তাওয়াঙে সন্ধান তুষার চিতাবাঘের, বসানো হবে ক্যামেরা
র কানে শোনা নয়, এ বার চোখে দেখার পালা। অরুণাচলের তাওয়াং জেলায় তুষার চিতাবাঘের (স্নো-লেপার্ড) ছবি তুলতে পাতা হচ্ছে ক্যামেরা। সাম্প্রতিক সমীক্ষায়, এখানকার বরফ ঢাকা পাহাড়ে তুষার চিতাবাঘ থাকার পোক্ত প্রমাণ মিলেছে বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি। মিলেছে তাদের পায়ের ছাপ, বিষ্ঠা ও চিতাবাঘের খাওয়া নীল ভেড়ার দেহাংশ।
বর্তমানে বিশ্বের বিড়ালজাতীয় প্রাণীগুলির মধ্যে বিরলতম এই তুষার চিতাবাঘ। পশু বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বে মেরেকেটে আর ১০০ থেকে ২০০টি তুষার চিতাবাঘ রয়েছে। এদের বসতি মূলত মধ্য এশিয়ার বরফঢাকা পাহাড়ে।
ভারতে হিমাচল প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, লাদাখ, সিকিমে এই চিতাবাঘের বসতি ছিল। পশুবিজ্ঞানীদের কাছে এদের বর্তমান সংখ্যা , বাসভূমি বা চারণভূমি নিয়ে নির্দিষ্ট তথ্য বা ছবি বেশি নেই। আইইউসিএন (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনসার্ভেশন অফ নেচার)-এর লাল তালিকায় থাকা এই প্রাণীটি সাধারণত সাড়ে ৯ হাজার ফুট থেকে ১৫ হাজার ফুট উচ্চতায় ঘোরাফেরা করে। খাবার বলতে ভেড়া, চমরি গাই।
তুষার চিতাবাঘকে নিয়ে ২০০৯ থেকে ভারতে সমীক্ষা শুরু হয়েছে। জানা গিয়েছিল, তাওয়াং-এর কিছু গ্রামে গোপালকরা তুষার চিতাবাঘ দেখতে পেয়েছেন। সেই সূত্র ধরেই, ডব্লিউডব্লিউএফ গত জুন মাসে তাওয়াং জেলার মাগো ও থেম্বাং-এ তুষার চিতাবাঘের সন্ধানে সমীক্ষা শুরু করে। প্রায় ২০ দিন ধরে সাড়ে ৯ হাজার ফুট থেকে শুরু করে ১৪ হাজার ফুট উচ্চতা অবধি পাহাড়ে সন্ধান চালায় সমীক্ষক দলটি। শেষ অবধি তুষার চিতাবাঘের দেখা না মিললেও ১৪ হাজার ফুট উচ্চতায় তাঁরা চিতাবাঘের শিকার করা নীল ভেড়ার দেহাংশ দেখতে পান। আর মেলে প্রচুর পায়ের ছাপ ও চিতাবাঘের বিষ্ঠা। যার ডিএনএ পরীক্ষা থেকে তুষার চিতাবাঘের চারণভূমি, লিঙ্গ জানা সম্ভব। আটটি দলে মোট ৮৯টি নীল ভেড়াও দেখতে পান তাঁরা।
—ফাইল চিত্র
মাগো নামেই গ্রাম। মাত্র ৬৩টি বাড়ি রয়েছে সেখানে। নিকটবর্তী রাস্তা বলতে জং। যেখানে পৌঁছতে হলে নিদেনপক্ষে আড়াই দিন হাঁটতে হয়। ১০ হাজার ফুটের উপর থেকে মাগোবাসীর জীবনযাত্রা শুরু। প্রায় ১৪ হাজার ফুট অবধি চমরি গাই নিয়ে তাঁদের নিত্য আনাগোনা। তুষার চিতাবাঘের বসতির বুক চিরেই গরু চরাবার রাস্তা। তাই উভয়ের হামেশাই দেখা হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, এলাকায় ভেড়া বিস্তর রয়েছে বলেই তুষার চিতাবাঘের খাদ্যের অভাব হয় না।
পরোক্ষ প্রমাণ তৈরি। এ বার তুষার চিতাবাঘের গতিবিধি ক্যামেরাবন্দি করতে উদ্যোগী হয়েছে ডব্লিউডব্লিউএফ। ডব্লিউডব্লিউএফ জানায়, এদের দেখা মেলা দুষ্কর। তাই ছবি তোলার জন্য অনন্তকাল বসে থাকাও সম্ভব নয়। পেতে রাখা ক্যামেরাই ভরসা। কিন্তু ক্যামেরার রক্ষণাবেক্ষণ কে করবে? এত উঁচুতে দিনের পর দিন বিশেষজ্ঞরা বসে থাকতে পারবেন না। তাই স্থানীয় গ্রামবাসীদের মধ্যে উৎসাহীদের বাছাই করে ক্যামেরা দেখভাল করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
তুষার চিতাবাঘের চামড়া, হাড়ের চড়া চাহিদা চিন, তিব্বতে। তবে মাগোবাসী চোরাচালানের জন্য নয়, চিতাবাঘ মারেন প্রাণ ও গবাদি পশু বাঁচাতে। স্থানীয় গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পাহাড়ের চূড়ার দিকে মাঝেমধ্যেই চমরি গাইয়ের পালে হানা দেয় সাদা রং-এর বাঘ। গোপালকদের পাল্টা আক্রমণে সাদা বাঘ মারাও যায়। গ্রামবাসীরা জখম হন। বাসিন্দাদের সাফ বক্তব্য, তুষার চিতাবাঘ বাঁচানোর থেকে চমরি গাই বাঁচানোই তাঁদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ডব্লিউডব্লিউএফ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের আলোচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, নিহত গবাদি পশুর বিনিময়ে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পেলে তাঁরা তুষার চিতাবাঘের সংরক্ষণে হাত মেলাতে তৈরি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.