দিন আসে, দিন যায়, তার ফাঁকেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ে তার চলাচলের খবর। পুরনো দিনের শহুরে খবর দিয়ে চেনা যায় এখনকার
অতি পরিচিত শহরের অতীতটাকে, তার নাগরিক জীবনযাপন থেকে খেলাধুলো, সংস্কৃতি বা কূটকচালি থেকে রাজনীতির হাল।
পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতা শহরের গতিবিধি চিনতে ২১ জুন ১৯৬৩ থেকে ২০ জুলাই ১৯৬৩ এক মাসের কিছু বিশেষ খবর।

শুক্রবার, ৬ আষাঢ়, ১৩৭০ (৩১ জৈষ্ঠ্য, ১৮৮৫ শকাব্দ) FRIDAY, JUNE 21, 1963

—চ্যারিটি টিকিট কোন্ সরকারী
দপ্তরে পাব মশাই? রাইটার্স
বিল্ডিংস না হরিণঘাটা?
• চ্যারিটি টিকিটের সেই হাহাকার: সেই পুরনো মর্মন্তুদ হাহাকার। একটি টিকিটের জন্য। আগামী শনিবার মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল চ্যারিটি খেলা। সাধারণ দর্শক রাজ্। ক্রীড়াসংস্থা সরকারী বা বেসরকারী, আইএফএ বনাম পচ্শিমবঙ্গ সরকারের মিতালি বা মনান্তর, সরকার টিকিট ছাপবেন না—আইএফএ পাবলিক গ্যালারী সরকার চালাবেন না ঠিকাদার—এসব সম্বন্ধে আজ খবর রাখেন, সুস্পষ্ট মতামত হয়তো পোষণ করেন। কিনতু বড় খেলার সময় দর্শকের একমাত্র চিন্তা, ধ্যান— একটিমাত্র টিকিট সংগ্রহ করা মোক্ষলাভের মত। আবশ্য রাতারাতি ভোজবাজির মত এক অযৌক্তিক ‘চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের’ বিষের সমস্যার সমাধান সরকার করতে পারেন না— নীলকণ্ঠের মতো। তবু সরকারী মহলে মরশুমের একটি মুখ্য কথার উল্লেখ করেছিলাম, জনসাধারণের তোখ দিয়ে সমস্যাটি বিশ্লেষণ করে। কথাটার মধ্যে স্বার্থপরতার চিহ্ন থাকলেও, তার সারাংশ মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনে যথার্থ মূল্যবান। হাতে হাতে ফল। রাজ্যের খেলাধূলার সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য সরকার পাবলিক গ্যালারীর ভার নিয়েছেন, ভাল কথা। আজ? আজ তো সেই খালি হাত, একটি টিকিটের জন্য দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা। যথাপূর্বং তথাপরম্।

শনিবার, ৭ আষাঢ়, ১৩৭০ (১ আষাঢ়, ১৮৮৫ শকাব্দ) SATURDAY, JUNE 22, 1963
• মহানগরীর উন্নয়নের জন্য ১৭ কোটি টাকার পরিকল্পনা: কলিকাতা মহানগরীর জলসরবরাহ ব্যবস্থা, ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রণালী এবং পৌরসভার শ্রমিকদের বাসগৃহ নির্মাণের জন্য কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ১৭ কোটি ১৫ লক্ষ ৩৩ হাজার একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করিয়াছেন বলিয়া জানা যায়। আজ শনিবার কংগ্রেস ভবনে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী শ্রীমোরারজী দেশাইয়ের নিকট এই পরিকল্পনাটি পেশ করা হইবে। উল্লেখযোগ্য, গত বছর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী দেশাই উপরোক্ত তিনটি সমস্যার সমাধানের জন্য পৌরসভাকে একটি পরিকল্পনা তৈরী করিবার পরামর্শ দেন। পরিকল্পনাটি দেখিয়া ইহা কার্যকরী করিবার জন্য কি পরিমাণ অর্থ কেন্দ্রীয় তহবিল হইতে দেওয়া যাইতে পারে সেসম্পর্কে তিনি বিবেচনা করিবেন বলিয়াও নাকি সে সময় আশ্বাস দেওয়া হয়। পরিকল্পনাটি কার্যকরী হইলে মহানগরীতে দৈনিত ৩০ কোটি গ্যালন পরিস্রূত জন সরবরাহ করা সম্ভব হইবে। বর্তমানে প্রত্যহ ৮ কোটি গ্যালন পরিস্রূত জন সরবরাহ করা হয়। নোট অর্থের মধ্যে ১১ কোটি ৩২ লক্ষ জল সরবরাহ ব্যবস্থা, ৫ কোটি ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রণালী এবং বাকী ৮৩ লক্ষ ৩ হাজার টাকা পৌর সভার কনজারভেন্সী শ্রমিকদের গৃহ নির্মাণের জন্য ব্যয় হইবে। শ্রমিকদের জন্য ৮৭টি ব্লক তৈরী করার প্রস্তাব হইয়াছে।

রবিবার, ৮ আষাঢ়, ১৩৭০ (২ আষাঢ়, ১৮৮৫ শকাব্দ) SUNDAY, JUNE 23, 1963
• গাছের ডাল ভাঙ্গিয়া দুর্ঘটনা, চারজন গুরুতর আহত: শনিবার অপরাহ্নে প্রথম ডিভিসন ফুটবল চ্যারিটি ম্যাচে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখিবার জন্য মাঠে বিপুল দর্শক সমাগম হয়। ইডেন উদ্যানের লম্বা লম্বা গাছগুলির উপরও প্রায় পাঁচ শতাধিক খেলাপাগল দর্শক ওঠে। খেলা আরম্ভের আধ ঘণ্টা পূর্বে একটি গাছের ডাল ভাঙ্গিয়া কয়েকজন দর্শক প্রায় ২০-২৫ ফুট উপর হইতে মাটিতে পড়ে। চারিজন গুরুতরভাবে জখম হওয়ায় মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। তাহাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

সোমবার, ৯ আষাঢ়, ১৩৭০ (৩ আষাঢ়, ১৮৮৫ শকাব্দ) MONDAY, JUNE 24, 1963
• অসহ্য গরমে রথযাত্রার আনন্দ ম্লান, বহুলোক সজ্ঞাহীন: অসহ্য গরমে কলিকাতা ও শহরতলীতে রথযাত্রার আনন্দ এইবার মাটি হইয়া গিয়াছে। ভিড়ের চাপে ও অত্যাধিক গরমের ফলে রবিবার কলিকাতা ও মাহেশের রথের মেলায় বহু ব্যক্তি সজ্ঞাহীন হইয়া পড়ে। পুলিসের মতেঃ অন্যন্যবারের তুলনায় এইবার অনেক স্থানেই ভিড় কম হইয়াছে। কারণঃ অসহ্য গুমোট।
মাহেশে গরমে ও ভিড়ের চাপে দুইজন পুলিস-সহ ২০ জন আহত হয়। রবিবার কলিকাতার বহুবাজার মুক্তরামবাবু স্ট্রীট, কালীঘাট এলাকায় রথের মেলা বসিয়াছিল। এইসব এলাকা হইতে পুলিস সমাজবারেধী কার্যকলাপের অভিযোগে প্রায় ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করে। ৫০ জনের মত নিখোঁজ নারী ও শিশুকে পুলিস অভিভাবকের হেফাজতে পৌঁছাইয়া দেয়।এইদিন বিকাল হইতেই সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলিতে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।

মঙ্গলবার, ১০ আষাঢ়, ১৩৭০ (৪ আষাঢ়, ১৮৮৫ শকাব্দ) TUESDAY, JUNE 25, 1963
• কলিকাতা-দিল্লি-বোম্বাই-মাদ্রাজ টেলিপ্রিন্টার এক্সচেঞ্জ: সোমবার বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটের সময় কেন্দ্রীয় পরিবহণ ও যোগাযোগ মন্ত্রী শ্রীজগজীবন রাম এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেনের মধ্যে টেলিপ্রিন্টারে বার্তা বিনিময়ের মাধ্যমে দিল্লি-কলকাতা টেলিপ্রিন্টার এক্সচেঞ্জ চালু হয়। এইদিন কলিকাতা, বোম্বাই, দিল্লি ও মাদ্রাজের চারটি টেলিপ্রিন্টার এক্সচেঞ্জে বার্তা বিনিময় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়া জাতীয় টেলেক্স সার্ভিসের উদ্বোধন হয়।
মুখ্যমন্ত্রী শ্রী পি সি সেন গত ২৪ জুন কলিকাতায় টেলেক্স সার্ঙিসের উদ্বোধন করেন। এই উপলক্ষে তিনি
রাইটার্স বিল্ডিং হইতে কেন্দ্রীয় পরিবহণ মন্ত্রী শ্রীজগজীবন রাম এবং কলিকাতায় মেয়রের সঙ্গে কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় পরিবহণ ও যোগাযোগ মন্ত্রীর পক্ষ হইতে শ্রী সেনের নিকট প্রেরিত বার্তায় বলা হয়, “আমি আশা করি, বহু দূরবর্তী স্থান সমূহের মধ্যে বার্তা বিনিময়ের যে ব্যবস্থা ডাক ও তার বিভাগ করিলেন তাহাতে জাতীয় সংহতি গড়িয়া তোলার সহায়তা হইবে।” মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সেন বলেন, “আমি আপনাকে এবং ভারতীয় ডাক ও তার বিভাগকে জাতীয় টেলেক্স সার্ভিস চালু করিবার জন্য ধন্যবাদ জানাই।” মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সেন ও কলিকাতা কর্পোরেশনের মেয়র শ্রীচিত্তরঞ্জন চ্যাটার্জির মধ্যেও বার্তা বিনিময় হয়। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বার্তায় বলেন যে, ডাক ও তার বিভাগ কর্তৃক প্রবর্তিত এই টেলেক্স সার্ভিসের দ্বারা কলিকাতার নাগরিকগণ বিশষ উপকৃত হইবেন। উত্তরে মেয়র তাঁহার বার্তায় শ্রীসেনকে ডাক ও তার বিভাগকে অভিনন্দন জানাইতে বলেন।

মঙ্গলবার, ১০ আষাঢ়, ১৩৭০ (৪ আষাঢ়, ১৮৮৫ শকাব্দ) TUESDAY, JUNE 25, 1963
• মার্কিন ছাত্র ও অধ্যাপকদলের আনন্দবাজার ভবন পরিদর্শন: দিল্লি বাঙ্গালোরে এই বত্সর যে এশিয়ান সেমিনার হইতেছে তাহাতে যোগদানের জন্য আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র হইতে আগত ছাত্র ও অধ্যাপক প্রতিনিধিদল সোমবার অপরাহ্নে আনন্দবাজার পত্রিকা ও হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ডের সুতারকিন স্ট্রীটস্থ কেন্দ্রীয় ভবন পরিদর্শনে আসেন। ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি সার্ভিস এর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটি দুইটির উদ্যোগে এই পরিদর্শনের ব্যবস্থা হয়। আনন্দবাজার পত্রিকা ও দেশে-এর সম্পাদক শ্রী অশোককুমার সরকার এবং হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ডের সম্পাজক শ্রীসুধাংশুকুমার বসু ঐ প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানান। তাঁহাদিগকে এক চায়ের আসরেও অপ্যায়িত করা হয়। তাহার আগে প্রতিনিধি দলের বিভিন্ন পুরুষ ও মহিলা ছাত্রছাত্রী এবং অধ্যাপকবৃন্দদের প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে শ্রীসরকার ও শ্রীবসুর সহিত ভারত সম্পর্কে নান বিষয়ে আলাপ-আলোচলা করেন। কাশ্মীর সমস্যা, ভারতের বৈদেশিক নীতি, ভারতের পঞ্চবার্ষিকি পরিকল্পনার অগ্রগতি, ভারতের কম্যুনিস্ট আচরণ, বিশেষ করিয়া চীনা আক্রমণের পটভূমিকায় কম্যুনিস্টদের কার্যকলাপ, রাষ্ট্রীয়করণের প্রশন, শিল্প ক্ষেত্রে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যম, উদ্বাস্তু সমস্যা, কলিকাতার সমস্যা, এমন কি কলিকাতার রাজপথে বেওয়ারিশ গবাদি পশুর ইতস্তত ভ্রমণ প্রভৃতি বিষয়েও তাঁহারা খুঁটিনাটি প্রশ্ন করেন। প্রতিনিধি দলের নেতা ইউ এস ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি সার্ভিসের সেক্রেটারী ডঃ ডব্লিউ জে কিচেন এবং তদীয় পত্নী মিসেস কিচেন আনন্দবাজার পত্রিকা সংস্থার এই সম্বর্ধনার জন্য ধন্যবাদ জানান। প্রতিনিধিদলের সদস্যগণ আনন্দবাজার ভবনের প্রেস ও বিভিন্ন বিভাগ ঘুরিয়া দেখেন।

বুধবার, ১১ আষাঢ়, ১৩৭০ (৫ আষাঢ়, ১৮৮৫ শকাব্দ) WEDNESDAY, JUNE 26, 1963
• কলিকাতায় জল সরবরাহে চরম বিপর্যয়ের সম্ভাবনা: মহানগরীতে জল সরবরাহের জন্য পলতার যে ৪টি পুকুরে গঙ্গার জল ধরিয়া রাখা হইয়াছিল, সেই ৪টিই প্রায় বুজিয়া গিয়াছে। অথচ কলিকাতায় জল সরবরাহের ব্যাপারে এই ৪টি পুকুর (প্রি সেটলিং ট্যাঙ্ক) অপরিহার্য। ইদানীং পরিস্রুত জলও যে অনেক সময় ঘোলা থাকে, পুকুরগুলির জীর্ণ অবস্থাই তাহার অন্যতম কারণ বলিয়া অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। কলিকাতায় জল সরবরাহের ব্যাপারে ইহা যে তরম বিপর্যয়ের কারণ হইতে পারে সে সম্পর্কে এতকাল পরে পৌরসভা ও রাজ্য সরকারের বোধহয় টনক নড়িয়াছে। মঙ্গলবার পৌরসভা ও রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিস্থানীয় কয়েকজন পলতার এই পুকুরগুলি সরেজমিনে দেখতে যান। অন্তত সাময়িকভাবে তাঁহারা পুকুরগুলি সংস্কারের কথাও বিবেচনা করিতেছেন। প্রকাশ ১৯৫৯ সনেই পৌরসভার তরফ হইতে পুকুরগুলির জীর্ণ অবস্থার প্রতি রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। রাজ্য সরকারের নিকট তখন এই প্রস্তাবও করা হইয়াছিল যে, পলতায় ইঁট ও টালি নি৪মাণের একটি কারখানা করিয়া এই পুকুরগুলির পলি ইঁট ও টালি নির্মাণের কাজে ব্যবহার করা হউক। কিন্তু এই ব্যাপারেও বৈদেশিক মুদ্রার টানাটানির দোহাই পড়ে। ফলে এই পরিকল্পনা অদ্যাবধি কার্যকরী করা সম্ভব হয় নাই।

বুধবার, ১১ আষাঢ়, ১৩৭০ (৫ আষাঢ়, ১৮৮৫ শকাব্দ) WEDNESDAY, JUNE 26, 1963
—ভুল হয়েছে সার, গঙ্গায়
ঝাঁপ দেবার জন্য, সেতুর মাথায়
উঠবার ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
• প্রিন্সেপ ঘাট দ্বিতীয় গঙ্গা-সেতুর স্থান: কলিকাতায় গঙ্গার উপর দ্বিতীয় সেতু নির্মাণের প্রকল্প আরও একধাপ অগ্রসর হইয়াছে। প্রিন্সেপ ঘাটের কাছে সেতুটি তৈরি হইবে ইহা একরূপ স্থির হইয়া গিয়াছে। মঙ্গলবার ফোর্ট উইলিয়ামের সামরিক ইঞ্জিনিয়ার, সি এম পি ও এবং এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত বিদেশী সংস্থার প্রতিনিধিগণ দীর্ঘকাল প্রিন্সেপ ঘাট এবং আশেপাশে এজন্য পরীক্ষা কার্য চালান। এই দিন হইতে সামরিক ইঞ্জিনিয়ার, সি এম পি ও এবং ঐ বিদেশী সংস্থার প্রতিনিধিগণ একযোগে সেতুর প্রবেশমুখ ও অন্যান্য বিষয়ে পরিকল্পনা রচনা সুরু করিয়াছেন। গঙ্গার উপর এই দ্বিতীয় সেতু নির্মাণের সমীক্ষা, স্থান নির্বাচন এবং পরিকল্পনা রচনার জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্ক সাড়ে সাত লক্ষ (ডলার) এবং রাজ্য সরকার সাড়ে তিন লক্ষ টাকা অনুমোদন করেন। হাওড়া পুলের উপর যানবাহনের অস্বাভাবিক ভিড়, জ্যামজমাট এবং নাগরিকদের দুরবস্থা লাঘবের জন্য সি এম পি ওর সমীক্ষায় প্রকাশ হাওড়া পুল দিয়া দৈনিক ৫ লক্ষ লোক ও ৪০ হাজার গাড়ি চলে।

বৃহস্পতিবার, ১২ আষাঢ়, ১৩৭০ (৬ আষাঢ়, ১৮৮৫ শকাব্দ) THURSDAY, JUNE 27, 1963
• এক হাজার ট্যাক্সির জন্য বার হাজার দরখাস্ত: এক হাজার ট্যাক্সির পারমিটের জন্য আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের কাছে শেষ দিন বুধবার পর্যন্ত প্রায় বারো হাজার দরখাস্ত আসিয়া পৌঁছিয়াছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত উহার সংখ্যা ছিল ৭৪৪১টি। দরখাস্তগুলি ডাকে আসিতেছে। গত কয়েকদিন ধরিয়া ডাকবিভাগ ঠেলাগাড়ি করিয়া বেলতলার পি ভি ডি অফিসে দরখাস্তগুলি ডেলিভারি দেন। একজন সরকারী মুখপাত্র বলিলেনঃ ট্যাক্সির পারমিটের জন্য যত দরখাস্ত আসিয়া পৌঁছিয়াছে, সেগুলি জোড়া দিলে লম্বায় বারো হাজার ফুট হইবে, অর্থাত্ একটি পূর্ণ চলচ্চিত্রের সমান। এই বাবদ সরকারের কোষাগারে প্রতি দরখাস্তের ‘ফী’ ৫ টাকা হিসাবে প্রায় ৬০,০০০ টাকা জমা পড়িতেছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত ট্যাক্সির ফর্ম বিলি হইয়াছিল ৪৩ হাজার ২ শত। অধিকাংশই জমা দেন নাই। তাহার কারণ উহারা সম্ভবত ট্যাক্সি পাইবার উপযোগী ন্যূনতম যোগ্যতাগুলি পূরণ করিতে পারেন নাই। ঐ মুখপাত্র আশা করেন যে, আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে দরখাস্তগুলির পরীক্ষা শেষ হইবে।

বৃহস্পতিবার, ১২ আষাঢ়, ১৩৭০ (৬ আষাঢ়, ১৮৮৫ শকাব্দ) THURSDAY, JUNE 27, 1963
• উল্টাডাঙ্গা এলাকা জলমগ্ন হইবার আশঙ্কা: লবণ হ্রজ পুনরুদ্ধার পর্যদের কর্মতত্পরতায় এই বর্ষাতেই উল্টাডাঙ্গা এলাকার জলমগ্ন হইবার আশঙ্কা দেখা দিয়াছে। লবণ হ্রদ পুনরুদ্ধার পর্যদ নিউকাট ক্যানালদ্বয়ের আড়াই হাজার ফুট এলাকা বন্ধ করিয়া দিবার ফলেই এই বিপত্তি দেখা দিয়াছে বলিয়া সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ। উল্টাডাঙ্গা ও মাণিকতলার সমস্ত ময়লা দীর্ঘদিন হইতেই নিউ কাট ক্যানাল দিয়া কৃষ্ণপুর খালে নিকাশ করা হয়। এই ময়লা নিকাশের কাজ যাহাতে অকস্মাত্ বন্ধ না বৃহইয়া যায় তাহার জন্য রাজ্য সরকার নিউকাট ক্যানালটি খোলা রাখিবার জন্য লবণ হ্রদ পুনরুদ্ধার পর্যদকে দ্ব্যর্থহীন নির্দেশও দিয়াছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, সরকারী নির্দেশ সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিয়া লবণ হ্রদ কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই নিউকাট ক্যানালের প্রায় ২,৫০০ ফুট এলাকা ভরাট করিয়া দিতে উদ্যোগী হইয়াছেন। এই অপরিনামদর্শিতার বিষময় পলও ইতিমধ্যেই ফলিতে শুরু করিয়াছে বলিয়া বুধবার এক অভিযোগ পাওয়া যায়। ঐদিন পৌরসভার জনৈক প্রতিনিধি সরেজমিনে উল্টাডাঙ্গা এলাকা পরিদর্শন করিয়া আসিয়া জানান, ঐ এলাকায় ময়লা জমিয়া ময়লা নিকাশের নালাই বন্ধ হইয়া গিয়াছে। উল্টাডাঙ্গা সাইফন পাম্পিং স্টেশনের কাজও ঐ একই কারণে ঠিকমত চলিতেছে না। নালা বন্ধ হইবার দরুণ উল্টাডাঙ্গা এলাকার ময়লা পাম্পিং স্টেশনের আওতার বাইরেই থাকিয়া যাইতেছে। ময়লা জমিয়া এই এলাকার জীবন ইতিমধ্যেই নাকি দুঃসহ হইয়া উঠিয়াছে।

শুক্রবার, ১৩ আষাঢ়, ১৩৭০ (৭ আষাঢ়, ১৮৮৫ শকাব্দ) FRIDAY, JUNE 28, 1963
• কলিকাতায় অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের পৌর পরিকল্পনা: কলিকাতায় বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষার প্রবর্তন করিতে হইলে সুরুতেই অন্তত দুই কোটি টাকার প্রয়োজন হইবে। পৌরসভার শিক্ষা বিভাগ হইতে এবিষয়ে একটি বিশদ পরিকল্পনা সম্প্রতি রাজ্য সরকারের নিকট পেশ করা হইয়াছে। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হইলে অন্যূন তিন লক্ষ বালকবালিকা এই ব্যবস্থার আওতায় আসিবে। বর্তমানে মাত্র ৫৪ হাজার বালকবালিকা অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা পাইয়া থাকে। এই জন্য পুরসভার মোট ব্যয় হয় ৩৬ লাখ টাকা। মোট ১৬০০ শিক্ষক শিক্ষিকা বর্তমানে এই কাজে নিয়োজিত আছেন। প্রকাশ, গত দশ বত্সর ধরিয়া শিক্ষা খাতে পৌরসভার ব্যয় ক্রমাগত বাড়িয়া উপরোক্ত অঙ্কে আসিয়া দাঁড়াইয়াছে। এই সময়ে একদিকে যেমন অবৈতনিক স্কুলের সংখ্যা বাড়িয়াছে অপরদিকে তেমনই শিক্ষক শিক্ষিকার সংখ্যাও বাড়িয়াছে। সরকারী সাহায্য ছাড়া অতঃপর অবৈতনিক শিক্ষার অধিকতর সম্প্রসারণ অসম্ভব হইবে বলিয়া পৌরসভার পক্ষে অভিমত প্রকাশ করা হয়।

শুক্রবার, ১৩ আষাঢ়, ১৩৭০ (৭ আষাঢ়, ১৮৮৫ শকাব্দ) FRIDAY, JUNE 28, 1963
• কলকাতার নরক—উল্টাডাঙ্গা: উল্টাডাঙ্গা এলাকার ইতিমধ্যেই নরকতুল্য হইয়া দাঁড়াইয়াছে। প্রতিটি রাস্তার দুই ধারে খোলা নর্দমার ময়লা জল কানায় কানায় ভরিয়া উঠিয়াছে। অনেক জায়গায় নর্দমা ছাপাইয়া ময়লা জলে রাস্তাও প্লাবিত হইয়াছে। উত্কট গন্ধে ঐ অঞ্চলের বায়ু আজ বিষাক্ত। বৃহস্পতিবার উল্টাডাঙ্গায় গিয়া দেখি ময়লা নিকাশের কর্পোরেশনের একমাত্র পাম্পিং স্টেশনটি অচল পড়িয়া আছে। ভারপ্রাপ্ত কর্মীর কোনও কাজ নাই। তিনি ঘুমাইতেছিলেন। ওদিকে উল্টাডাঙ্গার নিম্নাঞ্চলগুলি ময়লা জলে থৈ থৈ করিতেছে। উল্টাডাঙ্গার দুর্ভোগ আজ নতুন নয়। তবে মহানগরীর এই ‘অভিশপ্ত’ এলাকাটি বর্তমান বছরের মত দুঃসময় ইতিপূর্বে দেখে নাই। আর ভাগ্যার এমনই পরিহাস যে, অপর একটি অঞ্চলের উন্নয়নের জন্যই এই অঞ্চলের আজ এই দুর্ভোগ। উল্টাডাঙ্গা এলাকার ময়লা জল দীর্ঘদিন হইতে লবণহর্দে নিকাশ করা হইত। লবণ হ্রদ ভরাট করিবার কাজে হাত দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু উল্টাডাঙ্গার ময়লা জল নিকাশের বিকল্প কোন ব্যবস্থা করা হয় নাই। উল্টাডাঙ্গার ময়লা জল সম্প্রতি নিউকাট ক্যানাল দিয়া কৃষ্ণপুর খালে পার পাইত। ইদানিং সেই খালটিও ভরাট হইতে চলিয়াছে এবং এইবারেও উল্টাডাঙ্গার ময়লা নিকাশের কথা বিবেচনা করা হয় নাই। পরিণামে— উল্টাডাঙ্গা আজ নরককুণ্ড।

শনিবার, ১৪ আষাঢ়, ১৩৭০ Saturday, June 29, 1963
• তিনটি বড় হাসপাতালে বার্ষিক ২৩ লক্ষ টাকা সরকারী সাহায্যের সিদ্ধান্ত: কলিকাতার তিনটি বড় হাসপাতালে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডের কার্য পরিচালন ব্যবস্থার উন্নতি বিধানের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার উহাদিগকে বার্ষিক ২৩ লক্ষ টাকা সাহায্য দানের সিদ্ধান্ত করিয়াছেন। কলিকাতা মেডিকেল কলেজ, আর জি কর এবং নীলরতন সরকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এই সাহায্য দেওয়া হইবে। হাসপাতালগুলিতে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে দেখাশুনা করিবার জন্য ২৪ ঘন্টা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মোতায়েন থাকিবেন বলিয়া সরকার সিদ্ধান্ত করেন। ইহার ফলে জরুরী কেসগুলির ক্ষেত্রে সর্বক্ষণ মেডিকেল ও সার্জিক্যাল সার্ভিস এবং লেবরেটরির সুযোগ-সুবিধাও পাওয়া যাইবে। ইহা ছাড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আউট-ডোর বিভাগের কাজের সময় বৃদ্ধির এবং সেই সঙ্গে সঙ্গে ঐ বিভাগ মারফত তাড়াতাড়ি রোগীদের রক্ত ইত্যাদি পরীক্ষা ও রোগনিরূপণের ব্যবস্থারও সিদ্ধান্ত হইয়াছে। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে যেসব রোগীরা আউটডোর মারফত হাসপাতালে ভর্তি হন তাঁহাদের চিকিত্সা তরান্বিত হইবার সম্ভাবনা। বর্তমান ব্যবস্থায় ভর্তির পরও রোগ-নিরূপণে বিলম্বের ফলে চিকিত্সা সুরু হইতে অনেক সময় পক্ষকাল লাগিয়া যায়।

রবিবার, ১৫ আষাঢ়, ১৩৭০ SUNDAY, JUNE 30, 1963
• বিধানচন্দ্রের বাসভবনে ব্যাধি নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা: স্বর্গত মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের নির্মলচন্দ্র স্ট্রীটের বাসভবনটি দুরারোগ্য ব্যাধির নার্সিংহোমে পরিণত করার নক্সা প্রস্তুত শুরু হইয়াছে। জনৈক অছি শনিবার আমাদের জানান, নক্সাটি প্রস্তুত হইয়া গেলেই নার্সিং হোমের কাজ সঙ্গে সঙ্গে শুরু হইবে। উক্ত অছি আরও জানান, ডাঃ রায়ের ইচ্ছা ছিল এই আধুনিক নার্সিংহোমটি দুইভাগে বিভক্ত হইবে এবং এক ভাগের আয় হইতে অন্য ভাগের ব্যায়ও নির্বাহ হইবে। এই জন্য ১৩৫ নং প্রিন্সেপ্স স্ট্রীটের বাড়িটিও দখল করিবার পরিকল্পনা ডাঃ রায়ের ছিল। ৩৬ নং নির্মলচন্দ্র স্ট্রীটের বাড়িতে যেখানে তিনি বাস করিতেন, বিত্তশালী ব্যক্তিদের চিকিত্সা চলিবে এবং প্রিন্সেপ্স স্ট্রীটের বাড়িটিতে মধ্য ও নিন্মবিত্ত ব্যক্তিদের চিকিত্সা হইবে। সেবা বা চিকিত্সার তারতম্য কোন অংশেই হইবে না। অছিরা বর্তমানে প্রিন্সেপ্স স্ট্রীটের বাড়িটি দখল লইবার চেষ্টা করিতেছেন। জরুরী অবস্থা ঘোষনা হইবার পর সরকার ডাঃ রায়ের বাসভবনে একটি চিকিত্সা কেন্দ্র খুলিবার জন্য বাড়িটি আটকাইয়া রাখিয়া এতদিন কাজ আরম্ভ করা যায় নাই বলিয়া প্রকাশ। গত বছর ১লা জুলাই এই ভবনেই তাঁহার জন্মদিনে ডাঃ রায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সোমবার, ১৬ আষাঢ়, ১৩৭০ (১০ আষাঢ়, ১৮৮৫ শক) MONDAY, JULY 1, 1963
• সোমবার প্রধানমন্ত্রী শ্রীনেহরুর কলিকাতা আগমন: প্রধানমন্ত্রী শ্রীজওহরলাল নেহেরু আজ সোমবার সকাল ১০টা ১০মিঃ-এ দিল্লি হইতে বিমানযোগে কলিকাতায় আসিয়া পৌঁছিবেন। শ্রীনেহরু বিমানঘাটি হইতে সরাসরি রাজভবনে যাইবেন। সেখান হইতে বেলা ৩টায় তিনি শরত্ বসু রোডের রামকৃষ্ণ মিশনের শিশুমঙ্গল প্রতিষ্ঠানের একটি ব্লকের উদ্বোধন করিবেন। ৫টা ৪৫মিঃ-এ তিনি ভারতীয় চিন্তাবিদ সম্মেলনের উদ্বোধন করিবেন। মঙ্গলবার সকাল ৮ ঘটিকায় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে ক্যাজুয়াল্টি ব্লকের ভিত্তি স্থাপন ও ডাঃ রায়ের চিত্রের আবরণ উন্মোচন। নয়টায় ব্যারাকপুর চেস্ট ক্লিনিকের উদ্বোধন। পরে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিট্যুট পরিদর্শন। মধ্যাহ্নে রাজভবনে রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের সহিত বিবেকানন্দ শতবার্ষিকী সম্পর্কে আলোচনা। এইদিন বিকেল পাঁচটায় শ্রীনেহরুকে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে নাগরিক সম্বর্ধনা জানান হইবে।

মঙ্গলবার, ১৭ আষাঢ়, ১৩৭০ (১১ আষাঢ়, ১৮৮৫ শক) TUESDAY, JULY 2, 1963
• কর্মযোগী বিধানচন্দ্রের শ্রদ্ধাতর্পণ: একই দিনে জন্ম এবং মৃত্যু— আনন্দ ও শোকের সমাহার। পয়লা জুলাই পশ্চিমবঙ্গের প্রিয় নেতা ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের ৮২তম জন্মদিবস এবং প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপিত হয়। তাঁহার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এইদিনটি কলিকাতায় “বিধান দিবস” হিসাবে পালন করা হয়। গত বত্সরও জন্মদিনের উত্সব সুরুতেই সারা হইয়া গিয়াছিল। ডাঃ রায় অসুস্থতার জন্য কাহারও সহিত দেখা করিতে পারেন নাই।
ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী: মুখ্যমন্ত্রী শ্রীসেন সোমবার বিধানচন্দ্রের
শয়নকক্ষে তাঁহার প্রতিকৃতির সম্মুখে পুষ্পমাল্য অর্পণ করিতেছেন। — আনন্দ চিত্র
ছত্রিশ নম্বর নির্মল চন্দ্র স্ট্রীটের বড় বাড়ীটার একতলায় ছোট্ট বোর্ডের উপর কালচে নীল কালিতে লিখিয়া জানান হইয়াছিল— “ডাঃ রায় অসুস্থ, চিকিত্সকগণের পরামর্শে ইত্যাদি।” সেইদিনই বেলা বারটার কিছু পরে বাংলার প্রিয়নেতার মৃত্যু হয়। সেদিন সেই মৃত্যু সংবাদ ছিল আকস্মিক। শোকাহত নগরবাসীরা কয়েকমিনিটের মধ্যে ডাঃ রায়ের বাসভবনের চারপাশে যেন ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছিল।

বুধবার, ১৮ আষাঢ়, ১৩৭০ (১২ আষাঢ়, ১৮৮৫ শক) WEDNESDAY, JULY 3, 1963
• কলিকাতায় সার্কুলার রেলের জন্য কেন্দ্রের নিকট মুখ্যমন্ত্রীর পত্র: নয়াদিল্লি হইতে আনন্দবাজারের বিশেষ সংবাদদাতা মঙ্গলবার জানান যে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন কলিকাতায় সার্কুলার রেলপথের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সর্দার স্বর্ণ সিং-এর নিকট একটি পত্র দিয়েছেন। তবে রেল বোর্ড নাকি এই ব্যাপারে এক অদ্ভুত অজুহাত পেশ করিয়াছেন। বোর্ড বলিয়াছেন, একটি নগরীর পরিবহণ ব্যবস্থার সহিত তাঁহাদের কোন সংস্রব নাই। সেই সঙ্গে তাঁহারা এই উপদেশামৃতও দিয়াছেন যে, পৌর সংস্থা বা রাজ্য পরিবহণ সংস্থার মত কোন স্বায়ত্তশাসিত পরিবহণ সংস্থার স্কন্ধেই এই দায়িত্ব ন্যস্ত হওয়া উচিত। এই রেল রেল বোর্ডই কিন্তু দিল্লির ক্ষেত্রে এরূপ অজুহাত দেন নাই। দিল্লির জন্য সংযোগ রেলপথ এই বোর্ডই অনুমোদন করিয়াছেন। এই সংযোগ রেলপথও এক ধরনের নগর রেলপথ, ফলে নগরের পরিবহণ ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত। ওয়াকিবহাল মহল মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার যদি তাঁহাদের দাবি সম্পর্কে চাপ না দেন, তাহা হইলে কলিকাতায় ভয়াবহ পরিবহণ সমস্যা সম্পর্কে রেল বোর্ডের টনক নড়িবে না।

বুধবার, ১৮ আষাঢ়, ১৩৭০ (১২ আষাঢ়, ১৮৮৫ শক) WEDNESDAY, JULY 3, 1963
• কলিকাতার জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্টোক্তি: প্রধানমন্ত্রী শ্রীজওহরলাল নেহরু মঙ্গলবার ময়দানের এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতাকালে ভারতের চীনা-দরদী কম্যুনিস্টদের কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা করেন। তিনি বলেন, বিশেষ করিয়া পশ্চিমবঙ্গে এই শ্রেণীর কম্যুনিস্টরা আক্রমণকারী চীনাদের অনুকূলে আড়ালে-আবডালে কাজ করিয়া দেশের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করিতেছে। পূর্বদিন কলিকাতায় আগমনকালে প্রজা-সমাজতন্ত্রী দলের পক্ষ হইতে রাজভবনের নিকট বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যর্থতার অভিযোগ করিয়া প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ধ্বনি উঠান হইয়াছিল। জনসভায় শ্রী নেহরু একাধিকবার তাহার উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, দুই একশো লোকের হুল্লোড়বাজীতে তাহার পদত্যাগ সম্ভব হয় না।
ময়দানে প্রধানমন্ত্রী শ্রীজওহরলাল নেহরুর ভাষণ।
ভারতের জনগণের প্রীতি ভালোবাসাই তাঁহাকে শক্তি জোগাইয়াছে এবং তাহা যতদিন থাকিবে ততদিন তিনি কাজ চালাইয়া যাইবেন। এই ‘পদত্যাগ’ প্রসঙ্গের উল্লেখের সময় প্রধানমন্ত্রীর কন্ঠে কিছুটা উত্তেজনা ও ধমকানির সুর ফুটিয়া উঠে। তিনি বলেন, যাহারা এই দাবি তুলিয়াছেন তাহারা কি তামাসা পাইয়াছেন? প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ ৮৫ মিনিট ধরিয়া নানা বিষয়ে বক্তৃতা করেন। চীনা আক্রমণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করিয়া শ্রী নেহরু দৃঢ়কন্ঠে পুনরায় ঘোষণা করেন যে, শান্তিবাদের আদর্শে বিশ্বাসী ভারত কোন দেশের সহিত কখনও যুদ্ধ চাহে না। কিন্তু দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সে আক্রমণকারী দেশের বিরুদ্ধে অবশ্যই যুদ্ধ চালাইয়া যাইবে। তিনি আরও বলেন যে, ভারত জোট নিরপেক্ষ নীতি চালাইয়া যাইবে কারণ উহা ত্যাগ করিলে ভারতের সর্বনাশ হইবে।

বৃহস্পতিবার, ১৯ আষাঢ়, ১৩৭০ Wednesday, July 4, 1963
• পঞ্জিকা রচনার নব অধ্যায়: ১৩৭৯ সাল হইতে বাংলাদেশে পঞ্জিকা রচনার ইতিহাসে এক নব অধ্যায় শুরু হইবে। বিভিন্ন পদ্ধতির গণনার ফলে  এখন নানা পঞ্জিকার নানা মতে যে বিভ্রান্তি আছে, তাহা দূর করার উদ্দেশ্যে আগামী বছর হইতে একমাত্র সূর্য সিদ্ধান্ত অনুসারে ও নিরায়ন মতে গণনা ভিত্তি করিয়াই পঞ্জিকাদি প্রস্তুত করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হইয়াছে। ঐ বিষয়ে সাহায্যের জন্য অন্তত দশজন বিশেষজ্ঞকে লইয়া এক উপদেষ্টামন্ডলী গঠনেরও সুপারিশ করা হইয়াছে বলিয়া জানা যায়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিযুক্ত “রাজ্য পঞ্জিকা কমিটি” গত শুক্রবার যে ৩৪ পৃষ্ঠাব্যাপী রিপোর্ট পেশ করিয়াছেন তাহাতে নানা সুপারিশের সঙ্গে ঐ উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্যদের নামও পেশ করা হইয়াছে। ঐ মন্ডলীতে বিশিষ্ট পঞ্জিকাগুলির প্রতিনিধি ছাড়া বিশিষ্ট পন্ডিত, গণিতজ্ঞ, বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদদের লওয়া হইবে। এই বছরের দূর্গা, কালী ইত্যাদি পূজার প্রশস্ত দিন সম্পর্কে এই কমিটি অবশ্য কোন বিধান দিতে পারেন নাই। পঞ্জিকা-বিরোধ মিটাইয়া এবার আশ্বিণ মাসের মধ্যেই নতূন পঞ্জিকা রচনা এবং তাহা রাজ্যের অগণিত জনসাধারণের মধ্যে প্রচার করা সম্ভব বলিয়া তাঁহারা মনে করেন না।

শুক্রবার, ২০ আষাঢ়, ১৩৭০ FRIDAY, JULY 5, 1963
• কলিকাতায় কলেরা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্হ্য দপ্তরের উদ্বেগ: কলিকাতা ও প্বার্শবর্তী অঞ্চলে প্রতি বছর কলেরার তান্ডব কেন্দ্রীয় স্বাস্হ্য দপ্তরকে চিন্তিত করিয়াছে। তঁহাদের বিশ্বাষ কলিকাতা কর্পোরেশনের হাতে জলসরবরাহ, আবর্জনা পরিষ্কার ও বস্তীর ব্যাপারে যে ক্ষমতা আছে তাহার সুষ্ঠ প্রয়োগ হইলে কলেরার প্রকোপ অনেকটা দমন করা সম্ভব। বৃহস্পতিবার বিকালে রাইটার্স বিল্ডিংয়ে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীসেনের সঙ্গে আলোচনাকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্হ্যমন্ত্রী ডাঃ সুশীলা নায়ার ঐ বিষয়ের উল্লেখ করেন এবং কর্পোরেশনকে উক্ত দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করার জন্য শ্রীসেনকে অনুরোধ জানান বলিয়া প্রকাশ। ঐ আলোচনার শেষে স্বাস্হ্যমন্ত্রী ডাঃ নায়ার সাংবাদিকদের বলেন যে, বস্তি পয়ঃপ্রনালী ও বাহিরের আবর্জনা, পরিশ্রুত ও অপরিশ্রুত দুই রকমের জলের ব্যবস্হা এবং সর্বোপরি খাটা পায়খানা কলিকাতার স্বাস্হ্য সমস্যাকে ঘোরালো করিয়া তুলিয়াছে।

শুক্রবার, ২০ আষাঢ়, ১৩৭০ FRIDAY, JULY 5, 1963
—মারামারিতেই সব রক্ত ঝরে
গেল ব্লাড ব্যাঙ্কে বেচবো কি?
ব্লাড ব্যাঙ্কে অভাবী মানুষের বিক্ষোভ: “রক্ত নিতেই হবে” – এই দাবিতে বৃহস্পতিবার রক্তদানে ইচ্ছুক কয়েক ব্যাক্তি কলিকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কেন্দ্রীয় ব্লাড ব্যাঙ্কের সামনে গন্ডগোল শুরু করেন। ফলে ঐদিনের মত রক্ত লইবার কাজ বন্ধ করিয়া দেওয়া হয়; শান্তিভঙ্গের আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষ পুলিসের সাহায্যও চাহিয়াছেন। টাকার বিনিময়ে শরীরের রক্ত বিলাইয়া দিবার আগ্রহ সমাজের একদিকে দারুন আর্থিক অভাবের চিত্র ফুটাইয়া তোলে। দুমাসের মধ্যে রক্তদান স্বাস্হ্যের দিক দিয়া অনুচিত। কিন্তু কিছু লোক নাকি প্রায়ই রক্ত দিবার জন্য ঐখানে ভীড় জমায়। কর্তৃপক্ষের মতে তাহারা ‘পেশাদার রক্তদাতা’। ইহাদের কার্যকলাপ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ‘ডোনার’-দের ছবি তুলিয়া রাখার ব্যবস্থা হইয়াছে। পর পর বার দিন ছবি লইবার ফলে একই রক্তদাতার ছবি নাকি তিনবার উঠিয়াছে।

শনিবার, ২১ আষাঢ়, ১৩৭০ SATURDAY, JULY 6, 1963
• বালিগঞ্জ ওভারব্রিজ: রেল কর্তৃপক্ষ, সি-আই-টি এবং রাজ্য সরকার— এই তিন কর্তৃত্বের ত্র্যহস্পর্শে বালিগঞ্জ স্টেশনে “রোড-ওভারব্রিজ” নি্র্মাণের পরিকল্পনা শিকায় চড়িয়াছে। তবে পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ সেখানে শুধু লোক পারাপারের জন্য বর্তমান লেভেল ক্রসিংয়ের পাশে একটি পায়ে হাঁটা ওভারব্রিজ নির্মাণ করিতে রাজী। এই রোড-ওভারব্রিজ নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। এ অঞ্চলের জনসাধারণ গত সাঁইত্রিশ বত্সর ধরিয়া সর্বত্র দরবার এবং দরখাস্ত করিয়া আসিতেছেন। কয়েকবার আশ্বাসও মিলিয়াছিল। কিন্তু এখন রেল কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব এড়াইতেছেন, সি আই টি অন্য কাজের দোহাই দিয়া অনিচ্ছা প্রকাশ করিয়াছেন এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার নীরব। কলিকাতার দক্ষিণ শহরতলীর কসবা-তিলজলা, হালতু-ঢাকুরিয়া অঞ্চলে যে-হারে জনসংখ্যা বাড়িতেছে, তাহাতে কসবা ও বালিগঞ্জের সঙ্গে সংযোগসাধনের জন্য বালিগঞ্জ স্টেশনের গা ঘেঁষিয়া ঐ ব্রিজ নির্মাণ আশু প্রয়োজন। প্রতিদিন লাখ দেড়েক লোক আর অগণিত মোটর-লরী ইত্যাদি যানবাহন এই লেভেল ক্রসিংয়ের উপর দিয়া পারাপার করে।

শনিবার, ২১ আষাঢ়, ১৩৭০ SATURDAY, JULY 6, 1963
• কলিকাতায় শতকরা দশজন ক্ষয় রোগে আক্রান্ত: এদেশ হইতে ম্যালেরিয়া উত্খাত হইয়াছে বটে, কিন্তু ক্ষয়রোগ ক্রমশ তাহার স্থান দখল করিতেছে। এক হিসাবে জানা যায়, কলিকাতা শহরের মোট জনসংখ্যার শতকরা ১০ জন ক্ষয়রোগে ভুগিতেছে। এই ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন হইবার জন্য সমস্ত মানবসেবাধর্মী সংস্থাকেই উদ্যোগী হইতে হইবে। শুক্রবার গ্রেট ইস্টার্ন হোটেলে কলিকাতা রোটারী ক্লাবের ৪৪তম বার্ষিক সভাপতি বরণের নৈশভোজে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী শ্রীশঙ্করদাস ব্যানার্জি উপরোক্ত মন্তব্য করেন। এই মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে কলিকাতা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ রোটারিয়ান ডাঃ কে সি সর্বাধিকারী ১৯৬৩-৬৪ সালের জন্য কলিকাতা রোটারী ক্লাবের সভাপতিরূপে ... হন। বিদায়ী সভাপতি রোটারিয়ান শ্রী কে এন মুখার্জি আনুষ্ঠানিকভাবে ডাঃ সর্বাধিকারীকে সভাপতির প্রতীকমাল্যে ভূষিত করেন এবং সভাপতির দণ্ড ও আনুষাঙ্গিক চার্টার ইত্যাদি সমর্পণ করেন। ক্লাবের সম্পাদক রোটারিয়ান শ্রীঅবনী মুখার্জি ক্লাবের কার্যকলাপের বিবরণী দেন। ক্লাবের বহু মহিলা ও পুরুষ সদস্য অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।

শনিবার, ২১ আষাঢ়, ১৩৭০ SATURDAY, JULY 6, 1963
• নারী পকেটমার: শুক্রবার গোয়েন্দা পুলিশ পকেটমারার অভিযোগ দক্ষিণ কলকাতার দুইটি স্থান হইতে মোট ১১ জন নারীকে গ্রেপ্তার করে। একশ্রেণীর নারীর একটি সসংঘবদ্ধ দল ট্রাম ও বাস স্টপে ভীড় করিয়া হাত-সাফাইয়ের কাজ চালাইয়া যাইতেছে, গোয়েন্দা পুলিশের নিকট এই ধরনের অভিযোগ পৌঁছে। ইহার পর গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ হইতে শহরের কয়েকটি বাস ও ট্রাম স্টপে নজর রাখা হয়। ঐ দিন যে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় তাহার মধ্যে ৪ জনকে কালীঘাটে গণেশ কাটরার নিকটে এবং বাকী ৭ জন হাজরা রোডে ধরা পড়ে। পুলিশীসূত্রে প্রকাশ, ধৃত নারীদের অধিকাংশ সম্বলপুর অঞ্চলের। চেহারা এবং বেশভূষাগ্রাম্য ধরনের। তাহাদের দুই-একজনের কোলে শিশুও ছিল। অভিযোগে প্রকাশ, এই ধরনের স্ত্রীলোক বাস কিংবা ট্রাম স্টপে কয়েকজন ভীড় করিয়া দাঁড়ায় এবং সুযোগমত হাতের কাজ সারে।

বন-মহোত্সব

বন মহোত্সব

— বন-মহোত্সবের জন্য ভাড়া করে
এনেছিলাম। ফেরত্ দিতে যাচ্ছি।

আগে বৃক্ষরোপণ উত্সব স্যার।
বৃক্ষ না হলে পশুরা খাবে কি?
রবিবার, ২২ আষাঢ়, ১৩৭০ (১৬ আষাঢ়, ১৮৮৫ শক) SUNDAY, JULY 7, 1963
• জাতীয় গ্রন্থাগারের দুই সহস্রাধিক মূল্যবান পুস্তক পোকার আক্রমণে নষ্ট: কলিকাতার জাতীয় গ্রন্থাগারের সংগ্রহশালায় পোকার উপদ্রব হইয়াছে বলিয়া নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেল। প্রকাশ, ইতিমধ্যে দুই সহস্রাধিক মূল্যবান পুস্তক পোকায় কাটিয়াছে। পোকার হাত হইতে এই গ্রন্থশালাকে রক্ষা করিবার জন্য নয়াদিল্লির জাতীয় মহাফেজখানার বাষ্পস্নানাগারের (ফিউমিগেশন চেম্বার) সাহায্য লওয়া হইতেছে। কিছুদিন আগে আলিপুরের জাতীয় গ্রন্থাগারের কর্তৃপক্ষের নজরে আসে যে তাহাদের চীনা গ্রন্থ সংগ্রহশালায় ব্যাপক পোকার আক্রমণ দেখা দিয়াছে। এই সংগ্রহশালায় চীন দেশের প্রাচীন সংস্কৃতির বহু মূল্যবান তথ্য সংগৃহীত আছে। জাতীয় গ্রন্থাগারে পুস্তক কীটমুক্ত করিবার জন্য কোন বাষ্পস্নানাগার নাই সুতরাং কর্তৃপক্ষ এজন্য অবিলম্বে নয়াদিল্লিস্থত জাতীয় মহাফেজখানাকে তাহাদের বাষ্পস্নানাগারটি ব্যবহার করিতে অনুরোধ জানান। সেইমত পোকার কামড়ে বিনষ্টপ্রায় সংগ্রহশালার সহস্রাধিক পুস্তক নয়াদিল্লি হইতে কীটমুক্ত এবং ভবিষ্যতে যাহাতে সহজে পোকার কবলে না পড়ে তাহার ব্যবস্থা করিয়া আনা হইয়াছে। এবং অপর এক প্রস্থ দুই-একদিনের মধ্যেই নয়াদিল্লি পাঠান হইতেছে।

রবিবার, ২২ আষাঢ়, ১৩৭০ (১৬ আষাঢ়, ১৮৮৫ শক) SUNDAY, JULY 7, 1963
• মুনাফা-শিকার রোধের প্রয়াস, মাছের কারবারে লাইসেন্স প্রথা: মাছের ব্যবসায়ে অতি মুনাফা রোধের উদ্দেশ্যে মত্স্য ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভারতরক্ষা বিধি অনুযায়ী “পশ্চিমবঙ্গ মত্স্য ব্যবসায় লাইসেন্স গ্রহণ আদেশ, ১৯৬৩” জারী করিয়াছেন। এই আদেশটি আগামী সোমবার ৮ই জুলাই হইতে কলিকাতা ও শহরতলী এলাকা এবং হাওড়া মিউনিসিপ্যাল এলাকায় বলবত্ হইতেছে। ঐ আদেশ অনুসারে ৮ই জুলাই হইতে এক মাস অতীত হইবার পর বিনা লাইসেন্সে কেহই আর মত্স্য বিক্রয় করিতে পারিবেন না; উহা দণ্ডণীয় হইবে।

—মাছের জন্য
লাইসেন্স চাই বুঝলে।

—সরকার কেবল লাইসেন্সটা দিয়েছেন, মাছ
দেননি। লাইসেন্সটা চানতো দিতে পারি।

— না, না, মাছ নয়। ব্যাঙ ধরে রাখছি।
বর্ষার পর মোটা দামে বিদেশে বেচবো।
পাইকার, নীলামদার, ফড়িয়া, খুচরা ব্যবসায়ী এবং মত্স্যব্যবসায়ের সহিত সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক ব্যবসায়ীকেই এই লাইসেন্স লইতে হইবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার শনিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঐ আদেশ জারীর কথা ঘোষণা করিয়াছেন। উহাতে বলা হইয়াছে যে, আড়তদার হইতে ক্ষুদ্র খুচরা ব্যবসায়ী পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকারের ব্যবসায়ীর মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গে মত্স্য ব্যবসায় পরিচালিত হয়। সুতরাং ইহা একটি জটিল ব্যাপার। এই ব্যবসায়ে কতকগুলি অনাচার ও অব্যবস্থা চলিয়াছে। উহার ফলে মাছের দাম ক্রমশ বাড়িতেছে এবং মত্স্য ক্রেতাদের যথেষ্ট ক্লেশ হইতেছে। এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণের জন্যই উক্ত আদেশ জারী করা হইয়াছে।

মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ়, ১৩৭০ (১৮ আষাঢ়, ১৮৮৫ শক) TUSEDAY, JULY 9, 1963
• পশ্চিমবঙ্গ নাট্যানুষ্ঠান বিল বাতিল: পশ্চিমবঙ্গ নাট্যানুষ্ঠান বিলটি পশ্চিমবঙ্গ সরকার অবশেষে বাতিল করিলেন। মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন সোমবার সাংবাদিকদের কাছে বলেনঃ স্পেশাল কমিটির অভিমতঃ প্রস্তাবিত বিলটি বর্তমান আকারে আইনসভায় উত্থাপন করা সময়োচিত হইবে না। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্পেশাল কমিটির এই অভিমতই গ্রহণ করা হইয়াছে। ‘জনমতের চাপেই কি প্রস্তাবিত বিলটি সম্পর্কে এইরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হইল?’ জনৈক সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেনঃ ‘ঠিক তাহা নহে’। বিলটি প্রথমে ষখন আইনসভায় তুলিবার প্রস্তাব হয় সে সময় কংগ্রেস পার্লামেন্টারি পার্টির মধ্যেই বিলটি সম্পর্কে আপত্তি উঠিয়াছিল। ফলশ্রুতি স্বরূপ কংগ্রেস পার্লামেন্টারি পার্টির ৯ জন সদস্যকে লইয়া একটি ‘স্পেশাল কমিটি’ গঠিত হয়। কমিটির উপর বিলটি পর্যালোচনার ভার পড়ে। কমিটিতে ছিলেন সর্বশ্রী ডঃ প্রতাপচন্দ্র চন্দ্র, নরেশনাথ মুখোপাধ্যায়, অবনী বসু, বিজয় ভট্টাচার্য, বিভা মিত্র, বিশ্বনাথ মুখার্জি ও নরেন সেন।

শনিবার, ২৮ আষাঢ়, ১৩৭০ (২২ আষাঢ়, ১৮৮৫ শক) SATURDAY, JULY 13, 1963
• প্রাক্-বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার ফল: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবছরের প্রাক্-বিশ্ববিদ্যলয় পরীক্ষায় নন-কলেজিয়েট এক্সটারনাল ছাত্র শ্রীদিলীপকুমার ঘোষ কলা শাখার এবং লেডী ব্রাবোর্ণ কলেজের ছাত্রী শ্রীমতী গৌরী গুহ বিজ্ঞান শাখার প্রথম স্থান অধিকার করিয়াছেন। গত বছর স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় শ্রীমতী গৌরী গুহ মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান এবং কলা-বিজ্ঞান উভয় শাখা মিলাইয়া সাধারণ তালিকায় ৪র্থ স্থান অধিকার করিয়াছিলেন। গত বছরের স্কুল ফাইনালের প্রথম দশজনের মধ্যে আর কাহারও নামই এবার প্রাক্-বিশ্ববিদ্যালয়ের কি কলা শাখা, কি বিজ্ঞান শাখা— কোনটাতেই প্রথম দশের মধ্যে নাই। প্রাক্-বিশ্ববিদ্যালয় কলা শাখায় দ্বিতীয় স্থান অধিকারী শ্রীরঞ্জিতকুমার চন্দও নন-কলেজিয়েট এক্সটারনাল ছাত্র। পক্ষান্তরে বিজ্ঞান শাখার দ্বিতীয় স্থানটিও লেডী ব্রাবোর্ণ কলেজেরই অন্যতম ছাত্রী অধিকার করিয়াছেন; তাহার নাম শ্রীমতী মমতা সেন।

সোমবার, ৩০ আষাঢ় ১৩৭০, Monday, July 15, 1963
• রেড রোড দেবদারু বীথিতে পরিণত করার উদ্যোগ: কলিকাতা ময়দান এলাকায় রেড রোডটি ভবিষ্যতে দেবদারু বীথিতে পরিণত হইবে। রাজ্য সরকারের পক্ষ হইতে রেড রোডের দুই পার্শ্বে ৬০০ দেবদারু এবং ৮০০ অন্যান্য ফুলের চারা রোপনের ব্যবস্থা হইতেছে। তাহার মধ্যে শনিবার ও রবিবারের ভিতর ৫০০ চারা রোপনের কাজ শেষ হইবে বলিয়া জনা যায়। ফুল গাছের মধ্যে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, জারুল, কেশিয়া প্রভৃতি থাকিবে। এই বত্সর পশ্চিমবঙ্গে বনমহত্সব উপলক্ষে রাজ্য সরকারের পক্ষ হইতে মোট ১৩ লক্ষ গাছ ও চারা বিতরণ করা হইবে। গত বত্সর বিতরণ করা হইয়া ছিল ৯ লক্ষ।

সোমবার, ৩০ আষাঢ় ১৩৭০, Monday, July 15, 1963
——হ্যালো পিকিং, আমরা কিন্তু অনশন শুরু করছি!
• সরকারী খাদ্যনীতির পরিবর্তন দাবীতে বামপন্থী নেতাদের অনশন আরম্ভ: রবিবার বিকালে প্রবল জলঝড়ের মধ্যেই আটজন বামপন্থী নেতা রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে প্রতীক অনশন সুরু করেন। সরকারের খাদ্যনীতর পরিবর্তনের দাবীতে এই প্রতীক অনশন তিন দিন স্থায়ী হইবে। ফরোয়ার্ড ব্লক, আর-এসপি, বলশেভিক পার্টি ও আর-সি-পি-আই এই চারটি বামপন্থী দল এই অনশন আন্দোলনের উদ্যোক্তা। রবিবার অনশন আন্দোলনের সূচনায় রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে এক জনসভার আয়োজন হয়। লোকসভার সদস্য শ্রীত্রিদিব চৌধুরী সভায় পৌরোহিত্য করেন। বৃষ্টির কারণে সভায় তেমন জনসমাবেশ না হইলেও সভার কাজ বন্ধ রাখা হয় নাই। প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারেই তিন দিনের অনশন আন্দোলন চালান হইবে বলিয়া সভায় জানান হয়। অনশনব্রতীদের নাম: ফরোয়ার্ড ব্লকের শ্রীনলিনী গুহ এবং শ্রীসনত্ চ্যাটার্জি; আর-এস-পির শ্রীমাখন পাল ও শ্রীবুদ্ধদেব ভট্টাচার্য; আর-সি-পি-আই’র শ্রীবিমলানন্দ মুখার্জি ও শ্রীমুকুন্দ গুপ্ত এবং বলশেভিক পার্টির শ্রীজ্যোতিষ দত্ত ও শ্রীসীতা শেঠ।

বুধবার, ৩২ আষাঢ় ১৩৭০, Wednesday, July 17, 1963
• ত্রৈবার্ষিক বি-এ, বি-এসসি, ছাত্রীদেরই জয়জয়কার: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বত্সরের ত্রৈবার্ষিক বি এস সি অনার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষায় ছাত্রীরা সর্বাপেক্ষা বাল ফল করিয়াছে। বিজ্ঞানের আটটি বিষয়ের মধ্যে গণিত, রসায়ন বিদ্যা, উদ্ভিদ বিদ্যা এবং জীববিদ্যা এই চারটি বিষয়ের প্রথম শ্রেণীর প্রথম স্থান ছাত্রীরাই অধিকার করিয়াছে। ত্রৈবার্ষিক বি-এ অনার্সের সংস্কৃত ও দর্শন এই দুইটি বিষয়েও দুইজন ছাত্রী প্রথম স্থান অধিকার করিয়াছেন। বি-এ-সি অনার্স পরীক্ষায় মোট ৪৩জন ছাত্রছাত্রী প্রথম শ্রেণীতে স্থান পাইয়াছেন। তন্মধ্যে ১৫জন পদার্থবিদ্যা, ১০জন রসায়নবিদ্যা এবং ৪জন অঙ্ক। বি-এ পরীক্ষায় কোন ছাত্রছাত্রী-ই ইংরাজী, ইতিহাস, অর্থনীতি ও পার্সি বিষয়ে প্রথম শ্রেণীর অনার্স পান নাই।
বি-এস-সি (ত্রৈবার্ষিক ডিগ্রি কোর্স): গণিত—স্বাতী বন্দ্যোপাধ্যায় (যোগমায়া দেবী কলেজ), রসায়নবিদ্যা—মালবিকা ভট্টাচার্য(প্রেসিডেন্সী কলেজ), পদার্থবিদ্যা—সুবীর দত্ত(প্রেসিডেন্সী কলেজ), শারীরবিদ্যা—বিশ্বনাথ পাইন(প্রেসিডেন্সী কলেজ), পরিসংখ্যানবিদ্যা—কল্যাণ দত্ত(প্রেসিডেন্সী কলেজ), জীববিদ্যা—দীপ্তি চৌধুরী (প্রেসিডেন্সী কলেজ), উদ্ভিদবিদ্যা—লীনা মজুমদার( প্রেসিডেন্সী কলেজ), ভূতত্ত্ববিদ্যা—অনিশকুমাররায়(প্রেসিডেন্সী কলেজ)।
বি-এ (ত্রৈবার্ষিক ডিগ্রি কোর্স): বাংলা—পিনাকেশচন্দ্র সরকার(স্কটিশচার্চ কলেজ), দর্শন—ভারতী সেন(প্রেসিডেন্সী কলেজ), রাষ্ট্রবিজ্ঞান—প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়(প্রেসিডেন্সী কলেজ), সংস্কৃত—শ্যামলী গুপ্ত(লেডী ব্রাবোর্ণ কলেজ)।

বৃহস্পতিবার, ১ শ্রাবণ ১৩৭০, Thursday, July 18, 1963
• স্বেচ্ছাশ্রমে রাস্তা নির্মাণ: দমদম ন’পাড়া অঞ্চলের অধিবাসীরা স্বেচ্ছাশ্রমের দ্বারা যশোহর রোড হইতে —কে গুহ রোড-এর সংযোগস্থল পর্যন্ত একটি আধ মাইল লম্বা রাস্তা নিমার্ণ করিয়াছেন। বর্ষাকালে এ পথে কোন কোন জায়গায় এক হাঁটু পর্যন্ত জল জমিত। ফলে স্থানীয় অঞ্চলের বারো হাজার অধিবাসী এক অবর্ণনীয় দুর্দশার সন্মুখীন হতেন। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, এ পথটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় অধিবাসীগণ সংশ্লিষ্ট মিউনিসিপ্যালিটি ও রাজ্য সরকারের নিকট বার বার ধন্না দিয়াছিলেন, কিন্তু আশ্বাসবাণী ছাড়া আর কিছুই পান নাই। তাই ‘নিজেদের পথ নিজে বানাও’ এ নীতি অনুযায়ী স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী হইতে সুরু করিয়া এ অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ এ কাজে হাত লাগান। এবং অতি অল্প দিনের মধ্যে উচুঁ রাস্তা তৈরীর কাজ শেষ করেন। জানা গেল, দক্ষিণ দমদম পৌরসভার চেয়ারম্যান শ্রীবীরেন্দ্রপ্রসাদ গুহ ২৪ পরগণার জেলা শাসককে এ রাস্তাটির উন্নয়নের জন্য অর্থ মজুর করিতে অনুরোধ জানাইয়াছেন। শ্রীগুহ ইতিমধ্যে কিছু ইট ও খেস দিয়াছেন বলিয়া জানা গেল। রাস্তাটি নির্মাণ শেষ হইলে এ পথ দিয়া বাস চলাচল সম্ভবপর হইবে বলিয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানাইয়াছেন।

শনিবার, ২ শ্রাবণ ১৩৭০, Saturday, July 20, 1963
• কলিকাতায় দুর্গাপুরের গ্যাস: দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর দুর্গাপুরের গ্যাস অবশেষে শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় সময় কলিকাতায় আসিয়া পৌছিয়াছে। এইদিন বালি রিডিউসিং স্টেশন হইতে ওরিয়েন্টাল গ্যাস কোম্পানীর নারিকেলডাঙ্গা রিডিউসিং স্টেশনের মধ্যে পাইপ লাইনটি কার্যকরী হইলে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হয়। শুভারম্ভ উপলক্ষে দুর্গাপুর প্রকল্পের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর শ্রীএবি গাঙ্গুলী ও ওরিয়েন্টাল গ্যাস কোম্পানীর অ্যাডমিনিস্ট্রেটর শ্রী সি কে রায় ক্যানেল ওয়েস্ট রোডের গ্যাস সরবরাহকেন্দ্রে সমবেত হইয়াছিলেন। দুর্গাপুরের গ্যাস এইদিন সর্বপ্রথম দক্ষিণ কলিকাতায় সরবরাহ করা হয়। ৪ঠা আগস্ট দুর্গাপুরে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেনের আনুষ্ঠানিকভাবে এই সরবরাহ ব্যবস্থা উদ্ভোধনের কথা। দুর্গাপুর হইতে বালি পর্যন্ত ১৮ মাইল দীর্ঘ এই গ্যাসপাইপ বসাইবার জন্য ২ কোটি টাকা ব্যয় হইয়াছে। তাহার মধ্যে ১ কোটি টাকা ব্যয় শুধু পাইপ বসানোর জন্যই। একটি যুগোশ্লাভ প্রতিষ্ঠান, এই পাইপ বসানোর কাজ করিয়াছেন।

আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এই সকল সংবাদের বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত।
 
 


 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.