ঐতিহ্য |
• বন্দরের বন্দিদশা |
শার্লক হোমস, অলিভার টুইস্ট, দ্য ওয়ার্ল্ড ইস নট এনাফ এবং আরও বেশ কিছু নামী-অনামী সিনেমাতে এই জায়গাকে বারবার ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ একাধিক— কব্লড্ বা পাথর বসানো পায়ে চলা পথ, চার্চ এবং একশোরও বেশি বাড়ি-ঘর যা কিনা জর্জীয় ও ভিক্টোরিয়ান সময়ের। ইতিহাসমণ্ডিত এই স্থান শুধুমাত্র বিনোদন জগতের উপকরণ হয়ে থাকবে, সেটাও গ্রহণযোগ্য নয় ব্রিটেনবাসীর। কিন্তু ইচ্ছেডানা ওড়ালেই তো আর ইচ্ছেপূরণ হয় না! তাই দ্বিতীয়বারেও ইংল্যান্ডের কেন্ট কাউন্টির ঐতিহাসিক চাথাম বন্দর স্থান পেল না ইউনেস্কোর ঐতিহ্য তালিকায়। ৪১৪ বছরের ইতিহাসে পাঁচশোরও বেশি যুদ্ধজাহাজ তৈরি হয়েছে দেশের নৌ-সেনার জন্য। ৪০০ একর জমির উপর এক সময় দশ হাজারেরও বেশি কর্মী কাজ করতেন এই বন্দরে। মেডওয়ে নদীর পাড়ের এই বন্দরের উত্থান ঘটে ইউরোপীয় ‘রিফরমেশন’-এর সময়। ১৯৮৪ সালে এই বন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়। জর্জীয় সময়ে তৈরি বন্দরের ৮৪ একর এলাকা বর্তমানে পর্যটকদের ভ্রমণকেন্দ্র।
চাথাম বন্দর ২০১২ সালে মনোনীত হলেও, সে বছর স্কটল্যান্ডের ফর্থ রেল ব্রিজ স্থান করে নেয় ঐতিহ্য তালিকায়। আর ২০১৬-র তালিকায় নাম উঠে এসেছে কাম্ব্রিয়ার লেক জেলার জাতীয় উদ্যানের। যদিও ২০১৭ সালের জুন মাসের অপেক্ষায় কেন্টবাসী। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তখনই।
|
• রাজবাড়ির বিপদ |
পশ্চিম আফ্রিকার ডাহোমি রাজ্যের রাজধানী শহর অ্যাবোমির প্রায় ৯৯ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে সেখানকার বারোটি রাজপ্রাসাদ। ১৬২৫ সালে ডাহোমি রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করে স্থানীয় ফন-রা। উনিশ শতকের শেষ অবধি যুদ্ধবন্দিদের ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করা হত এই রাজ্য থেকে। রাজত্বের গোড়াপত্তন থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত মোট বারো জন শাসকের সময় কালে এই সাম্রাজ্যের বাড়বাড়ন্ত ঘটে। দ্বিতল প্রাসাদের স্থানীয় নাম ‘আকেউহিউ’। ইউনেস্কোর ঐতিহ্য তালিকায় নথিভুক্ত হওয়ার পর ১৯৮৪ সালের মার্চ মাসে এক ঘূর্ণাবর্তে প্রভূত ক্ষতি হয় এই রাজপ্রাসাদের। ফলে, কেবল ‘ঐতিহ্য’ থেকে তার স্থান হয় ‘হেরিটেজ ইন ডেঞ্জার’ তালিকায়। ২০০৭ সালের মার্চে পুনঃস্থাপন ও পুনর্নির্মাণের পর অবশ্য তা আবারও ফিরে পায় হারানো খেতাব। তবে বিপদ যেন গিয়েও যায় না আফ্রিকার এই আদিম রাজ্যের। ২০০৯ সালের শুরুতেই ভষ্মীভূত হয় প্রাসাদের ছ’টি বাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাজ পরিবারের কুলদেবতা আগাসু-র মন্দির, রাজা আগোংলো ও গেজো-সহ তাঁদের দু’জনের ৪১ জন রানির সমাধিও।
|
• ঐতিহ্য-ক্যালেন্ডার |
বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ঐতিহ্যপূর্ণ স্থাপত্যকর্মগুলির একটি ক্যালেন্ডার প্রকাশিত হল সম্প্রতি। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টার ও প্যানাসনিক কর্পোরেশনের উদ্যোগে তৈরি ২০১৪-র এই ক্যালেন্ডারের মাধ্যমে ফের এক বার বিশ্ব ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন সাধারণ মানুষ। ১৯৯৫ থেকেই এ ধরনের ক্যালেন্ডার প্রকাশিত হচ্ছে। ২০১০ থেকে এটি অনলাইনে সহজলভ্য। ক্যালেন্ডার ছাড়াও অনলাইনে, ট্যাবলেট পিসি ‘অ্যাপ’-এর মাধ্যমে এই সমস্ত জায়গাগুলির ‘স্বাদ’ পেতে পারেন ভ্রমণার্থীরা। ক্যালেন্ডারে রয়েছে অসাধারণ সব স্থিরচিত্র-সহ ওই সমস্ত স্থানের সংক্ষিপ্ত বিবরণী। এগুলি ইংরেজি, ফরাসি ও স্পেনীয় ভাষায় হওয়ায় অধিকাংশ মানুষেরই সুবিধা হবে। ট্যাবলেট পিসি-তে ওই তিন ভাষা ছাড়াও চিনা ও জাপানি ভাষায় তথ্য পড়া যাবে। ওয়েব সংস্করণে ছবি ও বিবরণী ছাড়াও তথ্যবহুল ভিডিও গেম এবং অন্যান্য তথ্য দেওয়া থাকবে। অনলাইন ছাড়াও ওই ক্যালেন্ডার কেনা যাবে ফ্রান্সের বইয়ের দোকান থেকে। বিক্রির সমস্ত অর্থ জমা পড়বে ইউনেস্কোর ভাণ্ডারে। |
প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার |
• পাখির নতুন আদিপুরুষ |
চড়াই থেকে কোকিল, কাক থেকে অতিকায় বাজ— আমাদের চারপাশে কত রকম পাখিই না দেখা যায়। আর টিভি-কম্পিউটারের দৌলতে ইদানীং দেশ-বিদেশের কত বিচিত্র পাখির সঙ্গেই না আমাদের পরিচয়। কিন্তু এই সমস্ত পাখিদের আদিপুরুষ কারা। এত দিন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, পাখিদের আদিপুরুষ আর্কিওপটেরিক্স নামের এক ডাইনোসর। থিরোপড গোষ্ঠীর এই ডাইনোসরদের আবির্ভাব ১২-১৩ কোটি বছর আগে ক্রেটেশিয়াস যুগের প্রথম দিকে। কিন্তু সম্প্রতি আবিষ্কৃত একটি জীবাশ্ম পিছিয়ে দিয়েছে এই সময়কাল। আদিপুরুষ হিসাবে আর্কিওপটেরিক্স নিয়েও তুলেছে প্রশ্ন।
সম্প্রতি উত্তর-পূর্ব চিনে খোঁজ মিলেছে একটি পালকযুক্ত ডাইনোসরের জীবাশ্মের। প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার লম্বা এই জীবাশ্মটি জুরাসিক যুগের মধ্য অথবা শেষ পর্যায়ের বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। তবে পালক থাকলেও ডানা খুবই ছোট হওয়ায় উড়তে পারত না এই ডাইনোসর। বড়জোর ডানা দু’টি তারা নাড়াতে পারত। হাঁটতে ও দৌড়নোর সুবিধায় এদের গোড়ালি ছিল মজবুত। পা আর লেজে পালকের পরিমাণও বেশ কম। বিজ্ঞানীদের ধারণা, আর্কিওপটেরিক্সেরও আগের এই ডাইনোসরের আবিষ্কার পাখির বিবর্তন নিয়ে আবার নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে।
|
• নতুন ডাইনোসরের খোঁজ |
টিরানোসরাস রেক্স। সৃষ্টির আদিকাল থেকে এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় ও হিংস্র শিকারি প্রাণী। প্রায় সাত কোটি বছর আগে পৃথিবীতে রাজত্ব করা টিরানোসরাস রেক-এর থেকেও বড় এক ডাইনোসরের হদিশ সম্প্রতি পাওয়া গেল উত্তর আমেরিকায়। প্রায় ৩০ ফুট লম্বা চার টনের এই ডইনোসরের জীবাশ্মটির প্রথম খোঁজ পাওয়া যায় ২০০৮ সালে। উত্তর আমেরিকার উটা প্রদেশের সিডার পর্বতে একটি পাথরের খাঁজে জীবাশ্মটির খোঁজ পান বিজ্ঞানীরা। ছড়িয়ে থাকা হাড় একত্রিত করতেই প্রায় দু’বছর লেগে যায় বিজ্ঞানীদের। নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী লিন্ডসে জ্যানো জানিয়েছেন, উত্তর আমেরিকায় গত ৬৩ বছরে এত বড় জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়নি।
আবিষ্কৃত ডাইনোসরটির নাম দেওয়া হয়েছে সিয়াটস মিকিরোরাম। উটার স্থানীয় উপকথায় সিয়াটস নামে এক ভয়ঙ্কর হিংস্র দানব থেকেই এর নামকরণ। মিকিরোরাম নামটি প্রখ্যাত ভূবিজ্ঞানী জন ক্ল্যাডওয়েল মিকারের স্মরণে রাখা। প্রায় ১০ কোটি বছর আগে যখন এরা পৃথিবীর বুকে ঘুরে বেড়াত, তখন টিরানোসরাস রেক্স-ও ছিল এদের কাছে নিতান্ত ‘শিশু’। টি-রেক্সের বিশালত্ব প্রাপ্তি এরও প্রায় তিন কোটি বছর পর।
|
• বাঘের আদিপুরুষের জীবাশ্ম মিলল তিব্বতে |
বেশির ভাগ বিজ্ঞানীদের মতে সুন্দরবনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বা ব্রাজিলের পুমা, স্নো লেপার্ড থেকে অধুনালুপ্ত তাসমানিয়ান টাইগার— এদের সবার আদি পূর্বপুরুষদের উত্পত্তিস্থল ছিল আফ্রিকা। সেখান থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে তারা। কিন্তু সম্প্রতি আবিষ্কৃত একটি জীবাশ্ম বিজ্ঞানীদের সেই দাবিকেই প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
সম্প্রতি তিব্বত-হিমালয়ে বিড়াল শ্রেণির প্যান্থেরিন প্রজাতির একেবারেই অজানা এক জীবাশ্মের খোঁজ পেয়েছেন চিন ও মার্কিন প্রত্নতাত্ত্বিকদের একটি দল। নতুন এই উপ-প্রজাতির নাম দেওয়া হয়েছে প্যান্থেরা ব্লাইদি। জীবাশ্মটি আণুমানিক ৪০-৬০ লক্ষ বছরের প্রাচীন। তিব্বতের এই আবিষ্কার থেকে বিজ্ঞানীদের অভিমত আফ্রিকা নয়, মধ্য এশিয়াই এই ধরনের ক্যাট প্রজাতির উত্পত্তিস্থল।
আবিষ্কৃত জীবাশ্মটির চওড়া কপাল ও ছোটো মুখের সঙ্গে এখনকার স্নো লেপার্ডের বেশ মিল। তবে এদের আকার ছিল ক্লাউডেড লেপার্ডের মতো।
বিড়াল প্রজাতির এত দিন পর্যন্ত আবিষ্কৃত জীবাশ্মের সঙ্গে ডিএনএ তথ্যের অমিল ছিল। ডিএনএ তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৬৫ লক্ষ বছর আগে বিড়াল, কাউডার ইত্যাদি ছোট বিড়াল প্রজাতির থেকে আলাদা হয়ে যায় প্যান্থেরা জাতীয় বড় বিড়াল প্রজাতি। কিন্তু এত দিন পর্যন্ত আবিষ্কৃত জীবাশ্মগুলির মধ্যে প্রাচীনতমটি ছিল ৩৬ লক্ষ বছরের পুরনো। নতুন এই আবিষ্কার প্যান্থেরা প্রজাতির সৃষ্টি রহস্য নিয়ে আরও জানতে সাহায্য করবে বলে মত বিজ্ঞানীদের।
|
• সঙ্গমরত পোকা |
প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি বছর ধরে সঙ্গমে মগ্ন ওরা। মোঙ্গোলিয়ায় একটি হ্রদের নীচের পলি থেকে সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে সঙ্গমরত দু’টি পোকার জীবাশ্ম। ফ্রগহপার শ্রেণির এই পতঙ্গের জীবাশ্মটি এখনও পর্যন্ত আবিষ্কৃত সঙ্গমরত প্রাণীদের জীবাশ্মগুলির মধ্যে প্রাচীনতম বলে দাবি প্রত্নতাত্ত্বিকদের। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সঙ্গমের মধ্যাবস্থায় আগ্নেয়গিরির বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যু হয় তাদের। এর পর হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে হ্রদের জলে পড়ে যায় পোকা দু’টি। ওই অবস্থায় প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি বছর হ্রদের পলিতেই আটকে থাকে ওই যুগল। চিনের ক্যাপিটাল নর্মাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক মোঙ্গোলিয়ার ডোওহুগৌ অঞ্চলে হ্রদে খোঁজ পান এই জীবাশ্মটির। পোকা দু’টি অ্যানথোসসাইটিনা পারপেচুয়া গোত্রের বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পুরুষ পোকাটি ডান দিকে ও স্ত্রী পোকাটি বাঁ দিকে ছিল। সঙ্গমের এই বিশেষ ভঙ্গির সঙ্গে এখনকার ফ্রগহপার শ্রেণির পোকার সঙ্গম-ভঙ্গির যথেষ্ট মিল। “অর্থাত্ প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি বছর ধরে এই শ্রেণির পোকার সঙ্গম-ভঙ্গির কোনও পরিবর্তন হয়নি।” জানিয়েছেন বিজ্ঞানী ডং রেন। জুরাসিক যুগের এই জীবাশ্ম এই পর্যায়ের পোকাদের সম্বন্ধে জানতে আরও সাহায্য করবে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের।
|
পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ |
• আবহাওয়া পরিবর্তন করতে পারে ছত্রাক |
মাশরুম বা ছত্রাক বলতেই ‘ব্যাঙের ছাতা’র মতো একটা চেহারা চোখের সামনে ভাসে। বাসি পচা খাবার, শাকসব্জি, পচনশীল জৈব বস্তু বা ভিজে নরম কাঠের গায়ে হামেশাই বর্ণহীন বা কখনও রঙিন এই ‘ছাতা’ আমরা দেখতে পাই। দেহে কোনও সালোকসংশ্লেষকারী রঞ্জক না থাকায় চোষক অঙ্গ দিয়ে আশ্রয়দাতা উদ্ভিদ বা জৈব যৌগ থেকে পুষ্টিরস নিয়েই তাদের বেঁচে থাকতে হয়। কিন্তু মজার ব্যাপার, বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, নিজের সুবিধা মতো আবহাওয়া পরিবর্তন করতে পারে মাশরুমেরা। ছত্রাকেরা মূলত রেণু ছড়িয়ে বংশবিস্তার করে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, অয়েস্টার মাশরুম (প্লিওরোটাস) ও শিটেক মাশরুম (লেন্টিনুলা ইডোডস) রেণু বিস্তারের জন্য প্রয়োজনে আশেপাশে আবহাওয়া আমূল পরিবর্তন ঘটায়। ‘হাই স্পিড ফিল্মিং টেকনিক’ ও ‘ম্যাথেমেটিকাল মডেলিং’-এ ধরা পড়েছে, মাশরুম তার দেহ থেকে জলীয় বাষ্প বের করে পারিপার্শ্বিক বাতাসে ছড়িয়ে দিয়ে শীতল পরিস্থিতি তৈরি করে। ফলে বাতাস আর্দ্র হয় এবং উষ্ণ বায়ুর সঙ্গে মিশে পরিচলন স্রোত তৈরি করে। পরিচলনের ফলে তৈরি মৃদু বায়ুপ্রবাহ রেণুগুলিকে অনেক দূর পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যায়। ‘আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি’র ফ্লুইড ডায়নামিক্স বিভাগের বার্ষিক সম্মেলনে এই তথ্যটি প্রথম সামনে আসে। হার্টফোর্ডের ট্রিনিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমিলি ড্রিসায়ার জানিয়েছেন, ছত্রাকদের মধ্যে প্রথম এই বিশেষ ক্ষমতা দেখা গিয়েছে। এমনকী, যে কোনও প্রতিকূল অবস্থায়, বাতাসের অভাব থাকলেও, আশ্চর্য বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ছত্রাকেরা অল্প সময়ের জন্য হলেও বায়ুপ্রবাহ তৈরি করে নেয়। এই প্রবাহের ফলে রেণুগুলি আনুভূমিক ভাবে বা উল্লম্ব দিকে অন্তত ১০ সেন্টিমিটার দূরত্ব পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী অ্যানে প্রিঞ্জল তাঁর গবেষণাপত্রে লিখেছেন, অনেক ক্ষেত্রে মাশরুমরা প্রচণ্ড গতিতে রেণুগুলিকে অনেকটা বন্দুকের গুলির মতো ছিটকে বার করে দেয়। পৃথিবীতে যত রকম প্রজাতির মাশরুম দেখা যায় তাদের সবার মধ্যেই এই উদ্ভাবনী ক্ষমতাটি আছে কি না সেই বিষয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
|
• এক সঙ্গে পথ চলা |
এই ছোট্ট ছোট্ট পায়ে চলতে চলতে...
বাস্তবিকই ছোট ছোট পদক্ষেপ করতে পছন্দ করে পেঙ্গুইনেরা। পেঙ্গুইনদের মধ্যে যারা আকারে ও বুদ্ধিতে অন্যদের টেক্কা দিয়েছে, সম্প্রতি সেই ‘এমপেরর’ পেঙ্গুইনদের জীবনধারার এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা শোনালেন আলফ্রেড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী। জার্মান বিজ্ঞানীদের মতে কনকনে ঠান্ডার হাত থেকে রেহাই পেতে এক সঙ্গে দল বেধে ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে যায় পেঙ্গুইনেরা। এই এগিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি আজব। তাদের পথ চলা অর্থাত্ ‘স্টপ অ্যান্ড গো মুভমেন্ট’কে ‘ট্রাফিক জ্যাম’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, পথ চলার সময় প্রধানত দু’টি পদ্ধতির আশ্রয় নেয় পেঙ্গুইনেরা— প্রথমত ‘জ্যাম’ অর্থাত্ শতাধিক পেঙ্গুইন একে অপরের খুব কাছাকাছি প্রায় ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে ছোট ছোট গোষ্ঠী তৈরি করে এবং এই ভাবে তারা তাদের দৈহিক উষ্ণতার আদান প্রদান করে। দ্বিতীয়ত, ‘মাইক্রো মুভমেন্ট’— যেখানে গোষ্ঠীর প্রত্যেক সদস্য খুবই সামান্য (সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে প্রায় এক ইঞ্চির তিন ভাগের এক ভাগ) অগ্রসর হয়। নিজস্ব সাবলীল ভঙ্গিতে এমনই নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তারা অগ্রসর হয় যাতে গোষ্ঠীর যে কোনও দু’টি পেঙ্গুইনের মধ্যে ন্যূনতম দূরত্ব থাকে দুই সেন্টিমিটার। এই ভাবে একটির দেখাদেখি তার পরের গোষ্ঠীটিও ঠিক একই পন্থার আশ্রয় নেয়। যার ফলে পর পর গোষ্ঠীগুলি একত্রিত হয়ে একই সঙ্গে অনেকটা তরঙ্গের মতো এগোতে থাকে।
বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল জিটারবার্গ, জার্মান ফিজিক্যাল সোসাইটি থেকে প্রকাশিত বিজ্ঞান পত্রিকা ‘নিউ জার্নাল অফ ফিজিক্স’-এ লিখেছিলেন, আগের গবেষণায় পেঙ্গুইনদের এই চলনের সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তখন মনে করা হত এক একটি দল ৩০-৬০ সেকেন্ডের ব্যবধানে চলে। সম্প্রতি আলফ্রেড ওয়েগনার বিশ্ববিদ্যালয় ও হেলমোজ সেন্টার ফর পোলার-এর বিজ্ঞানীরা বিশেষ ম্যাথেমেটিক্যাল মডেলের সাহায্যে সমীক্ষা চালিয়েছেন, দেখা গিয়েছে, এই চলন প্রক্রয়াটি প্রথম শুরু করে দলের মধ্যে কোনও একটি পেঙ্গুইন। তার এগোনোর ফলে তৈরি শূন্যস্থান পূরণ করতে সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে আসে দলের বাকি সদস্যেরা। এই ভাবে একটি নিবিড় জোট তৈরি হয়। এই সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি পর্যায়ক্রমে চলতে থাকে এবং গোষ্ঠীর মধ্যে একটি উষ্ণ আবহ তৈরি হয়, যা হিমাঙ্কের ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচেও পেঙ্গুইনদের দেহের তাপ ধরে রাখতে সাহায্য করে।
|
• বড়দিনের আগেই চোখের রং বদলায় বল্গা হরিণেরা |
অন্ধকারের বুক চিরে সাদা বরফের উপর দিয়ে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে সান্তা ক্লজের স্লেজগাড়ি। সেটি টেনে নিয়ে চলেছে নীল চোখ ও উজ্জ্বল লাল নাকের ছোট্ট বল্গা হরিণ ‘রুডল্ফ’। কাল্পনিক এই ছবিটি প্রায় সবারই চেনা। রুডল্ফ-এর নীল চোখ ও লাল নাক নিয়ে অনেক গল্পকথাও প্রচলিত রয়েছে দেশ-বিদেশে। কিন্তু বাস্তবে শীতপ্রধান অঞ্চলের বাসিন্দা বল্গা হরিণদের চোখের নীলাভ চাহনি ও লাল নাকের রহস্য সম্প্রতি খুঁজে বার করলেন বিজ্ঞানীরা। এদের আবাসস্থল মূলত উত্তর মেরুপ্রদেশ এবং উত্তর আমেরিকায় এরা ‘ক্যারিবো’ নামে পরিচিত। বল্গা হরিণদের চোখ সাধারণত উজ্জ্বল হলদেটে হয়। কিন্তু শীতের প্রারম্ভেই কোনও এক অজ্ঞাত কারণে এই হলদেটে রঙের জায়গায় ধীরে ধীরে নীল রঙের আধিক্য দেখা যায়। এই তথ্য প্রথম প্রকাশিত হয় ‘রয়্যাল সোসাইটি বি’ নামক একটি বিজ্ঞান পত্রিকায়। নরওয়ের ট্রমসো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী কার্ল-আর্ন স্টক্যান ও তাঁর সতীর্থেরা জানিয়েছেন, এই নীল রং থেকে বিচ্ছুরিত আলো শীতের রাতে হরিণদের পথ দেখাতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, গরমকালে উজ্জ্বল হলদেটে চোখের রেটিনা থেকে সরাসরি অনেক বেশি আলো প্রতিফলিত হয় যেখানে নীলাভ চোখের রেটিনা থেকে আলোক প্রতিফলনের পরিমাণ অনেক কম। বিজ্ঞানীরা জানান, এই নীলাভ প্রতিফলন রেটিনার সক্রিয়তা অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়, ফলে অন্ধকারে এরা সহজেই হিংস্র জন্তুর গতিবিধি অনুমান করতে পারে। তাঁদের অভিমত, বল্গা হরিণ একমাত্র স্তন্যপায়ী জীব যারা অতিবেগুনি রশ্মিতেও দেখতে পায়। ২০১১ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন কর্তৃক পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা যায়, বল্গা হরিণেরা ৩২০ ন্যানোমিটারের চেয়ে কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো সহ্য করতে পারে, যেখানে মানুষের সহ্য ক্ষমতা ৪০০ ন্যানোমিটার। ফলে অনেক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তুও এদের চোখে ধরা পড়ে। এই বৈশিষ্ট্যই তুষারাবৃত মেরুপ্রদেশে তাদের আত্মরক্ষায় সাহায্য করে।
১৯৩৯ সালে মার্কিন লেখক রবার্ট লুইসে মে তাঁর গল্পে প্রথম উজ্জ্বল লাল নাকের বল্গা হরিণের কথা লেখেন। ইউরোপীয় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, বাস্তবিকই তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নামার সঙ্গে সঙ্গেই বল্গা হরিণদের নাকে লালচে আভা দেখা যায়। ‘থারমাল ইমেজিং’ ক্যামেরার সাহায্যে পরীক্ষা করে সুইডিশ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে নাকে অতিরিক্ত রক্ত সঞ্চালনের কারণেই রঙের এ হেন পরিবর্তন। প্রাণিবিজ্ঞানের অধ্যাপক রোনাল্ড ক্রোজারের মতে, তুষারাবৃত পরিবেশে বল্গাদের বরফের মধ্যে মুখ ঢুকিয়ে খাবারের খোঁজ করতে হয়। তাই মুখমণ্ডলে অতিরিক্ত রক্ত সঞ্চালন রক্তকে জমাট বাঁধতে দেয় না।
|
• জেব্রাদের ডোরা-রহস্য |
তৃণভোজী, অতি নিরীহ প্রাণি জেব্রাদের গায়ে সাদা-কালো রঙের এই অদ্ভুত মিশেল বারে বারেই বিজ্ঞানীদের গবেষণার বিষয় হয়ে উঠেছে। এই ডোরাকাটা রং নিছকই সৌন্দর্যের উপকরণ না কি এর পিছনে কোনও কারণ লুকিয়ে আছে, তা নিয়ে বহু তথ্য সামনে এনেছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি জেব্রাদের এই ডোরা-রহস্যের জট খুলেছেন ব্রিটেনের একদল বিজ্ঞানী। তাঁদের দাবি, আফ্রিকার জঙ্গলে হিংস্র শিকারি প্রাণি, বিশেষত সিংহদের দৃষ্টি বিভ্রমের জন্যই এই ডোরা দাগ। অর্থাত্ এটি ‘কেমোফ্লাজ’ বা আত্মরক্ষার এক বিশেষ কৌশল। রয়্যাল হলোওয়ে, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় ও কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এই তথ্যের সত্যতা প্রমাণে বিশেষ কম্পিউটার মডেলের সাহায্য নিয়েছেন। অধ্যাপক জোহানেস জ্যানকার জানিয়েছেন, এই ঢেউখেলানো ডোরা দাগ শুধু বড় শিকারি প্রাণিই নয়, কীটপতঙ্গদের চোখকেও ধোঁকা দেয়। উদাহরণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, এই ‘কেমোফ্লাজ’ দু’ভাবে কাজ করে— প্রথমত, জেব্রারা যখন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে তাদের ঢেউখেলানো সাদা-কালো ডোরা আশেপাশে ঘাসের সঙ্গে এমন ভাবে মিশে থাকে যে, শিকারিদের, বিশেষত সিংহদের চোখে বিভ্রান্তি তৈরি করে। সিংহেরা এমনিতে বর্ণান্ধ। তাই ঘাসের হলুদ-সবুজ রং ও জেব্রাদের ডোরা তাদের চোখে কোনও পার্থক্য তৈরি করে না। দ্বিতীয়ত, জেব্রারা যখন একসঙ্গে দল বেধে ঘুরে বেড়ায় করে তখন একে অপরের খুব কাছাকাছি থাকায় দূর থেকে দেখলে মনে হয় একটি সাদা-কালো ঢেউ চলছে। দলের যে কোনও একটি জেব্রাকে সিংহেরা পৃথক ভাবে শনাক্ত করতে পারে না। এমনকী, দৃষ্টি বিভ্রমের ফলে জেব্রাদের গতিপথ চিহ্নিত করতেও সিংহদের যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। তাই দলের কনিষ্ঠতম বা অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রাণিটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আশা একপ্রকার ত্যাগই করতে হয় তাদের। কিন্তু মজার ব্যাপার, এই বর্ণ-বৈচিত্র শিকারিদের চোখে ধোকা দিলেও, স্বজাতিদের কাছে এটিই তাদের পরিচয়পত্র। বাইরে থেকে দেখতে এক রকম লাগলেও সংখ্যার বিচারে হোক বা রঙের ঘনত্বে, প্রত্যেক জেব্রারই ডোরা দাগের মধ্যে সামান্য পার্থক্য আছে। আর এই পার্থক্যই তাদের স্বাতন্ত্র্য বহন করে।
|
পার্বণ |
• টুসু পার্বণ |
মকর সংক্রান্তিতে পশ্চিমবঙ্গের নানা প্রান্তে বিভিন্ন উত্সব ও পার্বণ অনুষ্ঠিত হয়। পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং বীরভূম জেলা এ সময়ে টুসু পার্বণে মাতে। গোটা পৌষ মাস ধরেই এই পার্বণ পালিত হয়। টুসুর মৃন্ময়-মূর্তি নিয়ে নানা মুনির নানা মত। এলাকা অনুসারে টুসুকে নিয়ে আলাদা আলাদা কাহিনিও রয়েছে। লোকসংস্কৃতি বা লোক দেবদেবী নিয়ে যাঁরা গবেষণা করেন, তাঁরাও বিভক্ত নানা মতে। মেদিনীপুর শহরের আশপাশ, বেলপাহাড়ি, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া— জঙ্গলমহলের নানা এলাকায় টুসুকে নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন লোককথা প্রচলিত। সেগুলিতে টুসুর স্থানিক চরিত্রই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে। কোনও গবেষকের কাছে টুসু উৎসবে গ্রাম-বালিকার পুতুলখেলার প্রাধান্যই বেশি। কারও কাছে আবার প্রাথমিক পর্যায়ে টুসুর কোনও মূর্তিই প্রচলিত ছিল না। কালক্রমে তা চালু হয়। আবার কেউ মনে করেন টুসু ঠিক ‘নবান্ন উৎসব’ নয়, তা আসলে শস্যকে পুনর্জীবন দানে আদিম জনজাতির উৎসব। কোল গোষ্ঠীর ‘টুসাউ’ শব্দের সঙ্গে টুসু-র মিল থাকতে পারে বলে মনে করেন কেউ কেউ। টুসাউ মানে টাটকা ফুলের গোছা। চিরাচরিত টুসু উৎসবে মূর্তির বিশেষ স্থান ছিল না। ছিল ফুল আর কাগজের ফুল দিয়ে তৈরি চৌদলের ব্যবহার। চৌদল বলতে বোঝায় বাঁশ আর কাগজ দিয়ে তৈরি ছোট মন্দিরের মতো কাঠামো। আবার ধান কেটে ঘরে তোলার পরে এই উৎসব হয় বলে অনেকে একে অধিক ফলন বা সন্তান লাভের কামনা ইত্যাদি নানা উদ্দেশ্যসাধক ব্রত বলেও মনে করেন। কেউ কেউ এর মধ্যে লক্ষ্মীব্রতেরও ছায়া দেখতে পান। তবে ফসল ঘরে তোলার পরে ভাল ফসল হওয়ার জন্য ধন্যবাদ প্রদানকারী উৎসব হিসাবে টুসুকে ব্যাখ্যা করেন অধিকাংশ গবেষকই। তবে টুসু একান্ত ভাবেই লোক উৎসব। কোনও আচার বা ধর্মের অনুশাসনে আবদ্ধ নয়। টুসু আসলে জনমানসের অনাবিল আনন্দেরই অভিব্যক্তি। সেই উৎসবেরই প্রতীক টুসু পুতুল। টুসু পরবের মূল অনুষ্ঠান টুসুর বিদায় বা ভাসান। নদীর তীরে বা পুকুরপাড়েই হয় এই ভাসান উৎসব। কোথাও কোথাও বাঁদনা পরবের চতুর্থ দিনে টুসুর গান শুরু করারও রেওয়াজ রয়েছে। কিন্তু সাধারণত পৌষ মাসের প্রথম দিন থেকে টুসু বন্দনা শুরু হয়। সন্ধ্যায় টুসুর পুজো করে মেয়েরা টুসুর গান করেন। পৌষ সংক্রান্তির দিন ভোরে হয় টুসুর বিসর্জন। আর এই ভাসানই টুসু-পরব বলে পরিচিত। তার আগের দিন সারা রাতে তিন বার হয় টুসুর পুজো। সারা রাত ধরে চলে টুসুর গান। গান ধরেন মহিলারাই।
|
• ভোগি উত্সব |
অন্ধ্রপ্রদেশ-সহ দক্ষিণ ভারতের একটি অন্যতম উত্সব পোঙ্গলের প্রথম দিনটি বোগি বা ভোগি নামে পরিচিত। দেবরাজ ইন্দ্র এই উত্সবের প্রধান আরাধ্য দেবতা। দক্ষিণ ভারতের কৃষিজীবী মানুষের বিশ্বাস, ইন্দ্রের কৃপাতেই তাঁদের কৃষিজমি ফসলে পূর্ণ হয়ে ওঠে। কৃষিভিত্তিক পরিবারগুলির সুখ সমৃদ্ধি তাঁরই কল্যাণে বলে তাঁদের মত। তাই পোঙ্গলের প্রথম দিনটিতে দেবরাজ ইন্দ্রের আরাধনায় মেতে ওঠেন দক্ষিণ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের অসংখ্য কৃষিজীবী মানুষ। আমাদের রাজ্যের নবান্নের মতোই এটি ওখানকার ফসল তোলার উত্সব। প্রতি বছর অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে এই উত্সব পালিত হয়। এই সময় ঘরবাড়ি পরিষ্কার করে রঙিন আলপনায় সাজিয়ে তোলেন মেয়েরা। দেবতার আরাধনায় হলুদ, ধান, আখ সহযোগে নৈবেদ্য সাজানো হয়। ফুল, চন্দন, আম্রপত্র সহযোগে মঙ্গল ঘট বসানো হয়। বাড়ির মেয়েরা সাজেন নতুন কাপড় ও ফুলের অলঙ্কারে। ভোগি উত্সবের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল, এ দিন পরিবারগুলি সব অপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরিয়ে রেখে সাধ্যমতো নতুন জিনিসে ঘর সাজিয়ে তোলেন। এ বছরের উত্সব ১৩ জানুয়ারি শুরু হয়েছে।
|
• মানিক পিরের মেলা |
২৫০ বছরের মানিক পিরের মেলা বসিরহাট অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় উত্সব। শোনা যায়, প্রায় ৩০০ বছর আগে ওই পির ধর্ম প্রচার করতে এই এলাকায় আসেন। তাঁর নানা অলৌকিক ক্ষমতার কথা আজও লোকমুখে প্রচারিত। বসিরহাট শহরের ইটিন্ডা ঘাটের কাছে প্রতি বছর মাঘ মাসের শুরুতেই এক দিনের এই মেলা বসে। এখানে পিরের দরগাও আছে। এলাকার মানুষের বিশ্বাস, এই দরগায় মানত করলে তা ফলপ্রসু হয়। বিশ্বাসে ভর করে ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম হয় এখানে। দূরদূরান্ত থেকে মানিক পিরের মেলায় মানুষ আসেন। মনস্কামনা পূরণের আশায় অগনিত ভক্ত দরগায় ধূপ ও মোমবাতি ধরান। গ্রামাঞ্চলের আর পাঁচটা মেলার মতোই এখানে মনোরঞ্জনের নানা আয়োজন থাকে। মেলার এক পাশে চোখে পড়ে সুফি গায়ক ও বাউলদের জটলা; সুরেলা গুঞ্জন।
|
• মাঘ বিহু |
ভোগালি বিহু শেষ হল গতকাল। শীতে কাঁপা অসমবাসী বাজারের আগুনে হাত সেঁকেছেন। উড়ুকার ভোজ এবং মেজি পুড়িয়ে বিহুর সূচনা হয়েছিল। চাষের মরশুম শেষে, ধান কাটা মাঠে অস্থায়ী ‘ভেলাঘর’ বানিয়ে থাকেন যুবকেরা। শুকনো ধানগাছ জড়ো করে বানানো হয় ‘মেজি’। রাতে, সামাজিক ভোজ। রাতভর মেজির চারপাশে নাচে-গানে কাটিয়ে সকালে স্নান করে পোড়ানো হয় মেজি। জ্বলতে থাকা মেজিতে, অগ্নিদেবের উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয় পিঠে ও সুপুরি। তার পরই মেজির ছাই দিয়ে কপালে তিলক কেটে বিহুর শুভেচ্ছা আদান প্রদানের পালা। মাঘ বিহুর প্রধান অঙ্গই হল ভোজ। তাই তার ডাকনাম ‘ভোগালি’। বিহুতে মাছ খাওয়া আর মাছ ধরা পয়লা নম্বরের বিনোদন। দু’দিন ধরে সোনপুরের তামুলি ডোবা বিল, ক্ষেত্রী, জালিখাড়া বিলে চলে গণ মাছধরার পালা, সঙ্গে ‘লালিলাং’ নাচ-গান। বিহু মানেই পিঠের বাহার। চুঙ্গা পিঠে ছাড়াও তৈরি হয় তিল পিঠে, ঘিলা পিঠে, নারকেল পিঠে, হুতুলি পিঠে, ভাত পিঠে, তেকেলি পিঠে। বিহু উপলক্ষে অসমের নানা অংশে চলে মোষ ও বুলবুলির লড়াই। মাদকাসক্ত বুলবুলিদের একে অন্যের সঙ্গে লড়িয়ে দেওয়ার এই পরব পশুপ্রেমীদের আপত্তি সত্ত্বেও চলছেই। হাজোর হয়গ্রীব মন্দিরে বুলবুলি লড়াইয়ের আসর বসে। কথিত আছে, স্বর্গদেও রুদ্রসিংহের আমলে এই পাখির লড়াই শুরু হয়েছিল।
|
পর্যটন কেন্দ্র |
• শ্রীনগরের চালু রোপওয়ে |
পর্যটক টানতে শ্রীনগরের রোপওয়ে ব্যবস্থা চালু হল। গত ডিসেম্বর মাসে এই পরিষেবার উদ্বোধন করেন জম্মু-কাশ্মীরের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী আলি মহম্মদ সাগর। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “রোপওয়ে পরিষেবা শুরু হওয়ায় এলাকায় পর্যটকের ভিড় বাড়বে। এতে সমৃদ্ধ হবে পর্যটন শিল্প।” ওই দিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গুলাম আহমেদ মীর-সহ বহু বিশিষ্ট জন। গুলমার্গ স্কি-রিসর্টের বিখ্যাত গন্ডোলা কেবল কার-এর পর এই পরিষেবায় পর্যটকদের যাতায়াতে সুবিধা হবে। পুরনো শ্রীনগরের সন্ত মাখদুম সাহিবের দরগায় যেতে বেশ অসুবিধা হত বয়স্ক ও শারীরিক ভাবে দুর্বল পর্যটকদের। মূলত তাঁদের কথা মাথায় রেখে পাহাড়ের উপর সন্ত সাহিবের দরগাকে জোড়া হয়েছে রোপওয়ের মাধ্যমে। এই প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা। পুরো প্রকল্পটির দায়িত্বে ছিল জম্মু ও কাশ্মীর কেবল কার কপোর্রেশন নামের একটি সংস্থাটি।
|
• সাজছে শ্বেভনিনেন বন্দর |
ঝুলন্ত গন্ডোলায় চেপে সেতু পারাপারের অভিজ্ঞতা কখনও হয়নি শ্বেভনিনেন বন্দর এলাকার বাসিন্দাদের বা এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের। তবে শীঘ্রই এই ছবিটা পাল্টাবে। নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরের আটটি জেলার একটি শ্বেভনিনেন। এখানকার বন্দরের সেতুতে একটি ঝুলন্ত গন্ডোলায় যাতায়াতের ব্যবস্থা শুরু করছে স্থানীয় পুরসভা। বন্দরের এই নয়া আকর্ষণে এখানে ভিড় বাড়বে বলে আশা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের। এখনও পর্যন্ত বিশ্বে হাতেগোনা কয়েকটি জায়গা, যেমন, স্পেন, ফ্রান্স আর ওয়েলসে ঝুলন্ত গন্ডোলা থাকলেও নেদারল্যাল্ডসে এই প্রথম এ ধরনের পরিষেবা চালু হবে। শ্বেভনিনেন বন্দরের ছাদঢাকা সেতুর ওই গন্ডোলা নীচে প্রবাহিত নদী থেকে মাত্র ৫ মিটার উপরে ঝুলন্ত অবস্থায় চলাচল করবে। তবে নদীতে জাহাজ চলাচলের সময় বন্ধ রাখা হবে গন্ডোলা-যাত্রা। এতে চড়তে সেতুর দু’পাশে সিঁড়ি-সহ চারটি লিফটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক একটি লিফটে ২০ জন উঠতে পারবেন। সেখানে হুইলচেয়ার রাখারও জায়গা থাকবে। যাত্রীরা বিনামূল্যে সিঁড়ি ব্যবহার করতে পারলেও লিফটে চড়তে হলে মাথাপিছু আড়াই পাউন্ড খরচ করতে হবে, যা ঝুলন্ত গন্ডোলায় সেতু পারাপারের সমান। শুধুমাত্র গন্ডোলাই নয়, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বন্দর এলাকা ঘিরে একটি বড়সড় প্রকল্পের কথাও ঘোষণা করেছে পুরসভা। সাড়ে ছয় মিলিয়ন পাউন্ডের এই প্রকল্পে পাঁচতারা হোটেল, আবাসন, রেস্তোরাঁ, মাছ ধরার জায়গা, ওয়াটার স্পোর্টস-সহ বহু বিনোদনমূলক বন্দোবস্ত করা হবে। এই কাজে একটি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছে হেগ পুরসভা। তাদের আশা, ২৯১৭ সালের মধ্যে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
|
• কাচের কিউবে আলপ্সের শোভা |
আলপ্সের সৌন্দর্য উপভোগ করতে অভিনব এক উপায় বের করল ফ্রান্সের এক বেসরকারি পর্যটন সংস্থা। আলপ্সের একটি চূড়া থেকে কাচের কিউব ঝুলিয়ে পর্যটকদের ওই পাহাড়ের আরও কাছাকাছি আনার ব্যবস্থা করছে তারা। তবে যাদের ভার্টিগো আছে তাদের জন্য এ দৃশ্য উপভোগ্য হবে না। কাচের টিউবটি থেকে মাত্র এক কিলোমিটার নীচেই রয়েছে আলপ্সের বরফ ঢাকা শোভা। সংস্থাটির দাবি, ইউরোপের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে এটিই সবচেয়ে উঁচুতে। ত্রি-স্তর বিশিষ্ট পাঁচটি কাচের ঢাকনা দেওয়া এই কিউবটি তৈরি করতে তিন বছর সময় লেগেছে। কিউবটিতে ধাতব কাঠামোর সাহায্যে কাচগুলিকে ধরে রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। পর্যটকেরা এর মাধ্যমে ইউরোপের সর্বোচ্চ পাহাড় মঁ ব্লা ছাড়া এগুই জু মিদি পাহাড়কেও দেখতে পারবেন।
|
• ভুতুড়ে শহর |
তাকে ভয় কে না পায়! কিন্তু তা-ও ভূতের আকর্ষণে ভাটা পড়ে না। এমনই এক অদ্ভুতুড়ে শহরের টানে পৃথিবীর শেষ প্রান্তে ছুটে যাচ্ছেন অগুনতি মানুষ। উত্তর মেরু থেকে মাত্র তেরোশো কিলোমিটার দূরে এ রকমই এক পরিত্যক্ত শহর পিরামিডেন। অন্য নামে ‘ভূতের শহর’। নরওয়ের স্বেলবার্ড-এ আর্চিপেলাগুতে অবস্থিত স্পিটবার্জেন নামে অতলান্তিক সাগরের এক ছোট্ট দ্বীপ। এখানেই রয়েছে পিরামিডেন শহর, যা আসলে পূর্বের সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি খনি শহর। ১৯১০ সালে সুইডেন এই শহরের গোড়াপত্তন করলেও ১৯২৭-এ তা সোভিয়েত-এর হাতে বেচে দেওয়া হয়। ’৯৮ সাল থেকেই এটি পরিত্যক্তের তকমা পায়। যদিও খাতায়কলমে এখনও রাশিয়ার খনি সংস্থা ‘ট্রাস্ট আর্কটিকুগোল’-এর কাছে পিরামিডেনের স্বত্ত্বাধিকার রয়েছে। কাছাকাছি থাকা পিরামিড আকারের পাহাড়ের জন্য শহরের এমন নামকরণ হয়েছে। তেমন কিছু দর্শনীয় স্থান না থাকলেও গা ছমছমে পরিবেশের টানে এখানে অনেক পর্যটকই আসেন। কয়েক জন অস্থায়ী বাসিন্দার ডেরার ভেতর একমাত্র স্থায়ী বাসিন্দা বলতে এক রাশিয়ান ট্যুরিস্ট গাইড এবং তাঁর সঙ্গী পোষা শেয়াল। এখানকার একমাত্র হোটেল ‘টিউলিপ’ও গত বছর তার দরজা খুলেছে পর্যটকদের জন্য। পিরামিডেনে যাওয়ার কোনও আদর্শ সময় নেই। যখন খুশি গেলেই হল। যদিও জরাজীর্ণ এই হোটেলে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষেধ।
|
পরিষেবা |
• টাইগার এয়ারের সঙ্গে ৩ বছরের চুক্তি স্পাইসজেটের |
বহু প্রতীক্ষার পর অবশেষে নতুন বছরে ভাগ্যের শিকে ছিঁড়ল স্পাইসজেটের। প্রথম ভারতীয় ‘লো কস্ট’ বিমান সংস্থা হিসাবে সিঙ্গাপুরের টাইগার এয়ার বিমান সংস্থার সঙ্গে ৩ বছরের চুক্তি করল তারা। এর ফলে দু’দেশে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটবে বলে ওই সংস্থার আশা।
চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের ১৪টি শহর থেকে পর্যটকরা (হায়দরাবাদের রাজীব গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে) টাইগার এয়ারের উড়ানে সিঙ্গাপুর যাওয়া এবং সেখানকার অন্যান্য শহরের উড়ান ধরতে পারবেন। একই রকম ভাবে সিঙ্গাপুরের পর্যটকরা ভারতে স্পাইসজেটের অন্তর্দেশীয় উড়ানের সাহায্যে বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করতে পারবেন। স্পাইসজেটের চিফ অপারেটিং অফিসার সঞ্জীব কপূর জানিয়েছেন, এটি ভারতের বিমান সংস্থার ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি। এর ফলে দু’দেশের পর্যটকদের যথেষ্ট সুবিধা হবে।
স্পাইসজেটের অন্তর্দেশীয় উড়ানে যে সমস্ত পর্যটকরা টাইগার এয়ারের বিমান ধরে সিঙ্গাপুর যাবেন তাঁদের জন্য জিএমআর গোষ্ঠী পরিচালিত হায়দরাবাদের রাজীব গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশেষ পরিষেবার ব্যবস্থা থাকবে। তাঁদের সমস্ত লাগেজ এক বিমান থেকে অন্য বিমানে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে স্থানান্তরিত করার ব্যবস্থা থাকবে সেখানে।
|
• অন্তর্দেশীয় উড়ানে ১১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি |
|
২০১২-র তুলনায় ’১৩ সালের অক্টোবরে ভারতের অন্তর্দেশীয় উড়ানের সংখ্যা প্রায় ১১.৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের একটি রিপোর্টে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে আরও বলা হয়েছে, ভারতে বিমানযাত্রীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১২ সালের অক্টোবরে যাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধি হয়েছিল মাত্র ১.৪ শতাংশ, সেখানে ১৩ সালে বৃদ্ধি পয়েছে ৭২.১ শতাংশ। এয়ার ক্যাপাসিটি বেড়েছে ৯.৪ শতাংশ।
চিত্রটি সারা বিশ্বে কম বেশি একই রকম। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল এ ব্যাপারে প্রথম তিনটি জায়গার মধ্যে রয়েছে। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের মতোই এই অঞ্চলে বৃদ্ধির হার ৭.৮ শতাংশ। আন্তর্জাতিক এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের ডিরেক্টর জেনারেল টনি টাইলার জানান, ২০১৩ সালে ইতিহাসে প্রথম বার সারা বিশ্বের বিমান সংস্থাগুলির মিলিত যাত্রী সংখ্যা ৩০০ কোটি ছাড়িয়েছিল। ২০১৪-এ এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তাঁর আশা।
|
• এক যাত্রীর সংরক্ষিত টিকিটে ভ্রমণ করতে পারবেন তাঁর আত্মীয় |
এ বার বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কোনও এক জন যাত্রীর সংরক্ষিত টিকিটে তাঁর আত্মীয় রেলে ভ্রমণ করতে পারবেন। সম্প্রতি ভারতীয় রেল একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, বিশেষ বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এক যাত্রীর সংরক্ষিত টিকিটে অন্য এক জন ভ্রমণ করতে পারবেন।
১. কোনও সরকারি কর্মচারী কাজের জন্য ভ্রমণে অক্ষম হলে, ট্রেন ছাড়ার ২৪ ঘণ্টা আগে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অনুরোধ জানালে সেই যাত্রীর জায়গায় অন্য কোনও কর্মচারী ভ্রমণ করতে পারবেন।
২. ট্রেন ছাড়ার ২৪ ঘণ্টা আগে লিখিত অনুরোধের ভিত্তিতে কোনও যাত্রী তাঁর জায়গায় নিকট আত্মীয় যেমন— বাবা, মা, ভাই, বোন, ছেলে, মেয়ে, স্বামী বা স্ত্রী একই সংরক্ষিত টিকিটে ভ্রমণ করতে পারবেন।
৩. যাত্রী কোনও স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী হলে, ট্রেন ছাড়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রতিষ্ঠানের প্রধানের লিখিত অনুরোধে সেই এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্য কোনও ছাত্রছাত্রী সংরক্ষিত টিকিটে যাত্রা করতে পারবেন।
৪. বরযাত্রী বা কনেযাত্রীদের ক্ষেত্রে ট্রেন ছাড়ার ৪৮ ঘণ্টা আগে সেই যাত্রীদলের প্রধানের (যাত্রীদের মধ্যে থেকে উল্লিখিত এক জন) লিখিত অনুরোধে এক জনের সংরক্ষিত টিকিটে অন্য যাত্রী যাত্রা করতে পারবেন।
৫. এনসিসি-র ক্যাডেটদের ক্ষেত্রে ভ্রমণকারী দলের কমান্ডিং অফিসারের লিখিত অনুরোধে এক ক্যাডেটের জায়গায় অন্য ক্যাডেট ভ্রমণ করতে পারবেন। তবে ৩, ৪ এবং ৫ নম্বর ক্ষেত্রে অনুরোধ যদি মোট যাত্রীসংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি যাত্রীদের জন্য হয়, তবে তা মঞ্জুর করা হবে না।
|
• যাত্রী সংখ্যা কম, বন্ধ হল চেন্নাই-কোয়ম্বত্তূর দুরন্ত রেল পরিষেবা |
প্রত্যাশা মতো যাত্রী না থাকায় চেন্নাই-কোয়ম্বত্তূর দুরন্ত রেল পরিষেবা বন্ধ করে দিল দক্ষিণ রেল কর্তৃপক্ষ। এই ট্রেনটির পরিবর্তে গত বছরের ২২ নভেম্বর থেকে চেন্নাই সেন্ট্রাল-কোয়ম্বত্তূর শতাব্দী এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালু করা হয়েছে। ট্রেনটি চেন্নাই সেন্ট্রাল থেকে সকাল ৭ টা ১৫ মিনিটে ছাড়বে এবং কোয়ম্বত্তূর পৌঁছবে দুপুর ২টো ৫ মিনিটে। ফেরার সময় কোয়ম্বত্তূর থেকে ৩টে ২০ মিনিটে ছেড়ে চেন্নাই পৌঁছবে রাত ১০টা ১৫ মিনিটে। মাঝে ট্রেনটি সালেম, এরোড, তিরুপুরে দাঁড়াবে।
অন্য দিকে চেন্নাই-তিরুঅনন্তপুরম (দ্বি-সাপ্তাহিক) দুরন্ত এক্সপ্রেস পরিষেবা বন্ধ করে ২২ নভেম্বর থেকে বাতানুকুল সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেস চালু করল দক্ষিণ রেল। এর ভাড়া রাজধানী এক্সপ্রেসের সমান। যদিও ট্রেনটির সময়সূচিতে কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। |
|
|
|