প্রস্তাব দিতে চায় ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ
শরীরে ক্ষয়, দূর থেকেই বলুন বাহ্ তাজ
দভারে তাজ কম্পমান!
পর্যটকের ভিড়ে টলমল করছে তাজমহল। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মূল অবস্থান থেকে সামান্য হলেও বিচ্যুত হয়েছে তাজমহলের মিনার। মূল কাঠামোটির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা। আর এর জন্য পর্যটকদের পায়ের চাপকেই মূলত দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে পর্যটকদের হাতের ঘষা, নিঃশ্বাসের কার্বন ডাই অক্সাইডও তাজের ক্ষতি করছে বলে দেখা গিয়েছে। তাজকে বাঁচাতে তাই অবিলম্বে মার্বেলের কাঠামোর উপরে পর্যটকদের ওঠা বন্ধ করতে চাইছে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এএসআই)। এ দেশের পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদেরই।
তাজমহলে পর্যটকদের ভিড় রুখতে প্রথম পদক্ষেপ করা হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি সেই প্রথম সপ্তাহে এক দিন তাজমহল বন্ধ রাখার পরামর্শ দেয়। কিন্তু সেটাই যথেষ্ট নয় বলে এখন মনে করছে এএসআই।
এএসআই-এর পক্ষ থেকে সম্প্রতি ‘সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাজমহলের মূল কাঠামোর জিওডেটিক (ভূত্বক) সমীক্ষা করার। এই জাতীয় সমীক্ষা এবং মানচিত্র তৈরির কাজ এই কেন্দ্রীয় ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থাই করে থাকে।

মার্বেলের কাঠামোর উপরে ভিড়ের এই প্রবল চাপেই ক্ষতি তাজের।
সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাজমহলের চার কোণে যে চারটি মিনার রয়েছে, সেগুলি তাদের নিজেদের অবস্থান থেকে কিছুটা হেলে গিয়েছে। কতটা হেলে গিয়েছে, সেটা এখনই প্রকাশ করা হয়নি। তবে এ বার থেকে প্রতি বছর জিপিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে তাজের বিভিন্ন অংশের সরণ ঘটছে কি না, পরীক্ষা করে দেখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এএসআই-কে।
তাজমহলের উপর প্রথম বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয় ১৯৪১ সালে। তখনই দেখা গিয়েছিল, তাজের চারটি মিনারের মধ্যে তিনটি মিনার ৩.৭ থেকে ১১.৪ সেন্টিমিটার হেলে রয়েছে। আর দক্ষিণ প্রান্তের মিনারটি প্রায় ২১.৬ সেন্টিমিটার হেলে রয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছিল, দু’টি কারণে মিনারগুলি হেলে থাকতে পারে। প্রথমত, ওই মিনারগুলি তৈরির সময়েই কিছুটা কাত করে নির্মাণ করা হয়ে থাকতে পারে। (অনেকের মতে, ভূমিকম্প হলে মিনারগুলি যাতে কোনও অবস্থাতেই মূল কাঠামোর উপর না পড়ে, সেই জন্যই বাইরের দিকে কাত করে তৈরি করা হয়েছিল সেগুলি) দ্বিতীয়ত, এলাকাটি যমুনা সংলগ্ন হওয়ায় ভূমিক্ষয়ের কারণে মিনারগুলি হেলে পড়ে থাকতে পারে।
১৯৪১ থেকে ২০১২। মাঝের বছরগুলোয় তাজ যেটুকু হেলেছে, তার পিছনে কিন্তু যমুনার ভূমিক্ষয়ের থেকেও পর্যটকদের চাপকেই দায়ী করছে নতুন রিপোর্ট। পর্যটকদের পায়ের চাপ সব থেকে বেশি পড়ছে মূল সমাধি কক্ষে। তা হলে মিনারগুলি হেলছে কেন? এএসআই বলছে, মিনারগুলি মূল মার্বেল কাঠামোরই অঙ্গ। কয়েক মিটার উঁচু ওই মিনারগুলি মূল কাঠামোর ভিত্তিভূমি থেকে সেই অর্থে কোনও অবলম্বন ছাড়াই দাঁড়িয়ে রয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মূল কাঠামোতে ক্ষতি হওয়ায় তার প্রভাব প্রথমে পড়েছে মিনারগুলিতেই।
একটি বেসরকারি রিপোর্টেও একই ধরনের সাক্ষ্য মিলছে। বলা হচ্ছে, শাহজাহান ও মমতাজের সমাধিটি যেখানে রয়েছে, সেই মেঝের উত্তর দিকের অংশটি দক্ষিণ দিকের অংশের থেকে এক ইঞ্চি ঢালু। মুঘল স্থাপত্য বিশেষজ্ঞ ও রাজস্থান বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আর নাথের কথায়, সম্ভবত মূল কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াতেই এই ঢাল তৈরি হয়েছে।
এএসআইয়ের বক্তব্য, তাজমহলের মূল কাঠামোটিকে দৃঢ় করার জন্য সে সময়কার স্থপতিরা যথাসম্ভব নির্ভুল প্রযুক্তির সাহায্যই নিয়েছিলেন। মার্বেলের ওজন ধরে রাখার জন্য একাধিক স্তম্ভ, ধনুকাকৃতি ছাদ বা খিলান ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু প্রতি দিন প্রায় সহস্রাধিক মানুষ এই সৌধ দেখতে আসবেন, স্বাভাবিক ভাবেই এটা তাঁদের চিন্তায় ছিল না।
এখন সাধারণ দিনে ২৫ থেকে ৩০ হাজার পর্যটক আসেন তাজমহল দেখতে। শীতকালে সংখ্যাটি বেড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার হয়ে দাঁড়ায়। গত দু’-তিনটি উৎসবের মরসুমে এএসআই দেখেছে প্রতি দিন লক্ষাধিক মানুষ ভিড় জমিয়েছেন তাজ দর্শনে। সংস্থার মতে, এক লক্ষ পর্যটকদের মধ্যে প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যটক কোনও এক সময়ে তাজের মূল চত্বরে উপস্থিত থাকেন।

ভবিষ্যতে হয়তো এই চবুতরার সামনে থেকেই তাজ দর্শন করতে হবে।
শুধু পায়ের চাপই নয়। এএসআইয়ের এক কর্তার কথায়, “লক্ষ করলে দেখা যাবে, ক্রমাগত হাতের ঘষায় বিভিন্ন স্থানে মার্বেলের কিনারাগুলি মসৃণ হয়ে গিয়েছে। জানলার জালিগুলিও নোংরা হয়ে পড়ছে। হারাচ্ছে সূক্ষ্মতা।”
এক শ্রেণির পর্যটকের মধ্যে সাদা মার্বেলে পেন দিয়ে নিজেদের নাম লিখে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এমনকী পরিশ্রান্ত দর্শকেরা তাজের পিছন দিকে চাতালে যে অংশগুলিতে বসেন, সেটিও ক্ষয়িষ্ণু।
বর্তমানে মার্বেলের সিঁড়ি কাঠের ধাপ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। গর্ভগৃহের ভিতরে কবরের চারপাশে যে সূক্ষ্ম জালির কাজ রয়েছে, সেগুলির চারপাশে কাঠের ব্যারিকেড তৈরি করে দেওয়া আছে। কিন্তু তাতেও সুরাহা হয়নি। কারণ যে বিপুল সংখ্যক মানুষ ওই গর্ভগৃহে প্রবেশ করেন, তাঁদের শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড ও মার্বেলের বিক্রিয়া ঘটছে। সুতরাং তাজকে বাঁচাতে হলে কড়া সিদ্ধান্ত নিতেই হবে বলে মনে করছে এএসআই।
কী সেই সিদ্ধান্ত?
এখন যেখানে জুতো ছেড়ে পর্যটকেরা তাজের মূল চত্বরে ওঠেন, অদূর ভবিষ্যতে সেখান থেকেই বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যটিকে দেখার প্রস্তাব দিতে চলেছে এএসআই। এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছেন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ট্রাস্ট ফর আর্ট অ্যান্ড কালচারাল হেরিটেজ-এর অন্যতম শীর্ষ কর্তা এ জি কৃষ্ণ মেনন। তাঁর কথায়, “পর্যটকেরাই তাজমহলের বিপদের কারণ। তাই এই ধরনের সিদ্ধান্ত যত দ্রুত নেওয়া যায় তত ভাল।”
গ্রিস, স্পেন বা কম্বোডিয়ার মতো বহু দেশ অনেক আগেই এই ধরনের পদক্ষেপ করেছে। গ্রিসের পার্থেনন ও অ্যাক্রোপলিস-সহ সমস্ত মন্দির বাইরে থেকে দর্শন করতে হয়। কম্বোডিয়ার আঙ্কোরভাট মন্দিরে উপরের অংশে পর্যটকদের যেতে দেওয়া হয় না। স্পেনের আলতামিরা গুহাচিত্র দেখার ক্ষেত্রেও বাধানিষেধ রয়েছে পর্যটকদের জন্য। ইতালিতে পিসার হেলানো মিনারেও বেশ কিছু দিন পর্যটক ওঠা বন্ধ রাখা হয়েছিল। বর্তমানে অবশ্য পর্যটকরা আবার উপরে ওঠার সুযোগ পাচ্ছেন।
তাজের ক্ষেত্রে এমন কড়াকড়ি করা হলে পর্যটন শিল্পে তার প্রভাব পড়তে পারে। এএসআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল গৌতম সেনগুপ্ত তাই বলছেন, “প্রতি বছর এখানে কত পর্যটক আসেন এবং কাঠামোটি ওই ভার নেওয়ার জন্য কতটা সক্ষম, সেটা আগে খতিয়ে দেখবে ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইন্সটিটিউট (নিরি)।” অজন্তার গুহাগুলিতেও ‘নিরি’কে দিয়ে সমীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই সমীক্ষার রিপোর্ট আসার পরেই পর্যটকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাববে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক।
তাজের মূল কাঠামোয় উঠতে না পারলে পর্যটকদের উৎসাহ কমে যাবে কি? ‘ট্র্যাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনিস কলসি অবশ্য তেমন আশঙ্কা করছেন না। তাঁর কথায়, “যারা সত্যি তাজমহল দেখতে ইচ্ছুক, তাদের দূর থেকে দেখতেও আপত্তি থাকবে না।”

শহরে হাতি
বাসুদেবপুরের ডেরা থেকে বেরিয়ে ময়ূরঝর্ণার ৪টি হাতি মঙ্গলবার রাতে ঢুকে পড়ল বিষ্ণুপুর শহরের লোহারপাড়ায়। একটি দোকান ভেঙে কাটানধারের একটি জমির ধান নষ্ট করে শেষে বাসিন্দাদের তাড়ায় তারা জঙ্গলমুখো হয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.