|
|
|
|
মমতার বিরোধিতা ভুল ছিল, মেনে নিল বিজেপি |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ²লখনউ |
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করা ভুল হয়েছিল বলে এখন স্বীকার করছে বিজেপি। ‘ভুল’ শুধরে নিতে আপাতত মমতার সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংঘাতের অবস্থান থেকে সরে আসারই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ভোটের আগে দলীয় নীতি নির্ধারণের সময় লালকৃষ্ণ আডবাণী সরাসরি মমতার বিরোধিতা না করারই পক্ষপাতী ছিলেন। বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের মতও তা-ই ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অরুণ জেটলি এবং রাজ্যের নেতা-কর্মীদের একাংশ তার বিরোধিতা করেন। কিন্তু ফল প্রকাশের পরে সেই সিদ্ধান্ত ভুল ছিল বলে মেনে নিচ্ছে দল।
লখনউয়ে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে নিতিন গডকড়ী, অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজের উপস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েছে। সেই ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে রাহুল সিংহ রাজ্য সভাপতি পদ থেকে ইস্তফাও দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গডকড়ী তাঁকে ইস্তফা না দিয়ে আগামী লোকসভা নির্বাচনের জন্যই প্রস্তুত হতে পরামর্শ দিয়েছেন। দলীয় নেতৃত্ব এখন বলছেন, আপাতত মমতাকে কোনও ভাবে বিরক্ত করা সঠিক কৌশল হবে না। প্রত্যক্ষ সংঘাতের পরিবর্তে উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করাই বাঞ্ছনীয়।
ভোটের আগে লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো নেতারা মনে করেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে বাম শাসনের বিরুদ্ধে যে হাওয়া উঠেছে, সেখানে মমতাই লড়াইয়ের প্রতীক। রাহুল সিংহ দাবি করছেন, তিনিও এ ব্যাপারে সহমত ছিলেন। কিন্তু রাজ্য নেতা-কর্মীদের একাংশ উল্টো মত পোষণ করেছিলেন। তৃণমূল বিজেপিকে ‘নিপীড়ন’ করছে, এই অভিযোগ তুলে সিপিএমের পাশাপাশি মমতারও বিরোধিতার দাবি উঠে এসেছিল। নির্বাচনের সময় রাজ্যের দায়িত্বে থাকা অরুণ জেটলিও ‘পরিবর্তন’-এর স্লোগানকে ‘মার্ক্স থেকে মাও’-এর যাত্রাপথ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। কিন্তু বিজেপি নেতৃত্ব এখন মানছেন, তাঁদের সেই কৌশলে ভুল ছিল। রাহুল সিংহ বলেন, “আমাদের আন্দোলনে কোনও খামতি ছিল না। কিন্তু দলের কৌশলই বিজেপির কাছে বুমেরাং হয়ে গেল।” পশ্চিমবঙ্গে একটিও আসন না পাওয়ার দায় ঘাড়ে নিয়ে রাহুল তাই দলের শীর্ষ নেতাদের সামনেই ইস্তফা দিতে চান। বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের সভাপতি হিসাবে আমি ব্যর্থ হয়েছি। সভাপতি আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।” কিন্তু গডকড়ী বলেন, “নির্বাচনে হার-জিত থাকেই। মনোবল ভাঙলে চলবে না। ১৫ জুন আমি পশ্চিমবঙ্গে যাব। তখন সব বিষয়ে আলোচনা হবে।’’
সভাপতির কুর্সিতে বসার পরেই পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলিতে নজর ছিল গডকড়ীর। তিনি মনে করেন, যে সব জায়গায় বিজেপির ভিত দুর্বল, সেখান থেকেই ভোটব্যাঙ্ক বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্যগুলিই হয়ে উঠবে তুরুপের তাস। গডকড়ী মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গে মমতার উত্থানে বিজেপিরই সুবিধা। বামেরা যদি রাজ্যে ক্ষমতায় থাকত, তা হলে বিজেপির জনভিত্তি বাড়ানোর সুযোগ ছিল না। মমতা সবে ক্ষমতায় এসেছেন। এখন তাঁকে সরাসরি আক্রমণ করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই উপযুক্ত সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বিজেপি মনে করে, মমতা ইতিমধ্যেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে শুরু করেছেন। যেমন, ভোটের আগে রাজ্যে যৌথ বাহিনীর বিপক্ষে সওয়াল করেও এখন মমতা তার মেয়াদ বাড়াতে চাইছেন। মমতার প্রতি মোহভঙ্গ হওয়া শুরু হলেই বিজেপি তাঁর বিরোধিতায় নামবে।
তা হলে কি বিজেপি এখন হাত গুটিয়ে বসে থাকবে? গডকড়ীর বক্তব্য, আপাতত নিজেদের সংগঠনকে আরও মজবুত করুক রাজ্য বিজেপি। আর মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয়গুলি নিয়ে আন্দোলন করুক। তাতে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে। প্রথমত, এটি সাধারণ মানুষের নিত্য দিনের সঙ্গে জড়িত বিষয়। দুই, মমতার সহযোগী কংগ্রেস কেন্দ্রে ক্ষমতায়। তাই মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে সরাসরি মমতার বিরুদ্ধে বলা হল না, আবার মমতার জবাবদিহি করার দায়ও থাকল। ইউপিএ-র দুর্নীতি নিয়ে আন্দোলন করলেও মমতার উপর চাপ আসবে। তাতে আখেরে লাভ বিজেপিরই। |
|
|
|
|
|