সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে
কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’। সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে
কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন, চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব— সব মিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।
ঐতিহ্য
• কাসুবির রাজসমাধি
উগান্ডার সর্ববৃহত্ স্বশাসিত রাজ্য বুগান্ডার ঐতিহ্য লুকিয়ে আছে সেখানকার রাজাদের সমাধিস্থলে। উগান্ডার রাজধানী কাম্পালায় অবস্থিত এই সমাধিস্থল ‘কাসুবি টুম্ব’ নামে পরিচিত। বুগান্ডার চার জন ‘কাবাকা’র (রাজা) সমাধিক্ষেত্র রয়েছে এই অঞ্চলে, যা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হয় ২০০১ সালে।
চতুর্দশ শতকে রাজা কাটো কিন্টু প্রতিষ্ঠিত বুগান্ডা সাম্রাজ্য ১৮ ও ১৯ শতকে পূর্ব আফ্রিকার সব থেকে ক্ষমতাশালী রাজ্য হয়ে ওঠে। পরবর্তী কালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সময় কিন্টু রাজত্ব তার জৌলুস হারায়। ১৯৬২ সালে উগান্ডা স্বাধীনতা অর্জন করে এবং দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মিল্টন ওবোটো। এর পর প্রথমে ওবোটোর নির্দেশে এবং পরে অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে বুগান্ডা প্রায় ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়। শেষে ১৯৯৩ সালে রাষ্ট্রপতি ইওরি মুসেভেনির আমলে এই রাজ্য ফিরে পায় তার হারানো ঐতিহ্য। ৩৬তম ‘কাবাকা’ হলেন দ্বিতীয় মুয়েন্ডা মুতেবি।
রাজাদের বাসস্থান ছিল কাসুবি পাহাড়ের উপর। ১৮৮১ সালে, প্রথম মুয়েন্ডা মুতেবির আমলে নির্মিত সেই বৃত্তাকার রাজকীয় অঞ্চলে ছিল নানাবিধ কাঠামো— কাঠ, গাছের বাকল, শুকনো ঘাস দিয়ে তৈরি। এবং চারটি সমাধি ছিল খড়ের তৈরি ছোট ঘরের ভেতরে। তাঁর মৃত্যুর পর গোটা অঞ্চলটাই রাজাদের সমাধিস্থলে পরিণত হয়। ১৬ মার্চ, ২০১০— এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে রাজকীয় এই অঞ্চলের প্রচুর ক্ষতি হলেও সমাধিক্ষেত্রগুলি রক্ষা পায়। তার পরই ‘বিপদগ্রস্ত’ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হয়।
নির্মাণশৈলীর এক অনন্য নিদর্শন কাসুবির এই সৌধগুলি পুনর্নির্মাণে এক জোট হয়েছে ইউনেস্কো ও উগান্ডা সরকার। এ বছর ১ মার্চ স্বাক্ষরিত হয়েছে সেই পরিকল্পনা।

• রেখাচিত্রে ভগবান বন্দনা
প্রত্নতত্ত্বের এক অভূতপূর্ব নিদর্শন পাওয়া যায় পেরুর নাসকা মরু অঞ্চলে। নাসকা থেকে পাম্পাস শহর, প্রায় ৮০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই পথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মাটিতে খোদাই করা নানা রকম পশুপাখির চিত্র। মাকড়সা, গিরগিটি, মাছ, বাঁদর, জাগুয়ার ছাড়াও গাছ, ফুল এমনকী মানুষের রেখাচিত্রও পাওয়া গিয়েছে। নাসকা সংস্কৃতির এই শিল্পকলার নানা কারণ থাকতে পারে। এক দল বৈজ্ঞানিকের মতে, এই রেখাচিত্র আঁকা হত ভগবানকে খুশি করার উদ্দেশ্যে। আবার ভিন্ন মত বলছে বিশ্বতত্ত্ব ও জ্যোতিশাস্ত্রের অঙ্গ হিসেবে আঁকা হত এই ধরনের চিত্র। নাসকা সংস্কৃতির মূল পরিচিতি ছিল তাদের ভূতলে জল পরিবহণ ব্যবস্থার জন্য।
আনুমানিক ৪০০ থেকে ৬৫০ খ্রিস্টাব্দে অঙ্কিত রেখাচিত্রের এই অঞ্চল বিশ্ব ঐতিহ্যের তকমা পেয়েছে ১৯৯৪ সালে। ‘নাসকা লাইনস’ নামে পরিচিত এই স্থানের অগভীর রেখাচিত্রগুলি ১০ থেকে ৩০ সেন্টিমিটারের। প্রায় ৪০০ বর্গ মাইল জুড়ে ৩০০টি রেখাচিত্র আজও বজায় আছে। এই অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে। তবে আবহাওয়া বদলাচ্ছে বিশ্ব জুড়ে। তা ছাড়া যে ভাবে সবুজ ধ্বংস হচ্ছে তাতেও প্রভূত ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে রেখাচিত্রগুলির। সম্প্রতি চুনাপাথর সংগ্রহকারী এক সংস্থার অবিবেচিত কার্যকলাপে প্রবল ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নাসকা লাইনসের একটি অংশ। যদিও সংস্থাটি দাবি করেছে যে তারা নিজস্ব জমিতেই কাজ করেছে।

• নবজাগরণে নালন্দা
চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং-এর লেখনি অনুযায়ী, নালন্দা নির্মিত হয় গুপ্ত বংশের শক্রাদিত্যের আমলে। বিহারের রাজধানী পটনা থেকে প্রায় ৮৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত তত্কালীন এই বিদ্যা প্রতিষ্ঠান। প্রায় ৩৫ একর জমির উপর লাল পাথরের তৈরি এই স্থান ছিল বৌদ্ধধর্ম ও শিক্ষার আধার। তিব্বত, চিন, পারস্য থেকে গুণীজন ও শিক্ষার্থীরা আসতেন এখানে বিদ্যালাভের আশায়। প্রথমে গুপ্ত বংশ, পরে হর্ষবর্ধন ও তারও পরে পাল রাজাদের আমলে সুনামের শিখরে পৌঁছয় এই পাঠস্থান। ধর্মের জন্য সেখানে গড়ে ওঠে বৌদ্ধ বিহারও। শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৌদ্ধভিক্ষুকরাও থাকতেন সেখানে। ১১৯৩ সালে তুর্কি আক্রমণের ফলে ধ্বংস হয়ে যায় বিদ্যার এই পীঠস্থান। বখতিয়ার খিলজির ওই আক্রমণের পরেই শুরু হয় ভারতে বৌদ্ধধর্মের অবক্ষয়। তিনটি আলাদা ভবন মিলিয়ে ছিল নালন্দার ‘ধর্মগঞ্জ’ গ্রন্থাগার। খিলজির ধ্বংসলীলার সাক্ষী হিসেবে এই গ্রন্থাগার ভষ্মীভূত হতে লেগেছিল ৩ মাস। এর থেকেই অনুমান করা যায় এই ধর্মগঞ্জের অমূল্য শিক্ষা-ভাণ্ডারের!
এশিয়ার নবজাগরণের ‘আইকন’ হোক নালন্দা— পূর্ব এশিয়ার ভারত-সহ ১৬টি দেশের অভিমত এটাই। তাদের পরিকল্পনায় নালন্দাকে পুনর্গঠন করা হবে ‘আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়’ হিসেবে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নিতীশ কুমারের আর্জিকে সমর্থন করে সম্প্রতি রাজগীরে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় দেশের বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ বলেছেন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ইউনেস্কোর ঐতিহ্যবাহী তালিকার অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত্। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনও। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ আরও এক বার পঠনপাঠন শুরু করা হবে এই স্থানে। মূলত দু’টি বিষয়— ইতিহাস ও পরিবেশ দিয়ে শুরু হবে পড়াশোনা।

• তামিলনাড়ুর ‘পাঁচকাহন’
২০১২ সালের অক্টোবর মাসে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী কুমারী সৈলজা তামিলনাড়ু সফরে গিয়ে সেখানকার ৫টি স্থান ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী’ তালিকার জন্য অনুমোদন করেন। স্থানীয় প্রশাসন ও রাজ্য সরকার যদি লিখিত আবেদন করে তা হলে কেন্দ্রও এই ব্যাপার বিশেষভাবে উদ্যোগী হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
শ্রী রঙ্গানাথস্বামী মন্দির: ভগবান বিষ্ণু, যাঁর স্থানীয় নাম রঙ্গনাথ, পূজিত হন এই তিরুচিরাপল্লীর মন্দিরে। কাবেরী নদীর এক দ্বীপে অবস্থিত এই মন্দির দক্ষিণ ভারতের অন্যতম এক বৈষ্ণব পীঠস্থান। ইতিহাস, ধর্ম ও পৌরাণিক কাহিনি সমৃদ্ধ শায়িত বিষ্ণু মূর্তির এই হিন্দু দেবস্থান বহু মুসলমান ও ইউরোপীয় আক্রমণ সহ্য করে আজও দণ্ডায়মান।
শ্রী রঙ্গানাথস্বামী মন্দির চেট্টিনাড কাজুগুমালাই পুলিকট হ্রদ
সেন্ট জর্জ দুর্গ: ১৬৪৪ সালে, ভারতে নির্মিত ইংরেজদের প্রথম দুর্গ। চেন্নাই উপকূলের এই দুর্গকে কেন্দ্র করেই মূলত শহর গড়ে উঠেছিল। দুর্গের ঐতিহাসিক নাম ‘ওয়াইট টাউন’ এবং এটি এই রাজ্যের ১৬৩টি দ্রষ্টব্য স্থানের একটি।
চেট্টিনাড: স্থান মাহাত্ম্যে খাবারের নাম! রাজ্যের শিবগঙ্গা জেলার চেট্টিনাড অঞ্চলকে বলা হয় ‘নাট্টুকোট্টাই চেট্টিয়ার’-দের বাসস্থান। এই ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের অনেকেই পার্শ্ববর্তী শ্রীলঙ্কা ও বর্মায় স্থানান্তরিত হয়েছে। চেট্টিনাডের আরও একটি বৈশিষ্ট্য সেখানকার খাবার। মশলাদার বেশ কিছু খাবারের নামই হয়ে গেছে ‘চিকেন চেট্টিনাড’, ‘ভেজ চেট্টিনাড’।
কাজুগুমালাই: দক্ষিণ ভারতীয় ভগবান মুরুগন-এর দ্বিতীয় মন্দির এই গ্রামেই। পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে প্রায় সারা বছর। হিন্দু মন্দিরের সঙ্গে রয়েছে দু’টি গির্জাও। আর আছে সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীর পাথরের মূর্তি। জৈন ধর্মগুরু পরেশনাথ-সহ অন্যান্য তীর্থঙ্করদের মূর্তিও পাওয়া যায়।
পুলিকট হ্রদ: ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্ সামুদ্রিক উপহ্রদ। পুলিকট হ্রদ পাখিরালয়ের চারপাশ দিয়ে বয়ে চলা এই লেকের অংশ শ্রীহরিকোটা দ্বীপ। ‘সতিশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার’ এই দ্বীপেই অবস্থিত। মত্স্যজীবীদের চারণভূমিও এই হ্রদ।

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
• ছত্তীসগঢ়ে কুষাণ বা সাতবাহন আমলের প্রাচীন শহর
২০০৮ সালে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের সহ-অধিকর্তা ব্যক্তিগত কাজে গিয়েছিলেন তরীঘাটে। সেখানে পাটান এলাকার খারুন নদীর তীরে তাঁর নজরে পড়ে প্রাচীন কিছু মুদ্রা, পুঁতির মালা, প্রাচীন মাটির বাসন সামগ্রী ও হাড়গোড়। আসলে এরই আড়ালে ছিল আড়াই হাজার বছরের পুরনো এক শহরের ধ্বংসাবশেষ। প্রাথমিক অনুসন্ধানের উপর ভিত্তি করে এই অঞ্চলে খননকার্যের নির্দেশ দেয় ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ। বিজ্ঞানীদের আশা, খননকার্য সম্পূর্ণ হওয়ার পর এটিই ছত্তীসগঢ়ের অন্যতম বড় পুরাতাত্ত্বিক আবিষ্কার হবে। শহরটি কুষাণ বা সাতবাহন সাম্রাজ্যের শেষ আমলের— আবিষ্কৃত মুদ্রাগুলি থেকে বিজ্ঞানীদের তেমনটাই ধারণা। ধ্বংসাবশেষে কিছু পোড়া পাথর দেখে মনে করা হচ্ছে শহরটি আগুন লেগে সম্পূর্ণ ভাবে ধ্বংস হয়েছিল। খুঁজে পাওয়া অংশটিকে শহরের একটি বাজার বলে অনুমান পুরাতাত্ত্বিকদের। পাটানের এই অঞ্চলে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সমীক্ষা শুরু করেছে পুরাতত্ত্ব বিভাগ। খুব শীঘ্রই সেখানে খননকার্য শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন পুরাতত্ত্ব বিভাগের আধিকারিকেরা।

• ছোট ছোট প্রাচীন পিরামিডের সারি সুদানে
ঠাসাঠাসি করে থাকা ছোট ছোট ৩৫টি প্রাচীন পিরামিডের সমষ্টি আবিষ্কার হল সুদানের সেদিঙ্গায়। প্রায় দু’হাজার বছরের পুরনো এই পিরামিডগুলি সে দেশের বিখ্যাত কুশ সাম্রাজ্যের মধ্য ভাগের বলে অনুমান প্রত্নতাত্ত্বিকদের। ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে আবিষ্কৃত এই পিরামিডগুলি আকারে বেশ ছোট। সবচেয়ে ছোট পিরামিডটি একটি শিশুর সমাধি— যার উচ্চতা মাত্র ৩০ ইঞ্চি। প্রসঙ্গত, সবচেয়ে বড় পিরামিডটি মাত্র ২২ ফুট চওড়া। ৫০০ বর্গমিটার এলাকায় ১৩টি পিরামিডের উপস্থিতি থেকে অনুমান করা যায় পিরামিডগুলি কতটা ঘনসন্নিবিষ্ট। বেশ কয়েক শতক ধরে এই পিরামিডগুলি বানানো হয়েছিল বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। পাশাপাশি তাঁদের আরও দাবি, কুশ আমলে তৈরি এই পিরামিডগুলি মিশরীয় প্রযুক্তি মেনেই গঠন করা হয়েছিল।

• স্কুল চত্বরে মাটির তলায় অষ্টাদশ শতকের হাসপাতাল
মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে এল জর্জীয় ইতিহাস। ঘটনাস্থল এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাইস্কুল চত্বর। ইমারতি কাজের জন্য স্কুল চত্বরে শ্রমিকরা খোঁড়াখুড়ি করতে গিয়ে খুঁজে পান মাটির পাত্র, বোতল, পয়সা ও বোতাম। খুঁড়ে পাওয়া জিনিসগুলির মধ্যে একটি পয়সায় রাজা চতুর্থ জর্জ ও ১৮১৬ সালের উল্লেখ রয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা জানাচ্ছেন, অষ্টাদশ শতাব্দিতে এখানেই ছিল রাজা চতুর্থ জর্জের সময়ের রয়্যাল ইনফার্মারি হাসপাতাল। ১৭৩৮ সালে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এডিনবরা মিউজিয়ামের কিউরেটর জন লসন ‘এই অঞ্চল থেকে মধ্য যুগের আরও অনেক ইতিহাস উদ্ধার হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে’ বলে আশা প্রকাশ করেছেন। খুব অল্প পরিসর জায়গা থেকে সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকের এই ইতিহাস উদ্ধারের ঘটনাকে একটা ইতিবাচক ইঙ্গিত বলে মনে করেছেন তিনি। তিনি আরও জানিয়েছেন, আজকে যেখানে হাইস্কুলটি রয়েছে এক সময় এখানে ব্ল্যাকফ্রায়ারস মনাস্ট্রি ছিল। ১২৩০ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন রাজা দ্বিতীয় আলেকজান্ডার। ১৫৫৮ সালে মনাস্ট্রিটি ধ্বংস করে স্কটল্যান্ডের প্রোটেস্ট্যান্ট নেতা জন নক্স-এর অনুগামীরা।

• পেরুতে প্রাচীন সমাধিক্ষেত্র কঙ্কালে ভরা
লাতিন আমেরিকা জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এ রকমই একটি জায়গা পাচাকামাক। পেরুর রাজধানী লিমার দক্ষিণ-পূর্বে লুরিন নদীর উপত্যকায় অবস্থিত পাচাকামাককে এই মহাদেশের অন্যতম বৃহত্ প্রত্নতাত্ত্বিক ভাণ্ডার বলে মনে করা হয়। দীর্ঘ দিন ধরেই ওই অঞ্চলে চলছে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা। উঠে এসেছে ইতিহাসের নানা যুগ, ধর্ম, সংস্কৃতি থেকে স্থাপত্য। সে রকমই মাটি খুঁড়তেই এ বার দেখা মিলল প্রাক-ইনকা সভ্যতার একটি সমাধিক্ষেত্রের। আনুমানিক ১,০০০ খ্রিস্টপূর্বের এই বিশাল সমাধিস্থলটি ডিম্বাকৃতির। গাছের গুড়িকে বিভিন্ন মাপে কেটে ব্যবহার করা হয়েছে স্তম্ভ হিসাবে। ছাদ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে নল-খাগড়া। আশ্চর্যজনক ভাবে সমাধিস্থলের চারপাশে কবর দেওয়া হয়েছে এক ডজন সদ্যোজাত শিশুকে। এঁদের প্রত্যেকের মাথা ছিল সমাধির ভিতরের দিকে। একই জায়গায় আরও বেশি করে কবর দেওয়ার জন্য সমাধির মূল ভবনটিকে প্রাচীর দিয়ে দু’টি কক্ষে ভাগ করা হয়েছে। এরই একটির মধ্যে থেকে বয়স নির্বিশেষে পুরুষ ও মহিলার প্রায় ৭০টি কঙ্কাল ও মমি উদ্ধার করেছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। বেশ কিছু মমি পাওয়া গেছে প্রায় অক্ষত অবস্থায়। শুধু তাই নয়, দেহাবশেষগুলির পাশ থেকে পাওয়া গেছে বিভিন্ন ধাতব সামগ্রী। এগুলি আদৌ সমকালীন কি না জানার জন্য রেডিওমেট্রিক ডেটিং পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ
• একটু উষ্ণতার জন্য ‘কোল্ড কোট’
‘কোল্ড কোট’— আন্টার্কটিকার হিমশীতল পরিবেশে শরীর গরম রাখার অভিনব এক ব্যবস্থা। না, এ কোনও বিশেষ পোশাক নয়। বিজ্ঞানের পরিভাষায় তাপ বিকিরণের একটি বিশেষ পদ্ধতির পোশাকি নাম ‘কোল্ড কোট’। দক্ষিণ মেরুতে বসবাসকারী প্রাণীদের মধ্যে বিশেষ করে ‘এম্পেরর পেঙ্গুইন’দের মধ্যে গরম থাকার এই বিশেষ পদ্ধতিটি লক্ষ করেছেন গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। কুমেরু বৃত্তের -৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় শরীরের তাপমাত্রা অবলীলায় ৩৬.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে রাখে অ্যাপটেনোডাইটস ফর্সতেরি বা এম্পেরর পেঙ্গুইনেরা। বিজ্ঞানীরা ‘থারমাল ইমেজিং টেকনোলজি’র সাহায্যে পরীক্ষা করে দেখেছেন পেঙ্গুইনেরা তাদের পালকের সাহায্যে শরীরের বর্হিপৃষ্ঠের তাপমাত্রা পারিপার্শ্বিকের তুলনায় অন্তত ৪ ডিগ্রি কমিয়ে রাখে। ফলে তাপ বিকিরণ পদ্ধতিতে পরিবেশ থেকে তাপ দেহে প্রবেশ করে শরীরের স্বাভাবিক উষ্ণতা বজায় রাখে। পেঙ্গুইনদের শরীরের মধ্যে শুধুমাত্র চোখ, ঠোঁট ও পায়ের পাতা পরিবেশের তুলনায় গরম থাকে। গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ডক্টর ডমিনিক ম্যাকাফারটি ‘কোল্ড কোট’ পদ্ধতিটির জন্য সম্ভবত বরফাবৃত কুমেরু বৃত্তের পারিপার্শ্বিক বাতাসের তাপমাত্রার সঙ্গে পরিবেশের তাপমাত্রার পার্থক্যকেই দায়ী করেছেন। তাঁর মতে পরিবেশ ও বর্হিপৃষ্ঠের উষ্ণতার এই আদান প্রদানই শীতল পরিবেশে পেঙ্গুইনদের শরীরের উষ্ণতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।

• বনমানুষ ‘হরণ’
রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে অন্তত ৩ হাজার ‘গ্রেট এপস্’ লোপাট হয়ে যায়। এদের মধ্যে বেশির ভাগেরই মৃত্যু হয় চোরাশিকারিদের হাতে। সমীক্ষায় প্রকাশ, ২০০৫ থেকে ২০১১-সালের মধ্যে ২২ হাজারেরও বেশি ‘গ্রেট এপস্’ অবৈধ ভাবে পাচার করা হয়েছে। বনমানুষ বা বিজ্ঞানীদের ভাষায় ‘গ্রেট এপস্’ স্তন্যপায়ী শ্রেণির ‘হোমিনিডি’ পরিবারভুক্ত প্রাণীরা। মূলত আফ্রিকা ও এশিয়ার ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্যে এদের দেখা মেলে। ‘পোঙ্গো’, ‘গোরিলা’, ‘হোমো’, ‘প্যান’ প্রজাতির প্রাণীরা এই পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। বিজ্ঞানীদের মতে শিম্পাঞ্জি, বোনোবস, গোরিলা— আফ্রিকার এই তিন ‘গ্রেট এপস্’ ও এশিয়ার ওরাংওটাং-দের আর ক’দিনের মধ্যে লুপ্তপ্রায় প্রজাতির মধ্যে গণ্য করা হবে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন বানর প্রজাতির এই প্রাণীরা দলবদ্ধ হয়ে থাকায় একটি শিম্পাঞ্জিকে ধরতে গেলে অন্তত ১০টি শিম্পাঞ্জিকে হত্যা করতে হয়। তবে শুধুমাত্র চোরাপাচার নয় বিত্তবান ব্যবসায়ীদের মনোরঞ্জন, অনামী চিড়িখানায় দর্শক আকর্ষণ ছাড়াও ভূমধ্যসাগরীয় সৈকতগুলিতেও এদের দেখা মেলে। চোরাচালান বন্ধ করার জন্য ২০০০ সালে মার্কিন কংগ্রেস ‘গ্রেট এপস্’ সংরক্ষণ আইন পাশ করে। ২০১১-১২ অর্থবর্ষে ‘গ্রেট এপস্ প্রোটেকশান অ্যান্ড কস্ট সেভিং অ্যাক্ট’ পাশ হয়। তবে শুধু আইন নয় ভবিষ্যতে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতা ও সচেতনতার উপরেও বিজ্ঞানীরা আস্থা রাখছেন।

• হাতিশূন্য আফ্রিকার ‘হাতিঘর’
হাতিশূন্য হতে বসেছে আফ্রিকার বুনো হাতিদের ‘ঘর’ গ্যাবনের মিনকেবে পার্ক। কারণ অবশ্যই চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্য। ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটি (উব্লিউসিএস)-র সমীক্ষা তাই বলছে। অফ্রিকার বুনো হাতিদের অর্ধেকই পাওয়া যায় গ্যাবনে। সংখ্যাটা প্রায় চল্লিশ হাজারেরও বেশি। সোসাইটির সমীক্ষা অনুযায়ী, মূল্যবান দাঁতের লোভে চোরাশিকারিরা ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১১ হাজার হাতি ‘খুন’ করেছে। গত পাঁচ বছরে হত্যার সংখ্যা বেড়েছে বলে জানা গিয়েছে। ফলে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ হাতিই উধাও হয়ে গেছে পার্ক থেকে। আর এই পরিসংখ্যানটাই যথেষ্ট চিন্তায় ফেলেছে উব্লিউসিএস, ডব্লিউডব্লিউএফ ও গ্যাবনের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থাগুলিকে। উব্লিউসিএস-এর প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিয়ান স্যাম্পার জানিয়েছেন, হাতির দাঁতের অবৈধ ব্যবসা ও চোরাশিকার রুখতে একমাত্র উপায় দেশবাসীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও কঠোর নিরাপত্তা। তবে বর্ন ফ্রি ফাউন্ডেশন নামে এক সংস্থার সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, গত বছরে সমগ্র আফ্রিকায় প্রায় ৩১ হাজার হাতি শিকার করা হয়েছে। তবে গ্যাবনে এর সংখ্যাটা নগণ্য। এ দিকে, মিনকেবে পার্ক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, প্রাচ্যের দেশগুলিতে হাতির দাঁতের প্রচুর দাম পাওয়া যায় বলে লাফিয়ে লাফিয়ে এর চাহিদা বাড়ছে। প্রতিদিন প্রায় ৫০-১০০টি হাতি হত্যা করা হচ্ছে। হাতি বাঁচাতে নতুন আইন আনা হবে বলে জানান গ্যাবনের প্রেসিডেন্ট আলি বঙ্গো ওনদিম্বা। তিনি আরও বলেন, চোরাশিকার ও হাতির দাঁত পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ১৫ বছর কারাদণ্ডের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

• ঘুম ভাঙায় মোরগের ‘বডি-ক্লক’
সূর্যোদয়ের আগেই ভোরের বার্তা নিয়ে আসে ‘কুক্কুড়ু কু’ ডাক। বর্তমান সাইবার যুগে আধুনিক ঘড়ি বা মোবাইল অ্যালার্মের ঢক্কানিনাদে প্রাকৃতিক এই অ্যালার্ম প্রায় বিস্মৃতির তালিকায় চলে গিয়েছে। আমাদের অতি পরিচিত ‘রুস্টারস’ বা সাহিত্যের ভাষায় কুক্কুট-ধ্বনির রহস্য নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন জাপানের বিজ্ঞানীরা। আগে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল দিনের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে অভ্যাস বা বাহ্যিক উত্তেজনাই এই ডাকের মূল উত্স। কিন্তু নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী তাকাশি জোশিমুরার মতে এই ডাক অভ্যাসগত নয় বরং জিনঘটিত। ঘড়ির কাঁটার মতোই নির্দিষ্ট সময় মেনে চলে। বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় যার নাম ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’ বা জৈবিক ঘড়ি। মোরগদের আভ্যন্তরীন এই জৈবিক ঘড়ি আলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কি না দেখার জন্য বিজ্ঞানীরা পরীক্ষাগারে মোরগদের ক্ষীণ আলোকে সারা দিন রেখে তাদের ডাক রেকর্ড করলেন। আশ্চর্যজনক ভাবে দেখা গেল প্রতি বারই নিয়ম করে সূর্যোদয়ের আগেই এই বিশেষ ডাক শোনা যায় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। এই পদ্ধতিকে ‘সারকাডিয়ান রিদম্’ বলা হয়। এটি এক ধরনের জৈবিক প্রক্রিয়া যা মানুষ-সহ বিভিন্ন প্রাণী, উদ্ভিদ, ছত্রাক ও সায়ানোব্যাকটিরিয়ার মধ্যে দেখা যায়। ২৪ ঘণ্টায় যাবতীয় শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া (ব্যাকটিরিয়ার ক্ষেত্রে রাসায়নিক) এই রিদম দ্বারা পরিচালিত হয় যা অনেকাংশে বাহ্যিক পরিবেশ যেমন আলো বা তাপমাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। তবে উদ্ভিদ ও প্রাণীর এই পরিবর্তন প্রক্রিয়া ভিন্ন।

পার্বণ
• কারৌলিতে কাইলা দেবীর মেলা
রাজস্থানের রাজপুত যাদব সম্প্রদায়ের মূল আরাধ্য দেবী কাইলা— লক্ষ্মী ও চামুণ্ডার একত্রিত রূপ। স্থানীয়দের কাছে তিনি লাহুরা বা কাইলা মাতা নামেও পরিচিত। কালিসিল নদীর পাড়ে কারৌলি জেলার ত্রিকূট পাহাড়ে কালিয়া দেবীর মন্দির। যাদবরাজ গোপাল সিংহ এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। কারৌলির সকলকে দেবী সমস্ত বিপদআপদ থেকে সর্বদা রক্ষা করেন বলে স্থানীয় মানুষের বিশ্বাস। প্রতি বছর খুব জাঁকজমকের সঙ্গে চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষে ১২ দিন ধরে কাইলা দেবীর আরাধনায় মেতে ওঠে কারৌলির দক্ষিণ-পশ্চিমে ২৪ কিলোমিটার দূরের কাইলা গ্রাম। প্রায় ২ লক্ষ মানুষ, শুধু রাজস্থান নয়— উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, পঞ্জাব, দিল্লি, হরিয়ানা-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন কারৌলিতে। পায়ে হেঁটে এই মন্দিরে পুজো দিতে আসেন অসংখ্য উপবাসী ভক্ত। পূণ্য অর্জনের আশায় দণ্ডি কেটেও ভক্তরা ১৫-২০ কিলোমিটার পথ পেরোন মন্দিরে আসতে। রাত ন’টা নাগাদ পুজো শুরু হয়। লাল পতাকায় ছেয়ে যায় মন্দির চত্বর। পশুবলি হয় এখনও। উত্সবের ১২ দিন কারৌলি যেন প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। মন্দির প্রাঙ্গণ ঘিরে বসে হস্ত ও কুটিরশিল্পের বিরাট পসরা। বছরের এই ক’টা দিন রাজস্থানের প্রত্যন্ত এলাকাটি হঠাত্ করেই যেন জেগে ওঠে। এ বছরের মেলা শুরু হয়েছে এপ্রিলের ৭ তারিখে। চলবে ১৯ পর্যন্ত। সামনের বছর অর্থাত্ ২০১৪ সালে মেলা বসবে ২৮ মার্চে।

• বিশ্বজুড়ে পঞ্জাবিদের বৈশাখী
১৬৬৯ সালের পয়লা বৈশাখ শিখদের দশম গুরু গোবিন্দ সিংহ তাঁর পূর্ববর্তী ন’জন শিখ গুরুর মতাদর্শ একত্রিত করে ‘খালসা’ রচনা করেন। সে সময় থেকেই পবিত্রতার সঙ্গে বৈশাখী পঞ্জাব-সহ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে পালিত হয়। উত্তর ভারতে বৈশাখী খুবই বিখ্যাত এক উত্সব। পাঁচ জন প্রবীণ শিখ গুরুর নেতৃত্বে শিখ ধর্মগ্রন্থ গ্রন্থসাহিব নিয়ে শোভাযাত্রা বের হয়। ধর্মীয় নিশান-সহ এই শোভাযাত্রায় অসংখ্য মহিলা-পুরুষ অংশ নেন। অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরে এ দিন মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। পূর্ব পঞ্জাবের তালওয়ান্ডি সাবো— এখানে গুরু গোবিন্দ সিংহ ন’মাস ধরে গ্রন্থসাহেবের পুনর্নির্মাণ এবং আনন্দপুর সাহিব— যেখানে ‘খালসা’ রচনা করেন তিনি। এই সময় আঞ্চলিক গানবাজনায় মেতে ওঠে পঞ্জাবের বিভিন্ন জায়গা, গুরুদ্বারগুলো সেজে ওঠে ছোট বড় অনেক মেলায়। বাহারি পোশাকে ভাঙড়া ও গিদ্ধা নাচে পঞ্জাবিরা উত্সবকে আরও রঙিন করে তোলে। বৈশাখী শুধুমাত্র ভারতে নয়— পাকিস্তান, ব্রিটেন, মালয়েশিয়া-সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই মহা ধুমধামের সঙ্গে পালিত হয়। মার্কিন মুলুকও মাতে বৈশাখিতে— প্রায় ১৫-২০ হাজার মানুষ নগর কীর্তনে (গ্রন্থসাহেব নিয়ে শোভাযাত্রা) অংশ নেন প্রতি বছর। তবে বৈশাখের প্রথম দিনটি শুধু পঞ্জাবিদের নয়, ভারতের অন্যান্য প্রদেশের মানুষেরাও বিভিন্ন কারণে এই দিনটাতে উত্সবে মেতে ওঠে। বাঙালির কাছে বর্ষবরণ তো বৌদ্ধদের কাছে বৈশাখা, অসমিয়াদের বিহু তো আবার কেরলের মানুষদের কাছে ভিশু।

• গৌরী আরাধনায় মেবার উৎসব
বসন্তের আগমনকে আরও বর্ণময় ও সঙ্গীতমুখর করে তোলে রাজস্থানের মেবার উৎসব। প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল নাগাদ রাজস্থানের উদয়পুরে এই উৎসব হয়। ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন নাচ-গান এবং আতসবাজি ও আলোর মালায় সেজে ওঠে গোটা শহর। রাজস্থানী মহিলাদের কাছে মেবার বা গঙ্গৌর খুবই পবিত্র উৎসব। এ সময় তাঁরা নতুন ও বর্ণময় সুন্দর সুন্দর রাজস্থানী পোশাক ও গয়নায় সেজে মাতা গৌরীর আরাধনায় (দেবী দূর্গা এখানে গৌরী হিসাবে পূজিত) মেতে ওঠেন। গৌরীর ছবি বা মূর্তি ডালিতে সাজিয়ে পিছলা সরোবরে পুজো দেওয়ার জন্য শোভাযাত্রায় অংশ নেন মহিলারা। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মহিলারা পিছলা সরোবরের গঙ্গৌর ঘাটে সমবেত হন। ধর্মীয় আচারের শেষে উদয়পুর মেতে ওঠে নানা ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। নৃত্যনাট্য ও সঙ্গীতের মাধ্যমে রাজস্থানের সংস্কৃতির কাহিনি বর্ণিত হয়। আতসবাজির বর্ণময় ছটায় উদয়পুরের আকাশ ঝলমল করতে থাকে। রাজস্থান ভারতের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। তাই এখানকার পর্যটন শিল্পের মুকুটে মেবার উৎসব একটি উল্লেখযোগ্য পালক।

• কেরলে নববর্ষের উত্সব— বিশু
ভারত মানেই বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য। ভারতের প্রাদেশিক সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও এই বৈচিত্র লক্ষ্যনীয়। তবে সঙ্গীত, সাহিত্য, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মধ্যে কোথাও কোথাও মিল খুঁজে পেলেও দক্ষিণ ভারতীয় সাহিত্য, সংস্কৃতি এক অনন্য এবং ভিন্ন ধারার দাবিদার। দক্ষিণী শিল্প-সংস্কৃতির বর্ণময় উপস্থিতি বিশেষ ভাবে চোখে পড়ে কেরলের অন্যতম উত্সব বিশুতে। কেরলে প্রতি বছর এপ্রিলের মাঝামাঝি অতি ধুমধামের সঙ্গে মালায়লম ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বিশু ‘নববর্ষ’ হিসাবে পালিত হয়। বৈশাখ থেকেই বিশুর আগমন। বিশুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য— অতিথিদের জন্য সাজানো বরণডালা। এই ডালাটিকে ‘কানি’ বলা হয়। কাঁসার থালায় তালপাতার পুথি, সোনার গয়না, নতুন কাপড়, হলুদ ‘কন্না’ ফুল, রূপোর পাত্রে কিছু মুদ্রা, অর্ধেক নারকেল, শশা, আম এবং কাঁঠাল দিয়ে এই ডালা সাজানো হয়। একটি চেয়ারের উল্টো দিকে এই বরণডালাটি রাখা হয় দু’পাশে দু’টি প্রদীপ জ্বালিয়ে। সারা বছর যেন ভাল কাটে, পারিবারিক সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির আশায় যুগ যুগ ধরে কেরলে এই উত্সব অত্যন্ত নিষ্ঠা ও পবিত্রতার সঙ্গে পালিত হয়।

পর্যটন কেন্দ্র
• রথীন্দ্রনাথের চশমা, চিঠি ও ছবি এ বার রবীন্দ্রভবনে
কিছু দিন আগেই ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর সংগ্রহে থাকা রবীন্দ্রনাথের চশমা, চাদর ও আরও কিছু জিনিস পেয়েছে বিশ্বভারতী। এ বার কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহৃত বেশ কিছু সামগ্রী এল। রথীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠ মীরা চট্টোপাধ্যায়ের কন্যা জয়িতা চক্রবর্তী সেগুলি আনুষ্ঠানিক ভাবে রবীন্দ্রভবনে দান করেন। রবীন্দ্রভবনের অধিকর্তা, অধ্যাপিকা তপতী মুখোপাধ্যায় বলেন, “এত দিন ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা রথীন্দ্রনাথের স্মৃতিজড়িত বেশ কিছু সামগ্রী আমরা পেলাম। তাঁর বেশ কিছু শিল্পসৃষ্টিও রয়েছে।” রবীন্দ্রনাথের পরে প্রথম উপাচার্য হিসেবে রথীন্দ্রনাথই বিশ্বভারতীর দায়িত্ব সামলেছিলেন। ব্যক্তিগত কারণে মাঝপথে স্বেচ্ছাবসর নেন। সব ছেড়ে জীবনের শেষ কয়েকটি বছর নিভৃতে দেরাদুনে কাটিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন কেবল বিনয় ভবনের ইংরেজি শিক্ষক নির্মল চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী মীরাদেবী। মায়ের কাছ থেকে পাওয়া রথীন্দ্রনাথের স্মৃতিজড়িত কিছু সামগ্রী এতদিন সযত্নে রেখে দিয়েছিলেন জয়িতাদেবী। তার মধ্যে রয়েছে চশমা, জামা, বালা, হাতে খোদাই করা শিল্পকর্ম ইত্যাদি। তার সঙ্গে বিভিন্ন প্রিয়জনকে লেখা রথীন্দ্রনাথের বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য চিঠিপত্রও রয়েছে। পাঠভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “ঠাকুর পরিবারের ওই সব দুষ্প্রাপ্য সামগ্রী পর্যটক ও গবেষকদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান হয়ে উঠবে।”

• বাঘ-সিংহের পর এ বার ভালুক সাফারি
গাছের আড়ালে একে অপরের সঙ্গে খুনসুটিতে ব্যস্ত। আর সেই দৃশ্য ঝটপট ক্যামেরা বন্দি করছিলেন অনেকেই। বিষয়টি দেখতে পেয়েই সঙ্গিনীটি তড়িঘড়ি চলে গেল ঝোপের আড়ালে। আর তার দেখা নেই। সঙ্গিনী লজ্জা পেয়ে চলে যাওয়ায়, রাগে তখন রীতিমত গজগজ করছে তার সঙ্গীটি। খুনসুটির এই গল্প দুই ভালুককে ঘিরে। তাদের ঠিকানা নন্দনকানন, ভুবনেশ্বর। দু’টি পুরুষ ও চারটি মহিলা ভালুককে নিয়ে এখানে গড়ে উঠেছে একটি মুক্তাঞ্চল। যেখানে কখনও চলে প্রেম, কখনও বিরহ। কখনও সঙ্গিনীকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার রাগে চলে মারামারিও। আর জাল দিয়ে ঘেরা বাসে চেপে সেই দৃশ্য তাড়িয়ে উপভোগ করেন দর্শনার্থী ও পর্যটকরা। সিংহ, সাদা বাঘ ও হরিণের পরে সম্প্রতি এই ‘বিয়ার সাফারি’ চালু করেছে নন্দনকানন কর্তৃপক্ষ। সাফারি পার্কটির উদ্বোধন করেছেন ওড়িশার বন ও পরিবেশ মন্ত্রী বিজয়শ্রী রাউত রায়। তাঁর কথায়, “এই সাফারি নন্দনকাননের একটি গর্বের বিষয়। তবে ভালুকের সংখ্যা আরও বাড়ানোর জন্য কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।” নন্দনকানন কর্তৃপক্ষ জানান, হায়দরাবাদ ও বেঙ্গালুরুর পরে ‘বিয়ার সাফারি’ চালু করায় তৃতীয় নন্দনকানন। নন্দনকাননের এক কর্তার কথায়, ওড়িশার বিভিন্ন গ্রামের জঙ্গলে এখনও অনেক ভালুক রয়েছে। মাঝে মধ্যেই সেগুলি লোকালয়ে বেরিয়ে আসে। তাদের মধ্যে আহত ভালুকগুলিকে নন্দনকাননে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে এখানে মোট ১৪টি ভালুক রয়েছে। তাদেরই ৬টিকে নিয়ে তৈরি হয়েছে এই ‘সাফারি পার্ক’। নন্দনকানন সূত্রের খবর, প্রায় ১০ একর জমির উপরে এই ভালুক সাফারি পার্কটি তৈরি করা হয়েছে। এটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ২ কোটি টাকা। পার্কের ভিতরেই রয়েছে চওড়া রাস্তা। জাল দিয়ে ঘেরা বাসে চেপে দর্শনার্থীরা ভালুক সাফারি পার্কে ঘোরার সুযোগ পান। টিকিট মাথাপিছু ১০ টাকা।

• নৈঃশব্দ্য মাখা কোলাডের কোলে
মহারাষ্ট্রের রায়গড় জেলার ছোট্ট একটি গ্রাম কোলাড। কুণ্ডলিকা নদী তীরবর্তী এই গ্রামটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শান্ত পরিবেশ পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। যাঁরা একটু নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ করেন তারা এই গ্রামে ছুটি কাটাতে চলে আসেন। মুম্বই থেকে রোহা হয়ে ট্রেনে মাত্র তিন ঘণ্টার পথ কোলাড। এখানে আসার আদর্শ সময় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। সহ্যাদ্রির পাদদেশে সবুজে মোড়া এই গ্রামটির মূল আকর্ষণ খরস্রোতা কুণ্ডলিকা নদীতে রাফটিং। প্রায় ১৪ কিলোমিটার জুড়ে এই অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের মজা অনবদ্য। এ ছাড়াও কায়াকিং, প্যারাগ্লাইডিংয়েরও ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। সহ্যাদ্রির উপত্যকা জুড়ে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় নান্দনিক জলপ্রপাত। বর্ষায় কোলাডের মোহময়ী রূপ আস্বাদনে অনেক পর্যটক দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন। এখানকার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলি— ভীরা বাঁধ, টালা ফোর্ট, কুড়া কেভ, তামহিনি ফল্স, সুতারওয়াড়ি হ্রদ ইত্যাদি।

• ‘অপরিচিত’ টাপোলা
মহাবালেশ্বরের নাম কে না জানে! যাঁরা পরিচিত জায়গার বাইরে একটু নতুন ধরনের জায়গায় বেড়াতে যেতে উত্সুক তাঁদের জন্য টাপোলা আদর্শ স্থান। খুব কম পর্যটকই জায়গাটির সঙ্গে পরিচিত। মহাবালেশ্বর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের এই জায়গাটিকে পশ্চিমের ‘মিনি কাশ্মীর’ বলা হয়। টাপোলার পথে রাস্তার দু’ধারে পাহাড় ও অরণ্যের শোভা উপভোগ্য। এখানে কয়না ও সলসি নদীর সঙ্গমস্থলের দৃশ্য মনোরম। কয়না নদীর উপর রয়েছে বিখ্যাত শিবসাগর বাঁধ। বাঁধের জলে বোটিং ও ওয়াটার স্পোর্টসের ব্যবস্থা রয়েছে। শিবসাগর হ্রদকে ঘিরে রয়েছে স্ট্রবেরি ও জারবেরার বাগান। এ ছাড়াও রয়েছে মন সবুজ করা বনানী এবং বসত ও জয়গড় নামে দু’টি ‘বন দুর্গ’। ভাগ্যদেবী যদি সদয় থাকেন তা হলে দেখাও মিলতে পারে বাঘ, ভালুক ও হরিণের। বন্য পরিবেশে এমন রোমাঞ্চকর দৃশ্য— পাশাপাশি হ্রদ-পাহাড়-উপত্যকার মিশেলে টাপোলা-সৌন্দর্য যেন উপচে পড়ছে!

পরিষেবা
• কলকাতা, ম্যাকাও ও মালয়েশিয়া
হেলিকপ্টারে কলকাতা ঘুরিয়ে দেখাতে ১০ মিনিটের উড়ান চালু করল একটি সংস্থা। দিঘা, শান্তিনিকেতন, হলদিয়ায় উড়ান চালাতে চেয়েছিল এই সংস্থা। এ বার উৎসুক শহরবাসী বা পর্যটকদের নিয়ে কলকাতার আকাশে ১০ মিনিট চক্কর কাটতে চায় তারা। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, একসঙ্গে ছ’জন উঠতে পারবেন হেলিকপ্টারে। এই ‘মজার উড়ান’ চলবে বেহালার পরিত্যক্ত বিমানবন্দর থেকে। কিন্তু প্রত্যেক দফায় কমপক্ষে ১০ বার যদি হেলিকপ্টার উড়তে না পারে, তা হলে আর্থিক ভাবে লাভ হবে না সংস্থার। সে ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬০ জন উৎসুক শহরবাসীকে একসঙ্গে জোগাড় করা গেলে তবেই হবে মজার উড়ান। ১০ মিনিট ওড়ার জন্য খরচ ধরা হয়েছে যাত্রী-প্রতি দু’হাজার টাকা।
অন্য দিকে কলকাতা তথা পূর্ব ভারত থেকে পর্যটকেরা যাতে সেখানে আরও বেশি করে বেড়াতে যান, তার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে ম্যাকাও। চিনের এই প্রদেশে ২০১২-য় ভারত থেকে প্রায় দেড় লক্ষ পর্যটক গিয়েছিলেন। কিন্তু, ভারতে ম্যাকাও পর্যটন দফতরের প্রতিনিধি সঞ্জিৎ জানান, তুলনায় পূর্ব ভারতের পর্যটকের সংখ্যা কম। অথচ বিভিন্ন সংস্থা নিয়মিত কনফারেন্সের আয়োজন করছে সেখানে। এখান থেকে সপরিবারে বর ও কনেকে নিয়ে গিয়ে বিয়েও হচ্ছে। সঞ্জিৎ বলেন, “বিমান ভাড়া-সহ ৫০ হাজার টাকায় কলকাতা থেকে গিয়ে তিন রাত ম্যাকাও ও দু’রাত হংকং-এ থাকা যাচ্ছে। তবে খাওয়ার খরচ নিজেদের।”
আবার মালয়েশিয়া যাতায়াতের প্যাকেজের সঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে ফর্মুলা ওয়ান গ্রাঁ প্রি-র টিকিট। দিচ্ছে কলকাতার এক ট্রাভেল এজেন্ট সংস্থা। ২৪ মার্চ সেখানে গ্রাঁ প্রি ফাইনাল। যাতায়াতের প্যাকেজ পাওয়া যাচ্ছে ২১ থেকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত। ন্যূনতম দু’জন গেলে যাতায়াতের বিমান ভাড়া, ভিসা, ৫ রাত তিন-তারা হোটেলে থাকা ইত্যাদি মিলিয়ে মোট খরচ ৭০ হাজার টাকা।

• তিরুঅনন্তপুরম থেকে দুবাই— ইন্ডিগোর নতুন উড়ান
গত মাসের ১ তারিখ থেকে তিরুঅনন্তপুরম ও দুবাইয়ের মধ্যে প্রত্যহ সরাসরি উড়ান চালু করল ভারতের অন্যতম প্রধান বিমানসংস্থা ইন্ডিগো। সংস্থার প্রেসিডেন্ট আদিত্য ঘোষ জানিয়েছেন, দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষত দুবাই অঞ্চলের মধ্যে র্কমসূত্রে ও র্পযটন শিল্পর কারণে এই দুই গন্তব্যের মধ্যে যাতায়াত করা লোকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এই বিশেষ উড়ানের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই উড়ানে যাওয়া ও আসায় খরচ হবে ১১,৯৯৮ টাকা। উড়ানটি প্রত্যেক দিন ভারতীয় সময় সন্ধে ৬টা ২০ মিনিটে তিরুঅনন্তপুরম থেকে রওনা হবে এবং দুবাই পৌঁছবে রাত ৯টা ১৫ মিনিটে (দুবাইয়ের সময় অনুযায়ী)। ফেরার উড়ানটি দুবাই থেকে সকাল ১১টা ২৫ মিনিটে ছাড়বে এবং ভারতে পৌঁছবে বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে। তিনি আরও জানিয়েছেন শীঘ্রই মুম্বই থেকে দুবাই র্পযন্ত সরাসরি উড়ান চালু করারও পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।

• মুম্বই বিমানবন্দর থেকে উড়ানের খরচ বেড়ে ফের কমল
উন্নয়ন ফি বাড়ায় গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজি আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রীদের উড়ানের টিকিটের দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল। এয়ারপোর্ট ইকনমিক রেগুলেটরি অথরিটি (এইআরএ) একটি ৫০০ পৃষ্ঠার নির্দেশাবলী জানিয়েছে, তারা এই উন্নয়ন ফি প্রায় ১৫৪ শতাংশ বাড়িয়েছে। যার ফলে অর্ন্তদেশীয় উড়ানের ক্ষেত্রে যাত্রীদের টিকিট প্রতি ৩৪৬ টাকা এবং আর্ন্তজাতিক উড়ানের ক্ষেত্রে টিকিট প্রতি ৬৯২ টাকা বেশি দিতে হবে। এই নির্দেশাবলীতে আরও জানানো হয়েছিল, এই নিয়ম শুধুমাত্র ৩১ মার্চ ২০১৩ পর্যন্ত কার্যকর হবে। গত ১ এপ্রিল থেকে বর্দ্ধিত ফি কিছুটা কমে অর্ন্তদেশীয় উড়ানের ক্ষেত্রে হবে টিকিট প্রতি ২৭৪ টাকা এবং আর্ন্তজাতিক উড়ানের ক্ষেত্রে হবে টিকিট প্রতি ৫৭৪ টাকা। আগামী এক বছর অর্থাৎ চলতি আর্থিক বর্ষ পর্যন্ত কার্যকর হবে। পরে প্রয়োজনে এর পরির্বতন ঘটানো হতে পারে।
অন্য দিকে ভারতে অন্তর্দেশীয় উড়ানের টিকিটের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া ও জেট এয়ারওয়েজের মতো বিমান সংস্থাগুলি। তাদের বক্তব্য বিমানের জ্বালানির সারচার্জ বাড়ায় তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গন্তব্য এক হাজার কিলোমিটারের বেশি হলে টিকিট প্রতি বাড়বে ১৫০ টাকা এবং এক হাজার কিলোমিটারের কম হলে টিকিট প্রতি ১০০ টাকা বাড়বে বলে জানিয়েছে সংস্থাগুলি। এ মাস থেকেই এই বর্ধিত মূল্য কার্যকর হবে। ইন্ডিগো, গোএয়ার বা স্পাইস জেট এখনও ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে সূত্রের খবর শীঘ্রই তারা একই রাস্তায় হাঁটবে।

• গরমের ছুটিতে দক্ষিণ রেলের স্পেশাল ট্রেন
গরমের ছুটিতে যাত্রীদের চাপ কমাতে লোকমান্য তিলক র্টামিনাল থেকে তিরুনেলভেলি র্পযন্ত দ্বিসাপ্তাহিক স্পেশাল ট্রেন চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে দক্ষিণ রেলওয়ে। ট্রেনগুলি লোকমান্য তিলক র্টামিনাল থেকে যথাক্রমে এপ্রিলের রবিবারগুলি ১৪ ও ২৮ তারিখ এবং মে মাসের ১২ ও ২৬ তারিখ দুপুর ২টো ৩০ মিনিটে তিরুনেলভেললির উদ্দেশে রওনা হবে। তিরুনেলভেলি থেকে লোকমান্য তিলক র্টামিনালের উদ্দেশে ট্রেনগুলি ছাড়বে যথাক্রেমে এপ্রিল মাসের ১৬ ও ৩০ তারিখ এবং মে মাসের ১৪ ও ২৮ তারিখ দুপুর ১টা ৪৫ মিনিটে।

খবর এক মুঠো
এক ঝলকে ঘুরে আসা ভিন্ন স্বাদের খবর-দুনিয়ায়... বিস্তারিত।
 
সংবাদসংস্থা, ইন্টারনেট থেকে নেওয়া ও নিজস্ব চিত্র।
রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যাসংবাদের হাওয়াবদলআপনার রান্নাঘরস্বাদবদল চিঠিপুরনো সংস্করণ