দিন আসে, দিন যায়, তার ফাঁকেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ে তার চলাচলের খবর। পুরনো দিনের শহুরে খবর দিয়ে চেনা যায় এখনকার
অতি পরিচিত শহরের অতীতটাকে, তার নাগরিক জীবনযাপন থেকে খেলাধুলো, সংস্কৃতি বা কূটকচালি থেকে রাজনীতির হাল।
পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতা শহরের গতিবিধি চিনতে ২১ জানুয়ারি ১৯৬৩ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৩ এক মাসের কিছু বিশেষ খবর।

সোমবার, ৭ মাঘ, ১৩৬৯ (১ মাঘ, ১৮৮৪ শকাব্দ) MONDAY, JANUARY 21, 1963
• বিশিষ্ট নাট্যসমালোচক ডঃ হেমেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তর লোকান্তর: বিশিষ্ট নাট্য সমালোচক, আইনজীবী এবং দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের একান্ত সচিব ডঃ হেমেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত রবিবার সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে তাঁহার কলিকাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রোডের বাড়িতে পরলোকগমন করেন। মৃত্যুকালে তাঁর ৮৪ বত্সর বয়স হইয়াছিল। তিনি তিন পুত্র ও পত্নীকে রাখিয়া গিয়াছেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গিরিশ অধ্যাপক ডঃ দাশগুপ্ত বাংলার সাংষ্কৃতিক ও রাজনীতিক ক্ষেত্রে এক স্মরণীয় ব্যক্তিরূপে পরিচিত ছিলেন। তাঁহার পরলোকগমনের সংবাদ পাইয়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন, মন্ত্রী শ্রীখগেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত, মন্ত্রী শ্রীজগন্নাথ কোলে, উপমন্ত্রী শ্রীমায়া বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রীঅচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, ডঃ প্রতাপচন্দ্র গুহরায়, শ্রীমধু বসু, শ্রীমতী সরযূবালা দেবী, শ্রীমতী শোভা সেন, শ্রীমতী সুনন্দা দেবী, শ্রীসাতকড়িপতি রায়, শ্রীহেমেন্দ্রকুমার বসু, অধ্যক্ষ শুদ্ধসত্ত্ব বসু, উপাধ্যক্ষ নক্ষত্র রায়চৌধুরী, শ্রীদেবনারায়ণ গুপ্ত, শ্রীপলাশ মিত্র, শ্রীসিদ্ধার্থশঙ্কর রায়, শ্রীসুধীরকুমার মিত্র, শ্রীদেবপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, শ্রীকালীশঙ্কর বসু, শ্রীমন্মথ দেব প্রমুখ তাঁহার বাসভবন ও শ্মশানে গিয়া সমবেদনা প্রকাশ করেন। পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেস কমিটি, লিটল থিয়েটার, বার অ্যাসোসিয়েশন প্রভৃতির পক্ষ হইতে মাল্যদান করা হয়।

মঙ্গলবার, ৮ মাঘ, ১৩৬৯ (২ মাঘ, ১৮৮৪ শকাব্দ) TUESDAY, JANUARY 22, 1963
• ঋণ তহবিল হইতে টাকা তুলিতে না পারার জের, কর্পোরেশনের বহু জরুরি কাজ বন্ধ: কলিকাতা কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ গত ১৯৬১-৬২ সালের ঋণ তহবিল হইতে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা তুলিতে না পারায় বহু জরুরি কাজ আটকাইয়া আছে বলিয়া জানা গিয়াছে। অথচ ঐ টাকা না পাওয়ার দরুন বিভিন্ন কাউন্সিলর অত্যন্ত বিক্ষুব্ধ হইয়াছেন। কয়েকজন কাউন্সিলর এইরূপ অভিযোগ করেন: জরুরি কাজগুলি সম্পন্ন করিবার ব্যাপারে ঋণ তহবিরেলর উপর নির্ভর করিয়া সংশ্লিষ্ট স্ট্যান্ডিং ফিনান্স কমিটি অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়াছেন এবং ইহার ফল ভোগ করিতে হইতেছে নাগরিকসাধারণকে। প্রকাশ ঐ ঋণের টাকা তুলিতে হইলে রাজ্য সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু সরকার ঐ অনুমোদন দেন নাই। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানিতে পারা গিয়াছে, গত ১৯৬০-৬১ সালে কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ঋণ তহবিল হইতে যে টাকা তুলিয়াছিলেন (সরকারের অনুমোদন লইয়া) তাহা আজ পর্যন্ত ব্যয় করিতে পারেন নাই। টাকা ব্যয় করিবার অক্ষমতার দরুনই রাজ্য সরকার নাকি ১৯৬২-৬৩ সালের ঐ ঋণ তহবিলের টাকা তুলিবার অনুমোদন দেন নাই। ঋণ তহবিলের ঐ টাকার দ্বারা ১৬টি বরোর উন্নয়নমূলক কাজ করা হইয়া থাকে। পাঁচটি ওয়ার্ড লইয়া একটি বরো গঠিত হয়। মহানগরীতে মোট ৮০টি ওয়ার্ড আছে। ঐ টাকা না পাওয়ার দরুন বিভিন্ন বরোতে বিশেষ করিয়া ট্যাংরা, টালিগঞ্জ, যাদবপুর কাশীপুর প্রভৃতি এলাকায় নলকূপ, রাস্তা, ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রণালী প্রভৃতি উন্নয়নমূলক কাজ আটকা পড়িয়া আছে।


নিজেই জানিয়ে গেলাম, কর্পোরেশনের
উপর ভরসা রাখা চলে না।

এ সব একসঙ্গে —
ব্যয় সংক্ষেপ হল কিনা?

শুক্রবার, ১১ মাঘ, ১৩৬৯ (৫ মাঘ, ১৮৮৪ শকাব্দ) FRIDAY, JANUARY 25, 1963
• টিকা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করিতে কলিকাতা কর্পোরেশন কর্তৃক পুলিশের সাহায্য গ্রহণের সম্ভাবনা: কলিকাতার বসন্ত উপদ্রূত এলাকাগুলিতে টিকা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করার জন্য কলিকাতা কর্পোরেশন সম্ভবত পুলিশের সাহায্য গ্রহণ করিবেন। বৃহস্পতিবার রাইটার্স বিল্ডিংসে রাজ্যের স্বাস্থ্যদপ্তর আহূত এক বৈঠকে ঠিক হইয়াছে, আগামী ৫ই ফেব্রুয়ারীর মধ্যে বড়বাজার এলাকার ৭টি ওয়ার্ডে ১ লক্ষ লোককে টিকা দেওয়ার কাজ সারিয়া ফেলিতে হইবে। কলিকাতার এইবার বসন্তের প্রকোপ উত্তরোত্তর মারাত্মক হইয়া ওঠায় রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর চিন্তান্বিত হইয়াছেন। গত ২০শে অক্টোবর হইতে ১৯শে জানুয়ারী পর্যন্ত মহানগরীতে ২৬৯ জনের বসন্ত রোগে প্রাণহানি ঘটিয়াছে। মোট রোগাক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৪১৫। কলিকাতার বসন্ত রোগ কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ আয়ত্তের মধ্যে না আনিতে পারায় রাজ্যের স্বাস্থ্যদপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ সুশীলকুমার চট্টোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার রাইটার্স বিল্ডিংসে এক জরুরি বৈঠক আহ্বান করেন। স্বায়ত্তশাসন মন্ত্রী, কলিকাতা কর্পোরেশনের কমিশনার, স্ট্যান্ডিং হেলথ্ কমিটির চেয়ারম্যান, কলিকাতা পুলিশের মুখপাত্র ও ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের মুখপাত্রগণ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ঠিক হয় যে, বড়বাজার এলাকার টিকাদান অভিযান ব্যাপকতর করার জন্য কর্পোরেশন, রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর, পুলিশ ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলি একযোগে কাজ করিবেন। প্রয়োজন হইলে টিকা লইতে অস্বীকারকারী ব্যক্তিদের উপর ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারাটি প্রয়োগ করা যাইতে পারে। এই আইনবলে ইহাদের ৬ মাসের কারাদণ্ড ও হাজার টাকা জরিমানা হইতে পারে। ঠিক হইয়াছে, এই টিকাদানের অভিযান চালাইবার জন্য পুলিশের ও প্রচার দপ্তরের ভ্যানগুলিকে কাজে লাগান হইবে। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করা হইয়াছে, তিনি যেন এসোসিয়েশনের সদস্যদের এই ব্যাপারে সহায়তা করিবার অনুরোধ করেন। তাঁহার সমস্ত কেস কর্তৃপক্ষের নজরে আনিবেন। ইহা ছাড়া আকাশবাণীকেও প্রত্যহ টিকা লওয়ার ব্যাপারে জনমত গঠনের জন্য সংবাদ প্রচার করিতে অনুরোধ জানান হইবে।

সোমবার, ১৪ মাঘ, ১৩৬৯ (৮ মাঘ, ১৮৮৪ শকাব্দ) MONDAY, JANUARY 28, 1963
• মিছিল নগরী: শনিবার প্রজাতন্ত্র দিবসে সারা কলিকাতা যেন পথে নামিয়া পড়ে। সে এক আশ্চর্য দৃশ্য। মহানগরীর ইতিহাসে এই দিনটি অবিস্মরণীয় হইয়া থাকিবে। ভারত প্রতিরক্ষা সাহায্য কমিটি (পশ্চিমবঙ্গ) আয়োজিত দুইটি বিশাল শোভাযাত্রায় লক্ষাধিক লোক যোগ দেন। সমাজের সকল স্তরের লোক— ছাত্র, শিক্ষক, শ্রমিক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী সকলেই কম্যুনিস্ট চীনা সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণের বিরুদ্ধে বজ্রকঠোর সংকল্প ও স্বদেশ রক্ষার পবিত্র ব্রত গ্রহণের জন্য ইহাতে সমবেত হন। ইহা ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন অঞ্চল হইতে অগণিত ছোট-বড় মিছিল ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের জনসমাবেশ অভিমুখে অগ্রসর হয়। শোভাযাত্রীদের হাতে জাতীয় পতাকা এবং নেতৃবৃন্দ ও মহাপুরুষদের প্রতিকৃতি, কণ্ঠে বন্দেমাতরম ও জয়হিন্দ উদাত্ত ধ্বনি। দৃপ্ত কণ্ঠের সমবেত আওয়াজ শহরের পথে পথে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হইতে থাকেঃ চীনকে হটাও, চীনকে হটাও। প্যারেড গ্রাউন্ডে সভা সুরু হওয়ার অনেক আগেই এই এলাকা তরঙ্গিত জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

‘জনসমুদ্র’-প্রজাতন্ত্র দিবসে প্যারেড গ্রাউন্ডে
বিশাল সমাবেশের একটি অংশ। —আনন্দ চিত্র।

প্রজাতন্ত্র দিবসে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড অভিমুখে
এক বিশাল শোভাযাত্রার একাংশ। —আনন্দ চিত্র।
উদ্যোক্তাগণও ভাবিতে পারেন নাই। প্রস্তুতি পর্বের গোড়ার ধারণা ছিল পঁচিশ হাজার, শুক্রবার রাত্রেও বড় জোর একান্ন হাজার — কিন্তু শেষ পর্যন্ত শোভাযাত্রা যে আর শেষ হইতে চায় না। সভা ভাঙ্গিয়া যাওয়ার পরও শোভাযাত্রীদের একটানা গতি স্তব্ধ হয় নাই, — স্বতঃস্ফূর্ত, অভূতপূর্ব। ঘড়ির কাঁটায় চারটা বাজিয়া দশ মিনিট, তখনও জাতীয় পতাকা ও নান ধরণের ফেস্টুন বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সভাস্থলের দিকে ছুটিতেছিল। সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারের শোভাযাত্রাটির পুরোভাগ সর্বপ্রথম যখন ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছে, তখন দুইটা বাজিতে দশ মিনিট বাকী ছিল।
ভারতভূমিতে চৈনিক আক্রমণের পরদেশে যে জাগর আসিয়াছে, তাহারই প্রত্যক্ষ প্রমাণ নগরীর দুইটি কেন্দ্রীয় শোভাযাত্রা — কলিকাতার দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের। আক্রমণকারীদের বিতাড়িত করিবার সংকল্পে দেশ আজ দৃঢ়, শোভাযাত্রীদের পদক্ষেপেও সেই দৃঢ়তা, সেই সংকল্পের সুস্পষ্ট ছাপ। মুখে ধ্বনি চীনকে হটাও, বন্দেমাতরম, জয়হিন্দ, স্বাধীন ভারত জিন্দাবাদ।


মায়ের হাতে ইলেকট্রিক গীটার।
একেবারে ‘লেটেস্ট’।

আজ কেবল বীণা-বিসজর্ন। কাল হংস, পরশু
সরস্বতী। একদিনে শেষ করলে চলবে কেন?

বুধবার, ১৬ মাঘ, ১৩৬৯ (১০ মাঘ, ১৮৮৪ শক) WEDNESDAY, JANUARY 30, 1963

• কলিকাতায় বসন্ত মহামারী- রূপে ঘোষিত: কলিকাতা মহানগরীতে বসন্ত রোগ মহামারী বলিয়া ঘোষিত হইয়াছে। গত ১৯৫৭ সালের পর পুনরায় এই বৎসর বসন্ত রোগ মহামারীরূপে ঘোষিত হইল।আরও আগে ১৯৮৯ হইতে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত উপর্যুপরি চার বছর বসন্তরোগ মহামারীরূপে ঘোষিত হইয়াছিল।বিগত দুই সপ্তাহে পৌরসভা এলাকার ত্রিশজনের অধিক লোক বসন্তরোগে মারা যাওয়ারা কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ প্রচলিত বিধি অনুযায়ী ঐ রোগকে মহামারী বলিয়া ঘোষনা করিয়াছেন।গত ২৫শে জানুয়ারী যে সপ্তাহ শেষ হয়, সেই সপ্তাহে বসন্তরোগে ৬৮ জন আক্রান্ত হয় এবং ঐ সময়ের মধ্যে ৬১ জন মারা যান। ইহার আগের সপ্তাহে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৫৯ ও ৪৪। খাস কলিকাতা শহরে গত সেপ্টেম্বর মাস হইতে ২৫শে জানুয়ারী পর্যন্ত বসন্তরোগে ৩২৬ জন মারা গিয়াছে এবং ৪৮০ জন ঐ রোগে আক্রান্ত বলিয়া জানা যায়। এই ঘোষনা অপ্রত্যাশিত নহে। কলিকাতা কর্পোরেশন, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার পূর্বেই আশংকা প্রকাশ করিয়াছিলেন যে, এই বৎসর চক্র নিয়মে বসন্তরোগ ব্যপকভাবে ছড়াইয়া পড়িবে এবং তাহা প্রতিরোধের জন্য ‘বসন্তরোগ নির্মূল অভিযান’ নামে একটি বৃহৎ পরিকল্পনা কেন্দ্রীয় সরকার গ্রহণ করেন। এই পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য পোষ্টার ও সিনেমা স্লাইডের মারফৎ জনসাধারণকে সচেতন করার চেষ্টা হইয়াছে। কিন্তু ফল খুব সন্তোষকনক হয় নাই।

শনিবার, ১৯ মাঘ, ১৩৬৯ SATURDAY, FEB 2, 1963
• কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোকেদের টিকা লইতে অস্বীকৃতির ফলে সমস্যা: “টীকা মৎ দিজিয়ে সাব্ – মর্ যাউঙ্গী, মর্ যাউঙ্গী;” – মাঝবয়সী হিন্দুস্থানী রমণীর এই কাতরোক্তি কাহাকেও টলাইতে পারে নাই। তাহার বাঁচিবার জন্যই তাহাকে একরূপ জোর করিয়াই বসন্তের টীকা দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু শুধু রমণীর কাতরোক্তি নহে, কলিকাতার সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলিতে অনেক পুরুষেরও দৃঢ় অস্বীকৃতির সন্মুখীন হইতে হইয়াছে শুক্রবারের বিশেষ অভিযানের টিকাদারগণকে। তবুও কোথায়ও মিষ্টিকথা বলিয়া, কোথায়ও আইন আদালতের ভয় দেখাইয়া, আবার কোথায়ও বা পুলিশের সাহায্য লইয়া সহযোগিতাবিমুখ কুসংস্কারাচ্ছন্ন বহু নরনারীকে এইদিন টীকা লইতে বাধ্য করা হয়। ব্যক্তির স্বার্থতো বটেই, সমষ্টি তথা সমগ্র কলিকাতার স্বার্থই এখন সকলের কাছে বড় হইয়া দেখা দিয়াছে।
কলিকাতায় বসন্ত মহামারী ঠেকাইতে এইদিন হইতে পনেরো দিনের জন্য কলিকাতা কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য দপ্তর ও রাজ্য সরকারের টিকাদারগণ পুলিশ, অসামরিক প্রতিরক্ষ কর্মী ও সমাজসেবীদের সহযোগিতায় বসন্তের টিকা দিবার এক সহজ অভিযান শুরু করেন। একনম্বর ডিষ্ট্রিটের তিনটি এবং দুই নম্বর ডিষ্ট্রিটের চারটি এলাকার এই বিশেষ টিকাদান আরম্ভ হয়। একনম্বরের বড়বাজারের ২ টি কেন্দ্রে এবং মেহুরাবাজার কেন্দ্র এবং দুই নম্বরের কলাবাগান বস্তি, বাবুলাল লেন, ফিয়ার্স লেন এবং ফিয়ার্স লেনের সম্প্রসারিত অংশ – এই সাতটি এলাকায় এইদিনের অভিযান চলে। ঐ সমস্ত এলাকায় অধিবাসীদের মধ্যে বিরাট এক অংশ অবাঙ্গালী।

রবিবার, ২০ মাঘ, ১৩৬৯ SUNDAY, FEBRUARY 3, 1963
• টিকা লইতে অনিচ্ছুকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা: টিকা লইতে অনিচ্ছুকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কলিকাতা কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ প্রস্তুত হইয়াছে। আজ রবিবার সবর্প্রথম চারজনকে চব্বিশ ঘন্টার নোটিশ দিয়া টিকা লইতে নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে বলিয়া জানা যায়। শনিবার কর্পোরেশনের এক নম্বর জেলাতেই আড়াইশতের মতো লোক টিকা লইতে অস্বীকার করেন। এই অনিচ্ছুক ব্যক্তিদের নামধাম ঠিকঠাক না পাওয়ার ফলেই নোটিশ দেওয়ার কাজ বিঘ্নিত হইতেছে বলিয়া জানা যায়। ইচ্ছা করিয়াই নাকি এ ধরনের লোকেরা টিকাদারদের খাতায় নিজেদের নামধাম বেমালুম ভুলভাল লেখাইতেছে। এই চালাকি বন্ধের জন্য কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত লইয়াছেন। শনিবার টিকা দেওয়ার কাজ বেশ ত্বরঃশ্বিত হইয়াছে বলিয়া মনে হয়। এইদিন কেবলমাত্র ২১, ২৪ এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাতষট্টিটি বাড়ীতে মোট ৭২৬ জনকে টিকা দেওয়া হয়। তবে এই তিনটি ওয়ার্ডেই অনিচ্ছুক ব্যক্তিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। প্রাথমিক টিকাদানের কাজ বিশেষ অগ্রসর হইয়াছে বলিয়া মনে হয় না। এইদিন মাত্র ঊনিশটি শিশুকে প্রাথমিক টিকা দেওয়া হয়। বসন্তরোগ মহামারী ঘোষনার পর হইতে কর্পোরেসনের বৈঠক, সভা ও আলোচনা মাত্রা যথারীতি বাড়িতে শুরু করিয়াছে। পাঁচ বৎসর পূবে সাতান্ন সালেও এরূপ হইয়াছিল। শুক্রবার কর্পোরেশনের সাপ্তাহিক অধিবেশনে বসন্ত মহামারী সম্পর্কে জোর আলোচনার পর মেয়র কাউন্সিলার এবং অফিসারদের সহিত এক বৈঠকে মিলিত হন। মঙ্গলবার দিন তিনি পুনরায় কাউন্সিলার ও অন্ডারম্যানদের সহিত আর একটি বৈঠকে মিলিত হইবেন। এবং সেই বৈঠকে স্থির হইবে মহমারী সম্পর্কে কবে কর্পোরেশনের বিশেষ সভা ডাকা হইবে।

• কবি দ্বিজেন্দ্রলাল জন্ম শতবার্ষিকী:
নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্ম শতবর্ষপূর্তি উৎসব উপলক্ষ শনিবার কলিকাতা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। শ্রী পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় উহাতে সভাপতিত্ব করেন এবং প্রধান অতিথির আসন গ্রহন করেন শ্রী দেবনারায়ণ গুপ্ত। জন্মশতবর্ষপূর্তি উপলক্ষ কাযর্সূচীর প্রধান আকর্ষণ ছিল দ্বিজেন্দ্রলালের চন্দ্রগুপ্ত নাটকাভিনয়। ইনস্টিটিউটের সদস্যগণই মুখ্যত অভিনয়ে অংশ গ্রহণ করেন। স্বাগত সম্ভাষণকালে ইনস্টিটিউটের প্রবীণ সদস্য শ্রী রাঘবেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন যে, ১৯১১ সালে ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটের সদস্যগণ প্রথম চন্দ্রগুপ্ত নাটক অভিনয় করেন। নাট্যাচার্য শিশির কুমার ভাদুড়ী, শ্রী নরেশ মিত্র ও শ্রীকান্তি মুখার্জি প্রমুখ অভিনেতাগণ অভিনয়ে অংশগ্রহণ করেন। তখন ইনস্টিটিউটের নতুন বাড়ী নির্মিত হয়। পুরাতন বাড়ীতে ঐ নাটকাভিনয় হয়। দ্বিজেন্দ্রলাল স্বয়ং ঐ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অভিনয় দেখিয়া দ্বিজেন্দ্রলাল মন্তব্য করেন যে, তাঁহার নাটক লেখা সার্থক হইয়াছে।

মঙ্গলবার, ২২ মাঘ, ১৩৬৯ TUESDAY, FEBRUARY 5, 1963
• ‘স্বাধীন সাহিত্য সমাজের’ সভায় আলোচনা: রবিবার দক্ষিণ কলিকাতার আশুতোষ কলেজ হলে স্বাধীন সাহিত্য সমাজের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক সভায় বিভিন্ন বক্তা কম্যুনিজম ও ফ্যাসিজমের গণতন্ত্র, মানবসভ্যতা, স্বাধীন চিন্তা ও আধ্যাত্মিক সাধনা বিরোধী স্বৈরাচারী স্বরূপ নানা সুচিন্তিত যুক্তি ও তথ্যের মাধ্যমে তুলিয়া ধরেন। স্বাধীন চিন্তা ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার এই যুগ সঙ্কটকালে তাঁহারা লেখক ও সাহিত্যিকদের সঙ্ঘবদ্ধ হওয়ার আবেদন জানান। সভায় মহানগরীর বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিক্ষাব্রতী, বুদ্ধিজীবী ও গণ্যমান্য জনমন্ডলী উপস্থিত ছিলেন। সমাজের পক্ষ হইতে ঘোষনা করা হয় যে, আগামী ১৫ হইতে ১৭ই মার্চ তারিখে সর্বভারতীয় লেখক সন্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত লওয়া হইয়াছে। এই সন্মেলনে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য হইতে লেখকগণ মিলিত হইয়া বর্তমান সমস্যা ও সঙ্কট এবং উহার প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করিবেন বলিয়া আশা করা যায়। সূচনায় শ্রী বুদ্ধদেব বসু “স্বাধীনতার মূল্য” সর্ম্পকে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন। ইহাতে তিনি কম্যুনিজম ও ফ্যাসিজমের অপরিমেয় নিষ্ঠুরতা, “মানুষের মনকে গুঁড়িয়ে, পিষে, থেতলে মারার” ভয়াবহ বীভৎসতার দিকটা বিশেষভাবে উদ্ঘাটিত করেন।

বুধবার, ২৩ মাঘ, ১৩৬৯ (১৭ মাঘ, ১৮৮৪ শক) WEDNESDAY, FEBRUARY 6, 1963
• মহানগরীর উন্নয়নের জন্য সর্বাত্মক পরিকল্পনা, সাহায্য করিতে শীঘ্রই মার্কিন বিশেষজ্ঞদের আগমন: মহানগরীর উন্নয়নের জন্য সর্বাত্মক পরিকল্পনা রচনায় সাহায্য করিতে ১৫ই মার্চের মধ্যে একদল আমেরিকান বিশেষজ্ঞ কলিকাতায় আসিতেছেন। মঙ্গলবার কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক বিভাগের মেট্রোপলিটান পরিকল্পনার সমস্যা সম্পর্কে অনুষ্ঠিত আলোচনাচক্রকে সি এম পি ওর সেক্রেটারী লেঃ জেঃ ডি এন চক্রবর্তী এই কথা জানান। তিনি বলেন অতীতে কলিকাতা উন্নয়নের উপর জোর দেওয়া হয় নাই। এখন কলিকাতার মেট্রোপলিটান জেলার উন্নতির জন্য বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় করিয়া উন্নয়ন সংস্থা গঠিত হইয়াছে।
কলিকাতার স্থায়ী বসবাসকারী নহে এইরূপ বহিরাগতের সংখ্যা মোট লোকসংখ্যার শতকরা ৫৫ ভাগ বলিয়া তিনি জানান। দিল্লিস্থ আমেরিকান দূতাবাসের অর্থনীতি বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত শ্রী সি এস টাইলার উড বলেন, কলেরা প্রতিরোধে সাহায্য করিবার জন্য শীঘ্রই একদল আমেরিকান ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞ কলিকাতায় আসিতেছেন। তাঁহারা কলেরার বিরুদ্ধে নূতন প্রতিরোধক প্রবর্তন করিবেন। শ্রী উড কলিকাতার সমস্যাগুলি আলোচনা প্রসঙ্গে কলিকাতার ঘনবসতির কথা উল্লেখ করেন।

বৃহস্পতিবার, ২৪ মাঘ, ১৩৬৯ (১৮ মাঘ, ১৮৮৪ শক) THURSDAY, FEBRUARY 7, 1963
• সি এম পি ও কর্তৃক স্থান মনোনীত: কলিকাতার আশেপাশে দশটি উপনগরী নির্মানের জন্য সি এম পি ও স্থান নির্বাচন করিয়াছেন। এই উপনগরীগুলি গড়িয়া উঠিলে উপনগরীর উপর ভিরের চাপ কমিবে। অবশ্য উপনগরীগুলি তবুও কলিকাতার উপর কিছুটা নির্ভরশীল থাকিবে। এজন্য কলিকাতা মেট্রোপলিটান জেলা হইতে দূরে কয়েকটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শহর গড়িয়া তোলার এক পরিকল্পনাও সি এম পি ও বিবেচনা করিতেছেন। তাঁহারা আশা করেন যে, এই সব শহরে শিক্ষা, চাকুরি, ব্যবসা প্রভৃতির সুযোগ থাকিলে লোকে সেখানেই থাকিতে পারিবেন। উপার্জন বা অন্যাণ্য প্রয়োজনে তাঁহাদের কলিকাতার উপর নির্ভর করিতে হইবে না। বুধবার কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগে মেট্রোপলিটান পরিকল্পনার সমস্যা শীর্ষক আলোচনাচক্রের দ্বিতীয় দিনের সভায় বিভিন্ন বক্তা এই কথা বলেন। শ্রী টি জে ম্যানিকম্যান আলোচনার উদ্বোধন করেন। শ্রী বি এম ভুট্টা, শ্রী ই জি এনডোয়িতা প্রভৃতি আলোচনায় অংশগ্রহন করেন।

রবিবার, ২৭ মাঘ, ১৩৬৯ SUNDAY, FEB. 10, 1963
• খাস রাইটার্স বিল্ডিংয়েই পানীয় জলের অভাব: খাস রাইটার্স বিল্ডিংয়ে পানীয় জলের ব্যবস্থা সম্পর্কে পূর্ত বিভাগের দীর্ঘসূত্রিতার জন্য সংশ্লিষ্ট সমস্ত মহলই বিশেষ ক্ষুব্ধ হইয়াছে বলিয়া জানা যায়। প্রায় দুই বত্সর পূর্বের একটি পরিকল্পনার কাজে হাত না দিয়া একই কারণে অতিরিক্ত টাকার হিসাব দেওয়ায় অর্থ দপ্তরও নাকি বিরক্ত হইয়াছেন। গ্রীষ্মকালে রাজ্য সরকারের সদর দপ্তর রাইটার্স বিল্ডিংয়ের কয়েক হাজার কর্মচারীর জলকষ্ট চরমে ওঠে। এই অভাব দূর করার জন্য ছয় ইঞ্চি ব্যাসের একটি নলকূপ বসানর পরিকল্পনা লওয়া হয়। এজন্য অর্থদপ্তর চল্লিশ হাজার টাকার মত মঞ্জুরও করে। প্রকাশ, ইহার পর ঠিকাদারদের নিকট হইতে একাধিকবার টেন্ডার আহ্বানের তোড়জোড়ের ফলে মূল পরিকল্পনার কাজ কমজোরী হইয়া পড়ে। একটি নলকূপ বসানর জন্য তিন-তিনবার টেন্ডার আহ্বান করিতে হয় বলিয়া জানা যায়। প্রথমবার পূর্ত বিভাগ করেন— কিন্তু টেন্ডারের দর মনোমত হয় না। তাই জনস্থাস্থ্য বিভাগকে নলকূপটি বসানর ব্যবস্থা করিতে অনুরোধ জানান হয়। এই বিভাগ টেন্ডারের যে দর ঠিক করেন, তাহাও পছন্দ হয় না। শেষ পর্যন্ত পূর্ত বিভাগ পুনরায় টেন্ডার ডাকিয়া একটা ব্যবস্থা করিয়াছে বলিয়া জানা যায়। অতঃপর অর্থদপ্তরের নিকট মঞ্জুর অর্থের বেশী খরচের উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত হিসাব পেশ করা হইয়াছে। জনস্বাস্থ্য বিভাগ যে টেন্ডার আহ্বান করেন, তাহার দর বেশী বলিয়া বাতিল করা হয়। কিন্তু তৃতীয় টেন্ডারের দর যে কম হইয়াছে, তাহা নহে। যাহা হউক, অর্থদপ্তরের নিকট হইতে অতিরিক্ত খরচের অনুমোদন মিলিলে এ বত্সর প্রচণ্ড গ্রীষ্মের পূর্বে নলকূপটি বসিবে বলিয়া আশা করা যায়।

• কলিকাতার ভূগর্ভে জলরাশির সন্ধান: বৃহত্তর কলিকাতার উত্তরাঞ্চলে ভূগর্ভে যথেষ্ট পরিমাণ জল সঞ্চিত আছে বলিয়া প্রমাণ পাওয়া গিয়াছে এবং উপযুক্ত পরিকল্পনার দ্বারা নলকূপ খননের স্থান নির্বাচন ও আনুষাঙ্গিক ব্যবস্থাদি করা গেলে ঐ ভূগর্ভস্থ সঞ্চিত জল হইতে মেট্রোপলিটন এলাকায় অবিলম্বে দৈনিক ১০ কোটি গ্যালন জল সরবরাহ করা যাইতে পারে। শুক্রবার কলিকাতায় ভারতীয় জিওলজিক্যাল সার্ভে ভবনে ভূগর্ভস্থ জল সম্বন্ধে তিন দিনের এক আলোচনা চক্রের সূচনা হয়। উহাতে বক্তৃতা প্রসঙ্গেই ভারত সরকারের পূর্বাঞ্চলীয় ভূগর্ভস্থ জল শাখার সুপারিন্টেন্ডিং জিওলজিস্ট শ্রী জি সি চ্যাটার্জি উপরোক্ত মন্তব্য করেন। ভারতের খনি ও জ্বালানী মন্ত্রী শ্রী কে ডি মালব্য ঐ আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করেন। ভারতের বিভিন্ন স্থানে সরকারী ও বেসরকারী ক্ষেত্রে কর্মরত প্রায় ৫০জন ভূতত্ত্ববিদ এই আলোচনায় অংশ গ্রহণ করিতেছেন। এই দেশে ভূগর্ভস্থ জল সঞ্চয়ের বৈজ্ঞানিক সন্ধান ও উহার সম্ভাব্য ব্যবহারাদি সম্পর্কেই প্রধানত আলোচনার ব্যবস্থা হইয়াছে। বিহারের রাজগীর অঞ্চলের ঊষ্ণ প্রস্রবণ সম্পর্কে শ্রী এস কে গুহের অনুসন্ধানতথ্য সম্বলিত প্রবন্ধও প্রথমদিন বেশ কৌতুহলের সৃষ্টি করে।

• শনিবার মহানগরীর গহনার দোকানসমূহ বন্ধ:
শনিবার মহানগরীর প্রায় সমস্ত গহনার দোকান বন্ধ থাকে। বিকালে মনুমেন্টের নীচে সারা বাঙ্গালার স্বর্ণশিল্পী সম্মেলনে কারিগরদের অর্থনৈতিক পুনর্বাসন দাবি করা হয়। এদিকে ঐদিন বিকালে শ্যামপুকুর থানার পুলিস ও শুল্ক বিভাগের কর্মীরা কুমারটুলি এলাকায় একটি ঘরে হানা দিয়া প্রায় দশ তোলা সোনা আটক করে। অভিযোগ এই, ঐ সোনায় ১৪ ক্যারেটের বেশি বিশুদ্ধতার গহনা তৈরী হইতেছিল। শনিবার সারাদিন শুল্ক বিভাগের কর্মীরা মহানগরীতে টহল দেয়, কেহ সাদা পোশাকে, কাহারও বা উর্দি পরিধানে। শনিবার পর্যন্ত হেয়ার স্ট্রীটের স্বর্ণ নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে প্রায় সাড়ে সাতশত ব্যবসায়ী লাইসেন্সের জন্য দরখাস্ত করিয়াছেন। ঐদিনই ছিল লাইসেন্সের দরখাস্ত করার শেষ তারিখ (৯ই ফেব্রুয়ারী)।

“চোরাই সোনার কারবার বন্ধ করাই
সরকারী স্বর্ণ-নীতির লক্ষ্য” - অর্থমন্ত্রী

—যেতে দাও।
ওর সোনা কিনবে কে?

স্বর্ণ নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে বিক্রয়করের হিসাবমত তৈরী তালিকায় ব্যবসায়ীর মোট সংখ্যা প্রায় ৮৮৮। শনিবার শুল্ক বিভাগের একজন অফিসার বলেন, যেসব ব্যবসায়ী লাইসেন্সের দরখাস্ত করেন নাই, রবিবার হইতে তাঁহাদের কারবার বন্ধ করিতে হইবে। ঐসব ব্যবসায়ীদের মজুত সোনা ও গহনা সরকারের নিকট এক মাসের মধ্যে জমা দিবার জন্য তাঁহাদের নোটিশ দেওয়া হইবে। ঐ সোনা বাবদ তাঁহারা নিয়ন্ত্রিত মূল্য (৬২।।. তোলা) পাইবেন। যাঁহারা বিক্রয়করের জন্য তালিকাভুক্ত নন, তাঁহারা এই আইনের আওতায় আসিবেন না।

• শ্রীসারদা আশ্রমে বিবেকানন্দ জন্মশতবার্ষিকী উত্সবে শিক্ষা মন্ত্রীর ভাষণ:
শনিবার বিকালে দক্ষিণ কলিকাতায় শ্রীসারদা আশ্রমে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মশতবার্ষিকী উত্সব পালন করা হয়। এই উপলক্ষে আশ্রম কর্তৃক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী রায় হরেন্দ্রনাথ চৌধুরী বলেন, স্বামীজীর বাণী ও কর্ম লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রাণিত করিয়াছে। বালক বালিকা ও যুবক সকলেরই স্বামীজীর আদর্শ গ্রহণ করা উচিত বলিয়া তিনি মন্তব্য করেন। সূচনায় শিক্ষামন্ত্রী আশ্রমের বালিকাদের হাতের কাজের একটি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। স্বামীজীর ঘটনাবহুল জীবনের কয়েকটি চিত্র এই প্রদর্শনীতে রাখা হয়। গত ৭ই ও ৮ই ফেব্রুয়ারী ঐ আশ্রমে শ্রীশ্রীমাতা সারদামণি দেবীর জন্মোত্সব পালন করা হয়। ৭ই ফেব্রুয়ারী শ্রীনন্দদুলাল দে ভক্তিরত্ন ‘‘শ্রীমন্ত উপাখ্যান’’ কীর্তন করেন। ইহা ছাড়া ঐ দিন বিশেষ পূজা, গীতা পাঠ ও চণ্ডীপাঠ করিয়া বিশ্বকল্যাণ কামনা করা হয়। ৮ই ফেব্রুয়ারী এক মহিলা সভায় শ্রীঅচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত শ্রীশ্রীসারদামাতা সম্বন্ধে বলেন, এই, বিশ্বজনীন দয়া, ক্ষমা, সততা, সাম্য প্রভৃতি অলংকারে বিভূষিতা সাক্ষাত্ জগদ্ধাত্রী; তিনি আত্মগোপন করিয়া লজ্জাশীলা পল্লবীরূপে আমাদের মধ্যে আবির্ভূতা হইয়াছিলেন। এই সভায় অধ্যক্ষা সুপ্রভা চৌধুরী সভানেত্রাত্ব করেন।


স্বামী বিবেকানন্দ জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার সকালে কলিকাতার
রাজপথে নিবেদিতা বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের শোভাযাত্রা —আনন্দ-চিত্র।


মঙ্গলবার, ২৯ মাঘ, ১৩৬৯ (২৩ মাঘ, ১৮৮৪ শক) TUESDAY, FEBRUARY 12, 1963
• ব্যবসা বন্ধের নোটিশ: সময় মত লাইসেন্সের জন্য দরখাস্ত না করায় কলিকাতার প্রায় ৭০ জন স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও গহনার দোকানের মালিককে সোমবার শুল্ক বিভাগ ব্যবসা বন্ধ করার নোটিশ দিয়াছেন। ইঁহাদের মজুত সোনা ও গহনা ১০ই মার্চের মধ্যে শুল্ক বিভাগের হেয়ার স্ট্রীটস্থ স্বর্ণ নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে জমা দিতে হইবে। ব্রিকয়করের তালিকাভূক্ত স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের লাইসেন্সের জন্য দরখাস্ত করিবার শেষ দিন ছিল ৯ই ফেব্রুয়ারী। ৮৮৮জন তালিকাভূক্ত ব্যবসায়ীদের মধ্যে ঐ দিন পর্যন্ত সাড়ে সাত শতের মত ব্যবসায়ী লাইসেন্সের জন্য দরখাস্ত করেন। সোমবার পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি তাঁহাদের ব্যক্তিগত মজুত সোনার ঘোষণা দাখিল করিয়াছেন। সোমবার শুল্ক বিভাগের কর্মীরা আলিপুর এলাকায় দুই জায়গায় হানা দেন। অবশ্য বেআইনী কিছু পাওয়া যায় নাই। শুল্ক বিভাগের ‘প্রিভেন্টিভ’ কর্মীরা সারা দিন মহানগরীতে টহল দেন। সোমবারও কলিকাতায় প্রায় সমস্ত গহনার দোকান বন্ধ থাকে। বড়বাজার পাইকারী সোনার বাজারেও লেন-দেন হয় নাই। ১৪ ক্যারাট সোনার গহনা তৈরীর জন্য সোনা সরবরাহের কোন ব্যবস্থা সরকার করেন নাই বলিয়া ব্যবসায়ীদের অনেকে জানান। ১৪ ক্যারাট সোনার গহনা তৈরীর কাজও কলিকাতায় এখনও চালু হয় নাই। ফলে মহানগরীর পঞ্চাশ সহস্রেরও বেশী কারিগর এখনও কর্মহীন অবস্থায় ঘুরিতেছেন বলিয়া স্বর্ণশিল্পীদের অনেকে জানান।

গুঁড়ো দুধ চুরি করেছি, কারণ
গরু চুরির চেয়ে সেটা সোজা
• কয়েক লক্ষ টাকার গুঁড়া দুধ ইত্যাদি আত্মসাতের অভিযোগ: দরিদ্রদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য চেতলার আর্যস্থান সোশ্যাল সেন্টারকে প্রদত্ত গুঁড়া দুধ ও অন্যান্য দ্রব্য সম্পর্কে জালিয়াতি ও বিশ্বাসভঙ্গের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে পুলিশ শঙ্কর বসু রোডের ডাঃ শৈলেন্দ্রনাথ বসু ও অপর সাতজনকে গ্রেপ্তার করে। উক্ত ডাক্তার আর্যস্থান সোস্যাল সেন্টারের সেক্রেটারী। পুলিশের অভিযোগ এই যে, তিনি কলিকাতার এমন একটি হোমিওপ্যাথিক কলেজের হোমিওপ্যাথিক জিগ্রিধারী, যাহার কোন অস্তিত্বই নাই। গোয়েন্দা বিভাগ নয়াদিল্লির আলেকজান্ডার প্লেসস্থিত ন্যাশনাল ক্যাথলিক ওয়েলফেয়ার কনফারেন্সের ক্যাথলিক রিলিফ সার্ভিসের প্রোগ্রাম ডিরেক্টরের অভিযোগক্রমে বিষয়টি সম্পর্কে জদন্ত আরম্ভ করে। প্রকাশ, দরিদ্র ব্যক্তিদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য দান হিসাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হইতে গুঁড়া দুধ ও স্নেহজাতীয় পদার্থ ইত্যাদি কলিকাতায় আমদানী করা হয় এবং ১৯৬১ ও ১৯৬২ সালে বহু পরিমাণ গুঁড়া দুধ, গম, কর্ণফ্লেক, ময়দা ও স্নেহজাতীয় পদার্থ অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য ঐ সমস্ত দ্রব্যের ভার ৫, চেতলা রোডের আর্যস্থান সোস্যাল সেন্টারের উপর অর্পণ করা হয়। অভিযোগে প্রকাশ, আর্যস্থান সোস্যাল সেন্টার হইতে ঐ সমস্ত দ্রব্য বিতরণ সংক্রান্ত যে রিপোর্ট পেশ করা হয়, তাহা পরীক্ষা করিয়া দেখা যায় যে, ১৯৬১ সাল ও ১৯৬২ সালের মধ্যে কয়েক লক্ষ টাকা মূল্যের প্রায় ২ লক্ষ ১৪ হাজার ৩২ পাউণ্ড গুঁড়া দুধ, ২২ হাজার ৭ শত পাউণ্ড শস্য ও ৫৮৪ পাউণ্ড তৈলজাতীয় পদার্থ সোস্যাল সেন্টার আত্মসাত্ করিয়াছে এবং মিথ্যা হিসাব দাখিল করিয়াছে।

বুধবার, ৩০ মাঘ, ১৩৬৯ (২৪ মাঘ, ১৮৮৪ শক) WEDNESDAY, FEBRUARY 13, 1963
• দ্বিতীয় হাওড়া ব্রিজ, পুণায় গবেষণা আরম্ভ: গঙ্গার উপর এই সেতুর জন্য থাম বসাইলে নদীর কি অবস্থা হইবে, কয়টি থাম বসান চলে, সেগুলি কতখানি ভার সহ্য করিতে পারিবে, মোটামুটি এই বিষয়গুলি পুণায় পরীক্ষা করিয়া দেখা হইবে। নূতন সেতুর জন্য গঙ্গার কোন ক্ষতির সম্ভাবনা আছে কি না তাহাও গবেষণার অন্যতম প্রধান বিষয়। কলিকাতা ও হাওড়ার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, হাওড়া পুলের উপর ভিড়ের চাপ কমান প্রভৃতির জন্য সি এম পি ও-র এই দ্বিতীয় সেতুর প্রস্তাব করেন। প্রায় দুই মাস আগে আন্তর্জাতিক টেন্ডারের ভিত্তিতে একটি বিদেশী সংস্থাকে স্থান নির্বাচনের ভার দেওয়া হয়। এই দুই মাসে কলিকাতায় তাঁহাদের কাজ বেশ খানিকটা অগ্রসর হইবার পর, পুণার নদী গবেষণা কেন্দ্রে গঙ্গার মডেলের সাহায্যে এই গবেষণার প্রয়োজন দেখা দেয়। প্রিন্সেপ ঘাট ও আউটরাম ঘাট এই দুই জায়গারই মাটি খোঁড়া এবং মাটি পরীক্ষার কাজ চলিয়াছে। এই দুই স্থানের কোন এক জায়গায় দিত্বীয় সেতুটি নির্মিত হইবে বলিয়া আপাতত স্থির হইয়াছে। সি এম পি ও কর্তৃপক্ষ আশা করেন, আগামী এক বত্সরের মধ্যেই স্থান নির্বাচন ও সেতুর অন্যান্য খুঁটিনাটি পরিকল্পনা শেষ হইবে। এই সমীক্ষার জন্য বিশ্বব্যাঙ্ক দিয়েছেন ১১৫ হাজার ডলার। রাজ্য সরকার খরচ করিবেন প্রায় তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা।

• কেশব সেনের বাস্তুভিটা রাজ্য সরকার কর্তৃক সংরক্ষণের ব্যবস্থা:
চিত্তরঞ্জন এভিন্যুর উপর ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেনের বাস্তুভিটাটি রাজ্য সরকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা করিতেছেন। মঙ্গলবার কয়েকজন সরকারী প্রতিনিধি গিয়া বাড়িটি দেখিয়া আসেন।
কেশবচন্দ্র সেনের বাস্তুভিটাটি পশ্চিমবঙ্গ সরকার অধিকারে আনিয়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা করিতেছেন। —আনন্দ চিত্র
এইদিন একজন সরকারী মুখপাত্র বলেন বাড়িটি দখলের জন্য শীঘ্রই নোটিশ দেওয়া হইতেছে। জানা গিয়াছে এই জীর্ণ বাড়িটি সংস্কার করিয়া এইখানে একটি সংগ্রহশালা করা হইবে। এই বাড়িতে যেখানে কেশব সেন ভূমিষ্ঠ হইয়াছিলেন, সেই স্থানটি সংরক্ষণ করা হইবে।

বৃহস্পতিবার, ১ ফাল্গুন, ১৩৬৯ (২৫ মাঘ, ১৮৮৪ শক) THURSDAY, FEBRUARY 14, 1963
আমি জাল নোট দিয়েছি সত্য,
কিন্তু আপনিও তো আমায়
জাল পাসপোর্ট দিয়েছেন।
• পাশপোর্ট জালের ফলাও কারবার, কলিকাতায় আন্তর্যাতিক ঘাটির সন্ধান: সম্প্রতি গোয়েন্দা পুলিশের অনুসন্ধানের ফলে কলিকাতায় আন্তর্যাতিক পাশপোর্ট-জালের একটি ঘাটির সন্ধান পাওয়া গিয়াছে। অভিযোগে প্রকাশ, একদল সমাজবিরোধী লোক কমনওয়েলথ দেশগুলিতে এজেন্ট রাখিয়া তাহাদের যোগসাজসে জাল পাশপোর্টের ফলাও কারবার চালাইতেছে এবং অর্থ রোজগার করিতেছে। আরও প্রকাশ যে, কলিকাতার ঘাটিতে প্রস্তুত জাল পাসপোর্ট লইয়া এখনও কিছু কিছু লোক পরমানন্দে বিদেশে দিনযাপন করিতেছে। পুলিসী তদন্তকে ফাঁকি দিয়া বিদেশে বসিয়া নানাপ্রকার কাজকারবার চালাইবার জন্যই নাকি একশ্রেণীর সমাজবিরোধী লোক এই সব জাল পাসপোর্ট ব্যবহার করিয়া থাকে। বতর্মান জরুরী অবস্হায় বিদেশে থাকিয়া ভারতবিরোধী কার্যকলাপে নিযুক্ত থাকাও ঐ সব জাল পাসপোর্ট-ধারীর পক্ষে অসম্ভব নহে বলে পুলিস মহলে কেহ কেহ মনে করিতেছেন। এই জাল পাসপোর্টের ঘাটি সংক্রান্ত অভিযোগ সম্পর্কে তদন্ত করিতে গিয়া পুলিস মঙ্গলবার চেতলা অঞ্চলে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। ইতিমধ্যে আরও ৩ জনকেও এই কারবারের সহিত জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হইয়াছিল। অভিযোগে আরও প্রকাশ যে, ১৯৬১ সালের শেষ দিকে কলিকাতাস্থিত আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে প্রাপ্ত চব্বিশ পরগনার কয়েকজন পাসপোর্টপ্রার্থীর আবেদনপত্র দেখিয়া সংশ্লিষ্ট অফিসারের সন্দেহ হয়। অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, পুলিস রিপোর্ট, ব্যাঙ্কের বিবৃতি প্রভৃতি সবই জাল। তাহা ছাড়া, প্রাথীর্দের ঠিকানা সবগুলিই মিথ্যা দেওয়া হইয়াছে। ২১ জন পাসপোর্টপ্রার্থীর ক্ষেত্রে আবেদনপত্রের সহিত এইরূপ জাল পুলিস রিপোর্ট ইত্যাদি প্রেরণ করিতে দেখা যায়। ইহা ছাড়া আরও ৭টি ক্ষেত্রে পাসপোর্টের সহিত প্রেরিত পুলিস রিপোর্ট ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের বিবৃতি সবই জাল বলিয়া প্রমাণিত হয়।

• মহাতীর্থ বেলুরমঠে গ্রীক রাজদম্পতি:
গ্রাণ্ডট্রাঙ্ক রোডের পথ ধরে সপারিষদ গ্রীস রাজদম্পতি বুধবার যখন বেলুর মঠের প্রাঙ্গণে গিয়ে পৌঁছলেন, তখন বিকেল চারটের ঘন্টা বাজছে বিদ্যামন্দিরে। প্রধান ফটকের সামনে অপেক্ষা করছিল কয়েক হাজারের জনতা। রাজভবন থেকে বেলুড় মঠ পর্যন্ত রাজপথের মোড়ে মোড়ে জনতার উচ্ছ্বসিত অভিনন্দন কুড়োতে কুড়োতে রাজদম্পতি এলেন বেলুড় মঠের মহাতীর্থে। সবশুদ্ধ বারো জনের দল। রাজ পরিবারের তিনজন স্বয়ং রাজা পল, রানী ফ্রেডরিকা, রাজকুমারী আইরিন, সেই সঙ্গে আরও নজন, রাজকীয় কর্মচারী। তেষট্টি বছরের দীর্ঘদেহী নরপতির পরণে এই দিন ছিল শুভ্র রাজকীয় পরিচ্ছদ। কাঁধের ওপর আঁকা রাজমুকুটের প্রতীক, রানী ফ্রেডরিকার পরণে নীলাভ ফ্রক, গলায় প্রবালের মালা। রাজকুমারী আইরিন পরেছেন টিয়ারঙের পোশাক। রাজপরিবারের সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রের শ্রম দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী জয়সুখলাল হাতী। রাজ্য সরকারের মন্ত্রী শ্রীশৈলকুমার মুখোপাধ্যায়। প্রধান মন্দিরের প্রাঙ্গনে সন্মানীয় অথিতীদের স্বাগত জানালেন রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক স্বামী বীরেশ্বরানন্দ। তাঁদের উপহার দেওয়া হল একটি করে পুষ্পস্তবক। আধ ঘন্টার জন্য ওরা এসেছিলেন, কিন্তু বেলুড় তাঁদের কাছ থেকে আরও আধ ঘন্টা আদায় করে নিল। সমস্ত কিছুতেই রাজদম্পতীর অসীম উত্সাহ। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের মর্মর মূর্তি, স্বামী বিবেকানন্দের ব্যক্তিগত কক্ষ, সমাধিভূমি, সারদা মায়ের মন্দির রাজদম্পতী এক ঘন্টা ঘুরে দেখলেন গভীর অভিনিবেশের সঙ্গে।

শনিবার, ৩ ফাল্গুন, ১৩৬৯ (২৭ মাঘ, ১৮৮৪ শক ) SATURDAY, FEBRUARY 16, 1963
• কলিকাতায় টীকাদান অভিযানে রাজ্যপাল ও মেয়র: দৃশ্যটি একটু অভিনব ছিল বৈকি। শুক্রবার কলাবাগান বস্তীর সঙ্কীর্ণ পথে যখন পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র নম্বরবিহীন গাড়িটি এসে থামল এবং সেই গাড়ি থেকে যখন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল শ্রীমতী পদ্মজা নাইডু কলাবাগান বস্তীর পথের ওপর নামলেন, তখন শম্ভু চ্যাটার্জি স্ট্রীটের সমস্ত বাড়ির জানালাগুলোই খুলে গিয়েছিল। কলাবাগানের সমস্ত মানুষই এসে জড় হয়েছিল শম্ভু চ্যাটার্জি স্ট্রীটে। এই সর্বপ্রথম পশ্চিমবঙ্গের কোন রাজ্যপালকে একটি বিচিত্র পদযাত্রার নেতৃত্ব নিতে হল। শুক্রবার বিকেল চারটের এই পদযাত্রাটির উদ্দেশ্য ছিল নাগরিক সাধারণকে বসন্তের টীকা নেবার জন্য উদ্বুদ্ধ করা। ভারতের বৃহত্তম শহর কলকাতার নাগরিককে ‘টীকা নেওয়া যে অত্যন্ত জরুরী’ একথা প্রচার ভ্যানের গাড়িতে করে বার বার মাইক্রোফোনে ঘোষণা করতে হল।
রাজ্যপাল শ্রীযুক্তা নাইডু কলিকাতার কলাবাগান বস্তিতে একটি বালককে টীকা দিতে দেখিতেছেন। — আনন্দ চিত্র
এবং জনসাধারণ যাতে টীকা নিতে উত্সাহী হন, সেজন্য স্বয়ং রাজ্যপাল ও মেয়রকে প্রতিটি টীকাদান কেন্দ্রে উপস্থিত হতে হল। সেদিক থেকে রাজ্যপাল তাঁর কর্তব্য অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন। শুক্রবার সকালবেলা রাজ্যপাল বড়বাজার এলাকার পথে পথে ঘুরেছেন। চারটে না বাজাতেই চলে এসেছেন কলাবাগানে। এক ঘন্টার মধ্যেই বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রায় ছ’শ জনকে টীকা দেওয়া হয়েছে এবং তা হয়েছে রাজ্যপালের উপস্থিতিতেই। শুক্রবার কলাবাগান বস্তী রাজ্যপালকে সাদর অভ্যথর্নাই জানিয়েছিল। দোতলার বারান্দা থেকে কম দামী ফুল দিয়ে গাঁথা অনেক মালাই এসে পড়েছিল রাজ্যপালের গাড়িতে। অনেকে তাঁর কাছে এসে দিয়ে গিয়েছিল ফুলের মালা। অনেকে পদ্মজা নাইডু জিন্দাবাদ বলে স্লোগানও দিয়েছিল।


আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এই সকল সংবাদের বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত।
 
 


 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.