বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে আটকে ছিল সমাধান
বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ উঠেছিল দু’তরফ থেকেই। অনশনে অটল থেকে রামদেব এমনও হুমকি দিয়েছিলেন, ক্ষমতা থাকলে সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে দেখাক। রাত দেড়টা নাগাদ রামলীলা ময়দান ঘিরে ফেলে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়, রামদেব যে যোগশিবিরের অনুমতি নিয়েছিলেন, তা বাতিল করা হল। কারণ, তিনি অনুমতি নিয়েছিলেন যোগশিবিরের। কিন্তু সেই মঞ্চকে ব্যবহার করেছেন সরকার-বিরোধী অনশন মঞ্চ হিসেবে।
এর আগে কিন্তু দু’পক্ষের মধ্যে বোঝাপড়া হয়েছিল। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি। যার ফলে সরকারের বিরুদ্ধে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র অভিযোগ এনে অনশনে অটল থাকেন রামদেব। অন্য দিকে, কেন্দ্রের বক্তব্য ছিল, অনশন তুলবেন বলেও শেষে তা করেননি রামদেব। সেটা বিশ্বাসভঙ্গেরই নামান্তর।
দিনভর কিন্তু এই সংঘাতের অবস্থান ছিল না। সারা দিন ধরে আলোচনার পর রামদেবের ‘সঙ্গত ও যুক্তিগ্রাহ্য’ সব দাবিই মেনে নিয়েছিল সরকার। রামদেবও তাঁর অবস্থান লঘু করে জানিয়েছিলেন, তিনি অনশন সত্যাগ্রহ আজই প্রত্যাহার করে নেবেন। কিন্তু গোপন সমঝোতাপত্রটি সরকার সাংবাদিক বৈঠকে ‘ফাঁস’ করে দেওয়াতেই ফের বেঁকে বসেন রামদেব।
‘সত্যাগ্রহ’ আন্দোলনের প্রথম দিনে রামদেব। শনিবার নয়াদিল্লির রামলীলা ময়দানে। পিটিআই
সরকারের তরফে আজ ওই সাংবাদিক বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী কপিল সিব্বল ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী সুবোধকান্ত সহায়। তাঁরা জানান, রামদেবের সব সঙ্গত দাবি গত কালই মেনে নিয়েছিল সরকার। সম্মতিও হয়ে গিয়েছিল। তাঁর সম্মতি লিখিত ভাবে দিয়েছিলেন রামদেবও। ওই সম্মতিপত্র দেখিয়ে কপিল বলেন, রামদেব জানিয়েছিলেন অনশন সত্যাগ্রহ নয়, আজ মধ্যাহ্ন পর্যন্ত তিনি শুধু তপ করবেন। দুপুরের পর ঘোষণা করে দেবেন, সরকার তাঁর দাবি মেনে নেওয়ায় তিনি সত্যাগ্রহে ইতি টানছেন। কিন্তু দুপুর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও রামদেব অনশন প্রত্যাহার করেননি। বারবার সরকারের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সন্ধ্যায় তাঁকে এ-ও জানানো হয় যে, দুর্নীতি দমন ও কালো টাকা উদ্ধারে সরকার কী কী পদক্ষেপ করবে, তা তাঁকে লিখিত ভাবে দেওয়া হবে। তার পরে রামদেব অনশন প্রত্যাহারের ঘোষণাও করে দিয়েছিলেন। কিন্তু রামলীলা ময়দানের বিজয়োল্লাস বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয়নি।
রামদেব জানিয়েছিলেন, সরকার তাঁর দাবি মৌখিক ভাবে মেনে নিয়েছে। কিন্তু কপিল তাঁর চিঠি ‘ফাঁস’ করে দেওয়ার পরই নতুন করে বেঁকে বসেন যোগগুরু। বলেন, “সরকারের তরফে আরও সুনির্দিষ্ট আশ্বাস চাই। সরকার গত কাল আমাকে চাপ দিয়ে সম্মতিপত্র সই করাতে চেয়েছিল। সে জন্য টানা দু’ঘণ্টা ধরে আমার উপর চাপ তৈরি করে। কিন্তু সম্মতিপত্রে আমি সই করিনি। করেছে আমার এক সতীর্থ।” তার পরেই রামদেব তাঁর অনুগামীদের উদ্দেশে বলেন, “এর পর সরকার আমাকে গ্রেফতার করতে পারে। কিন্তু আমি ভয় পাই না। আপনারা হিংসার পথে যাবেন না। ভয়ও পাবেন না। আমাদের লড়াই চলবে।” অন্য দিকে কপিল সিব্বলও জানিয়ে দেন, “ইউপিএ সরকার সকলের মত শুনে, সকলকে গুরুত্ব দিয়েই সর্বদা চলেছে। কিন্তু প্রয়োজনে সরকার কঠোর হতেও দ্বিধা করবে না।” প্রচ্ছন্ন বার্তা এই যে, এর পরেও অনশন চালিয়ে গেলে সরকার গ্রেফতারের মতো কড়া পদক্ষেপ করতে পারে। যদিও তার পরেও রাতে রামদেবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল সরকার। কিন্তু তাতে কোনও সুরাহা হয়নি।
আজ সকালে রামলীলা ময়দানে বহু কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সামিয়ানার নীচে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী অনশন শুরু করেন রামদেব। বাইরে চল্লিশ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকলেও সামিয়ানার নীচে পরিবেশ শীতল রাখার বন্দোবস্তও ছিল পুরোদস্তুর। কিন্তু বাইরে রাজনৈতিক থার্মোমিটারের পারদ ছিল উর্ধ্বমুখী। বস্তুত সেই পরিবর্তন শুরু হয়ে গিয়েছিল গত কাল থেকেই। রামদেবকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার জন্য কংগ্রেস নেতৃত্ব অসন্তোষ প্রকাশ করছিলেন। দলের মন বুঝে ক্রমশ অনড় অবস্থান নিতে শুরু করে দিয়েছিল সরকারও। যোগগুরুকে গত কালই স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যা কিছু সঙ্গত বা আইনত যুক্তিগ্রাহ্য, তার অতিরিক্ত এক পা-ও এগোবে না সরকার। সেই মর্মেই সম্মতি হয়েছিল। তার পর বাবা আজকের জন্য অনশনে বসার ব্যাপারে যেমন অনড় ছিলেন, তেমনই কংগ্রেসও ঠিক করেছিল যে, বাবা অনশনে বসে সরকার-বিরোধিতায় হাওয়া দিলে কংগ্রেসও চাঁছাছোলা ভাষায় তাঁর সমালোচনায় অবতীর্ণ হবে।
গভীর রাতে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধের সময় তখনও মঞ্চে রামদেব ও তাঁর উত্তেজিত সমর্থকরা। পিটিআই

সাধ্বী ঋতাম্ভরা-সহ বিশ্বহিন্দু পরিষদ এবং আরএসএস নেতা-সমর্থকদের অনশনে ডেকে কংগ্রেসকে আক্রমণের সুযোগও করে দিয়েছিলেন রামদেব। তা দেখে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, “ওটা অনশনই নয়। গোটা নাটকটাই আরএসএস স্পনসর করছে। রামদেবকেও জানাতে হবে, আয়োজনের এত অর্থ তিনি পেলেন কোথা থেকে?” শুধু তাই নয়, রামদেবকেও তাঁর সম্পত্তি প্রকাশ করতে বলে কংগ্রেস। রামদেবের সমালোচনায় অবতীর্ণ হন কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহও। আবার বিজেপি তাঁর পাশে দাঁড়ায়। বিজেপি মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন বলেন, “দিগ্বিজয় জবাব দিন, উনি কার এজেন্ট?” আক্রমণে খেপে গিয়ে রামদেবও বলেন, “কংগ্রেস কুৎসা করছে। আমার নামে কানাকড়ি সম্পত্তিও নেই। ওরা আমাকে হেনস্থা করতে চাইলে মানুষ ক্ষমা করবে না।”
বেলা গড়াতে থাকে। উদ্বেগ বাড়ে সরকারের। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন কপিল ও সুবোধকান্ত। স্থির হয়, সরকারও একটা সাংবাদিক বৈঠক করবে। তার আগে কপিল রামদেবকে বলেন, এর পরও তিনি অনশন প্রত্যাহার না করলে তাঁর সম্মতিপত্র সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করে দেওয়া হবে। সে কথা শুনে রামদেব জানান, তিনি এখনই অনশন প্রত্যাহার ঘোষণা করছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও কপিল সম্মতিপত্রটি ফাঁস করে দেন। সেখানে দেখা যায়, রামদেব নিজের অবস্থান অনেকটাই লঘু করেছেন।
দোষীদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি থেকে সরে এসেছেন। উদ্ধার হওয়া কালো টাকাকে জাতীয় সম্পদ ঘোষণার উপরেই জোর দিয়েছেন। এ দিন কলকাতায় লোকপাল বিলের খসড়া তৈরির যৌথ কমিটির সদস্য প্রশান্ত ভূষণও বলেন, “রামদেবের অধিকাংশ দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করি। কিন্তু শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের আমি বিরোধী।”
দিনভর এই সব নাটকের শেষ অঙ্কের যবনিকাই ওঠে রাত দেড়টায়।

Previous Story Desh Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.