী ভাবে ধরে রাখা যাবে, তা নিয়ে চিন্তা দেখা দিয়েছে।
১৯৭২ সালে পরাজয়ের পরেও সিপিএমের একই অবস্থা হয়েছিল। তবে সে বার শহরাঞ্চলেও সিপিএমের পার্টি অফিসের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এ বার গ্রামাঞ্চলে বহু জায়গায় ঝাঁপ বন্ধ হলেও কলকাতা বা পার্শ্ববর্তী এলাকায় তা হয়নি। শাসক গোষ্ঠীর কর্মী-সমর্থকদের হামলা-আক্রমণ থেকে বাঁচতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আবেদন জানান দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। তাঁর কথায়, “এটা দোষারোপ, পাল্টা দোষারোপের সময় নয়। বিপদের দিনে বিভেদ ভুলে সবাইকে এক হতে হবে।”
আলিমুদ্দিনে রাজ্য কমিটির বৈঠকে। সুমন বল্লভ
রাজ্য কমিটির বৈঠকে বিমানবাবু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-সহ দলের প্রথম সারির সব নেতাই উপস্থিত ছিলেন। জেলা কমিটিগুলি থেকে পাওয়া প্রাথমিক ফলাফল নিয়ে রাতে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কারাট। আগামী দিনে দলের নেতা-কর্মীদের প্রধান কর্তব্য কী হবে, তা নিয়ে আজ, রবিবার কারাট রাজ্য কমিটিতে বলতে পারেন। দলীয় সূত্রে খবর, কারাটও মনে করেন, কী ভাবে দল রক্ষা করা যাবে, তা নিয়ে আলোচনা ফলাফল বিশ্লেষণ করার মতোই গুরুত্বপূর্ণ।
এ দিন রাজ্য কমিটির তরফে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন জেলায় তৃণমূল এবং কংগ্রেসের তরফে সিপিএম অফিস এবং বামফ্রন্টের কর্মী-সমর্থকদের উপরে হিংসাত্মক আক্রমণ চালানো হচ্ছে। বেশ কয়েকটি জেলায় হামলা চালিয়ে কয়েক’শ পার্টি অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যে সব মিলিয়ে কয়েক হাজার বামপন্থী কর্মী, সমর্থক এবং গ্রামবাসী ঘরছাড়া’। রাজ্যে অর্ধেকের বেশি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ১৩টি জেলা পরিষদ এখনও বামেদের দখলে। আগামী দিনে সেগুলি আদৌ স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে রাজ্য কমিটির বৈঠকেই সংশয় প্রকাশ করেন বিভিন্ন জেলার সম্পাদকরা। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পঞ্চায়েত ও অন্যান্য নির্বাচিত সংস্থার কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করা হচ্ছে’। এই পরিস্থিতিতে গণতন্ত্র ও অধিকার রক্ষায় কী ভাবে মানুষকে সমবেত করা যায়, তা নিয়েও রাজ্য কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়।
তবে, জেলাগুলি এখনও নির্বাচনী বিপর্যয় নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করে উঠতে পারেনি। বৈঠকে জেলা সম্পাদকরা সে কথা জানান। প্রাথমিক আলোচনার ভিত্তিতে যে রিপোর্ট তৈরি হবে, সপ্তাহান্তে হায়দরাবাদে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে তা নিয়েই আলোচনা হবে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘শাখা, আঞ্চলিক, জোনাল ও জেলাস্তরে বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণের পরেই পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা সম্ভব হবে’।
পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, হুগলি জেলায় যে ভাবে অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে, তা ‘সাজানো’ বলে বৈঠকে জানান দীপক সরকার, অমিয় পাত্র, অনিল বসুরা। তবে, তাঁরা একথাও স্বীকার করেন, লোকসভা নির্বাচনে জেতা এলাকাগুলি এ ভাবে হাতছাড়া হবে তা তাঁরা বুঝতে পারেননি। শহর ও গ্রামের গরিব মানুষও বামেদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন বলে প্রায় প্রত্যেকেই উল্লেখ করেন। শ্রেণিগত কারণে যাঁদের বামেদের ‘বন্ধু’ হওয়ার কথা, তাঁরা কেন বিরুদ্ধে গেলেন, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা দরকার বলে বৈঠকে বিমানবাবু জানিয়েছেন।
First Page Rajya Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.