|
|
|
|
কাউকে রেয়াত নয়, বার্তা সিবিআইকে |
দুর্নীতি-দমনে পুরোদমে যুদ্ধ শুরু মনমোহনের |
জয়ন্ত ঘোষাল ² নয়াদিল্লি |
রামলীলা ময়দানে রামদেবের দুর্নীতি-বিরোধী অনশন চলাকালীনই দুর্নীতি-দমনে কঠোর পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। আজ সিবিআই প্রধান এ পি সিংহকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন, টু-জি স্পেকট্রাম থেকে শুরু করে যে সব দুর্নীতির বিষয়ে তাঁরা তদন্ত চালাচ্ছেন, তা যেন কোনও ভাবেই লঘু না করা হয়। যে ভাবে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ রাজার বিরুদ্ধে সিবিআই চার্জশিট দায়ের করেছে এবং আদালতের নির্দেশে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, ঠিক সে ভাবেই অন্য অভিযুক্তদের ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন মনমোহন।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে বলা হচ্ছে, টু-জি-সহ বেশ কিছু মামলায় প্রয়োজনে দেশের একাধিক শিল্পপতি এবং রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে পারেন গোয়েন্দারা। কেন্দ্রীয় কর্মীবর্গ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ভি নারায়ণস্বামীর কথায়, “সিবিআইকে বলা হয়েছে, কোনও ভাবেই তদন্তের ক্ষেত্রে যেন আপস না করা হয়। প্রধানমন্ত্রী নিজে সিবিআই-এর দায়িত্বে এবং তিনিই সিবিআইকে এ ব্যাপারে এগিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন।”
পিএসি চেয়ারম্যান মুরলী মনোহর জোশী সদ্যই অভিযোগ করেছেন, স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির নাটের গুরু দয়ানিধি মারান। প্রধানমন্ত্রীর আজকের নির্দেশের পরে স্পষ্ট, সিবিআই যদি দয়ানিধির ব্যাপারে অভিযোগের প্রমাণ পায়, তা হলে তাঁর পরিণতিও রাজার মতো হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যেই ডিএমকে-প্রধান করুণানিধির কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন যে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে দয়ানিধিকেও ছাড়া হবে না। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এর ফলে যদি অদূর ভবিষ্যতে সরকার থেকে ডিএমকে সমর্থন তুলে নেয়? প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের বক্তব্য, ডিএমকে সমর্থন তুলে নিলেও দুর্নীতির প্রশ্নে কোনও আপসে রাজি নন প্রধানমন্ত্রী। প্রয়োজনে এডিএমকে, মুলায়ম বা অজিত সিংহের সমর্থন নেবে সরকার। সরকার পক্ষের বক্তব্য, দুর্নীতির প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী যে আপসে রাজি নন, তার প্রমাণ, কমনওয়েলথ গেমস কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত সুরেশ কলমডী ও তাঁর দুই সঙ্গী এখনও রয়েছেন তিহার জেলে।
দুর্নীতি-দমনের ব্যাপারে তিনি যে শেষ দেখে ছাড়তে চান, তা ইতিমধ্যেই কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এবং সনিয়াও এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত। আপাতত কংগ্রেসের কৌশল হল, দুর্নীতি দমনে সরকার নিজেই যদি অতি সক্রিয় হয়ে ওঠে, তা হলে বিরোধী বিজেপির পালের হাওয়া কেড়ে নেওয়া যাবে। অন্য দিকে রামদেব এবং আন্না হাজারের মতো নাগরিক সমাজের নেতারা যে ভাবে দুর্নীতির বিষয়টি তুলে সামগ্রিক ভাবে গোটা রাজনৈতিক ব্যবস্থাকেই চ্যালেঞ্জ করে বসেছেন, তারও মোকাবিলা করা সহজ হবে। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচন। আগামী তিন বছরে দুর্নীতির বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন কংগ্রেসের অনেক নেতা। একই সঙ্গে তাঁরা এ-ও বলছেন, বিজেপি নেতৃত্ব যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারকে কোণঠাসা করতে পারবেন, তেমন পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সরকার সত্যিই কড়া পদক্ষেপ করলে বিরোধীদের পালের হাওয়া কেড়ে নেওয়া যাবে।
কিন্তু প্রশ্ন অন্যত্র। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর কথা সনিয়া গাঁধী আজ মেনে নিলেও সেটা কি তিনি বা তাঁর দল ধরে রাখতে পারবেন? বিশেষত, প্রধানমন্ত্রী চাইলেও দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রশ্ন সামনে এলে তখন কি করবে কংগ্রেস? দল চালানোর বাস্তবতা মাথায় রেখে সনিয়াই বা তখন কি করবেন? দুর্নীতি-বিরোধী অভিযানে রাঘব বোয়ালরা জালে উঠতে শুরু করলে ব্যক্তিগত ভাবে মনমোহনের বিশেষ ক্ষতি নেই। কিন্তু ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের আগে এত বড় ঝুঁকি নেওয়া দল হিসেবে কংগ্রেসের পক্ষে কতটা সম্ভব হবে, সেই প্রশ্নটা তাই রয়েই যাচ্ছে। ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে দুর্নীতি-দমন নিয়ে প্রতিশ্রুতি নতুন নয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে উল্টোটাই ঘটেছে বারবার। ক্ষমতায় আসার আগে বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহ বলেছিলেন, বফর্স দুর্নীতির শেষ দেখে ছাড়বেন। কিন্তু তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বে বফর্স তদন্তের সে ভাবে অগ্রগতিই হয়নি। অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্বেও বফর্স তো বটেই, আরও একাধিক দুর্নীতির তদন্তও বিশেষ এগোয়নি। এ বারে কী হবে, তা বলবে সময়ই।
কংগ্রেসের অভ্যন্তরে একটা প্রচার রয়েছে, মনমোহন লোকসভা নির্বাচনের আগে ইস্তফা দিয়ে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে পারেন। রাহুল গাঁধীর প্রধানমন্ত্রী হওয়া নিয়েও জল্পনা কম নেই। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্র অবশ্য বলছে, এ সব জল্পনা সর্বৈব অসত্য। প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে দুর্নীতি-বিরোধী অভিযানকে সামনে রেখে নির্বাচন লড়তে চাইছেন তা থেকে স্পষ্ট, তিনি মোটেই প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়ার মানসিক অবস্থায় নেই। উল্টে নিজের সৎ ভাবমূর্তিকে মূলধন করেই দুর্নীতি-বিরোধী লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে উঠতে চাইছেন মনমোহন। |
|
|
|
|
|