দিন আসে, দিন যায়, তার ফাঁকেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ে তার চলাচলের খবর। পুরনো দিনের শহুরে খবর দিয়ে চেনা যায় এখনকার
অতি পরিচিত শহরের অতীতটাকে, তার নাগরিক জীবনযাপন থেকে খেলাধুলো, সংস্কৃতি বা কূটকচালি থেকে রাজনীতির হাল।
পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতা শহরের গতিবিধি চিনতে ২১ মার্চ ১৯৬৩ থেকে ২০ এপ্রিল ১৯৬৩ এক মাসের কিছু বিশেষ খবর।

বৃহস্পতিবার, ৭ চৈত্র, ১৩৬৯ (৩০ ফাল্গুন, ১৮৮৪ শক) THURSDAY, MARCH 21, 1963
• কলিকাতায় সার্কুলার রেলপথ পুনরায় পরিকল্পনা চালু করার চেষ্টা: সরকারী ড্রাগ স্টোরে ১৫ লক্ষ টাকার ঔষধ বরবাদ: একদিকে দেশের দরিদ্র জনসাধারণ ঔষধ কিনিবার অর্থের অভাবে মারা যাইতেছে, অপর দিকে এই রাজ্যের সরকারী ড্রাগ স্টোরে গত কয়েক বত্সরে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার ঔষধ ব্যবহারের অভাবে নষ্ট হইয়া গিয়াছে। রাজ্য সরকারের কেন্দ্রীয় ড্রাগ স্টোরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালের জন্য কেনা ঔষধপত্র জমা থাকেন। এবং কেন্দ্রীয় ড্রাগ স্টোর্স প্রতি বছর এক কোটি টাকা মূল্যের ঔষধপত্র ব্যবহার করিয়া থাকেন। কিন্তু দেখা গিয়াছে, গত তিন বত্সর ধরিয়া ২৯৬ রকমের ঔষধ যাহার মূল্য ৪৫,৩৫৮ টাকার মত হইবে তাহা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়িয়া আছে এবং বর্তমানে তাহা নষ্ট হইয়া গিয়াছে। সরকার এ সম্পর্কে বলিতেছেন : নতুন ধরনের ঔষধ আবিস্কৃত হইয়াছে, তাই ওই পুরাতন ঔষধগুলি আর কাজে আসিবে না। শুধু তাহাই নহে, গত দুই বত্সর ধরিয়া রাজ্যের জনস্বাস্থ্য দফতরের ৯১,১৪৪ টাকা মূল্যের ঔষধ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়িয়া আছে। সরকারকে জানান হইয়াছে এগুলি প্রধানত ম্যালেরিয়ার ঔষধ।

• কলিকাতায় বসন্তরোগের ভয়াবহ প্রকোপ, ব্যাপকভাবে টিকা দিবার সিদ্ধান্ত: কলিকাতার নাগরিকদের আরও ব্যাপকভাবে বসন্তের টিকা দিবার একটি নতুন সিদ্ধান্ত গৃহীত হইয়াছে। বুধবার বিকালে পৌরসভার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রতিনিধিগণ এক সভায় মিলিত হইয়া এই বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কলিকাতায় ইদানীং ভয়াবহরূপে বসন্ত-রোগ ছড়াইতে থাকায় উপরোক্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারীরা টিকা দিবার ব্যাপারে পৌর-কর্মচারীদের সহায়তা করিবে। প্রয়োজন হইলে পুলিসের সাহায্যও পাওয়া যাইবে।
বেলিয়াঘাটার সংক্রামক রোগের হাসপাতালে বসন্ত রোগাক্রান্ত প্রিয়জনদের দেখিবার জন্য তাহাদের মাতা
ও ভগ্নীরা হাসপাতালের জানালার ভিতর দিয়া ব্যাকুল দৃষ্টিতে তাকাইয়া আছেন।—আনন্দ-চিত্র।
সব ব্যবস্থা সম্পূর্ণ হইলে কলিকাতায় বিশেষরূপে আক্রান্ত অঞ্চলসমূহে এই পরিকল্পনা অবিলম্বেই কার্যকরী করা হইবে বলিয়া প্রকাশ। এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, গত জানুয়ারী মাস হইতে মহানগরীতে বসন্তের প্রকোপ চলিতেছে এবং ইতিপূর্বেই এ রোগে বহু নাগরিকের মৃত্যু ঘটিয়াছে। বুধবার দিন সংক্রামক ব্যাধির হাসপাতালে মোট ১৫০ জন বসন্ত রোগী ছিল এবং ইহাদের মধ্যে শতকরা ৬০ জনই টিকা লয় নাই। গত শনিবার(১৬ই মার্চ) যে সপ্তাহ শেষ হইয়াছে সেই সময়ে কলিকাতারয় মোট ৯৯ জন বসন্ত রোগের আক্রমণে মারা যায়। এইবার ইতিপূর্বে আর কোন একটি সপ্তাহে এত বেশী লোক বসন্তে মারা যায় নাই। আলোচ্য সপ্তাহে বসন্ত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯৩।

শুক্রবার, ৮ চৈত্র, ১৩৬৯(৯ চৈত্র, ১৮৮৫ শক) FRIDAY, MARCH 22, 1963
• কর্পোরেশন বাজেট গৃহীত, সভায় যথারীতি হৈ চৈ: চার দিনে মোট এগার ঘন্টা আলোচনার পর বৃহস্পতিবার রাত্রে কলিকাতা কর্পোরেশনের সভায় কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাব সহ ১৯৬৩-৬৪ সালের বাজেট বিনা বিরোধিতায় গৃহীত হয়। মহানগরীর পথঘাট মেরামতের জন্য বাজেটে দশ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করিয়া একটি সংশোধনী প্রস্তাব সভায় গৃহীত হয়। ইহা ছাড়া কর্পোরেশনের কর্মচারীদের (তিন শত টাকার অনুর্ধ) বকেয়া মাশ্রগীভাতা প্রদানের অনুরোধসূচক একটি সংশোধনী প্রস্তাব যথোপযুক্ত বেবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট স্ট্যান্ডিং ফিনান্স কমিটিতে প্রেরণ করা হয়।

কলিকাতা, শনিবার, ১ই চৈত্র, ১৩৬৯( ২রা চৈত্র, ১৮৮৫ শকাব্দ), SATURDAY, MARCH 23, 1963
• ভারতের শ্রেষ্ঠ দুইটি ছায়াচিত্রই বাংলা ছবি: দাদাঠাকুর—প্রথম , দ্বিতীয়—অভিযান: নয়াদিল্লি হইতে আনন্দবাজার পত্রিকার বিশেষ সংবাদদাতা শুক্রবার জানান যে, বাংলা ছায়াচিত্র—“দাদাঠাকুর” সারা ভারতে ১৯৬২ সালের ‘শ্রেষ্ঠ ছবি’র জয়টীকা লাভ করিয়াছে। রাষ্ট্রপতির স্বর্ণপদক “দাদাঠাকুর”-এর প্রাপ্য। আর একটি বাংলা ছবি—শ্রীসত্যজিত্ রায়ের “অভিযান” দ্বিতীয় স্থান লাভ করায় প্রশংসাপত্র (অল ইন্ডিয়া সার্টিফিকেট অব মেরিট) পাইবে।
দ্বিতীয় ছবি “সৌতেলা ভাই” তৃতীয় স্থান অধিকার করিয়াছে। ছবিটি শরতচন্দ্রের বৈকুন্ঠের উইল অবলম্বনে প্রযোজিত। “কাঁচের স্বর্গ” রাষ্ট্রপতির রৌপ্যপদক পাইবে। ইহা শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবির সন্মান লাভ করিয়াছে। দ্বিতীয় স্থান লাভ করিয়াছে “নিশীথে”। ইহা প্রশংসাপত্র(সার্টিফিকেট অব মেরিট) পাইবে।
সত্যজিত্ রায় পরিচালিত “অভিযান” চিত্রের
একটি দৃশ্যে ওয়াহিদা রহমান ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

• কলিকাতার পুস্করিণীসমূহ সন্তরণের সম্পূর্ণ অযোগ্য:
আগামী মাসে অর্থাত্ এপ্রিল মাস হইতেই সন্তরণ মরসুম আরম্ভ হয়। সুতরাং এই সময় সন্তরণের স্থান ও সন্তরণ পরিচালকমণ্ডলীর কার্যকলাপ সম্পর্কে কিছু আলাপ-আলোচনা হওয়ার প্রয়োজন আছে। বাঙ্গলার সন্তরণের যাহা-কিছু উত্সাহ ও উদ্দীপনার কেন্দ্রস্থল হইল কলিকাতা। আর কলিকাতার অধিকাংশ সন্তরণ ক্লাবকে কর্পোরেশনের পুস্করিণীসমূহতেই তরূণ ও কৃতী সাঁতারুদের সন্তরণ শিক্ষা সন্তরণ প্রতিযোগিতা প্রভৃতি পরিচালনা করিতে হয়। কলিকাতা কর্পোরেশনের এই সমস্ত পুস্করিণীতে স্নান সম্পর্কে কোনরূপ বাধা নিষেধ না থাকায়, যে কোন শ্রেণীর, কি ভিখারী কি কুষ্ঠরোগী, সকলেই অবাধে স্নান করিয়া থাকে। ময়লা কাপড়-চোপড় কাচা মাঝে মাঝে বন্ধ হয়। আবার ঠিক মতই চলে। ইহার ফলে পুস্করিণীর জল কেবল অপরিস্কার অস্বাস্থ্যকর হইয়া পড়িয়াছে তাহা নহে, সম্পূর্ণ ব্যবহারের অযোগ্য হইয়াছে। জল সবুজ রং ধারণ করিয়াছে ও এমন দুর্গন্ধযুক্ত যে আমার মত লোক যে গত ৪৫ বত্সর ধরিয়া প্রত্যহ প্রাতে কলেজ স্কোয়ার পুস্করিণীতে সন্তরণ করিয়া থাকে তাহার পক্ষেও কয়েক মিনিট অধিক জলে থাকা অসম্ভব হইয়া পড়ে। এই বিষয় গত কয়েক বত্সর ধরিয়া কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হইতাছে কিন্তু কোনই ব্যবস্থা হয় নাই।

কলিকাতা, মঙ্গলবার, ১২ই চৈত্র, ১৩৬৯( ৫ চৈত্র, ১৮৮৫ শকাব্দ), TUESDAY, MARCH 26, 1963
বাসভাড়া বাড়বে
শুনে শেষবারের মত....।
• বাসভাড়া বৃদ্ধির আবেদন: শনিবার বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সভাকক্ষে, সঙ্ঘের সভাপতির পৌরাহিত্যে, কলিকাতা, হাওড়া ও সারা ২৪ পরগণার বিভিন্ন বাস রুটের প্রতিনিধিদের এক সভা হয়। উহাতে সরকারের বর্ধিত হারে যানবাহনের ওপর কর ধার্য করা ও তজ্জনিত পেট্রোল, ডিজেল, গাড়ীর কলকব্জা ও যন্ত্রপাতি, রোড ট্যাক্স, ইনকাম ট্যাক্স ও নানা বিষয় ও বস্তুর ক্রয়মূল্য কল্পনাতীতভাবে বর্ধিত হওয়ায় এই ব্যবসায়ে লিপ্ত ব্যবসায়ীদের দারুণ বিপর্যয় সৃষ্টি ও তাহা হইতে মুক্তি পাইবার পন্থা অবলম্বনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। শ্রীসুনীতেন্দ্রমোহন ঠাকুর বলেন যে, যানবাহনের দৈনিক ব্যয়ভার কর ধার্যের ফলে যথেষ্ট বৃদ্ধি পাইয়াছে। এই ব্যবসায়ে লিপ্ত ব্যবসায়ীদের কোনরূপ ইচ্ছাই ছিল না বাসের ভাড়া বৃদ্ধি করিয়া যাত্রিসাধারণকে বিব্রত করায়। কিন্তু যেহেতু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ব্যবস্থা চালু রাখিতে হইলে আয়ের অঙ্ক বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন, সেইজন্য সম্পূর্ণ অনিচ্ছা সত্ত্বেও যতকিঞ্চিত ভাড়ার হার বৃদ্ধি করা ছাড়া আর গতান্তর নাই। তিনি আরও বলেন যে, মোটর ভিহিকলস্ অ্যাক্টের মূল কথা হইতেছে যে, যানবাহন ব্যবসায়ীকে সর্বতোভাবে ন্যায়সঙ্গত মুনাফালাভে সাহায্য করিতে কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুত। সুতরাং তিনি আশা করেন যে, যানবাহন ব্যবসায়ীদের এই ন্যায্য দাবী কর্তৃপক্ষ ও জনসাধারণ সহানুভূতি ও উদারতার সঙ্গে মানিয়া লইবেন।

কলিকাতা, বুধবার, ১৩ই চৈত্র, ১৩৬৯( ৬ চৈত্র, ১৮৮৫ শকাব্দ), WEDNESDAY, MARCH 27, 1963
• মহিলা শিল্পীমহলের মহৎ প্রয়াস, বঙ্গ সংস্কৃতি সন্মেলনের পক্ষ হইতে অর্থ সাহায্য: মঙ্গলবার মার্কাস স্কোয়ারে বঙ্গ সংস্কৃতি সন্মিলনের দ্বাদশদিনে এক সংক্ষিপ্ত ও মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে সন্মেলনের পক্ষ হইতে উহার সভাপতি; আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক শ্রীঅশোককুমার সরকার মহিলা শিল্পী মহলকে তাঁহাদের মহৎ উদ্দেশ্যের সাহায্যার্থে ৩০০১ টাকা দান করেন। এই দিন মহিলা শিল্পী মহলের উদ্যোগে বঙ্গ সংস্কৃতি সন্মেলন মঞ্চে “ মিশন কুমারী ” অভিনীত হয়। উহারই প্রাক্কালে ঐ অর্থদান অনুষ্ঠান হয়। প্রারম্ভে মহিলা শিল্পী মহলের পক্ষ হইতে শ্রীমতী কানন দেবী বলেন, মহিলা শিল্পী মহল গঠন করার উদ্দেশ্য, যে সব অভিনেত্রী তাঁহাদের শেষ জীবনে দুঃস্থ অবস্থার মধ্যে পড়েন, তাঁহারা যাহাতে ভয়াবহ দুঃসহ জীবন যাপনে বাধ্য না হন এবং সুষ্ঠুভাবে জীবনের শেষ কয়টা দিন অতিবাহিত করিতে পারেন তাহার ব্যবস্থা করা। এই উদ্দেশ্য শিল্পী মহল ঐ সব অভিনেত্রীদের বাসের ও জীবনযাত্রা নির্বাহের জন্য একটি গৃহাশ্রম গড়িয়া তুলিতে চাহেন। ইহার জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যেই শিল্পী মহল এই নাটক অভিনয় আয়োজন করিয়াছেন। ইহার আগেও তাঁহারা এই নাটকের অভিনয় করিয়াছেন। এই অভিনয়ের জন্য কোন শিল্পীই ব্যক্তিগতভাবে অর্থ লইতেছেন না।

শুক্রবার, ১৫ চৈত্র, ১৩৬৯ FRIDAY, MARCH 29 1963
• বঙ্গ সংস্কৃতি সন্মেলন মন্তপে সর্বভারতীয় লেখক সন্মেলনের উদ্বোধন: বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মার্কাস স্কোয়ারে বঙ্গ সংস্কৃতি সন্মেলন মন্তপে স্বাধীন সাহিত্য সমাজের উদ্যোগে তিন দিন ব্যাপী সর্বভারতীয় লেখক সন্মেলণের উদ্বোধন হয়। সভায় বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সাংবাদিকগণ জাতির চরম সঙ্কটের দিনে মতবাদবিশেষের শৃঙ্খল হইতে মুক্ত রাখিয়া স্বাধীন সাহিত্য সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা বিবৃত করেন। বঙ্গ সংস্কৃতি সন্মেলনের সভাপতিত্ব আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক শ্রী অশোক কুমার সরকার উপস্থিত সকলকে স্বাগত জানাইয়া বলেন : ফরমায়েসমত প্রকৃত সাহিত্য সৃষ্টি হয় না। প্রসঙ্গক্রমে তিনি কমিউনিষ্ট দেশে প্রচারধর্মী সাহিত্যসৃষ্টির কথা উল্লেখ করিয়া মননশীল সাহিত্য রচনায় উহার প্রতিবন্ধকতার কথা বিশ্লেষন করেন। সন্মেলনের উদ্বোধক করিতে উঠিয়া ‘অমৃতবাজার পত্রিকার’ সম্পাদক শ্রীতুষারকান্তি ঘোষ বলেন : মনুষ্যত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনে চিন্তার স্বাধীনতাই সাহিত্য সৃষ্টির মূল উৎস এবং এই স্বাধীনতাকে কোন মূল্যেই বিকাইয়া দেওয়া চলে না।

• কলিকাতা শিল্পাঞ্চলে বিদ্যুৎশক্তি ব্যবহার সম্পর্কে বিধিনিষেধ: কলিকাতা শিল্পাঞ্চলে পুনরায় বিদ্যুৎশক্তির তীব্র অভাব দেখা দিয়াছে। চরম সঙ্কট এড়াইবার জন্য কলিকাতা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন কলিকাতা ও শিল্পাঞ্চলে ১লা এপ্রিল হইতে সন্ধ্যার দিকে সর্বাধিক চাহিদাকালে বিদ্যুৎশক্তি ব্যবহারের উপর অতিরিক্ত বিধিনিষেধ আরোপ করিবার সিদ্ধান্ত করিয়াছেন। বৃহস্পতিবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক প্রেস নোটে ঐ সিদ্ধান্তের কথা জানাইয়ি বলা হইয়াছে যে ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন কর্তৃক বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার অবস্থা এড়াইবার উদ্দেশ্যে ১৯৬৩ সালের ১লা এপ্রিল হইতে বিদ্যুৎ ব্যবহার সম্পর্কে নিম্নোক্ত অতিরিক্ত বিধিনিষেধ আরেপ করা অপরিহার্য ভাবে অবশ্যক হইয়া পড়িয়াছে। ইহার ফলে বিশেষ করিয়া সন্ধ্যার দিকে সর্বাধিক চাহিদাকালে বর্তমান সরবরাহ ব্যবস্থা এবং চাহিদার মধ্যে তফাৎ কমাইয়া আনা এবং সম্ভব হইলে উহা দূর করা যাইবে। অবশ্য উহাতে উৎপাদনের সামগ্রিক মাত্রা ব্যাহত হইবে না।
(১) যে সকল চটকলের বয়ন বিভাগে স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতি শিফটে আট ঘন্টা করিয়া দুই শিফটে কাজ হয়, সেখানে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা হইতে রাত্রি সাড়ে আটটা পর্যন্ত সন্ধ্যার দিকে সর্বাধিক চাহিদার সময়ে কল বন্ধ রাখিতে হইবে। ইহার পর দ্বিতীয় শিফট আবার শুরু করা যাইতে পারে এবং দ্বিতীয় শিফটে নির্ধারিত মোট কাজের সময় সম্পূর্ণ করার জন্য উক্ত শিফটের কাজ চালু রাখা যাইতে পারে। এই উদ্দেশ্যে শিফটের সময়ের দীর্ঘতা সম্পর্কে সংবিধিবদ্ধ ব্যবস্থাসমূহের প্রয়োজনীয় শিথিলীকজণের জন্য শ্রম বিভাগ ব্যবস্থাবলম্বন করিতেছেন।
(২) উচ্চ চাপবিশিষ্ট বিদ্যুৎশক্তির ৯১ জন বাণিজ্যিক গ্রাহক সন্ধ্যা ৬ টা হইতে রাত্রি ১০ টার মধ্যে তাঁহাদিগকে এই উদ্দেশ্যে যতটা পরিমান বিদ্যুৎশক্তি বরাদ্দ করা হইয়াছে, তাহার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করিবেন না।

—আমরা বাইরে বসে
পরীক্ষার হলে শান্তিরক্ষার চেষ্টা করছি।

—বাবা ব্যায়াম করছেন,
পরীক্ষার হলে গার্ড দিতে হবে যে

রবিবার, ১৭ চৈত্র, ১৩৬৯ SUNDAY, MARCH 31 1963
• ‘গাব্বাবাজারদের’ তৎপরতা: কলিকাতার সিঁধেল চোরেরা তৎপর হইয়া উঠিয়াছে। ১৯৬২ সালে সারা কলিকাতায় ১০৫৮ টি সিঁধেল চুরির ঘটনা পাওয়া গিয়াছে। ১৯৬১ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩২৫। অপরাধতত্ত্বের ভাষায় সিঁধেল চোরের নাম ‘গব্বাবাজ’। কলিকাতা পুলিশের খতিয়ানে কয়েক হাজার দাগী ‘গব্বাবাজের’ আঙুলের ছাপ ও কুলজী আছে। পুলিশ দাগী অপরাধীদের গতিবিধির উপর নিয়মিত নজর রাখিতেছে। কিন্তু তৎসত্ত্বেও গব্বাবাজি বাড়িয়া চলার কারন নাকি রাতের বেলায় পাহারাদারি পুলিশের অ-প্রতুলতা। এ সম্পর্কে পুলেশর বক্তব্য-জন-সাধারন সতর্ক না থাকিলে শুধু পুলিশি পাহারা দিয়া চুরি কমানো যাইবে না। কলিকাতার একজন পাকা গব্বাবাজের গড় আয় মাসিক দশ হাজার টাকা। কোন বাড়িতে চুড়ি করিতে হইলে তাহারা কয়েকদিন ধরিয়া খোঁজ-খবর করে। পুলিশ বলে গব্বাবাজদের প্রত্যেকের দলের নিজস্ব সংবাদ দাতা আছে। তাহারা প্রধানত ঝি-চাকর। কোন বাড়িতে চুরি করিবার আগে তাহারা কোন এক আছিলায় এক সময় আসিয়া দরজার অবস্থান দেখিয়া যায়। যে রাতে কাজ হইবে, সেই রাতে একজন আগে আসে।

সোমবার, ১৮ চৈত্র, ১৩৬৯ MONDAY, APRIL 1, 1963
• প্রাচ্য বানীমন্দির: রবিবার অপরাহ্নে মহাজাতি সদনে প্রাচ্য বানীমন্দিরের বিংশ বার্ষিক সভায় বিশিষ্ট বক্তাগণ সংস্কৃত ভাষার শ্রেষ্ঠত্ব এবং উহার বহুল প্রচারের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করিয়া বক্তৃতা করেন। শিক্ষামন্ত্রী হরেন্দ্রনাথ চৌধুরী ঐ সভায় পৌরহিত্য করেন। পন্ডিত সমাজ এবং বঙ্গীয় সংস্কৃত শিক্ষা পরিষদের পক্ষ হইতে জাতীয় প্রতিরক্ষা তহবিলের জন্য শিক্ষা মন্ত্রীর হস্তে ২ হাজার টাকার একখানি চেক দেওয়া হয়। এই দান গ্রহন করিয়া শিক্ষামন্ত্রী শ্রীরায়চৌধুরী বলেন যে, এই দান চীনা শত্রুদের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধপ্রচেষ্টার প্রতি আশীর্বাদরূপেই তিনি গ্রহণ করিতেছেন।
রবিবার মহাজাতি সদনে ‘প্রাচ্য-বাণীমন্দির’-এর বিংশ বার্ষিক সভায় শিক্ষামন্ত্রী
রায় শ্রীহরেন্দ্রনাথ চৌধুরী বক্তৃতা করিতেছেন। - আনন্দ চিত্র
এই আশীর্বাদের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের জয়যাত্রা সূচিত হইতেছে। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন যে, সংস্কৃত ভাষা ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষা। উহার বহুল প্রচারের সহায়তা করিবার জন্য তিনি প্রাচ্য বানীমন্দিরের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। প্রাচ্য বানীমন্দিরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ডঃ যতীন্দ্র বিমল চৌধুরী সভায় প্রাচ্যবানীর বিভিন্ন কর্মপ্রচেষ্টার বিবরণ দেন। এই প্রসঙ্গে তিনি প্রতিষ্ঠানটির জন্য একটি বাড়ী নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করিয়া বলেন যে, প্রাচ্যবানীর ১০ হাজার হাতে লেখা পুঁথি আছে। এই অমূল্য পুঁথিগুলির রক্ষনাবেক্ষনের উপযোগী স্থান তাঁহাদের নাই।

শুক্রবার, ২২ চৈত্র, ১৩৬৯ FRIDAY, APRIL 5, 1963
• বঙ্গ সংস্কৃতি সন্মেলনে বর্ষণস্নাত সন্ধ্যায় কাওয়ালি-আসর: সন্ধ্যা ঘন ঘন হয়ে এলেও ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। গত একুশ দিনের একটি দিনেও এমনটি দেখি নি। রোজ যেখানে সাঁঝের বাতি জ্বালার আগেই হাজার মানু্ষের ভীড়, আজ এপ্রিলের পাঁচ তারিখে, বাইশ দিনের দিন ঢুকে অবাক হলাম। আলোর রোশনাই আছে, ছোট বড় স্টলগুলিতেও যেন ভোর ভোর দোকান খোলার মতন এক আধটু ব্যস্ততা চোখে পড়ল। লাউড স্পীকারগুলো মূক। ঘড়িতে তখন দুটো বেজে সাতান্ন মিনিট। গেটে তখন দু-চারজনকে ঢুকতে দেখা গেল। উঁকি মেরে দেখছি কাউন্টারে তখন দীর্ঘ লাইন পড়েছে।
বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনে আঙ্গুরবালা দেবী।
রাত আটাটা; হ্যাঁ আটটাতেই আজকের অনুষ্ঠানের শুরু। সুতরাং কদিনের ব্যস্ত মন্ডপ যেন চোখে নিদ্রার অবিলতা নিয়ে অল্প আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে। প্রাঙ্গনের মাঠে ছপ ছপ শব্দ উঠছিল। দর্শক শ্রোতারা আসছেন। খানিক আগের বৃষ্টিস্নাত উৎসব প্রাঙ্গন যেন অনেক তপ্ত এবং উষ্ণতা সয়ে আজ ঈষৎ আমেজী প্রসন্নতা পেয়েছে। সুযোগ পেলে এই প্রশান্তিটুকু হয়তো উপভোগ করা যেত, কিন্তু তার অবসর মেলেনি। বোবা লাউডস্পীকার ততক্ষনে সরব হয়েছে, দর্শকের স্রোত এসে আছড়ে পড়ছে মন্ডপে, মেলা প্রাঙ্গনে।

• কলিকাতায় খোলা খাবার বিক্রয়ের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু: আজ শুক্রবার হইতে কলিকাতা মহানগরীতে “খোলা খাবার বিক্রয় বন্ধ” অভিযান শুরু হইতেছে। কলিকাতা কর্পোরেশনের কতৃপক্ষ পুলিশের সাহার্য লইয়া এই অভিযান পরিচালনা করিবেন। মহানগরীতে কলেরার প্রকোপ ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ার দরুন এই ধরনের ব্যবস্থা অবলম্বন করা অত্যন্ত প্রয়োজন হইয়া পড়িয়াছে। রাজপথের ধারে যাহাতে কেহ কাটা ফল ও ফুসকা জাতীয় খাবার বিক্রয় করিতে না পারে সেদিকেও বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হইবে। ইহা ছাড়া কর্পোরেশনের বিভিন্ন বাজারে বিশেষ করিয়া মাণিকতলা ঐলাকায় মাছি মারিবার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদিও গ্রহণ করা হইবে।


—স্টোভ ধার দিতে পারি, কিন্তু ফেরত দেবার সময়
কেরোসিন তেল বোঝাই করে দিতে হবে।

—হাওয়া খাচ্ছি ভাই, এই খাবারের
উপর তো ট্যাক্স বসেনি।

শনিবার, ২৩ চৈত্র, ১৪৬৯ SATURDAY, APRIL 6, 1963
• প্রেস ক্লাবের নিজস্ব গৃহ সরকারী সাহায্যের প্রতিশ্রুতি: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন শুক্রবার কলিকাতা প্রেস ক্লাবের এক সম্বর্ধনা সভায় ক্লাবের সদস্যদের এই প্রতিশ্রুতি দেন যে, ক্লাবের নিজস্ব গৃহ নির্মাণের ব্যাপারে সরকার যথাসাধ্য সাহায্য করিবেন। কলিকাতায় দুই লক্ষ টাকা ব্যয়ে ক্লাবের নিজস্ব গৃহনির্মাণের পরিকল্পনা রহিয়াছে। অর্থাভাবে এই পরিকল্পনা কার্যকারী করা যাইতেছে না। মুখ্যমন্ত্রী শ্রীসেন তাঁহার বক্তৃতায় অমৃতবাজার পত্রিকার সম্পাদক শ্রীতুষারকান্তি ঘোষ ও আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক শ্রীঅশোককুমার সরকারের উপস্থিতির উল্লেখ করেন ও বলেন: তাঁহারা এই ব্যাপারে সাহায্য করিলে ক্লাবের গৃহনির্মাণের ব্যাপারটি তরান্বিত হইবে বলিয়া তিনি মনে করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন: ক্লাবের যে নিজস্ব গৃহ নাই তাহা তিনি জানিতেন না। এই ব্যাপারে যথাসাধ্য সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন।

মঙ্গলবার, ২৬ চৈত্র, ১৩৬৯, TUESDAY, APRIL 9, 1963
• কলিকাতার তিনটি মাঠের গ্যালারি বুধবার রাজ্য সরকার কর্তৃক কর্তৃত্ব গ্রহণ: বুধবার, অর্থাত্ আগামীকাল কলিকাতার তিনটি ঘেরা ফুটবল মাঠের গ্যালারী জে জে হেডওয়ার্ড কোম্পানীর হাত হইতে পাকাপাকিভাবে রাজ্য সরকারের নিকট চলিয়া যাইতেছে। রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণ বাবদ হেডওয়ার্ড কোম্পানীকে মোট ১ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা দিতে রাজী হইয়াছেন। কোম্পানীর দাবি আরও একটু বেশী। বিষয়টি শেষ পর্যন্ত সালিশীতে পাঠান হইয়াছে। আপাতত কনস্ট্রাকসন বোর্ড গ্যালারী পরিচালনার ব্যাপারে স্থায়ী বন্দোবস্ত করিবেন।

বুধবার, ১৭ চৈত্র, ১৩৬৯ (২০ চৈত্র, ১৮৮৫ শক), WEDNESDAY, APRIL 10, 1963
পথ দিয়ে হাঁটিনে মশাই। ঝড়
উঠলেই তো গাছ ভেঙে ঘাড়ে পড়বে।
• কলিকাতায় কালবৈশাখী, ঝড়ে চলন্ত ট্রামের উপর বৃক্ষ পতিত: মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর কিছুক্ষণের জন্য কালবৈশাখীর তাণ্ডব চলে। শহরতলীর কোন কোন অঞ্চলে মুষলধারে বৃষ্টি হইলেও খাস কলিকাতার ছিটেফোঁটার বেশী কিছু পড়ে নাই। কলিকাতা প্রধানত ধূলিঝঞ্ঝার দাপট সহ্য করিয়াছে। খোলা জানালাগুলি সশব্দে বাজিয়াছে. কাঁচ ভাঙ্গিয়াছে এবং বিস্তর কাগজ-কাপড় উড়িয়াছে। কয়েকটি গাছ উপড়াইবার খবরও পাওয়া গেল। অধিক রাতে জানা যায়, শহরতলীর উদ্বাস্তু কলোনীগুলির কোথাও কোথাও চালাঘরের ছাউনি উড়িয়াছে। আবহাওয়া অফিসের খবর, কলিকাতার উপর দিয়া যে ঝড় বহিয়া গিয়াছে, তাহার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫২ মাইল— উত্পত্তিস্থল ঈশান কোণ। ঝড়ের সময় কলিকাতায় মৌলালীর নিকট লোয়ার সার্কুলার রোডে ট্রামের তারের উপর একটি বড় নিমগাছ উপড়াইয়া পড়ে। তার ছিঁড়িয়া বৃক্ষটি চলন্ত ট্রামের চালকের কেবিনের উপর গিয়া পড়ে। গাছটি পড়িবার সঙ্গে সঙ্গে ট্রামের ভিতর যাত্রীগণ আতঙ্কে চীত্কার করিয়া ওঠেন। স্থানীয় লোকেরা তাঁহাদের সাহায্যার্থে ছুটিয়া আসেন। ত্পর কর্মীরা গাছটি অপসারণের ব্যবস্থা করেন। পথচারীদের মধ্যে কয়েকজন আহত হন। জানা যায়, নিখিল রায় ও ফজলুল হককে নীলরতন সরকার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঐ লাইনে ঘণ্টাখানেক ট্রাম চলাচলও বন্ধ থাকে। পুলিসী সূত্র হইতে জানা যায় যে, ইন্টালী শীল লেন এবং গোরাচাঁদ রোডে উত্পাটিত ২টি বৃক্ষ বৈদ্যুতিক তারের উপর পড়ে। এই জন্য এই দুইটি এলাকায় বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার ফলে কিছুক্ষণের জন্য নিষ্প্রদীপ অবস্থার সৃষ্টি হয়। ব্যারাকপুর এলাকার কতকগুলি উদ্বাস্তু কলোনীতে অনেক কুটিরের চালা উড়িয়া যায়।

এক হাজার নতুন ট্যাক্সী!
কোথায় স্ট্যান্ড হবে হলতে পারেন?
• কলিকাতায় ট্যাক্সির সংখ্যা সরকার কর্তৃক বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত: রাজ্য সরকার কলিকাতায় ট্যাক্সির সংখ্যা বৃদ্ধি করিবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছেন। বোম্বাই এবং মাদ্রাজের তুলনায় কলিকাতায় ট্যাক্সির সংখ্যা খুবই কম। মাদ্রাজে প্রায় ৫০০০ এবং বোম্বাইতে প্রায় ৭০০০ ট্যাক্সি আছে। কলিকাতায় ট্যাক্সির সংখ্যা ২ হাজারের সামান্য কিছু বেশী হইবে। রাজ্য সরকার তাই কলিকাতায় ট্যাক্সির সংখ্যা বৃদ্ধি করিতে বদ্ধপরিকর হইয়াছেন এবং অবিলম্বে আরও এক হাজার ট্যাক্সির পারমিট দিবেন বলিয়া মনে করেন, এই শহরে ট্যাক্সির ‘‘দুর্ভিক্ষ’’ দূর করিবার একমাত্র উপায় হইতেছে ট্যাক্সির সংখ্যা বৃদ্ধি করা। আগামী কয়েক বত্সরে কলিকাতায় যাহাতে অন্তত ৫০০০ ট্যাক্সি বিচরণ করিতে পারে, রাজ্য সরকারের পরিবহণ মন্ত্রণালয় সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকিবেন। রাজ্য সরকারের জনৈক মুখপাত্রের সহিত সোমবার কলিকাতার সরকারী দপ্তরে আলোচনা করিবার পর আমাদের তিনটি ধারণা হইয়াছে। যথা—
(১) ট্যাক্সির পারমিট দিবার ব্যাপারে সমবায় সমিতিগুলিকে অগ্রাধিকার দিলেও সরকার আবেদনকারীদিগকে ব্যক্তিগতভাবে ট্যাক্সির পারমিট দিবার ব্যাপারে উদার নীতি অবলম্বন করিবেন। (স্বর্গত মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ রায় কলিকাতার ট্যাক্সি বাঙ্গালীদের হাতে রাখিবার জন্য সমবায়ের ভিত্তিতে গঠিত সংস্থা ছাড়া ব্যক্তি বিশেষকে ট্যাক্সির পারমিট দিবার ব্যবস্থা রহিত করিয়াছিলেন)।
(২) ট্যাক্সি চলাচলের এলাকা সম্প্রসারিত করা হইবে এবং
(৩) ট্যাক্সির ভাড়া বৃদ্ধি পাইবে। শুধু যে নূতন ট্যাক্সির জন্যই পারমিট দেওয়া হইবে, তাহা নহে, পুরাতন ট্যাক্সি সচল অবস্থায় যিনি হাজির করিবেন তাঁহাকেও আঞ্চলিক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ ট্যাক্সির পারমিট দিবেন বলিয়া স্থির করিয়াছেন।

শনিবার, ৩০ চৈত্র, ১৩৬৯, SATURDAY, APRIL 12, 1963
• নাট্যসাহিত্যকে দলীয় রাজনীতির বিপদ হইতে মুক্ত রাখা প্রয়োজন: শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বরূপা থিয়েটার প্রাঙ্গণে পঞ্চম বর্ষ বঙ্গ নাট্য-সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতিরূপে শ্রীপ্রমথনাথ বিশী তাঁহার ভাষণে নাট্য-সাহিত্যকে দলীয় রাজনীতির বিপদ হইতে মুক্ত রাখিবার প্রয়োজনীয়তা বিবৃত করেন। এইদিন সম্মেলনের চারদিনব্যাপী অধিবেশনের উদ্বোধন হয়। নবনাট্য আন্দোলনের কয়েকটি বিপদের উল্লেখ করিতে গিয়া শ্রী বিশী বলেন, নবনাট্য আন্দোলনে ঐরূপ প্রবণতা দেখা দিয়াছে। দলীয় রাজনীতির প্রচার যখন নাটকের মুখ্য উদ্দেশ্য হইয়া দাঁড়ায়, তখন উহা মূল উদ্দেশ্য হইতে বিচ্যুত হয়। অনেক সময় উহা জাতির কল্যাণবিরোধী হইয়া পড়ে। শ্রী বিশী আরও বলেন যে, যাত্রা নষ্ট হইয়াছে। থিয়েটারের নকল করিতে গিয়া এবং থিয়েটার নষ্ট হইয়াছে সিনেমার নকল করিতে গিয়া। পাড়ায় পাড়ায় নাটক অভিনয়েরও বিপদ আছে। ইহাতে নাটক স্থানীয় আবেদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ হইয়া পড়িতে পারে এবং ফলে উহাতে বৃহত্ সমাজের সুখদুঃখের সামগ্রিক আবেদনের অভাব ঘটিতে পারে। ক্ষুদ্র গোষ্ঠীকে নাটক সৃষ্টি ও অভিনয়ের ক্ষেত্ররূপে গ্রহণ করা উচিত হইবে না।

সোমবার, ১ বৈশাখ, ১৩৭০ (২৫ চৈত্র ১৮৮৪ শকাব্দ) MONDAY, APRIL 15, 1963
• নির্ভীক সাংবাদিক স্বর্গত প্রফুল্লকুমার সরকারের স্মৃতি তর্পণ: নির্ভীক সাংবাদিক ও পরম বৈষ্ণব স্বর্গত প্রফুল্লকুমার সরকারের ১৯তম তিরোভাব গিবস উপলক্ষে রবিবার কলিকাতার বিভিন্ন স্থানে যে স্মৃতিবাসরের অনুষ্ঠান হয়, তাহাতে বিভিন্ন বক্তা এই মত প্রকাশ করেন, প্রফুল্লকুমারের সম্পাদনায় আনন্দবাজার পত্রিকা নির্ভীক সাংবাদিকতার যে উজ্জ্বল আদর্শ প্রতীষ্ঠা করিয়াছিল, সেই মহান ঐতিহ্য উক্ত পত্রিকা আজও বহন করিয়া চলিয়াছে। রাজরোষ, নির্যাতন, প্রলোভন উপেক্ষা করিয়া আনন্দবাজার পত্রিকা আজও সাংবাদিক সততা ও নিষ্ঠা দৃঢ়ভাবে বজায় রাখিয়া প্রফুল্লকুমারের আদর্শ ম্লান হইতে দেয় নাই। চীনা আক্রমণের প্রতিরোধ আনন্দবাজার পত্রিকা অক্লান্ত সৈনিকের ন্যায় অগ্রণী হইয়া দেশবাসীকে সচেতন করিবার যে মহান দায়িত্ব গ্রহণ করিয়াছে, বিভিন্ন বক্তা তাহার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
রবিবার আনন্দবাজার পত্রিকা ভবনে শ্রীযুক্ত তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতীষ্ঠাতা
সম্পাদক স্বর্গত প্রফুল্ল কুমার সরকার মহাশয়ের মৃত্যুবার্ষিকী সভায় সভাপতিত্ব করেন।— আনন্দ চিত্র।
আনন্দবাজার ভবনের অনুষ্ঠানে সভাপতি অগ্রগণ্য সাহিত্যাক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আজিকার চরম জাতীয় সংকটের মুহূর্তে চীনা আক্রমণের বিরুদ্ধে আনন্দবাজারের সংগ্রামী ভূমিকা পুরাতন দিনের কথাই মনে করাইয়া দিয়াছে। আজিকার আনন্দবাজার যেন চীনা আক্রমণ প্রতিরোধে দেশ রক্ষায় দৃঢ়তম দুর্গ হইয়া দাঁড়াইয়া আছে। এইদিন আনন্দমোহন হরিসভা, সিঁথি বৈষ্ণব সম্মিলনী, ২৪ পরগনা সাংবাদিক সংঘ, পাইকপাড়া সুপ্রভাত সংঘ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রফুল্ল সরকারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

বুধবার, ৩ বৈশাখ, ১৩৭০ (২৭ চৈত্র ১৮৮৪ শকাব্দ) WEDNESDAY, APRIL 17, 1963
—কলেরা হবে না তো?
• বসন্তর পর কলিকাতায় কলেরাও মহামারীরূপে ঘোষিত: বসন্ত মহামারীর উপর আবার কলেরাও কলিকাতায় মহামারীরূপে ঘোষিত হইয়াছে। মঙ্গলবার কলিকাতা কর্পোরেশনের হেলথ অফিসার মহানগরীতে কলেরা মহামারীরূপে ঘোষণা করিয়াছেন। পর পর দুই সপ্তাহ ত্রিশজনের অধিক লোক কলেরায় মারা গেলে পৌর বিধি অনুযায়ী এইরূপ ঘোষণা করা হয়। গত ১৩ই এপ্রিল যে সপ্তাহ শেষ হইয়াছে সেই সপ্তাহে কলিকাতায় মোট ১৫১জন কলেরা রোগাক্রান্ত হয় এবং ঐ সময়ে ৫৬জন এই রোগে মারা যায়। ইহাক আগের সপ্তাহে অর্থাত্ ৬ই এপ্রিল যে সপ্তাহ শেষ হইয়াছে সেই সপ্তাহে ৮৮জন কলেরা রোগাক্রান্ত হয় এবং ঐ সময়ের মধ্যে ৫৭জন মারা যায়। গত বছর উল্লিখিত দুইটি সপ্তাহে কলেরা রোগে যথাক্রমে ১৯ ও ১৬জন আক্রান্ত হয় এবং ঐ রোগে মৃত্যুর সংখ্যা যথাক্রমে ৬ ও শূন্য। ১৩ই এপ্রিল যে সপ্তাহ শেষ হইয়াছে সেই সপ্তাহে ৪৯জন বসন্ত রোগাক্রান্ত হয় এবং ঐ সময়ের মধ্যে ৪৫জন এই রোগে মারা যায়। ইহার আগের সপ্তাহে (৬-৪-৬৩) ৪৮জন বসন্ত রোগাক্রান্ত হয় এবং ঐ সময়ের মধ্যে ৫০ জন মারা যায়।

বৃহস্পতিবার, ৪ বৈশাখ, ১৩৭০ (২৮ চৈত্র ১৮৮৪ শকাব্দ) THURSDAY, APRIL 18, 1963
• মাছের দর বাঁধিবার প্রশ্ন: কলিকাতার বাজারে মাছের দর অস্বাভাবিকভাবে বাড়িবার ঝোঁক বজায় থাকিলে মত্স্য-দপ্তর কড়াকড়ি ব্যবস্থা লইতে দ্বিধা করিবেন না বলিয়া বুধবার এক সরকারি মুখপাত্র মন্তব্য করেন। ‘কড়াকড়ি ব্যবস্থা’ কি হইবে তাহা পরিষ্কারভাবে জানা না গেলেও ইহা অনুমান করা চলে যে, মাছের দর বাঁধিয়া দিবার প্রশ্নও সরকারী মহলে উঠিয়াছে। তবে মাছের দর যদি বাঁধিয়া দেওয়া হয়, তাহা হইলে মাছ লইয়াও কালো-বাজারী সুরু হইবে এমন আশঙ্কা আছে। যাহা হোক, ঐ সরকারী মুখপাত্রের মত অনুসারে
(১) সম্প্রতি বাজারে মাছের দর আবার যে চড়িয়াছে তাহা সাময়িক,
(২) গত বছর এই সময়ের তুলনায় কলিকাতায় মাছের দর এবার কম আছে এবং
(৩) সরবরাহও বেশী আছে। তিনি বলেন, মাছের আড়তদারগণ যথারীতি ‘রিটার্ন’ পেশ করিতেছেন। খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে ৫০জনকে দুই এক দিনের মধ্যেই নিয়মিতভাবে উহা পেশ না করাপ কারণ দর্শাইতে বলা হইয়াছে।

শুক্রবার, ৫ বৈশাখ, ১৩৭০ (২৯ চৈত্র ১৮৮৪ শকাব্দ) THURSDAY, APRIL 19, 1963
• খাল সংস্কার না হওয়ার জের, উল্টাডাঙ্গা এলাকায় কলেরার প্রকোপ: উল্টাডাঙ্গা খালটির সংস্কার না হওয়ার দরুন উহার পার্শ্ববর্তী এলাকায় কলেরা রোগের প্রকোপ অত্যন্ত বৃদ্ধি পাইয়াছে বলিয়া ওয়াকিবহাল মহল মনে করেন। কারণ ঐ সকল এলাকায় অপরিস্রুত জল সরবরাহ না হওয়ার দরুন স্থানীয় নাগরিকগণ ঐ খালের জলই ব্যবহার করিয়া থাকেন। অভিযোগে প্রকাশ, বহুবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা সত্ত্বেও ঐ খালটির সংস্কারের ব্যাপারে রাজ্য সেচ দপ্তর আজ পর্যন্ত কোনও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নাই। খালটি কচুরিপানায় প্রায় ভরাট হইয়া গিয়াছে। ইহার উপর মশা-মাছির সুন্দর আবাসক্ষেত্র রচিত হইয়াছে। এই খালটির পার্শ্ববর্তী এলাকা অর্থাত্ উল্টাডাঙ্গা, নারকেলডাঙ্গা, বেলেঘাটা, মাণিকতলা প্রভৃতি অঞ্চলে কলেরার প্রকোপ সর্বাধিক। কর্পোরেশনের পূর্বেকার স্ট্যান্ডিং ওয়াটার সাপ্লাই কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান শ্রীঅনিল মৈত্র আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিনিধিকে জানান যে,ঐ খালটির লকগেট চালু করা একান্ত প্রয়োজন। বড়বাজার এলাকার কাউন্সিলার শ্রীমতী সাবিত্রী দেবী চন্দক অভিযোগ করেন যে, তাঁহার ওয়ার্ডে (২৫ নম্বর) ২৫টি খাটাল আছে। এই সকল খাটাল রোগ জীবাণু ছড়াইতে যথেষ্ট সাহায্য করে। তিনি বলেন যে এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত কোনও ফল হয় নাই। ইহা ছাড়া সমগ্র মহানগরীতে অপরিস্রুত জল সরবরাহ বন্ধ করিয়া উহার স্থলে পরিস্রুত জল সরবরাহ করিবার জন্য রাজ্য সরকার নিযুক্ত তালুকদার কমিটি সুপারিশও করিয়াছেন। কিন্তু আপাতত উহা বাস্তবে রূপায়িত হইবার কোনও সম্ভাবনা নাই বলিয়া সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন।

শনিবার, ৬ বৈশাখ, ১৩৭০ (৩০ চৈত্র ১৮৮৪ শকাব্দ) SATURDAY, APRIL 20, 1963
• কলকাতায় আবার গোলাম আলির গান: খবরের কাগজের ঘোষণা ছিলঃ মহাজাতি সদনে ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খাঁর অনুষ্ঠান বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। ভারত-বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ দীর্ঘকাল রোগ ভোগের পর গাইছেন পূর্ব কলিকাতা সাংস্কৃতিক সম্মেলনের সপ্তম বার্ষিক অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অধিবেশনে। রোগ তাঁকে শয্যাশায়ী করেছিল তাই দীর্ঘকাল ওস্তাদজীর কণ্ঠ শোনা যায় নি। আজ তিনি রোগমুক্ত। অধীর আগ্রহ ও আশা নিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলাম। আশার পাশে যেন আশঙ্কাও ছিল। কী জানি যদি নিষ্ঠুর রোগ ওস্তাদজীর অবিস্মরণীয় কণ্ঠে আঘাত হেনে থাকে। যথা সময়ে তিনি এলেন—ভারতীয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত জগতের সেই দিকপাল। শ্রোতৃবর্গ উল্লসিত। কয়েক শত শ্রোতার হর্ষধ্বনি তাঁকে অভিনন্দন জানালো। নিঃশব্দ প্রেক্ষাগৃহ। খাঁ সাহেব অনুষ্ঠান শুরু করলেন। রাগ ইমন। সেই কণ্ঠ। সুরের সেই ইন্দ্রজালের রচনা, তাল-লয়ের সেই লীলা। আর কোন সংশয় থাকলো না—সত্যিই আজও তিনি অননুকরণীয়-অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খাঁ আজও ভারতীয় মার্গ সঙ্গীত জগতের উজ্জ্বল তারকা। কালের কুটিল আঘাতে শরীর আক্রান্ত, তাই তারকার দ্যুতি হয়তো কিছুটা ম্লান।


নববর্ষ দিবস। কালী মন্দিরে নূতন খাতা মহরত্ উপলক্ষে দোকনদারদের ভিড়।— আনন্দ চিত্র।

আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এই সকল সংবাদের বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত।
 
 


 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.