খবর এক মুঠো
আর কানে শোনা নয়, এ বার চোখে দেখার পালা। অরুণাচলের তাওয়াং জেলায় তুষার চিতাবাঘের (স্নো-লেপার্ড) ছবি তুলতে পাতা হচ্ছে ক্যামেরা। সাম্প্রতিক সমীক্ষায়, এখানকার বরফ ঢাকা পাহাড়ে তুষার চিতাবাঘ থাকার পোক্ত প্রমাণ মিলেছে বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি। পাওয়া গিয়েছে চিতাবাঘের পায়ের ছাপ, বিষ্ঠা ও তাদের খাওয়া নীল ভেড়ার দেহাংশ।

পদভারে তাজ কম্পমান! মূল অবস্থান থেকে সামান্য হলেও বিচ্যুত হয়েছে তার মিনার। আর এ জন্য পর্যটকদের পায়ের চাপকেই মূলত দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাজকে বাঁচাতে তাই অবিলম্বে মার্বলের কাঠামোর উপরে পর্যটকদের ওঠা বন্ধ করতে উদ্যোগ ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এএসআই)।
শরীরের অসুখ সারাতে ডাক্তার ও ওষুধ ছাড়া গতি নেই। ঐতিহাসিক সৌধের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। সময়ের অভিঘাতে তার ভগ্ন-জীর্ণ দশা শোধরাতেও চাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ। এ কথা মাথায় রেখেই পুরনো ভবন সংস্কারে নতুন একটি রসায়নাগার তৈরি করেছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন।
ছেলেকে এ ভাবে ‘জলে’ ফেলে দেওয়া যায় নাকি! দুনিয়ার হালচাল ভাল করে বুঝিয়ে দিতে হবে তো। তবে এ দুনিয়া মোটেই ইট-কাঠ-পাথরের নয়। একেবারে অগাধ সমুদ্র। আর যার কথা বলা হচ্ছে, সে হল ‘খুনে তিমি’। পুত্রসন্তানের জন্যই যার দীর্ঘ জীবন।
হাসছি মোরা, হাসছি দেখো, হাসছি মোরা আহ্লাদি...। বাঁকা হাসি, ন্যাকা হাসি, ফোকলা দাদুর বাঁধানো দাঁতের হাসির পিছনে লুকিয়ে আছে প্রায় ৪০ কোটি বছরের ইতিহাস। বাঁদর কিংবা শিম্পাঞ্জি নয়, মানুষের হাসির ‘জনক’ কম্পাগোপিসিস মাছ।
রাস্তার এক পাশে হলুদ রঙচটা টিনের বোর্ড—‘ওরা গ্রামেরই একজন। ওদের বাঁচতে দিন।’ তোবড়ানো বোর্ডের নীচে তির চিহ্নে দিক নির্দেশ, পাটুলি-বাদুড়তলা। আর এই বাদুড়ের ডানায় ভর করে রাষ্ট্রপুঞ্জে পাড়ি দিচ্ছে পাটুলি।
“যিশু তাঁদের বললেন, আমার স্ত্রী...”। ছোট্ট এক টুকরো প্যাপিরাসের উপর কালো কালি দিয়ে লেখা আছে এ কথাই। আর এর দৌলতে আবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে বহুচর্চিত সেই প্রশ্ন যিশু কি বিবাহিত ছিলেন?
হিমালয়ের থেকেও প্রাচীন অরণ্যবিশিষ্ট ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালা এ বার যোগ হল ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায়। জীববৈচিত্র্যের এমন সমাহারের জন্য বিশ্বের আটটি প্রধান জায়গার মধ্যে স্থান করে নিয়েছে পশ্চিমঘাট।

সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য সমাবেশের ৪০তম বর্ষ অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকার গৌতং-এ। দেশের সংস্কৃতি, পর্যটন, পরিবেশ ও গৃহমন্ত্রক থেকে ষোলো জন মন্ত্রী-সহ সেখানে উপস্থিত ছিলেন তিনশোরও বেশি প্রতিনিধি।

প্যাঁচামুখো বাঁদরের সঙ্গে মিল থাকলেও নতুন প্রজাতির বাঁদরের খোঁজ মিলল কঙ্গোয়। নাম লেসুলা। বুক-চিবুক সোনালি, হাত-পা কালচে। পিছনে লাল-নীলের অদ্ভুত মিশেল।

একটা বোলতাকে খেতে যাচ্ছিল মাকড়সাটি। তখনই প্রকৃতির রোষে মারা যায় সে। ১০ কোটি বছর পর সন্ধান মিলল ডাইনোসর যুগের ওই মাকড়সাটির অবিকৃত জীবাশ্মের।

ভারত তথা এশিয়ায় প্রথমবার দেখা মিলল লুনা মথ বা অ্যাকটিয়াস লুনার। এমনটাই দাবি করছেন, পশুপ্রেমী সংস্থা সেভেন লুক-এর কর্তা পলাশরঞ্জন গোস্বামী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মথ প্রজাতির অন্যতম এই মথ হালকা সবুজ রংয়ের হয়। ডানার বিস্তার ৭৫ থেকে ১১৪ মিলিমিটার অবধি। প্রধানত উত্তর আমেরিকা, কানাডা ও মেক্সিকোতে লুনা মথ দেখা যায়। ভারতে দেখা মেলে এক নিকটাত্মীয় ইন্ডিয়ান লুনা মথের। কিন্তু এই প্রথমবার অসমে লুনা মথ থাকার নিশ্চিত প্রমাণ নথিভুক্ত হয়েছে।

ইউনেস্কো— কে না জানে এই সংস্থার নাম ও তার কর্মকাণ্ড! বিশ্ব জুড়ে প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক স্থান ও স্থাপত্য সংরক্ষণ ও সংস্কার করে আগামী প্রজন্মের জন্য সুরক্ষিত রাখাই এর প্রধান কাজ। অথচ সেই কাজেই দেখা দিয়েছে আর্থিক বাধা। সংস্থার প্রায় ২২ শতাংশ বাজেট এখন ভাটার মুখে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র গত বছর থেকে আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোনও সংস্থার সঙ্গে যদি প্যালেস্তাইনের নাম সদস্য হিসেবে থাকে, তা হলে সেখানে কোনও রকম অর্থ সাহায্যই করা হবে না— ১৯৯০ সালে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিস্থাপিত এই আইনের কারণেই এই বিপত্তি।

এখানেই হত্যা করা হয় জুলিয়াস সিজারকে। ভোর না হতেই ব্যস্ত পায়ের আনাগোনা। কেউ ধরবেন ট্রাম, কেউ আবার ছুটছেন বাসের পিছনে। আর রোজকারের এই ব্যস্ততা ছুঁয়েই হাজার হাজার বছর ধরে পথের পাশে পড়ে রয়েছে রোম সম্রাট সিজারের শেষ মুহূর্তের সাক্ষী। ‘ব্রুটাস তুমিও?’ শেক্সপিয়ারের লেখনীর দৌলতে ছুরিকাহত সিজারের শেষ উক্তির সঙ্গে পরিচিত মোটামুটি সকলেই। সমকালীন সাহিত্য থেকে পরবর্তী কালের বিভিন্ন লেখাপত্তর, থিয়েটার-সিনেমায় নানা ভাবে উঠে এসেছে সিজারের মৃত্যুর মুহূর্ত। কিন্তু তাঁর মতো দোর্দণ্ডপ্রতাপ শাসকের বুকে ছুরি মারার ঘটনা ঠিক কোথায় ঘটেছিল, তার কোনও ঐতিহাসিক প্রমাণ অবশ্য আগে মেলেনি। সম্প্রতি রোম সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিক কেন্দ্র তোরে আর্হেন্তিনার ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা করে দেখেন কয়েক জন স্পেনীয় গবেষক। তাঁদের দাবি, অবশেষে চিহ্নিত করা গিয়েছে সেই বিশেষ জায়গা। তিন মিটার চওড়া, দু’মিটার লম্বা আয়তকার কংক্রিটের এক কাঠামো খুঁজে পেয়েছেন স্পেনের ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের সদস্যরা। আন্তোনিও মন্তেরোসা নামের এক গবেষকের কথায়, ওই কাঠামোটি এখন যেখানে আছে, সেখানেই পড়ে যান ছুরিবিদ্ধ সিজার। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পরে কাঠামোটি তৈরি করেছিলেন জুলিয়াস সিজারের পালিত সন্তান অগস্তাস। এখন গবেষকরা রোমের ইতিহাসের নতুন দিশার সন্ধানে।

মেয়েরাও পারেন। শুনতে এই যুগের হুজুগ মনে হলেও কথাটা যে সব যুগেই সত্যি, ফের তার প্রমাণ পেলেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। সম্প্রতি উত্তর-পশ্চিম ভিয়েনার গাইটজেনডর্ফ থেকে এক মহিলার কঙ্কাল উদ্ধার করেছেন অস্ট্রিয়ার জাদুঘরের এক দল প্রত্নতত্ত্ববিদ। তাঁর কবর থেকে পাওয়া বিভিন্ন উপকরণ থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদদের প্রাথমিক ধারণা, আসলে কামারের কাজ করতেন ওই মহিলা। তা-ও ব্রোঞ্জ-যুগে। দেখে শুনে তাঁদের চক্ষু চড়কগাছ। কী করে বুঝলেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা, যে ওটি আসলে এক মহিলা কামারের কঙ্কাল? ডিরেক্টর আর্নেস্ট লোয়েরমনের মতে, আসলে ব্রোঞ্জ যুগের রীতিই ছিল, সমাহিত ব্যক্তির কবরে তাঁর পেশার সঙ্গে যুক্ত সামগ্রী রেখে দেওয়া। আর ওই মহিলার কবর থেকে উদ্ধার হয়েছে হাতুড়ি, কাস্তের মতো যন্ত্রপাতি। দেখে মনে হবে, কবর দেওয়ার সময় খুব যত্ন করে ওই মহিলার দেহের পাশে রেখে দেওয়া হয়েছিল ওই সব সামগ্রী। যা থেকে তাঁদের ধারণা, ওই মহিলা পেশায় আসলে কামারই ছিলেন। তবে, হতে পারে, কামার না হলেও ধাতু দিয়ে গয়না তৈরির কাজ করতেন ওই মহিলা। উল্লেখযোগ্যভাবে, তা-ও আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে।

প্রায় হাজার বছরের পুরনো একটি অর্ধনারীশ্বর মূর্তি খুঁজে পাওয়া গেল উত্তর ২৪ পরগনার সুখচরে। পুরাতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, পাল-সেন যুগের ওই মূর্তি অবিলম্বে সংরক্ষণ করা দরকার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের প্রধান রূপেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সেনদের সময়ে ভাগীরথীর ধারে সুখচরে অর্ধনারীশ্বরের একটি মন্দির করা হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। ধোয়ীর পবনদূতেও এই অর্ধনারীশ্বর মন্দিরটির উল্লেখ রয়েছে।” দ্বাদশ শতকের বাঙালি কবি ধোয়ী কালিদাসের মেঘদূত অনুসরণ করে মন্দাক্রান্তা ছন্দে পবনদূত কাব্য লিখেছিলেন। রূপেন্দ্রকুমারবাবু বলেন, “এই মন্দিরের উল্লেখ রয়েছে সেনদের শিলালিপিতেও। এই মূর্তিটি সেই মন্দিরেরই বিগ্রহ বলে মনে করা হচ্ছে।” বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপিকা স্বাতী রায়েরও একই মত। তাঁদের বক্তব্য, “এই মূর্তি দ্রুত সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।” উর্ধ্বলিঙ্গ এই মূর্তিটি পূর্ব ভারতের অর্ধনারীশ্বর বিগ্রহের একটি চমৎকার নমুনা। প্রাথমিক সমীক্ষার পরে পুরাতত্ত্ব দফতরের অনুমান, খুবই ভারী এই মূর্তিটি প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা।

রাজার রাজত্ব নয়, বরং দাপুটে রানির রাজত্বেই বিশ বছর কাটিয়েছিলেন প্রজারা। মায়া সভ্যতার ইতিহাসের প্রবল প্রতিপত্তিশালী সেই রানির সমাধি সম্প্রতি গুয়াতেমালার এল পেরু-ওয়াকা থেকে খুঁজে বের করেছেন ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল প্রত্নতত্ত্ববিদ। তাঁদের মতে, রাজ্যের শাসনভার রানির স্বামীর হাতে থাকা সত্ত্বেও আসল ক্ষমতা ছিল ওই মহিলারই। ইতিহাস যাঁকে চিনে এসেছে রানি কে’আবেল নামে, এত দিনে তাঁর সমাধি খুঁজে পেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি প্রত্নতত্ত্ববিদের দল। দলের ডিরেক্টর ডেভিড ফ্রেইডেল জানাচ্ছেন, চলতি বছরের জুন মাসেই সন্ধান মিলেছিল ওই সমাধির। পরে তার মধ্যে খনন করে খুঁজে পাওয়া যায় এক বিশেষ ধরনের জলের পাত্র। যাতে খোদাই করা রয়েছে এক নারী-মূর্তি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ওই নারী-মূর্তি আসলে রানি কে’আবেলেরই। তবে জলের পাত্র ছাড়াও বেশ কিছু বাসনও খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। সেই সব বাসন এবং সমাধির উপরের বিশাল পাথরের চাঁইয়ের (স্টেলা) নকশা দেখে তাঁরা মোটামুটি নিশ্চিত সমাধিটি সপ্তম শতকের মায়া-রানি কে’আবেলেরই। ক্ষমতায় যিনি পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন নিজের স্বামী, রাজা কে’ইনিখ বহলামকেও। বিশেষজ্ঞদের মতে, মায়া সভ্যতার শেষ পর্যায়ের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রশাসক ছিলেন কে’আবেল। প্রবল ক্ষমতাসম্পন্ন এই রানিকে তাঁর রাজত্বকালেই ‘সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধার’ উপাধি দেওয়া হয়। প্রত্নতত্ত্ববিদদের দাবি, রাজা কে’ইনিখ বহলামের থেকেও যে রানি কে’আবেল শক্তিশালী ছিলেন, তা বোঝানোর জন্যই ওই উপাধি দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। আপাতত তাই স্বামীকে টেক্কা দেওয়া এ হেন ‘ব্যতিক্রমী’ স্ত্রী-র সমাধি নিয়েই মজে রয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা।