গোসানিমারি ‘রাজপাঠ’ থেকে কিছু দূরেই কামতেশ্বরী মন্দির। পরিচিত নাম গোসানি দেবীর মন্দির। আদি মন্দির এখনও মাটির তলায়। এই মন্দির ১৬৬৫ সালে নির্মাণ করেছিলেন কোচবিহারের মহারাজা প্রাণ নারায়ণ। পাঁচিল দিয়ে ঘেরা এই মন্দিরের মূল প্রবেশদ্বারের উপর আছে নহবতখানা। মূল মন্দিরের সামনে একটি নাটমন্দির আছে যেখানে পুজো ও হোমের কাজ হয়। এর সামনে অফিসঘর। নাটমন্দিরের সামনের এক চিলতে জায়গায় আছে হাঁড়িকাঠ। দেবীর পুজো হয় সারা বছর ধরেই, তবে সমগ্র বৈশাখ মাস জুড়ে হয় হোম ও বলির আয়োজন। পায়রা ও পাঁঠা বলির হিড়িক পড়ে এই একটি মাসে। দেবীর কোনও মূর্তি নেই। স্ফটিক পাত্রে একটি ‘কবচ’কে দেবী রূপে পুজো করা হত। তবে ১৯৫৭ সালে সেই কবচ চুরি যাওয়ার পর থেকে শুধুমাত্র দেবীর সিংহাসনই পূজিত হয়।
এর পর লৌকিক দেবতা মাশান ঠাকুরের মন্দির। ইনি উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সমাজের আরাধ্য দেবতা। দেখতে কতকটা শিব ঠাকুরের মতো, তবে জটা-ত্রিশূল-ডমরু কিছুই নেই। দু-হাত বিশিষ্ট এই দেবতার এক হাতে গদা। দিনহাটা ছাড়া মাথাভাঙা ও মেখলিগঞ্জেও এই দেবতা প্রচলিত। কোথাও কোথাও ইনি পূজিত হন অপদেবতা হিসেবেও। পুরোহিতকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম, তাঁর বাহন হাতি। অবশ্য সে বিশালাকায় বাহনটি চোখে পড়ল না। ঠাকুরমশাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে দেখে বেশ কিছু লোক জড়ো হয়ে গেল। তাদের কাছ থেকে জানা গেল লোক-কাহিনির আরও কিছু অধ্যায়। মাশান ঠাকুরের পুজোয় বিশেষ কোনও মন্ত্র নেই। তবে এই মন্দিরটি ব্যতিক্রম। এখানে মাশান ঠাকুর পূজিত হন ধন-দেবতা কুবের হিসেবে, যাঁর অন্য নাম যক্ষ। রাজবংশী সমাজে কুবের আবার পূজিত হন শিবের রূপ হিসেবে। মাথাটা কেমন গুলিয়ে গেল!
মাশান ঠাকুরের জন্ম বৃত্তান্ত শুনে মনে হল এ বার বোধহয় পাগলই হয়ে যাব। প্রচলিত কাহিনি: কালী এক দিন নদীতে স্নান করতে যাওয়ার পথে গোপনে মিলিত হন ধর্মরাজের সঙ্গে। তাঁদেরই সন্তান এই মাশান ঠাকুর।
গাড়ি ঘুরিয়ে সটান বাড়ি। এর পর আর কোনও জায়গা দেখার অবস্থায় ছিলাম না। তবে পরে ভেবে বেশ মজা লাগছিল যে এই রকম ‘দেব-কাহিনি’ না থাকলে হিন্দুদের তেত্তিরিশ কোটি দেব-দেবীর উদ্ভাবনই বা হত কোথা থেকে!
|