২৮ অগ্রহায়ণ ১৪১৮ বৃহস্পতিবার ১৫ ডিসেম্বর ২০১১


সংবাদের পরিভাষায় যাকে ‘হার্ড নিউজ’ বলে তার বাইরেও বিস্তৃত খবর-রাশি প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
আর সেই পাহাড়-প্রমাণ খবরের খনি থেকে কিছু বিষয় ভিত্তিক সংবাদকে বেছে নিয়ে আমরা সাজিয়েছি ‘সংবাদের হাওয়াবদল’।
সরাসরি বেড়ানোর কথা না-বললেও এইসমস্ত খবর আসলে হাওয়াবদলকে কেন্দ্র করেই। সংবাদের মোড়কে পর্যটন,
চমকে দেওয়া না-জানা তথ্য, জীবজগতের পাশাপাশি পার্বণ, প্রত্নতত্ত্ব সবমিলিয়ে এক অন্য খবরের জগৎ।
ঐতিহ্য
• ‘বাগাল’দের ‘কাঠি নাচ’
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের ‘বাগাল’ সম্প্রদায়ের জীবনচর্যার সঙ্গে জড়িয়ে ‘কাঠি নাচ’। সেই শিল্পকলাকে বাঁচিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম শহরে এক আলোচনাসভার পাশাপাশি নৃত্যানুষ্ঠানও মঞ্চস্থ হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের সুবর্ণরেখা নদী সংলগ্ন দাঁতন, কেশিয়াড়ি, সাঁকরাইল ও গোপীবল্লভপুর এলাকায় বসবাসকারী ‘বাগাল’দের নিজস্ব আঞ্চলিক কথ্য ভাষা, সংস্কৃতি, পার্বণ ও প্রথা প্রকরণ রয়েছে। তারই মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘কাঠি নাচ’। বিলুপ্তপ্রায় এই লোকসংস্কৃতি পুনরুজ্জীবনে উদ্যোগী বিশিষ্ট লোকশিল্প ও সংস্কৃতি গবেষক সুব্রত মুখোপাধ্যায়। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ২৫টি ‘বাগাল’ অধ্যুষিত গ্রামে ‘ক্ষেত্র’ সমীক্ষা করেছেন তিনি। সুব্রতবাবু বলেন, “বাগাল শব্দটি গো-চারণের সঙ্গে যুক্ত। জনশ্রুতি, মোহন বাঁশি বাজিয়ে কৃষ্ণ গো-চারণে যেতেন। নৃত্যশিল্পীদের পোশাকে এবং কাঠি নাচের গানের কথায় ও মুদ্রায় রয়েছে কৃষ্ণকথার ইঙ্গিত।” কাঠি নাচের প্রবীণ শিল্পী মুরলী খিলারি, রমানাথ খিলারিরাও এই প্রসঙ্গে জানান, বাগাল সম্প্রদায়ভুক্তরা নিজেদের কৃষ্ণের উত্তরসূরি বলে মনে করেন। কাঠি নাচের মুদ্রাগুলি অনেকটা গুজরাতের ‘ডান্ডিয়া’ নাচের মতো। মোট ১৮ জনের দলে নৃত্য পরিবেশন করে ৬ জন কিশোর ও ৫ জন কিশোরী। প্রত্যেক নৃত্যশিল্পীর হাতে থাকে এক জোড়া লাল কাঠি। দলে ৩ জন গায়ক ও ৪ জন বাদক থাকেন। গান এবং ধামসা-মাদল সহযোগে একে অপরের সঙ্গে কাঠি বাজিয়ে নাচে অংশ নেয়।

• রেলনগরী দোমোহনি
১৮৯১-এ ‘বেঙ্গল-ডুয়ার্স রেলওয়ে’ নাম নিয়ে তিস্তার পূর্ব পারের বার্নেশ ঘাট থেকে ৩১ মাইল দূরের ডামডিম এবং লাটাগুড়ি, রামসাইহাট, ৬ মাইল শাখা রেলপথ চালু হয়। ডুয়ার্সের চা, কাঠ কলকাতার বাজারে রফতানির জন্য তৈরি হয় এই বেঙ্গল-ডুয়ার্স রেলওয়ে (বি ডি আর)। ১৮৯৩-এ বি ডি আর-এর প্রথম রেল চলে। তদানীন্তন চা শিল্পের জিয়নকাঠি হয়ে ওঠে এই রেল। এতে চেপেই মানুষের যাওয়া আসা। প্রথমে বি ডি আর-এর সদর দফতর জলপাইগুড়ি শহরে থাকলেও ১৯১৭-য় তিস্তাপারের দোমোহনিতে সরে যায়। আর তাকে কেন্দ্র করে জন্ম নিল এক নগর। সেই রেলনগরীর সর্বময় কর্তা কোম্পানির চিফ এজেন্ট। জলপাইগুড়ি-সহ উত্তর-পূর্ব বাংলার মানুষ এই প্রথম দেখল সমবেত স্বপ্নের রেলপথ। আজকের মাদারিহাট, লালমণির হাটে সুপারফাস্ট রেল চলছে বি ডি আর-এর সৌজন্যে। চার পাশে রেলের বড় কর্তাদের বাংলো, টেনিস কোর্ট, স্টাফ কোয়ার্টার, অফিস, ওয়ার্কশপ, ইঞ্জিন শেড, ফুটবল মাঠ— সবই আছে দোমোহনিতে। সবেতেই ফিকে রক্তিম ইটের পাঁজর ভাঙা জড়তা। অবহেলার মস-ফার্নে হারিয়ে গিয়েছেন শাসক সাহেবরা। তবু ঐতিহ্যের বেড়া বুনে চলেছে রেলনগরী দোমোহনি। তবে ভুটান হিমালয়ের পাদদেশে চেল, জলঢাকা, হাতিনালা, ডায়না, কিরপতির মতো পাহাড়ি নদী পেরোতে হলেও বি ডি আর ছিল তিস্তা-তোর্সা নদীর মাঝেই সীমাবদ্ধ। চা রফতানিতে ওদলাবাড়ি, বাগরাকোট, চালসা, মেটেলি, বানারহাট, বিন্নাগুড়ি, বীরপাড়া, মাদারিহাট স্টেশনগুলি ছিল স্বনামধন্য। আর কাঠ রফতানিতে লাটাগুড়ি, ওদলাবাড়ি, রামসাই, চালসা প্রভৃতি। খরস্রোতা নদী, দু’পাশের সবুজ চা-বাগিচার কার্পেট, মাঝে পাহাড় কোলের মেটেলি স্টেশন যেন নয়নাভিরাম চলচ্চিত্রের আয়োজক। রেলে চড়ার ক্লান্তি, অবসাদের কাছে জিতে যায় এই রেলপথ। আজ বেঙ্গল-ডুয়ার্স রেলওয়ে নেই। জাদু বলে উধাও আস্ত জনপদ, বি ডি আর-এর স্বপ্নরেল। কিন্তু লাল দালানের শরীর জড়িয়ে বট-পাকুড় এখনও সেই অতীত ছাড়তে পারেনি।

• চিত্রকর রেমব্রান্টের প্রতিকৃতি
এ মাসের গোড়ায় ডাচ চিত্রকর রেমব্রান্টের একটি অসম্পূর্ণ চিত্রকর্মের খোঁজ মিলেছে। তাঁরই অন্য একটি পেন্টিং ‘ওল্ড ম্যান উইথ আ বিয়ার্ড’-এর নীচে রেমব্রান্টের ‘প্রতিকৃতি’র এই অসম্পূর্ণ চিত্ররূপটি পাওয়া যায়। যদিও ছবিটির মুখের অংশ খুব অস্পষ্ট। বিশেষজ্ঞদের ধারণা ১৬৩৩ সালের রেমব্রান্টের একটি ছবির সঙ্গে এটির মিল আছে। রেমব্রান্ট-বিশেষজ্ঞদের মতে আঁকার ‘ঘরানা’ দেখেই বোঝা যায় এটি আসল ছবি। অসম্পূর্ণ এই ছবিটি পরীক্ষা করেছেন আর্ট হিস্টোরিয়ান আর্নস্ট ফান ডে উইটারিং। নিউ ইয়র্কের ব্রুকহেভেন ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি ও ফ্রান্সের গ্রেনবল-এ ইএসআরএফ লাইট সোর্স-এ পরীক্ষার পর এই খোঁজ পাওয়া গেছে। বেলজিয়ামের অ্যানওয়ার্প বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও এক বিশেষজ্ঞ কোয়েন জানসেন জানিয়েছেন, “এই প্রতিকৃতিটি রেমব্রান্টের প্রথম জীবনকালের সৃষ্টি।”

• অপ্রকাশিত রবীন্দ্র-পাণ্ডুলিপি সদবির নিলামে
নিলামে উঠল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি। নিউ ইয়র্কের সদবিতে ১৩ ডিসেম্বর এই নিলাম হয়। কী আছে এই পাণ্ডুলিপিতে? সদবি সূত্রে খবর, রবীন্দ্রনাথ একটি নোটবুকে ১২টি কবিতা ও ১২টি গান লিখেছিলেন। ১৯২৮ সালে লেখা এই গান ও কবিতাগুলির প্রায় সব ক’টিই পরিবর্তিত রূপে পরে অন্য কোথাও প্রকাশিত হয়েছিল। যেমন ‘চিত্রাঙ্গদা’র দু’টি গান, যার মধ্যে একটি ‘মন যে বলে চিনি চিনি’। এই নৃত্যনাট্যটি প্রথম মঞ্চস্থ হয় ১৮৯২ সালে। বহু বছর পরে, ১৯৩৬ সালে ‘চিত্রাঙ্গদা’র পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এই পাণ্ডুলিপিতে যে গান দু’টি রয়েছে, সেগুলি সেই পরিমার্জিত সংস্করণের অংশ। ১৯৩০-এর দশকের মাঝামাঝি তাঁর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এক পরিবারকে এই নোটবুকটি উপহার দিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার
• ইতিহাসের বাহিরি

দিঘা-কলকাতা সড়কে মারিশদা বাসস্টপেজ থেকে পূর্ব দিকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের বিস্মৃত এক জনপদ। প্রাচীন রচনা থেকে জানা যায়, এই গ্রাম এক সময়ে জলাভূমি দিয়ে ঘেরা ছিল। ইতিহাসবিদদের মতে, দণ্ডভুক্তি প্রদেশের অংশবিশেষ ছিল এই গ্রাম, যার নাম বাহিরি। সমুদ্রের উপকূলে অবস্থিত না হলেও কোনও এক নদীর কূলেই গড়ে উঠেছিল এই জনপদ। প্রাচীন একটি তেঁতুল গাছ যা এলাকায় ‘জাহাজ বাঁধা তেঁতুলগাছ’ নামে পরিচিত, তা এক সময়ের নদীপথের স্মৃতি বহন করছে আজও। বাহিরি গ্রামে রয়েছে জগন্নাথদেবের পরিত্যক্ত দেউল। মন্দিরটির দু’টি ভাগ, মূল দেউল ও জগমোহন। দু’টি ভাগের মধ্যে যাতায়াতের জন্যে একটি ছোট ঘর। ইটের তৈরি মূল দেউলটির উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট, চওড়ায় প্রায় ২৪ ফুট। জগমোহন-এর উচ্চতা প্রায় ৪০ ফুট, চওড়ায় ১৭ ফুট। ভীমসাগর, লোহিতসাগর ও হেমসাগর নামে তিনটি বড় দিঘিও ছিল। বর্তমানে একমাত্র ভীমসাগর দিঘির অস্তিত্ব রয়েছে। দেউলের মধ্যে পাওয়া শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দে পদ্মনাভ দাসের পুত্র বিভীষণ দাস এই দেউল তৈরি করেন। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। রসিকমঙ্গল কাব্যে উল্লিখিত হিজলি মণ্ডলের বিভীষণ মহাপাত্রই শিলালিপিতে লেখা বিভীষণ দাস মহাপাত্র। বাহিরিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে একটি সংগ্রহশালা রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন সময় মাটি খুঁড়ে পাওয়া মূর্তি, পোড়ামাটির খেলনা, হাতি, চাকার গাড়ি, মাটির পাত্র সংরক্ষিত আছে। ইতিহাসবিদদের মতে, কুষাণ, গুপ্ত ও পাল বংশের রাজত্বকালে শিল্পসৃষ্টিতে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল বাহিরি।

• লাপিতা জনগোষ্ঠীর ইতিহাস
সম্প্রতি পাপুয়া নিউ গিনির মূল ভূখণ্ডে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা খননকার্য শুরু করেন। পাওয়া যায় প্রচুর মাটির তৈরি ভাঙা জিনিসপত্র। প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, সমুদ্র-ব্যবসায় যুক্ত লাপিতা জনগোষ্ঠী এখানে এসেই তাদের জীবনযাত্রা শুরু করে। প্রায় ৩,৫০০ বছর আগে পাপুয়া নিউ গিনির পূর্ব উপকূলের দ্বীপগুলিতে লাপিতা সভ্যতার সূত্রপাত। অনুমান করা হয়, তার প্রায় ৩০০ বছর পরে সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, ভানুয়াতু ও ফিজিতে এই জনগোষ্ঠী বসবাস শুরু করে। আবার প্রত্নতাত্ত্বিকদের একাংশের ধারণা যে হেতু মাটির তৈরি পূর্ণাঙ্গ কোনও জিনিস পাওয়া যায়নি, তাই পাপুয়াতে এঁদের জীবনের সূত্রপাতের ধারণা ভিত্তিহীন। প্রত্নতাত্ত্বিক ম্যাক নিভেন জানান, “পাপুয়া নিউ গিনির মূল ভূখণ্ডের তুলনায় দ্বীপগুলিতেই লাপিতা গোষ্ঠীর ব্যবহার্য জিনিসপত্রের সন্ধান মিলেছে। তার থেকে জানা যায়, খুব সমৃদ্ধ ছিল এই জনগোষ্ঠী। ব্যবসা বাণিজ্যের দিক থেকেও তারা ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ। মাটির নীচ থেকে পাওয়া কচ্ছপের খোলস, মাছের কাঁটা, ঝিনুকের খোলস ইত্যাদি থেকে এদের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কেও জানা যায়।” এদের জীবনযাত্রা কতটা উন্নত মানের ছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায় পাথরের তৈরি হাতিয়ার, উন্নত মানের পাথরের যন্ত্রপাতি ও কারুকার্য করা মাটির তৈরি জিনিসপত্র থেকে। আর এইগুলো পাওয়া গেছে মূল ভূখণ্ড থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে পশ্চিম ফার্গুসন দ্বীপে। পাপুয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে এত দূরে এইসব জিনিসপত্র পাওয়ার ফলে লাপিতা গোষ্ঠীর বসবাসের বিষয়টি প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা বদলে দিয়েছে, জানান ম্যাক নিভেন।

• পুরাকীর্তির মুর্শিদাবাদ
গত ১৯-২৫ নভেম্বর বিশ্ব ঐতিহ্য সপ্তাহ পালন করল হাজারদুয়ারি মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ। ইতিহাস-সমৃদ্ধ মুর্শিদাবাদ জেলার নানা প্রান্তে বেশ কিছু সুপ্রাচীন ভবন দেখা যায়। কিন্তু সেগুলি কী প্রয়োজনে কে কখন তৈরি করেছিলেন, তা জানা যায় না। শুধু হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, মোগল, পাঠান নয়, বিদেশি বণিক হিসেবে আগত পর্তুগিজ, ফরাসি, আর্মেনীয়, ওলন্দাজ ও ইংরেজদেরও ধর্মীয় প্রভাব এখানে পড়েছে। তবে রাঢ় এলাকায় বৌদ্ধ ও ব্রাহ্মণ্য ধর্মের প্রচলন ছিল বেশি। চৈতন্য পরবর্তীকালে বৈষ্ণব ধর্মের একটা জোয়ার উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পায়। সুলতানি আমলের পরে পরধর্ম সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। জৈনরা ধর্মাচারণের জন্য নিজেদের উপাস্য দেবদেবীর মন্দির নির্মাণ করেন। এ ছাড়াও ষোড়শ শতাব্দী বা মোগল-পাঠানদের আমল থেকে এই জেলায় মসজিদ নির্মিত হতে থাকে এবং তার বিস্তার ঘটে হোসেন শাহ (১৪৯৩-১৫১৯) ও নবাবি আমলেও (১৭০৪-১৮৮১)। ফলে মন্দির-মসজিদ-গির্জার নির্মাতা হিসেবে রাজা-মহারাজা, নবাব-বাদশা, জমিদার-জোতদার, বণিক, সমাজের ধনী ব্যক্তিদের নাম উঠে এসেছে। প্রবীণ ইতিহাস গবেষকদের মতে, খেরুর মসজিদ মুর্শিদাবাদ জেলার সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ। এ রকম অনেক মন্দির-মসজিদ ও পুরাকীর্তি রয়েছে, যা সংস্কার করা দরকার। যদিও বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করে বিভিন্ন পুরাসম্পদগুলির ইতিহাস ধরে রাখা এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তা সংরক্ষণ বা সংস্কারের কোনও চেষ্টা হয়নি। ফলে ২৫০-৩০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন এইসব সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে চিরকালের মতো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তার ইতিহাসও।

• মিশরীয় রাজা আমেনহোতেপের বিশাল মূর্তি
সম্প্রতি মিশরের প্রত্নতাত্ত্বিকেরা মিশরের ফারাও তুতানখামেনের পিতামহ রাজা তৃতীয় আমেনহোতেপের বিশাল মূর্তির সন্ধান পেলেন। ৪৪ ফুট উঁচু এই মূর্তিটি রঙিন কোয়ার্টজাইট পাথরের তৈরি। প্রথমে বড় বড় পাথরের টুকরো একসঙ্গে করা হয়, তার পর সেই পাথর খোদাই করে তৈরি করা হয় মূর্তি। ১৩৯০ থেকে ১৩৫২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তিনি রাজত্ব করতেন। তাঁর রাজনীতি ও ধর্মীয়নীতি সম্পর্কে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা জানতে পারেন নীল নদের তীরে অবস্থিত লাক্সর শহরে আবিষ্কৃত এক মন্দির থেকে। মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন রাজা নিজেই।
বন্যপ্রাণ
শকুন বাঁচাতে উদ্যোগ
শকুন নিয়ে সমীক্ষার জন্য জুলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার দ্বারস্থ হতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গের বন দফতর। গোটা রাজ্য জুড়েই শকুনের অস্তিত্ব সঙ্কটে। প্রকৃতির উপরে তার প্রভাবও পড়ছে। বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে হিমালয়ান গ্রিফন প্রজাতির শকুনের সঙ্কট নিয়ে উদ্বিগ্ন বন দফতর। ২০০৫ সালে বন দফতরের উদ্যোগে রাজাভাতখাওয়ায় শকুন সংরক্ষন ও প্রজনন কেন্দ্র চালু হয়েছে। খাঁচা বসিয়ে সেখানে হোয়াইট ব্যাকড, লং বিলড ও স্লেন্ডার বিলড প্রজাতির ৮০ টি শকুন রাখা হয়েছে। এগুলি বক্সার জঙ্গল ছাড়াও অসম ও মধ্যপ্রদেশ থেকে সংগ্রহ করে আনা হয়। খাঁচায় বন্দি অবস্থায় সাতটি শকুনের জন্ম হয়েছে। ২০১৯ সালে এখান থেকে শকুন ছাড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা তথা শকুন প্রজনন কেন্দ্রের সদস্য সচিব রবীন্দ্রপাল সাইনি বলেন, “প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য শকুন সংরক্ষণ ভীষণ জরুরি। ” দেশ জুড়ে শকুন উধাও হয়ে যাওয়ার কারণ হিসাবে পরিবেশবিদেরা অনেকেই ‘ডাইক্লোফেনাক’ নামের একটি ওষুধকে দায়ী করেন। গবাদি পশুর চিকিৎসার জন্য ওই ওষুধটি ব্যবহার করা হয়। ওই ওষুধ খাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কোনও গবাদি পশু মারা গেলে এবং সেই পশুর মাংস শকুন খেলে প্রজনন ব্যাহত হয় বলে অভিযোগ বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু মানুষের ব্যাথা উপসমের জন্যই ‘ডাইক্লোফেনাক’ গোত্রের একটি ওষুধ রয়েছে। সেটিও গবাদি পশুর চিকিৎসায় অনেকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ। এই সমস্যা দূর করতে বন দফতর প্রাণী বন্ধুদের নিয়ে সচেতনতা শিবিরের পরিকল্পনা করেছে।

• বিলুপ্ত ‘পশ্চিম আফ্রিকার কালো গণ্ডার’

‘পশ্চিম আফ্রিকার কালো গণ্ডার’ বিলুপ্ত। ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার’-এর সাম্প্রতিক রিপোর্টে বিশ্বের বিপন্ন প্রাণী তালিকায় রয়েছে এই তথ্য। গণ্ডারের আর এক উপপ্রজাতি ‘মধ্য আফ্রিকার সাদা গণ্ডার’ও সম্ভবত বিলুপ্তির দোরগোড়ায়। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, সংরক্ষণের বহু চেষ্টার পরেও বিশ্বের ২৫ শতাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণী আজ বিলুপ্তির পথে। সামগ্রিক ভাবে সাদা ও কালো গণ্ডারের সংখ্যা বাড়লেও কিছু কিছু উপপ্রজাতি যেমন ‘পশ্চিম আফ্রিকার কালো গণ্ডার’ পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে চিরতরে। গণ্ডারের বহু মূল্যবান শিঙের লোভে বেড়েছে এর চোরাশিকার। আর সে কারণেই এই অবলুপ্তি বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। সংস্থার চেয়ারম্যান সাইমন স্টুয়ার্ট মনে করেন নিরাপত্তার অভাবেই এ ধরনের ঘটনা হচ্ছে। এই বক্তব্য সমর্থন করেছে লন্ডনের জুলজিক্যাল সোসাইটি।

• কুলিক ছেড়ে লোকালয়ে পরিযায়ী

কুলিক পক্ষি নিবাস থেকে মুখ ফিরিয়ে পরিযায়ী পাখিদের একাংশ শহরের বিভিন্ন পাড়ার গাছেই আশ্রয় নিচ্ছে। গত ৫ মাস ধরে লোকালয়ের গাছপালায় বাড়ছে পরিযায়ীর ভিড়। কেন কুলিকের নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে পাখিরা লোকালয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছর জুন-জুলাই মাস নাগাদ ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্য-সহ নানা দেশ থেকে ওপেন বিল স্টক, করমোন্যান্ট, নাইট হেরেন সহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি কুলিক পক্ষি নিবাসে আসে। প্রজননের পর জানুয়ারি-ফ্রেব্রুয়ারি মাস নাগাদ ওরা ফিরে যায়। পরিযায়ী পাখিদের দেখতে প্রতি বছর এ রাজ্য তো বটেই ভারতেরও বিভিন্ন রাজ্য থেকেও প্রচুর পর্যটক কুলিকের পক্ষি নিবাসে ভিড় করেন। পরিযায়ীরা পক্ষি নিবাসের বড় বড় গাছে বাসা বেঁধে প্রজননের কাজ করে। গত কয়েকমাস থেকে ওই পাখিদের একাংশ পক্ষি নিবাস ছেড়ে শহরের মিলনপাড়া, তুলসিপাড়া, তুলসিতলা, সুদর্শনপুর, আবদুলঘাটা, কর্ণজোড়া-সহ বিভিন্ন পাড়ার বড় বড় গাছের ডগায় বাসা বেঁধে আশ্রয় নিয়েছে। কারণ খুঁজতে তত্পর বন দফতর।

• টুনা সংরক্ষণ

বেআইনি ভাবে ভূমধ্যসাগরের ব্লুফিন টুনা মাছ ধরা রুখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অতলান্তিক টুনার সংরক্ষণে গঠিত সংস্থা ‘আইসিসিএটি’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ বার থেকে ইলেকট্রনিক প্রযুক্তির সাহায্যে ব্লুফিন টুনা শিকারের পরিসংখ্যান রাখা হবে। পাশাপাশি সিল্কি হাঙর মাছের সংরক্ষণেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ এই অঞ্চলে টুনা মাছের পাশাপাশি এই ধরনের মাছ ধরার কারণেও হাঙরের সংখ্যা কমে আসছে। ব্লুফিন টুনা মাছ ধরার সময় অসাবধানতাবশত সিল্কি হাঙর মাছও ধরে ফেলেন মৎস্যজীবীরা। এ বার থেকে এই ধরনের হাঙর ধরা পড়লে তা সঙ্গে সঙ্গেই জীবন্ত ছেড়ে দিতে হবে। জানা গেছে ২০১৩-র মধ্যে মাছ সংরক্ষণের একটি সম্পূর্ণ পরিকল্পনা করা হবে। একটি রিপোর্টে জানানো হয়েছে, গত বছর ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে মাছ ধরার যে হিসেব দেখানো হয়েছে তার থেকে ১৪০ শতাংশেরও বেশি ব্লুফিন টুনা বাজারে এসেছে!

পার্বণ
• ঐতিহ্যের ‘চা উৎসব’ দার্জিলিংয়ে
১৮ বছর পরে দার্জিলিং পাহাড়ে হতে চলেছে ‘টি ও ট্যুরিজম উৎসব’। পাহাড়ের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, হোটেল, পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা রাজ্য সরকারের সঙ্গে একযোগে এই উৎসবের আয়োজন করছেন। আগামী ২০ ডিসেম্বর থেকে নতুন বছরের ৫ জানুয়ারি অবধি পাহাড়ের তিন মহকুমা জুড়ে চলবে উৎসব। দেশ-বিদেশের পর্যটকদের সামনে ঐতিহ্যবাহী দার্জিলিং চা’কে তুলে ধরা হবে। চলবে নানা সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খাদ্যমেলাও। উৎসব কমিটির সভাপতি দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন। তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন আগে পাহাড়ে চা-পর্যটন উৎসব হত। ফের তা শুরু হবে। পর্যটনের আকর্ষণ বাড়ানোর পাশাপাশি পাহাড়ের পরিবেশ, পরিস্থিতি উৎসবের মাধ্যমে সুন্দর হয়ে উঠবে। দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং এবং মিরিকে একযোগে উৎসব চলবে।” ১৯৯৩ সালে পাহাড়ে সরকারি উদ্যোগে শেষবারের মতো চা উৎসব হয়। সরকার, পার্বত্য পরিষদ এবং স্থানীয় বিভিন্ন পক্ষ মিলিয়ে উৎসব হয়েছিল। পরবর্তীকালে নদী, পাহাড়, পর্যটনকেন্দ্র ধরে ধরে নানা উৎসবও হয়। কিন্তু, ‘ চা উৎসব’ আর হয়নি। উৎসবে বড় বড় প্যাভিলিয়ন করা হবে। সেখানে দার্জিলিং চায়ের ইতিহাস, বিভিন্ন বাগানের তথ্য সমৃদ্ধ ছবি, চা প্রস্তুত করা এবং কারখানার মডেল, চা নিলাম এবং টি টেস্টিং কী ভাবে হয় তা তুলে ধরা হবে। চা খাওয়ার প্রতিযোগিতাও থাকবে পর্যটকদের জন্য। পাশাপাশি দেশ এবং বিদেশে গোর্খা জওয়ানদের কৃতিত্বের কথাও ছবি, তথ্য, মেডেলের মাধ্যমে আরেকটি গ্যালারিতে তুলে ধরা হচ্ছে। উৎসব কমিটির সাধারণ সম্পাদক উদয়মণি প্রধান জানান, কার্নিভাল, প্যারেড, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মাউন্টেন বাইকিং, প্যারা গ্লাইডিং, র্যাফটিং, হট এয়ার বেলুনিং, ট্রেকিং ছাড়াও ঘুড়ি ওড়ানো প্রতিযোগিতা, ফান রান, স্কেটিং, স্নো কুইন কনটেস্ট থাকবে। উৎসব চলাকালীন দার্জিলিং পাহাড়ে শ্যুটিং করা আরাধনা, ম্যা হুঁ না, রাজু বন গয়া জেন্টলম্যান, সাগিনা মাহাতো, পরিণীতা মাল্টিপ্লেক্সে দেখানো হবে।

• কাড়া লড়াই

সারা মাঠ জুড়ে তখন একটাই শব্দ হো হো...। মাঠ ছেড়ে দর্শকদের দিকে ধাবমান দুই কাড়া (মোষ)। পড়ি মরি করে দৌড় জনতার। মোষের তাড়া খেয়ে মাঠে উপস্থিত দর্শকেরা একবার এ পাশ তো পর ক্ষণে ও পাশে। আর আড়াই হাতের বাঁশের লাঠি নিয়ে দুই কাড়াকে মাঠের মধ্যে আনার চেষ্টা করছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। সম্প্রতি এই কাড়া লড়াইয়ে মেতে রইলেন পুঞ্চার বাসিন্দারা। মানভূম সংস্কৃতির অন্যতম জনপ্রিয় উৎসব এই কাড়া লড়াই। কাড়া লড়াই পুরুলিয়া তথা মানভূম সংস্কৃতিক অন্যতম প্রাচীন উৎসব। কাড়া লড়াইয়ের পরে ছিল মোরগ লড়াই। আড়শা থানার ঝরিয়াডি গ্রামের বৃন্দাবন মাহাতো, বাঘমুণ্ডির দারাডি গ্রামের ফুলু সিংদের কথায়, “দুই কাড়া যখন এক অপরের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে সিংয়ে গেঁথে এ ওকে আসর থেকে সরানোর চেষ্টা করছে, তা অন্য স্বাদ বহন করে।”

• ‘রান্নাপুজো’, সম্প্রীতির উৎসব
রান্নাপুজোকে কেন্দ্র করে উত্তর ২৪ পরগনার হাবরায় সম্প্রতি দেখা গেল হিন্দু-মুসলমানের সম্প্রীতির ছবি। হাবরার ফুলতলা মণ্ডলপাড়ায় কোনও বাড়িতেই জ্বলেনি উনুন। তবে রান্না অবশ্যই হয়েছে এবং তা ঘরের বাইরে খোলা আকাশের নীচে। কোথাও রাস্তার ধারে। আবার কোথাও আমবাগানে। কোথাও মুসলমান পরিবারের রান্না করে দিয়েছেন হিন্দু ঘরের বধূ। আবার কোথাও হিন্দুর ঘরে রান্নার জোগাড় করে দিয়েছেন কোনও মুসনমান রমণী। সম্প্রীতির এমন মধুর দৃশ্য নিয়ে গ্রামের লক্ষ্মণ মণ্ডল, রহিমা বিবিরা জানালেন, এই পুজো প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। শোনা যায়, একবার গ্রামে প্রচণ্ড ডায়েরিয়া হয়। তখন স্থানীয় একটি পুকুরের জল রান্নার কাজে ব্যবহার করায় রোগ সেরে যায়। সেই থেকে প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসে অমাবস্যার পরে প্রথম চাঁদ দেখার পরে পরবর্তী সোমবারে এই রান্না পুজো হয়ে আসছে। গ্রামের হিন্দু-মুসলমান সকলেই পুজোয় যোগ দেন। আনন্দে মেতে ওঠে সারা পাড়া।

• বিষ্ণুপুর মেলা
‘টেরাকোটা’। ল্যাটিন এই শব্দের অর্থ পোড়া মাটি। পোড়া মাটির নানান বিস্ময়কর স্থাপত্য নিদর্শন বিষ্ণুপুরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে। ষোড়শ শতকে মল্ল রাজাদের আমলে এই অপূর্ব স্থাপত্যগুলি গড়ে ওঠে। আগামী ২৩ থেকে ২৭ ডিসেম্বর বিষ্ণুপুর মেলা হচ্ছে। তার পরেই হবে বিষ্ণুপুর উত্সব। রাজ্য পর্যটন দফতরের উদ্যোগে গত কয়েক বছর ধরে বিষ্ণুপুর উৎসব শুরু হয়েছে। এ বার ২৮-৩০ ডিসেম্বর এই উৎসব হবে বিষ্ণুপুর হাই স্কুলের মাঠে। স্থানীয় মানুষের হাতে বানানো বিভিন্ন টেরাকোটা, রেশমের শাড়ি, কাঠ ও বাঁশের তৈরি নিপুণ জিনিসপত্র এই মেলার অন্যতম আকর্ষণ। পথের পাশে ঘাস ফুলের মতোই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নিপুণ হাতের অবাক করা সেই সব শিল্পকর্ম। মেলার আর এক বৈশিষ্ট্য এখানকার প্রাচীন সংস্কৃতি বিজড়িত সঙ্গীত ও নৃত্যানুষ্ঠান। বিষ্ণুপুর বিখ্যাত তার নিজস্ব ঘরানার সঙ্গীতের জন্য। বাঁকুড়া জেলার সমৃদ্ধ এই পর্যটন কেন্দ্র মেলার সময় অতীত এবং বর্তমান শিল্পীদের সমন্বয়ে হয়ে ওঠে বাঙালি সংস্কৃতির মহামিলন ক্ষেত্র। উত্সব উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন মন্ত্রী রচপাল সিংহ বলেন, “ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ঘরানার শহর বিষ্ণুপুর মন্দিরনগরী নামেও পরিচিত। এখানকার পর্যটনের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য এ বারও বিষ্ণুপুর উৎসব করা হচ্ছে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিশিষ্ট শিল্পীদের সঙ্গে বিষ্ণুপুর ঘরানার শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করবেন।”
পর্যটন কেন্দ্র
বিদেশিনির ডুয়ার্স-দর্শন
ডুয়ার্সের জঙ্গল, পাহাড় ও লোকসংস্কৃতির তথ্য ও ছবি বিদেশি পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে ডুয়ার্স ঘুরে গেলেন জার্মানির বার্লিন শহরের বেসরকারি পর্যটন সংস্থার কর্ণধার। প্রায় দেড় সপ্তাহ ধরে পশ্চিম সিকিম, দার্জিলিং, নেওড়াভ্যালি ঘুরে ডুয়ার্সের চিলাপাতা ও রায়মাটাং এলাকায় হোম ট্যুরিজমের প্রেমে পড়েছেন জার্মানির মার্লিন শেফার। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা-সহ ডিজিটাল ম্যাপিং ব্যবস্থার দরকার রয়েছে বলে তিনি জানান পর্যটন সংগঠক কর্তাদের। মার্লিন শেফার বলেন, “পর্যটন ব্যবসার প্রসার ঘটাতে ভারতে এসেছি। পশ্চিমবঙ্গের ডুয়ার্স তথা পাহাড়ে ছুটি কাটাতে আসা বা রোমাঞ্চের খোঁজে আসা বিদেশি পর্যটকদের জন্য নতুন নতুন জিনিস রয়েছে জানার। এখানে পাহাড়ের ট্রেকিং রুট, হোম ট্যুরিজমে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে থেকে তাদের লোকসংস্কৃতি জানা, চা বাগান, জঙ্গলে ঘোরা-সহ নানা দিক রয়েছে। ডুয়ার্সের চিলাপাতা, রায়মাটং আমার ভাল লেগেছে। এই এলাকায় পর্যটন ব্যবসার প্রসারে কাজ করব।” ট্যুরিজমের ডুয়ার্সের কোঅর্ডিনেটর তাপসী ঘোষ জানান, ডুয়ার্সে ইকো ট্যুরিজম, ট্রেকিং, ভিলেজ ট্যুরিজম ও হোম ট্যুরিজমে বিদেশি পর্যটক টানার জন্য বিদেশি পর্যটন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এতে বিশ্বব্যাপী পর্যটন মানচিত্রে ডুয়ার্সের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে গড়ে ওঠা হোম ট্যুরিজমগুলির প্রচার হবে।

• রোপওয়ে থেকে মন্দিরে আলো, সাজবে এ বার বিষ্ণুপুর

৪ ডিসেম্বর রবিবার বিষ্ণুপুরের দ্রষ্টব্যস্থানগুলি পরিদর্শন করেন পশ্চিমবঙ্গের পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ। বিষ্ণুপুরের পর্যটনের পরিকাঠামোর উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “লালবাঁধ সংস্কার ও সৌন্দার্যায়ন, বাঁধের পাড় থেকে লালগড় প্রকৃতি উদ্যান পর্যন্ত রোপওয়ে, উল্লেখযোগ্য মন্দিরগুলিতে আলোর ব্যবস্থা করার চিন্তা ভাবনা রয়েছে।” তিনি জানান, এখানে হস্তশিল্পের বিক্রি বাড়ানোর জন্য ‘আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট’ তৈরি করা হবে। সে জন্য জমি খোঁজা হচ্ছে। তিনি বলেন, “বিষ্ণুপুর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ-এর প্রস্তাব তালিকায় রয়েছে।” রবিবার সকালে মহকুমাশাসককে সঙ্গে নিয়ে পর্যটনমন্ত্রী উৎসবের মাঠ এবং বিষ্ণুপুরের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ মন্দির শ্যামরাই, রাসমঞ্চ ও লালবাঁধ-লালগড় প্রকৃতি উদ্যান ঘুরে দেখেন। বিষ্ণুপুর মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার উন্নয়নে রাজ্য পর্যটন দফতরে কিছু প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। যার মধ্যে ছিল, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে সপ্তাহে ছুটির দিনে শনি ও রবিবার সন্ধ্যায় বিষ্ণুপুর ট্যুরিস্টলজে বিষ্ণুপুর ঘরানার আসর বসানো। দলমাদল কামান, মদনমোহন ও ছিন্নমস্তা মন্দিরে আলোর বন্দোবস্ত করার মতন বিষয়।

• ঢেলে সাজবে জঙ্গিপুরের সবুজদ্বীপ
জঙ্গিপুরের সবুজদ্বীপকে একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগী হল পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন দফতর। এ জন্য কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রকের তরফে ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা অনুমোদনের ছাড়পত্র পাওয়া গিয়েছে। রাজ্য পর্যটন দফতরের কর্তারা সরেজমিনে দ্বীপটি দেখেও এসেছেন। জঙ্গিপুরের ওই সবুজ দ্বীপটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উপযুক্ত পরিকাঠামো রয়েছে। শুধু টয়ট্রেন, শিশু উদ্যান বা বোটিং-ই নয়, সারা রাজ্য থেকেই যাতে পর্যটকেরা এখানে আসেন, তেমন ভাবেই দ্বীপটি গড়ে তোলার কথা ভাবা হচ্ছে। ভাগীরথীর তীরে এই দ্বীপটি যথেষ্ট আকর্ষণীয়। প্রায় ১২ বছর আগে নদীর ধারে গজিয়ে ওঠা ৬৪ একর চর জমি নিয়ে এই সবুজদ্বীপটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়া হয়। কয়েক হাজার গাছ দ্বীপটিকে আরও সুন্দর করে তুলেছে।

• জম্মু ও কাশ্মীরের হেরিটেজ সাইট
রাজ্যের ৪১টি ঐতিহ্যবাহী স্থান সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিল জম্মু ও কাশ্মীর সরকার। সরকারি তরফে জানানো হয়েছে ভবিয্যতে আরও কয়েকটি স্থান সংরক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। নভেম্বরের গোড়ায় রাজ্যের পর্যটক মন্ত্রী এন আর জোরার পৌরহিত্যে রাজ্যের ‘কনজারভেশন অ্যান্ড প্রিজারভেশন অথরিটি’র প্রথম বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া আলোচনায় ঠিক হয়েছে যে, সমস্ত ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলি একটি তালিকাভুক্ত করা হবে। রাজ্যের তিনটি অঞ্চলে পর্যটনের প্রসারে এই স্থানগুলিকে গ্রেডেশনের আওতায় আনা হবে। পাশাপাশি ‘মোগল গার্ডেন’কে ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয় এই বৈঠকে।
পরিষেবা
কলকাতা থেকে দিঘা, সময় লাগবে আধ ঘণ্টা
কলকাতা থেকে এ বার আকাশপথেই দিঘা যাওয়ার সুযোগ মিলতে পারে। সময় লাগবে বড়জোর ২৫ মিনিট!
এ জন্য সম্প্রতি যে হেলিকপ্টারটিকে দিল্লি থেকে কলকাতার বেহালায় উড়িয়ে আনা হল, সেটি অনায়াসে নামতে পারবে সমুদ্র সৈকতে। তা উড়বে বেহালা বিমানবন্দর থেকেই। নির্দিষ্ট রুটে চলাচলের বাধ্যবাধকতা না-থাকায় ছ’আসনের এই হেলিকপ্টার ভাড়া করে মন্দারমনি, শঙ্করপুরেও যাওয়া যাবে। শুধু দিঘা-মন্দারমণির পর্যটনকেন্দ্রে নয়, কলকাতা থেকে হলদিয়া-দুর্গাপুর-আসানসোল, এমনকী মালদহ-মুর্শিদাবাদেও কপ্টার-পরিষেবা চালু করতে চাইছে রাজ্য সরকার। প্রতি রুটে এক পিঠের ভাড়া ধরা হয়েছে মাথাপিছু পাঁচ হাজার টাকা। কলকাতা-দিঘার মতো বাগডোগরা থেকে দার্জিলিং-গ্যাংটকে কপ্টার পরিষেবা চালু করতে আগ্রহী সরকার। আরও একটা হেলিকপ্টার বেহালায় নিয়ে আসার কথা ভাবা হচ্ছে। সেটা ‘এয়ার-অ্যাম্বুল্যান্স’ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কপ্টার কলকাতা বিমানবন্দর বাদ দিয়ে বেহালা থেকে উড়বে কেন? জানা গিয়েছে, কলকাতা বিমানবন্দরে নিরাপত্তা তল্লাশি-সহ অন্যান্য প্রক্রিয়ায় এক ঘণ্টা নষ্ট হতে পারে। বেহালায় সে সমস্যা হবে না। তবে অন্য শহর থেকে বিমানে কলকাতায় নেমে এসে যাঁরা এই পরিষেবা নিতে চাইবেন, তাঁদের জন্য কলকাতা বিমানবন্দরেও কপ্টার তৈরি থাকবে।

• সুন্দরবনে ‘চার তারা হোটেল’
সুন্দরবনে একটি চার তারা হোটেল গড়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে গুলশন গোষ্ঠী। কর্তৃপক্ষের দাবি, সে ক্ষেত্রে এটিই হবে সুন্দরবনের প্রথম চার তারা হোটেল। গোসাবার পাখিরালা টাইগার মোড়ে হোটেলটি গড়ে ওঠার কথা। সুন্দরবনে প্রস্তাবিত ওই হোটেলের নামকরণ করা হয়েছে ‘মার্ক সুন্দরবন’। দু’টি পর্যায়ে এটি গড়ে তোলা হবে। প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করতে খরচ হবে ৮০ কোটি টাকা। তৈরি হবে ৯০টি ঘর। পরিবেশ দূষণের কথা মাথায় রেখে প্রথম পর্যায়ে বহুতল বাড়ি তৈরি হবে না। সব কটি ঘরই হবে ‘কটেজ’। তবে পরিবেশ দফতরের অনুমোদন পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে বলে জানান প্রকল্পের ম্যানেজিং ডিরেক্টর কৌস্তুভ রায়। তিনি বলেন, “ওই অনুমোদন পাওয়ার পরেই দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজে হাত দেব। তখন বহুতল বাড়ি তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। পরিবেশগত ছাড়পত্র পেলে একটি হেলিপ্যাডও গড়া হবে।” কলকাতায় গুলশন গোষ্ঠীর আরও ৪টি হোটেল রয়েছে। এগুলি সবই দুই এবং তিন তারার হোটেল। সুন্দরবনেই তারা প্রথম চার তারা হোটেল চালু করতে উদ্যোগী হয়েছে।

• পর্যটন প্রসারে ‘সাইট’

শীতের ডুয়ার্স দেখতে চান! সরকারি রিসর্ট ভর্তি! বেসরকারি লজের কী অবস্থা জানেন না! আর কোনও সমস্যা নেই। রাজ্য পর্যটন দফতরের ওয়েব সাইটে এ বার থেকে মিলবে ডুয়ার্সের বিভিন্ন হোম ট্যুরিজম সংস্থার নাম, ঠিকানা এবং ফোন নম্বর। রাজ্য পযর্টন দফতরের সচিব রাঘবেন্দ্র সিংহ বলেন, “উত্তরবঙ্গের চুইকিম, মিরিক, সামসিং, চিমনি, বক্সা-সহ বেশ কয়েকটি জায়গার হোম ট্যুরিজমের বিবরণ সম্প্রতি পযর্টন দফতরের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। অনলাইন বুকিংও করা যাবে।” সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে সার্চ করলে অন্যান্য পযর্টন কেন্দ্রের পাশাপাশি ডুয়ার্সের বক্সা এলাকার ৪৮টি হোম ট্যুরিজমের মালিকের নাম, টেলিফোন নম্বর, তাদের ঘরে ক’টি বেড, বাথরুম রয়েছে। সেই সব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে পর্যটকরা সরাসরি কোথায় থাকতে চান তা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও মাধ্যম ছাড়াই যেতে পারবেন। এত দিন সঠিক প্রচারের অভাব ছিল। তাই রাজ্য সরকারের পর্যটন দফতর তাদের ওয়েবসাইটে স্থানীয় হোম ট্যুরিজমের মালিকদের নাম ও ফোন নম্বর দিয়ে স্থানীয় পর্যটন ব্যবসাকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে।

• রাজধানী এক্সপ্রেসে এ বার ওয়াই-ফাই

ভারতীয় রেল ‘নয়াদিল্লি-হাওড়া রাজধানী এক্সপ্রেস’কে ভারতের প্রথম ওয়াই-ফাই সুবিধাযুক্ত ট্রেনের স্বীকৃতি দিতে চলেছে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলির মতো কোনও রকম তারের সংযোগ ছাড়াই এ বার এই ট্রেনে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে। প্রায় ২৪ ঘন্টার এই যাত্রায় ইন্টারনেট যাত্রীদের সর্ব ক্ষণের সঙ্গী হতে চলেছে। শুরুতে পরীক্ষামূলক ভাবে তিনটি রেকে এই সুবিধা দেওয়া হবে। পরে আরও বাড়ানো হবে। সম্পূর্ণ পরিকল্পনা বাস্তবে রূপায়িত করতে ৬.৩ কোটি টাকা খরচ হবে। চলতি মাসের শেষ থেকে এই সুবিধা পাওয়া যাবে বলে আশা।


পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা কমছে
ছোটবেলার কথা খুব মনে পড়ে। বড়দিনের ছুটিতে আমাদের প্রধান আকর্ষণ ছিল সান্টাক্লজ, ক্যাথলিনের কেক আর চিড়িয়াখানা। পুজোর ছুটি ফুরোতেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকতাম, স্কুলে কবে ক্রিসমাসের ছুটি পড়বে। রীতিমতো পরিকল্পনা করে বাবা, মা, ভাই, বোনেরা মিলে চিড়িয়াখানায় যেতাম। শুধু বাঘ-ভাল্লুক-সিংহ-হাতি কিংবা ময়ূর নয়, আমাদের কাছে চিড়িয়াখানার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল এক ঝাঁক বিদেশি অতিথি, সুদূর সাইবেরিয়া কিংবা চিন থেকে উড়ে আসা পরিযায়ী পাখি (মাইগ্রেটরি বার্ডস্)। এই সকল পাখির মধ্যে ছিল রোজ-ব্রেসটেড, গ্রসবিক, ব্ল্যাক-থ্রোটেড, ব্লু ওয়ার্বলার, বার্ন সোয়ালোর, রুডি শেলডাক, শোভেলার, পিনটেইল, উইজিয়ন, কমন টেইল, লেসার হুইসলিং টিল, মালার্ড, কুট, অস্ট্র। শীত পড়তে না পড়তেই সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে ঝিল কিংবা জলাভূমিতে খুশির বার্তা বয়ে আনত এই অতিথিরা। আজও যে এরা আসে না, তা নয়। কিন্তু ক্রমশ কমছে এদের সংখ্যা। আজ থেকে দশ-পনেরো বছর আগেও ৬০-৬৩টি প্রজাতির প্রায় ১.২০ লক্ষ পরিযায়ী পাখি ভিড় জমাত পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জলাভূমিতে। বিশেষ করে, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে। ২০০৪-এর এক সমীক্ষা বলছে এই পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গিয়েছে। হয়তো বর্তমানে এই সংখ্যাটা আরও কমেছে। কেন দিন দিন পরিযায়ী পাখিদের সংখ্যা কমছে?
দলছুট বিপন্ন পরিযায়ী।
কোনও সন্দেহ নেই নগরায়ণ আর পরিবেশ দূষণ এর জন্য মূলত দায়ী। শুধু তাই নয়, বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জলবায়ুর তারতম্যও এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। ২০০৬-এ ডব্লিউ ডব্লিউ এফ-এর (বার্ড স্পিসিস অ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ) এক সমীক্ষায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বহু পাখির সংখ্যা প্রায় ৯০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আক্রান্ত হচ্ছে পরিযায়ী পাখিরা। প্রাক্ শিল্প যুগের তুলনায় তাপমাত্রা যদি আর দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায়, তা হলে ইউরোপের ৩৮ শতাংশ ও উত্তর-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার ৭২ শতাংশ পাখি চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই গ্রেট লেক অঞ্চলের ৫৩ শতাংশ নিয়োট্রপিক্যাল পরিযায়ী পাখি লুপ্ত হয়ে গিয়েছে। শুধু পরিযায়ীরা নয়, জলবায়ুর পরিবর্তনে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে গ্যালাপাগোস পেঙ্গুইন, টাফটেড পাফিন, ইউরোপিয়ান পাইড, ফ্লাই ক্যাচার, ক্যালিফোর্নিয়ার রুফস ক্রাউনড স্প্যারো, রেনটিট, স্পটেড টাওহি ও ক্যালিফোর্নিয়া টাওহি। সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট-এর সমীক্ষায় জানা যায়, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জলাভূমিতে ২৫ বছর আগে যেখানে ২৭১ রকম পাখি দেখা যেত এখন চোখে পড়ে ১৬২ প্রজাতির পাখি। গবেষণা করে দেখা গিয়েছে পরিযায়ী প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষা ও প্রজনন ক্ষমতার উপর তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের প্রভাব রয়েছে। ৩৮.৪৬% পাখি তাপমাত্রা ও ২০.৫১% পাখি বৃষ্টিপাত দ্বারা প্রভাবিত। সি এম এস তালিকাভুক্ত ৪২.৩৪% পরিযায়ী পাখি জলস্তর কমে যাওয়ার কারণে বিপন্ন হবে। ২৮% খরার হার বৃদ্ধির কারণে হারিয়ে যাবে। সুতরাং এখনই প্রয়োজন পাখিদের সম্পর্কে নিয়মিত ডেটাবেস চর্চার মাধ্যমে জলবায়ুর তারতম্যের ফলে এদের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে ঠেকবে সে বিষয়ে গবেষণা ও ব্যবস্থা গ্রহণ।




রোজের আনন্দবাজারএ বারের সংখ্যা • সংবাদের হাওয়াবদল আপনার রান্নাঘর • খানা তল্লাশি • পুরনো সংস্করণ