দখল-পর্ব ৩
বন্ধ সিপিএম অফিসের সামনে তৃণমূলের ঝান্ডা
শ্চর্য উলটপুরাণ দেখছে কেশপুর। ভোটে জিতেও সিপিএমের শতাধিক পার্টি অফিস বন্ধ হয়েছে যে কেশপুরে, সেখানেই ব্লক-সদরে ঘর ভাড়া নিয়ে নতুন কার্যালয় খুলেছে তৃণমূল। ২০০০ সালের পরে কেশপুরে এই প্রথম অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে সিপিএম-বিরোধীরা। বন্ধ সিপিএম পার্টি-অফিসের সামনে তৃণমূলের ঝান্ডা ওড়াটাও যেন বড় বেশি প্রতীকী এখানে।
২০০০ সালে কয়েক মাসের জন্য কেশপুরের ‘নিয়ন্ত্রণ’ পেয়েছিল তৃণমূল। কেশপুরকে ‘সিপিএমের শেষপুর’ করারও ডাক দেওয়া হয়েছিল। ২০০১-এর বিধানসভা নির্বাচনে অবশ্য জামানত খুইয়েছিল তৃণমূলই। ১ লক্ষ ৮ হাজার ভোটের ‘আশ্চর্য’ মার্জিনে জিতেছিলেন সিপিএম প্রার্থী। একদলীয় আধিপত্যের সেই শুরু কেশপুরে। সর্বশেষ ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনেও গ্রাম পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনেও প্রার্থী দিতে পারেনি তৃণমূল বা কংগ্রেস। ২০০৯-এর লোকসভা ভোটেও কেশপুর থেকে ১ লক্ষ ১২ হাজার ৭৫২ ভোটের বিপুল ‘লিড’ নিয়েছিলেন সিপিএম প্রার্থী। এহেন কেশপুরে পরিবর্তনের প্রবল হাওয়াতেও এই বিধানসভা ভোটে জয়ের আশা দেখেননি তৃণমূল নেতৃত্ব। আসনটি তাঁরা ছেড়ে দেন কংগ্রেসকে। ভোট-পূর্ব কেশপুরে অবশ্য কংগ্রেসের সাংগঠনিক উপস্থিতি টের পাওয়াও ছিল রীতিমতো কষ্টসাধ্য।

বন্ধ ছুতারগেড়িয়া শাখা অফিসের সামনে তৃণমূলের পতাকা।

১৩ মে বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার পরেই কিন্তু রাতারাতি আমূল বদলে গিয়েছে ছবিটা। কেশপুরে ৩৩ হাজারেরও বেশি ভোটে সিপিএম প্রার্থী এ বারও জিতেছেন বটে। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো লালদুর্গেও প্রবল ধাক্কা খেয়েছে দল। সেই সঙ্গে হাত ছাড়া হয়েছে রাজ্যপাট। পালাবদলের এই স্রোতে ফল ঘোষণার পরের দু’সপ্তাহেই ভেসে গিয়েছে কেশপুরও। ছুতারগেড়িয়া, মহিষদা, দোগাছিয়া, নেড়াদেউল, আনন্দপুরে একের পর এক সিপিএম কার্যালয়ে তালা পড়েছে। কয়েকটি কার্যালয় থেকে অস্ত্র-উদ্ধারের ঘটনাও ঘটেছে। বেশ কিছু সিপিএম নেতা-কর্মী ‘ঘরছাড়া’ও হয়েছেন। যে জামশেদ আলি ভবন (সিপিএম জোনাল কার্যালয়) থেকে এই সে দিনও পুরো কেশপুর ‘নিয়ন্ত্রণ’ হত, সেখানে এখন ‘ঘরছাড়া’ সিপিএম কর্মীর ভিড়। সবার চোখে-মুখে উদ্বেগ। বিশ্বনাথপুরের ‘ঘরছাড়া’ সুদর্শন সামন্তের মন্তব্য, “ওরা (তৃণমূল) মানুষের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। ৫ বছর থাকুক। কাজ করুক। পারলে ১০ বছরই থাকুক। কিন্তু সন্ত্রাস চাই না। গ্রামের সাধারণ মানুষ হিসেবে গ্রামেই থাকতে চাই।”
কেশপুর নিয়েও যে সিপিএম নেতৃত্বকে কোনও দিন ‘সন্ত্রাস’-এর অভিযোগ তুলতে হবে সেটাও আর এক আশ্চর্য! সিপিএমের তোলা সেই অভিযোগ কিন্তু স্থানীয় মানুষের মধ্যেও তেমন আমল পাচ্ছে না। ছুতারগেড়িয়ায় দেখা শেখ হাবিদুল আলির সঙ্গে। কলাগ্রাম হাইস্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রটি বলছে, “এক সময়ে যারা সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করত, তারা নিজেরাই পালিয়েছে। নয়তো চুপ করে গিয়েছে। আগে গণতন্ত্র ছিল না। এখন কোনও ভয় নেই।” দোগাছিয়ার মাঠে গরু চরাতে চরাতে শেখ সফিরুদ্দিনও বললেন, “আমরা কিন্তু ভালই আছি। অশান্তির দিনগুলো পেরিয়ে এসেছি।” ২০০০ সালে তৃণমূলের প্রথম উত্থানের সময়েও যে মহিষদা গ্রামে সিপিএমের আধিপত্যে এতটুকু আঁচড় পড়েনি, সেখানে দাঁড়িয়েও কি না অরুণ রায়ের মতো ছাপোষা মানুষ বলছেন, “আগে এখানে কেউ অন্য দলের পতাকাই তুলতে পারত না। মিটিং-মিছিল তো দূরের কথা। এখন সেই পরিস্থিতি নেই।
‘পরিবর্তন’। কেশপুরের দোগাছিয়া গ্রামে।
কেশপুরের এই উলটপুরাণের রহস্যটা কী? গড়গজপোতার সত্তরোর্ধ্ব ইদ্রিশ আলি একটা ‘ব্যাখ্যা’ শুনিয়েছেন। ইদ্রিশ বলেন, “এক সময়ে সিপিএম করতাম। দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় দল থেকে তাড়িয়ে দিল। কিছু নেতার জন্যই আজ সিপিএমের এই হাল। বেশি দাপট দেখাতে গিয়েই দলটা মানুষের বিষনজরে চলে গিয়েছে।”
তা না-হলে সিপিএমের কৃষকসভার রাজ্য সম্পাদক তরুণ রায়ের গ্রাম মহিষদায় কোন সাহসে আর জুলফিকার কাজি বলছেন, “কেশপুর বদলে গিয়েছে। অনেক দিন পরে মানুষ ফের মন খুলে কথা বলছে।” শুধুই কথাই তো নয়। তৃণমূলের প্রতীক আঁকা ছাতা মাথায় দোগাছিয়ার মাঠে এক কৃষকের চাষ করার ছবিটাও বলে দিচ্ছে, পরিবর্তন এসেছে কেশপুরেও।

(ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল)
(শেষ)

Previous Story Medinipur Next Story


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.