দিন আসে, দিন যায়, তার ফাঁকেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ে তার চলাচলের খবর। পুরনো দিনের শহুরে খবর দিয়ে চেনা যায় এখনকার
অতি পরিচিত শহরের অতীতটাকে, তার নাগরিক জীবনযাপন থেকে খেলাধুলো, সংস্কৃতি বা কূটকচালি থেকে রাজনীতির হাল।
পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতা শহরের গতিবিধি চিনতে ২১ মে ১৯৬২ থেকে২০ জুন ১৯৬২ এক মাসের কিছু বিশেষ খবর।

কলিকাতা, সোমবার, ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩৬৯ (৩১শে বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ) MONDAY, MAY 21, 1962
• যক্ষ্মারোগীদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণে কর্পোরেশনের প্রচেষ্টা: প্রয়োজনীয় জায়গা ও টাকা থাকা সত্ত্বেও কর্পোরেশনের কর্তৃপক্ষের ঢিলেমির দরুণ প্রায় বার লক্ষ টাকা ব্যয়ে যক্ষ্মারোগীদের জন্য পৃথকীকরণ শিবির হাসপাতাল নির্মানের পরিকল্পনাটির কাজ ব্যাহত হইতেছে বলিয়া জানা যায়। গত ১৯৫৪ সালে কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ঐ ধরনের হাসপাতাল নির্মাণ করিবার জন্য অকটি প্রস্তাব গ্রহণ করেন। এবং ইহার জন্য গড়িয়ার নিকট বোড়ালে ৫১ বিঘা জমিও রাজ্য সরকারের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকার ঐ হাসপাতাল নির্মাণের জন্য আড়াই লক্ষ টাকা দিতে রাজি হইয়াছেন। কিন্তু ইহা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত ঐ হাসপাতাল নির্মাণের কাজে হাত দেওয়া হয় নাই। গত ১৯৬০ সালে বোড়ালের উক্ত ৫১ বিঘা জমি উন্নয়নের জন্য কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ৬১ হাজার টাকা ব্যয় করেন।

• শিয়ালদহ ষ্টেশনে কুলিদের সংঘর্ষে ১১জন আহত: রবিবার বিকালে শিয়ালদহ স্টেশনে লাইসেন্সধারী মালবাহক এবং লাইসেন্সহীন মালবাহকদের মধ্যে এক মারাত্মক সংঘর্ষের ফলে পাঁচজন পুলিস ও একজন মহিলা সহ এগারজন আহত হয়। আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলিয়া জানা যায়। মালবহনের এক্তিয়ার লইয়া লাইসেন্সধারী এবং লাহসেন্সহীন বাহকদের মতবিরোধ সংঘর্ষের কারণ বলিয়া জানা যায়। প্রথমে কথা কাটাকাটি ও ঠেলাঠেলি, তারপর হঠাত্ বড় বড় বাঁশ লইয়া আক্রমণ পরিস্থিতিকে জটিল করিয়া তোলে। এই সংঘর্ষকালে যথেষ্ট ইটপাটকেল ব্যবহৃত হয় বলিয়া জানা যায়। দীর্ঘদিনের বিরোধের পরিণাম এদিন বেলা তিনটে নাগাদ চরমে ওঠা। কলিকাতা পুলিসের সহায়তায় রেল-পুলিস কিছুক্ষণের মধ্যেই অবস্থা আয়ত্তে আনে। ধস্তাধস্তি, লাঠালাঠি এবং পাথর ছোঁড়াছুড়ির অভিযেগে ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। লাইসেন্সহীন বাহকদের অধিকাংশই শিয়ালদহ স্টেশনে বসবাসকারী উদ্বাস্তূ। স্টেশন এলাকা থেকে হইতে নিকটবর্তী কোলে মার্কেটে মালবহনের দাবি লইয়া লাইসেন্সধারীদের সঙ্গে তাহাদের মন-কষাকষির সৃষ্টি হয়। লাইসেন্সহীনদের দাবি –স্টেশন প্ল্যাটফর্মের বাহির হইতে বাজারে মাল লইয়া যাইবে। কিন্তু লাইসেন্সধারীরা প্ল্যাটফর্ম হইতে সোজা বহুবাজার স্ট্রীটের বাজারে মাল বহন করিবার অধিকারী বলিয়া জেদ ধরে। তাহাদের মধ্যে বহুদিন ধরিয়া এই জেদাজেদি এবং মনকষাকষি ধিকিধিকি বাড়িতে থাকে। এবং রবিবার ঐ ব্যাপারে সামান্য বিরোধকে কেন্দ্র করিয়া গুরুতর সংধর্ষ বাধিয়ে যায়।

কলিকাতা, মঙ্গলবার, ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩৬৯ (১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৪ শকাব্দ) TUESDAY, MAY 22, 1962
• একদিনেই দেড়শত বিল্ডিং প্ল্যান পাশ: কলিকাতা কর্পোরেশনের স্ট্যান্ডিং বিল্ডিং কমিটির সোমবারের সভার শেষভাগে একটা গোলমালের ঘটনায় ঐ দিন কর্পোরেশনে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। প্রকাশ, বিগত বিল্ডিং কমিটি বর্ষশেষের বিদায়ী সভায় একদিনেই প্রায় দেড়শত বিলডিং প্ল্যান বা বিলডিং সংক্রান্ত বিষয় মঞ্জুর করেন। কর্পোরেশনের বিরোধী দল ইউ সি সির সেক্রেটারী শ্রীসমর রুদ্র ঐ সব বিলডিং প্ল্যানের অনেকগুলি অননুমোদিত বলিয়া অভিযোগ করেন এবং ঐদিনকার সমস্ত মঞ্জুরই বাতিল করিয়া দিবার জন্য এক জরুরী প্রস্তাব পেশ করেন। সোমবার নব-গঠিত বিলডিং কমিটির সভায় শ্রীরুদ্রের ঐ জরুরী প্রস্তাব বাতিল হইয়া যায়। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, গতবারের মত এবারও বিলডিং কমিটিতে ইউ সি সি দলের সদস্যগণ নাই। এই দিন শ্রীরুদ্রের উক্ত প্রস্তাবটি বাতিলের সংবাদ পাইয়া বিরোধীদলের কয়েকজন সদস্য বিলডিং কমিটির সভায় ঢুকিয়া পড়েন। এবং সভায় চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করিয়া বলিতে সুরু করেন যে, কমিটের কোন সদস্যের নিকট হইতে এ ব্যাপারে কোন আপত্তি পাওয়া যায় নাই। সুতরাং তাঁহার ঐ প্রস্তাবটি বাতিল করা হইয়াছে। অতঃপর শ্রীরুদ্র ও বিরোধীদলের অন্যান্য সদস্যগণ কমিটির সভাকক্ষ হইতে বাহির হইয়া আসেন।

• কলিকাতা বন্দরের মেরিন সার্ভিস পুনর্গঠনের প্রশ্ন: নয়াদিল্লি, ২১শে মে—জাহাজ চলাচল দপ্তরের মন্ত্রী শ্রীরাজবাহাদুর আজ লোকসভার বলেন যে, ভারত সরকার পোর্ট কমিশনারদের সহিত পরামর্শক্রমে কলিকাতা বন্দরের মেরিন সার্ভিসের পুনর্গঠনের প্রশ্ন বিবেচনা করিয়া দেখিবেন। কলিকাতা বন্দরের মেরিন সার্ভিসের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ও যথাযথ সংযোগ স্থাপনের জন্য এই ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত করা হইয়াছে। শ্রীরাজবাহাদুর বলেন, কলিকাতা বন্দর মেরিন সার্ভিস পুনর্গঠনের বিষয়টি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত পাইলট সার্ভিস কলিকাতা পোর্ট কমিশনারদের চেয়ারম্যানের প্রত্যক্ষ পরিচালনাধীনে থাকিবে। তিনি বলেন, কয়েকদিন পূর্বে হুগলী পাইলটদের প্রতিনিধিরা তাঁহাদের দাবিদাওয়া সম্পর্কে আলোচনার জন্য তাঁহার সহিত সাক্ষাত্ করেন।

• পরলোকে শ্রীঅমূল্য চন্দ্র সেনগুপ্ত: বিশিষ্ট সাংবাদিক ও প্রখ্যাত বিপ্লবী শ্রীঅমূল্যচন্দ্র সেনগুপ্ত সোমবার সকালে ভুপেন বসু এভেনিউস্থিত নার্সিং হোমে পরলোকগমন করেন। তিনি কিছুদিন ধরিয়া রোগভোগ করিতেছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁহার বয়স প্রায় ৭২ বত্সর হইয়াছিল। ঐদিন নিমতলা শ্মশানে স্বর্গত সেনগুপ্তের অন্ত্যেস্টিক্তিয়া সম্পন্ন হয়। তাঁহার জ্যেষ্ঠপুত্র শ্রীনিরঞ্জন সেনগুপ্ত মুখাগ্নি করেন। মৃত্যুর খবর পাইয়া শেষ শ্রদ্ধা-নিবেদনের উদ্দেশ্যে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি পরলোকগতের বাড়ী অথবা শ্মশানঘাটে উপস্থিত হন। আনন্দবাজার পত্রিকা, দেশ ও হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড, যুগান্তর, ভারতীয় বার্তাজীবী সঙ্ঘ, প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো, ইউ এস আই এস প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান এবং বহু ব্যক্তির পক্ষ হইতে শবাধারে মাল্যার্ঘ অর্পিত হয়।

কলিকাতা, বুধবার, ৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩৬৯ (২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৪ শকাব্দ) WEDNESDAY, MAY 23, 1962
• শিয়ালদহ স্টেশনে ইঞ্জিনের সঙ্ঘর্ষ... বিস্তারিত
• মত্স্যসঙ্কট নিরসনে সরকারের চরম ব্যর্থতা:
মাছের দর ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে চলিয়া যাওয়ায় এবং সরকার মত্স্য সংকট নিরসনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দেওয়ায় এবার নাগরিকরাই আগাইয়া আসিয়াছেন। মধ্য কলিকাতার নাগরিকদের পক্ষ হইতে মঙ্গলবার কলেজ ষ্ট্রীট মার্কেটে মত্স্যমুল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে মৌন বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। বিক্ষোভকারীরা একটি কথাও বলেন নাই। তাঁহাদের বক্তব্য পোস্টারে পোস্টারে ছড়াইয়া দিল। বিভিন্ন পোস্টারে প্রতিটি সাধারণ বাঙ্গালীর মনের কথা প্রতিফলিত হইয়াছিল। লেখা ছিল:
(১) ‘‘মাছে ভাতে বাঙ্গালী, তা নিয়ে মুনাফাবাজী বন্ধ করা চাই,’’
(২) ‘‘খাওয়াপরার জিনিষের দামের নিয়ন্ত্রণে সরকারী দৃঢ়তা আমাদের দাবী,’’
(৩) ‘‘মুনাফাবাজদের শিকার না হয়ে মাছ কেনা কিছুদিনের জন্য বন্ধ রাখুন,’’ এবং
(৪) ‘‘কম আমদানীর নামে ঠান্ডা ঘরের কারচুপি বন্ধ করা চাই।’’ প্রকাশ, এই বিক্ষোভ একদিনেই শেষ হইবে না। উদ্যোক্তারা জানান, একদিন অন্তর তাঁহারা এইভাবে মৌন বিক্ষোভ প্রদর্শন করিয়া যাইবেন। যতদিন না মাছের দাম সাধারণ লোকের ক্রয় ক্ষমতার আয়ত্বে আসে। পোস্টারের লেখা পড়িবার জন্য প্রচুর ভীড় জমিয়া যায় এবং জনসাধারণের মধ্য হইতে বিক্ষোভে সাড়া পড়ে।

• লাঠি চালনায় ও কাঁদুনে গ্যাস প্রয়োগে ৬০ জন ছাত্র আহত: এম বি বি এস পরীক্ষার তারিখ পিছাইয়া দেওয়ার দাবিতে বহুসংখ্যক মেডিক্যাল ছাত্র মঙ্গলবার কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শ্রীসুরজিত্চন্দ্র লাহিড়ীকে দ্বারভাঙ্গা ভবনে তাঁহার কক্ষে দীর্ঘ ছয় ঘন্টাকাল ঘেরাও করিয়া রাখে। উহার শেষ দিকে রাত্রি দশটা নাগাদ উপাচার্যকে পুলিস উদ্ধার করিতে গেলে যে গোলমালের সৃষ্টি হয়, তাহাতে পুলিস লাঠিচার্জ করে ও কাঁদুনে গ্যাস ছাড়ে। ফলে প্রায় ৬০ জন ছাত্র আহত হয়। তন্মধ্যে ৬-৭ জনের আঘাত গুরুতর বলিয়া জানা যায়।


কলিকাতা, বৃহস্পতিবার, ১০ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩৬৯ (৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৪ শকাব্দ) THURSDAY, MAY 24, 1962
• এম বি বি এস পরীক্ষা গ্রহণ বাতিল: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শ্রীসুরজিত্চন্দ্র লাহিড়ী বুধবার এক বিজ্ঞপ্তি মারফত জানাইয়াছেন যে, আগামী ২৯শে মে হইতে প্রথম ও চূড়ান্ত এম বি বি এস পরীক্ষা গ্রহণের যে কথা ছিল, তাহা বর্তমান জরুরী অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাতিল করিয়া দেওয়া হইয়াছে। এদিকে মেডিক্যাল ছাত্রদের পক্ষ হইতে মঙ্গলবারের ঘটনার প্রতিবাদে এবং তাঁহার দাবিগুলির ভিত্তিতে বুধবার এক ছাত্র সভা আহ্বান ও বিক্ষোভ মিছিল বাহির করা হয়। ইহা ছাড়া মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীরা ঐদিন ধর্মঘট করেন বলিয়াও তাঁহাদের পক্ষ হইতে জানানো হয়। পরীক্ষা ‘বাতিল’ এই শব্দের তাত্পর্য জানিতে চাহিলে ঐদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, এইবারের অর্থাত্ মে মাসে যে এম বি বি এস পরীক্ষা গ্রহণের কথা ছিল তাহা বাতিল করিয়া দেওয়া হইয়াছে। আবার ছয় মাস বাদে নভেম্বরে মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীরা ঐ পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাইবেন। কিন্তু পরীক্ষাসমূহের কন্ট্রোলার শ্রীঅরুণ রায় আমাদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে, উপাচার্যের বিজ্ঞপ্তিতে শুধু ‘বাতিল’ শব্দটিই ব্যবহার করা হইয়াছে। নভেম্বর মাসের পূর্বেই এই পরীক্ষা আবার গৃহীত হইবে কিনা সেই সম্পর্কে তিনি আপাতত কিছু বলিতে পারিতেছেন না।

মত্স্য-মূল্য হ্রাসের দাওয়াই আবিষ্কার: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মত্স্য দপ্তর এক্ষণে নাকি আবিষ্কার করিয়াছেন যে, মাছের খুচরা ব্যবসায়ীদের আসহযোগিতাপূর্ণ মনোভাবেই মত্স্য সংকট নিরসনে সরকারী প্রচেষ্টা বর্তমানে বহুলাংশে ব্যাহত হইতেছে। মত্স্য দপ্তরের জনৈক মুখপাত্র বুধপার জানান যে, ইতিমধ্যে সরকার যে সব ব্যবস্থা অবলম্বন করিয়াছেন তাহার ফলে কলিকাতার বাজারে মাছের পাইকারী দাম গত তিনদিনে মণ প্রতি ১৫ টাকা হইতে ২০ টাকা কমিয়াছে। কিন্তু খুচরা বাজারে উহার কোন প্রতিফলন হয় নাই, খুচরা দামের কোন পরিবর্তন হয় নাই। তবে উক্ত মুখপাত্র দাবি করেন যে, ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজার এবং গড়িয়াহাট বাজারে মাছের খুচরা দাম সামান্য কমিয়াছে।

• ৭২ ইঞ্চি জলের পাইপ বসাইতে গ্রীম কাবার: সর্বশেষে নির্দিষ্ট তারিখ অনুযায়ী আগামী জুন মাসের মধ্যেই ৭২ ইঞ্চি টালা-পলতা জলের পাইপ বসানোর কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু বুধবার কর্পোরেশনের মেয়র শ্রীরাজেন্দ্রনাথ মজুমদার এক সাক্ষাত্কারে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিনিধিকে জানান যে, আগামী অক্টোবর মাসের পূর্বে ৭২ ইঞ্চি টালা পলতা পাইপ বসানোর কাজ সম্পূর্ণ হইবে না। এইদিন বিকালে মেয়র শ্রীমজুমদার কর্পোরেশনে এক নাগরিক প্রতিনিধিদলের সহিত মহানগরীর বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করেন। ঐ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব করেন শ্রীনিরঞ্জন সেন এম এল এ এবং সংযুক্ত নাগরিক সমিতির পক্ষে শ্রীবীরেন রায়। প্রতিনিধিদল শহরের পানীয় জল সরবরাহ, আবর্জনা পরিষ্কার এবং ভূগর্ভস্থ পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা চালু রাখা সম্পর্কে মেয়রের সহিত দীর্ঘ একঘন্টাকাল আলোচনা করেন।

কলিকাতা, শুক্রবার, ১১ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩৬৯ (৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৪ শকাব্দ) FRIDAY, MAY 25, 1962
ময়দানের মহীরুহ একে একে কাটিয়া সাফ: কলিকাতা ময়দানে এখন গেলেই দেখা যাইবে এখানে-সেখানে মেহগনি আর শিরিষ গাছগুলি একে একে কাটিয়া ফেলা হইতেছে। বৃহস্পতিবার পার্ক স্ট্রীটের মোড়ে ময়দানের উত্তর-পূর্ব কোণের বহু পরিচিত সুবিশাল মেহগনি গাছটা কাটা হইতেছে দেখিয়া সকলেই দুঃখিত হইয়াছেন। ময়দান দিয়া চলিতে চলিতে গ্রীষ্মের খরতাপে এই গাছের ছায়াতলে দাঁড়ান নাই, এমন লোক বোধহয় কেউ নাই। ময়দানে গাছ কাটিয়া ফেলার জন্য নাকি মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধানচন্দ্র রায় বিরক্ত হইয়াছেন। প্রকাশ, এ-সম্পর্কে তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিকট বিস্তারিত রিপোর্ট চাহিয়া পাঠাইয়াছেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুসারে ময়দানের ক্যাজুরিনা গাছগুলি কাটিয়া ফেলা হইতেছে বলিয়া জানা যায়। বিষাক্ত ছত্রাক রোগ প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যেই নাকি এই ব্যবস্থা করা হইতেছে। অনেক সময় আবার পুরানো গাছ কাটিয়া ফেলিয়া নূতন গাছের বাড়-বাড়ন্তের সুযোগ করিয়া দেওয়া হয়।

বিপ্লবী মহানায়ক রাসবিহারী বসু ৭৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠান: বিপ্লবী মহানায়ক রাসবিহারী বসুর ৭৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ শুক্রবার(২৫শে মে) বৈকাল ৫টায় শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেনের নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ বাগ হইতে এক শোভাযাত্রা বাহির হইয়া মহাজাতি সদনে গিয়া শেষ হইবে। সন্ধ্যা ৬টায় তথায় এক জনসভা হইবে। উড়িষ্যার কংগ্রেসনেতা শ্রীরাধানাথ রথ সভাপতিত্ব করিবেন। শ্রীসিদ্ধেশ্বর মুখোপাধ্যায়, শ্রীসত্যেশ্বর মুখোপাধ্যায় প্রমুখ শিল্পিগণ ভজন ও স্বদেশী সঙ্গীত পরিবেশন করিবেন। রাসবিহারী বসু স্মারক সমিতি জনসাধারনকে অনুষ্ঠানে যোগদান করার জন্য আহ্বান জানাইতেছেন।

আইন কলেজের নূতন ভবন: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কলেজটি অদূর ভবিষ্যতে দ্বারভাঙ্গা ভবন হইতে স্থানান্তরিত করা হইবে। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ঐ কলেজের জন্য দক্ষিণ কলিকাতার হাজরা রোডে নূতন ভবন নির্মানের সিদ্ধান্ত করিয়াছেন। আইন কলেজের ভবন নির্মাণের জন্য সেখানে প্রায় দুই বিঘা জমি নির্দিষ্ট হইয়াছে বলিয়া জানা যায়। ইতিমধ্যেই নাকি প্রস্তাবিত ভবনের ‘প্ল্যান’ তৈরীর প্রাথমিক কাজকর্ম সুরু হইয়াছে। ১৯০৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কলেজটি স্থাপিত হইয়াছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত উহার নিজেস্ব কোন ভবন নাই। প্রায় ৫৪ বত্সর পর হাজরা রোডে নিজেস্ব ভবনে উহা স্থানান্তরের পরিকল্পনা হইয়াছে।

রামকৃষ্ণ সারদা মিশন মাতৃভবন
বৃহস্পতিবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় দক্ষিণ কলিকাতায় রামকৃষ্ণ সারদা মিশন মাতৃভবন-এর নূতন ব্লকের দ্বারোদ্ঘাটন করেন। মুখ্যমন্ত্রী
জনগণকে প্রকৃত সেবার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হইতে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, সেবার প্রধান অঙ্গ ভালবাসা। কিছু দান করিতেছি এই মনোভাব
লইয়া সেবা করিলে সেই সেবা মূল্যহীন হইয়া পড়ে। ডাঃ রায় তাঁহার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা হইতে বলেন, সেবার ইচ্ছে থাকিলে কোনদিনই অর্থাভাব
হয় না—জনসাধারণ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হইয়া সাহায্য করিয়া থাকে। নূতন ব্লকে চব্বিশটি শয্যার ব্যবস্থা হইয়াছে। এগুলি ধরয়া মাতৃভবনে শয্যার
সংখ্যা বর্তমানে পঞ্চাশে দাঁড়াইল। প্রায় বার বত্সর পূর্বে কালীঘাট অঞ্চলের শ্রীমোহন লেনে মাত্র দশটি শয্যা লইয়া আমাতৃভবন প্রতিষ্ঠিত
হয়। দ্বারোদ্ঘাটন অনুষ্ঠানে ঐ মাতৃভবনের পরিচালকমণ্ডলীর সভাপতি বিচারপতি শ্রীরেণুপদ মুখার্জি বলেন, এই প্রতিষ্ঠান কাজকর্মে
জনসাধারণ সন্তুষ্ট। কারণ, প্রতিষ্ঠানটির সহিত যাঁহারা সংশ্লিষ্ট তাঁহাদের সেবা ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য নাই। ফটো: আনন্দবাজার

কলিকাতা, শনিবার, ১২ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩৬৯ (৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৪ শকাব্দ) SATURDAY, MAY 26, 1962
কলিকাতা হইতে কয়লা পরিবহণ: ভারত সরকরে কয়লা পরিবহনের জন্য উপকূলীয় বাণিজ্যে লিপ্ত হইবার সঙ্কল্প করার পর রাষ্ট্রীয় মালিকানার পরিচালিত শিপিং কর্পোরেশন সম্প্রতি হুগলী নদীতে চলাচলের উপযোগী কয়েকটি বিশেষ ধরণের জাহাজ তৈয়ারির অনুমতি চাহিয়াছেন। কেন্দ্রীয় পরিবহন ও যোগাযোগ মন্ত্রী শ্রীজগজীবন রায় ও জাহাজ চলাচল বিষয়ক মন্ত্রী শ্রীরাজ বাহাদুর উভয়েই সম্প্রতি লোকসভায় বলেন যে, উপকূলীয় বাণিজ্য পূর্বে বেসরকারী জাহাজী কোম্পানীগুলির জন্য নির্দিষ্ট ছিল। সরকার বেসরকারী উদ্যোগের পূর্ণ সম্মতিক্রমেই উপকূলীয় বাণিজ্য নিজ হস্তে লইয়াছেন। কলিকাতা হইতে ২০ লক্ষ টন কয়লা পশ্চিম উপকূলে পাঠাইতে হইবে। বেসরকারী কোম্পানীগুলির এই পরিমাণ কয়লা পরিবহনের সঙ্গতি না থাকায় পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক নিযুক্ত কয়লা উত্পাদন ও পরিবহন সংক্রান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপ ও জাতীয় শিপিং বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী এই ব্যবস্থা অবলম্বিত হইয়াছে। শিপিং কর্পোরেশন নূতন উপকূলীয় জাহাজ নির্মাণের যে প্রস্তাব করিয়াছেন, পরিকল্পনা কমিশন তাহা বিবেচনা করিতেছেন। ইতিমধ্যে গবর্ণমেন্ট কয়েকটি উপকূলীয় জাহাজ ক্রয়ের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা মঞ্জুর করিয়াছেন। এই সকল জাহাজে করিয়া কলিকাতা হইতে পশ্চিম উপকূলে কয়লা পাঠান হইবে।

নির্মত্স্য দিবস: অদূর ভবিষ্যতে কলিকাতায় সপ্তাহের একটি দিবস হয়তো ‘মাছহীন দিন’ হিসাবে গণ্য হইবে। শীঘ্র এই ব্যাপারে সরকারী নির্দেশ জারি হইবার সম্ভাবনা আছে। প্রকাশ, শুধু হোটেল রেস্তোরাঁ মেস-বোর্ডিং ও অফিস-ক্যান্টিন প্রভৃতিতেই ঐ নিয়ম চালু করিবার বিষয়ে বিবেচনা হইতেছে। সরকারী মত্স্য দপ্তরের এক মুখপাত্র শুক্রবার বলেন যে, বাঙালীদের তো মত্স্যপ্রীতি আছেই, তাহার উপর এই শহরের অবাঙালী নাগরিকদের অনেকেও সম্প্রতি ‘মছলি-প্রিয়’ হইয়া উঠিয়াছেন। বাড়ীতে না খাইলেও হোটেলে ক্যান্টিনে মাছ খাইতে তাঁহাদের কোন বাধা নেই। ফলে মাছের চাহিদা ক্রমশই বাড়িয়া চলিয়াছে।

কলিকাতা, রবিবার, ১৩ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩৬৯ (৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৪ শকাব্দ) SUNDAY, MAY 27, 1962
টালিগঞ্জ রেলসেতু পুননির্মাণ: টালিগঞ্জ রেলসেতু পুননির্মাণ সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরিয়া টালবাহানার পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় সম্প্রতি রেলকর্তৃপক্ষকে একটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়াছেন বলিয়া জানা গিয়াছে। ঐ বিকল্প প্রস্তাবে নাকি এইরূপ বলা হয় যে, রেল লাইনের দক্ষিণ দিকের জমিতে জবর দখলকারী উদ্বাস্তুরা অবস্থান করিতে থাকায় আপাতত রেল লাইন বসানো স্থগিত রাখিয়া শুধু সেতু উন্নয়নের কাজ টুকুতেই যেন হাত দেওয়া হয়।

ছিটেফোঁটা: সারাদিন অসহ্য গরমের পর শনিবার বিকালে পশ্চিম আকাশে মেঘ দেখিয়া কলিকতায় যে ক্ষীণ আশার সঞ্চার হইয়াছিল, তাহা অচিরেই নিঃশ্বেস হয়। ঘন্টায় ৫০ মাইল বেগে দমকা হাওয়ায় সেই মেঘ উধাও হইয়া যায়। কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি পড়ে তাহার পরিমাণ ছিল ০.১০০। রবিবারের পূর্বাভাস-সন্ধ্যার দিকে ঝড় বৃষ্টির সম্ভাবনা। দিনে তাপমাত্রা তারতম্যের সম্ভাবনা নাই। শনিবারের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭০ (৯৮ ফাঃ) স্বাভাবিক অপেক্ষা ২০ সেঃ বেশী। বায়ুর সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন আর্দ্রতা যথাক্রমে শতকরা ৯০ ও ৩০ ভাগ।

কলিকাতা, বুধবার, ১৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩৬৯ (৯ই জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৪ শকাব্দ) WEDNESDAY, MAY 30, 1962
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট অনুমোদিত: মঙ্গলবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৬২-৬৩ সালের বাজেট বরাদ্দ অনুমোদিত হয়। এই বাজেটে ২২ লক্ষ ৫ হাজার ৬২৪ টাকা ঘাটতি অনুমিত হইয়াছে বলিয়া জানা যায়। বাজেটে আয় ও ব্যয়খাতে যথাক্রমে ১,১২,৮৭,৬৫৩ টাকা এবং ১,৩৪,৯৩,২৭৭ টাকা ধরা হইয়াছে। উহাতে ১৯৬১-৬২ সালের ব্যয়বরাদ্দের সংশোধিত হিসাব পেশ করা হইয়াছে। এই হিসাবে আয় ও ব্যয়খাতে যথাক্রমে ১,০৭,৮৮,১২৬ টাকা ও ১,১৯,৭৬,১০৩ টাকা ধরিয়া ১১ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা ঘাটতি দেখান হইয়াছে। কিন্তু পূর্ব বত্সরের বর্ষণের তহবিল ২৩ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা থাকায় এই ঘাটতি ১১ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা উদ্বৃত্তে দাঁড়াইবে। ফলে ১৯৬২-৬৩ সালের শেষ অর্থাত্ ১৯৬৩ সালের ৩০শে জুন ঘাটতির প্রকৃত পরিমাণ ২২ লক্ষ ৫ হাজার হইতে কমিয়া ১০ লক্ষ ৬০ হাজারের কাছাকাছি দাঁড়াইবে বলিয়া অনুমিত হইয়াছে।

কলিকাতায় স্টেডিয়াম নির্মাণ: কলিকাতা রেসকোর্সের নিকট অ্যালেনবরো গ্রাউন্ডে যে স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রস্তাব হইয়াছে, তাহার কাজ এই বছরের শেষে আরম্ভ হইবে বলিয়া আশা করা যায়। প্রকাশ, উহার অভ্যন্তরে প্রথমে ৭০ হাজার দর্শকের স্থান সঙ্কুলানের ব্যবস্থা থাকিবে এবং পরে বাড়াইয়া ১ লক্ষ দর্শকের জন্য আয়োজন হইবে। উহাতে ক্রিকেট বাদে ফুটবল, হকি ইত্যাদি এবং অন্যান্য খেলাধূলার ব্যবস্থা থাকিবে। আরও প্রকাশ, উহা নির্মাণের জন্য বিশ্ব টেন্ডার আহ্বান করা হইবে। ইতমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ঐখানে প্রায় ৬৬বিঘা জমির দখল লইয়াছেন। স্থপতি ভিওরোলজির নেতৃত্বে যে ইতালীয়ান প্রতিষ্ঠান উহার নক্সাদি প্রস্তুত করিয়াছেন তাঁহারা সম্প্রতি নির্মাণ সংক্রান্ত বিস্তারিত কাগজপত্র কলিকাতায় পাঠাইয়া দিয়াছেন। উহার ভিত্তিতে স্টেডিয়াম তৈয়ারীর যে এলিমেন্ট প্রস্তুত করা হইবে তাহা শঘ্রই সংশ্লিষ্ট বোর্ডের বৈঠকে স্থির হইবে বলিয়া জানা গিয়াছে।

হাওড়া পুলের দক্ষিণে আর একটি সেতু বা ভূগর্ভ পথ নির্মাণ: হাওড়া পুলের দক্ষিণে এক মাইলের মধ্যে গঙ্গার উপর আর একটি সেতু অথবা ভূগর্ভস্থ পথ নির্মাণের যে প্রস্তাব হইয়াছে, উহার সম্ভাব্যতা যাচাই করিয়া দেখিবার জন্য একটি বৃটিশ ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থাকে নিয়োগ করা হইয়াছে। এই সংক্রান্ত কাজ শুরু হইয়া গিয়াছে। এই বত্সরের শেষাশেষি চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রণয়ন করা হইবে বলয়া আশা করা যায়। ঐ অনুসন্ধানের জন্য এগার লক্ষ টাকা ব্যয় হইবে। তাহার মধ্যে ৭ লক্ষ টাকা বিশ্ব ব্যাঙ্ক এবং ৩ লক্ষ টাকা রাজ্য সরকারের নিকট হইতে পাওয়া যাইবে। ঐখানে সেতু হইবে অথবা ‘টানেল’ হইবে তাহা বিশেষজ্ঞরাই স্থির করিবেন। প্রকাশ, সমীক্ষার ফলে জানা গিয়াছে, হাওড়া পুলের উপর দিয়া দৈনিক ৫ লক্ষ ১০ হাজার লোক এবং ৮০ হাজার দ্রুতগামী যানবাহন চলাচল করে। এমতাবস্থায় গঙ্গার উপর আর একটি সেতু তৈয়ারির প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে অনুভূত হইয়াছে।

কলিকাতা, বৃহস্পতিবার, ১৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৩৬৯ (১০ই জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৪ শকাব্দ) THURSDAY, MAY 31, 1962
ট্রেন ছাড়িতে বিলম্বে ক্ষোভ: বুধবার সন্ধ্যায় শিয়ালদহ-হাওড়া(ডানকুনি হইয়া) লোকাল ট্রেনখানি শিয়ালদহ স্টেশন হইতে ছাড়িতে বিলম্ব হইলে একদল যাত্রী বিক্ষুব্ধ হইয়া স্টেশন মাস্টারের ঘরে চড়াও হয় এবং কাঁচের জানালার ক্ষতি সাধন করে। যাত্রীদের বিক্ষোভের ফলে শিয়ালদহ স্টেশনের সমস্ত ‘আপ’ ও ‘ডাউন’ ট্রেনের স্টেশন ছাড়িতে বা স্টেশনে পৌঁছতে ২ ঘন্টা বিলম্ব হয়। আরও প্রকাশ যে বিক্ষোভকারীরা কেবিনের মধ্যে ঢুকিয়াও সমস্ত তচনছ করিয়া ফেলে। রাত্রি ৭টা হইতে ৯টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়।

কলিকাতা, শনিবার, ১৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৩৬৯ (১২ই জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৪ শকাব্দ) SATURDAY, JUNE 2, 1962
প্রচণ্ড দাবদাহের পর বর্ষণ, ঝড় ঝাপটা ও বজ্রপাত: বিশেষজ্ঞদের মতে মৌসুমী নয়, কালবৈশাখী। এই কালবৈশাখীই শুক্রবার বিকালে গ্রীষ্মকাতর কলিকাতার অগণিত তাপিত প্রাণে শীতল ধারা বর্ষণ করিয়াছে। কলিকাতার নাগরিকেরা পচা গরমের হাত হইতে অব্যাহতি পাইয়া কিছুক্ষণের জন্য হাঁফ ছাড়িয়া বাঁচিয়াছেন। ঘন্টায় ৩৬ মাইল (৫৮ কিলোমিটার) বেগে প্রবাহিত ঝড় আর প্রায় এক ঘন্টায় ১.২৭ ইঞ্চি (৩২.২ মিলিমিটার) বৃষ্টিপাতের ফলে কলিকাতার তাপমাত্রা এক লাফে ৯.৪ ডিগ্রী সেঃ (১৭ ডিগ্রী ফাঃ) নামিয়া যায়। তবে এই ঝড়বৃষ্টিতে অবিমিশ্র আশীর্বাদ ঝড়িয়া পড়ে নাই। অফিস ছুটির মুখে কালবৈশাখীর আবির্ভাব হওয়ায় অফিসের বাবুদের নাকালও হইতে হইয়াছে। বৃষ্টির জল রাস্তায় জমিয়া যাওয়ায় ট্রাম চলাচলে ব্যাপকভাবে বিঘ্ন সৃষ্টি হইয়াছে। বাসগুলি স্বাভাবিক পথ পরিত্যাগ করিয়া অন্য পথে যাতায়াত করিতে বাধ্য হইয়াছে।

কলিকাতা, রবিবার, ২০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৩৬৯ (১৩ই জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৪ শকাব্দ) SUNDAY, JUNE 3, 1962
মেডিকেল ছাত্রদের ব্যাপার মুখ্যমন্ত্রীর বিবেচনাধীন: এম বি বি এস পরীক্ষা পিছাইবার দাবিতে মেডিকেল ছাত্রদের সাম্প্রতিক বিক্ষোভজনিত পরিস্থিতি এখন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ রায়ের ‘সক্রিয় বিবেচনাধীন’ আছে। এ সম্পর্কে শনিবার রাত্রে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শ্রীসুরজিত্চন্দ্র লাহিড়ীর সঙ্গে ডাঃ রায়ের প্রায় এক ঘন্টা ধরিয়া আলোচনা হয়। প্রকাশ, বিশ্ববিদ্যালয় ভবনে ২২শে মের ঘটনাবলী এবং পুনরায় ফার্স্ট এবং ফাইনাল এম বি বি এস পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণের প্রশ্নে তাঁহাদের মধ্যে আলোচনা হয়। আলোচনার উপর উপাচার্য শ্রী লাহিড়ী ঐ ব্যাপারে কিছু বলিতে রাজী হন না। তিনি আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিনিধির নিকট শুধু এটুকু বলেন যে, সমুদয় পরিস্থিতি আলাপ আলোচনার পর্যায় আছে। এ ব্যাপারেই মুখ্যমন্ত্রীর সহিত তাঁহার দীর্ঘ আলোচনা হইয়াছে। শিক্ষা সচিব ডঃ ডি এম সেনও আলোচনাকালে উপস্থিত ছিলেন। ডাঃ রায় সোমবার সন্ধ্যায় মেডিকেল ছাত্রদের এক প্রতিনিধি দলের সহিত সাক্ষাত্ করিতে সক্ষম হইয়াছেন বলিয়া জানা যায়। ইতিমধ্যে ২২শে মে তারিখের ঘটনাবলী সম্পর্কে ডাঃ রায় স্বাস্থ্য-বিভাগের এডিসনাল ডিরেক্টর কর্ণেল এন সি চ্যাটার্জিকে তদন্ত করিয়া একটি রিপোর্ট পেশ করার জন্য নির্দেশ দেন। এই সাক্ষাত্কারের পূর্বেই সম্ভবত কর্ণেল চ্যাটার্জির রিপোর্ট ডাঃ রায়ের হাতে পৌঁছিয়া যাইবে।

কলিকাতায় মৌসুমীর পূর্বরাগ: কলিকাতায় এখন মৌসুমীর পূর্বরাগ চলিতেছে। ফলে শুক্রবারের মত শনিবারও নগরীতে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তাঘাট জলে ডুবিয়াছে এবং ট্রাম-বাস চলাচল ব্যবস্থা বিঘ্নিত হইয়াছে। বহু রুটে ট্রাম কয়েকঘন্টা বন্ধও ছিল। এ দিন বিকাল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত বৃষ্টি পড়িয়াছে মোট ৪১.২ মিলিমিটার বা ১.৬২ ইঞ্চি আলীপুরের আবহাওয়া অফিসের মতে মৌসুমীর আগে যেমন বৃষ্টি হইয়া থাকে, এখনকার বৃষ্টি তেমনি। তবে ইহাতে বেশ মৌসুমী মৌসুমী ভাব আছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে মৌসুমীর আগমন সম্ভাবনা ক্রমেই উজ্জ্বল হইতেছে। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশের পার্বত্য অঞ্চল এবং আসামে মৌসুমী জাঁকিয়া বসিয়াছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হইয়াছে যে, রবিবারের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকিবে এবং ঝড়-জল হইতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পাইবে। শনিবার বিকাল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যথাক্রমে ৯৫ ডিগ্রী ফাঃ (৩৫ ডিগ্রী সেঃ) এবং ৭৫ ডিগ্রী ফাঃ (২৪ ডিগ্রী সেঃ)। বায়ুর আর্দ্রতার সর্বোচ্চ পরিমাণ শতকরা ৯৬ ও সর্বনিম্ন পরিমাণ শতকরা ৬৩ ছিল।

কলিকাতা, মঙ্গলবার, ২২শে জ্যৈষ্ঠ, ১৩৬৯ (১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৪ শকাব্দ) TUESDAY, JUNE 5, 1962
পৌরসভার বিচিত্র কর্মকাণ্ড: সংশ্লিষ্ট করদাতাদের নিকট ৭০ লক্ষাধিক টাকার সাপ্লিমেন্টারি বিল প্রদান প্রসঙ্গ লইয়া কলিকাতা কর্পোরেশনে এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হইয়াছে। অ্যাসেসমেন্ট বিভাগ হইতে হাজার হাজার সাপ্লিমেন্টারি বিল লেখা সত্ত্বেও কালেকশান বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ সেই বিলের ডেলিভারি গ্রহণ না করায় এই জটিল অবস্থার সৃষ্টি হইয়াছে বলিয়া জানা যায়। ঐ ৭০ লক্ষ টাকা আদায় করিতে পারে সাড়ে তিন লক্ষ সাপ্লিমেন্টারি বিল প্রয়োজন। কিন্তু কালেকশান বিভাগ এপর্যন্ত অ্যাসেসমেন্ট বিভাগ হইতে মাত্র ৪০ হাজার বিলের (প্রথম কোয়ার্টারে) ডেলিভারী লইয়াছেন। ইহা ছাড়া ডাক মারফত্ সাপ্লিমেন্টারি বিল প্রেরণ করিবার জন্য অন্যান্যবার বাজেটে প্রায় দশ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু ১৯৬২-৬৩ সালের বাজেটে ঐ বাবদ এক পয়সাও বরাদ্দ করা হয় নাই। ফলে ডাক মারফত্ যে সব জায়গায় সাপ্লিমেন্টারি বিল প্রেরণ করা প্রয়োজন তাহাও সম্পূর্ণ বন্ধ রহিয়াছে।

ভারতীয় ভাষার সংবাদপত্রের মর্যাদা বৃদ্ধির প্রয়াস: ভারতীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলির মর্যাদা যাহাতে বৃদ্ধি পায়, তাহার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার এক নীতি নির্ধারণ করিয়াছেন। কেন্দ্রীয় তথ্য ও বেতারমন্ত্রী শ্রী বি গোপাল রেড্ডি সোমবার কলিকাতায় এক ভোজসভায় উক্ত ঘোষণা করেন। শ্রী রেড্ডি এই মর্মে আশ্বাস দেন যে, ভারতীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রসমূহের উন্নতির জন্য সরকার সাহায্য করিবেন। এইদিন ইন্ডিয়ান অ্যান্ড ইস্টার্ন নিউজপেপার সোসাইটির আঞ্চলিক কমিটির পক্ষ হইতে শ্রী রেড্ডিকে এক ভোজসভায় আপ্যায়ন করা হয়। শ্রী রেড্ডি জাতীয় সংহতির প্রশ্নটি উত্থাপন করিয়া বলেন যে, ভারতে ঐক্যের ভিত্তি সুদৃঢ় করিয়া তোলাই সংবাদপত্রের কর্তব্য। তিনি এই জন্য কেন্দ্রে ও বিভিন্ন রাজ্যে সাংবাদিকদের লইয়া সম্মেলন আহ্বানের প্রস্তাব করেন।


কেন্দ্রীয় তথ্য ও বেতারমন্ত্রী শ্রীগোপাল রেড্ডি সোমবার কলিকাতায় তাঁহার সম্মানার্থে
আয়োজিত এক ভোজসভায় বক্তৃতা করিতেছেন। ইন্ডিয়ান অ্যান্ড ইস্টার্ন নিউজপেপারস
সোসাইটির আঞ্চলিক কমিটি এই ভোজসভার আয়োজন করেন। ফটো: আনন্দবাজার

কলিকাতা, শুক্রবার, ২৫শে জ্যৈষ্ঠ, ১৩৬৯ (১৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৪ শকাব্দ) FRIDAY, JUNE 8, 1962
কলিকাতায় পুনরায় বিদ্যুত্শক্তি সরবরাহে বিভ্রাট: মহানগরীর নাগরিক জীবনে পুরাতন উপদ্রব নূতন করিয়া দেখা দিয়াছে। গত দুই মাস যাবত্ ঘন ঘন বিদ্যুত্ বিভ্রাটে কলিকাতার জীবনযাত্রা বার বার পর্যুদস্ত হইয়াছে। মুমুর্ষূ রোগী, পরীক্ষার্থী ছাত্র-ছাত্রী নিষ্প্রদীপের মহড়ায় বিপন্ন হইয়াছেন। পথচারী অকস্মাত্ অন্ধকারে বিপদাপন্ন হইয়াছেন কিন্তু কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর, মধ্য এবং দক্ষিণ কলিকাতা এবং শহরতলীর এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিদ্যুত্ সরবরাহ পুনরায় বন্ধ হইয়া যায়। এসপ্লানেড হইতে সমুদ্রে হাবুডুবু খাইতে থাকে। উল্টাডাঙ্গা এবং বালীগঞ্জ অঞ্চলের কতক জায়গায় পূর্বাহ্নেও বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ ছিল। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতে এই সমস্যার আশু মীমাংসার কোন আশা নাই। খারাপ কয়লার জন্য ইঞ্জিনের বয়লার পুরা কাজ করিতেছে না, চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ ব্যবস্থা নাই এবং গরমকালে অতিরিক্ত বিদ্যুত্ সরবরাহের চাহিদার জন্য মহানগরীর বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হইতেছে—উত্পাদনকারী কর্তৃপক্ষের ইহাই কৈফিয়ত্। প্রকাশ, কলিকাতার বর্তমান বিদ্যুত্ উত্পাদন ব্যবস্থার এই ভার বহন করিবার ক্ষমতা নাই। সুতরাং সরকারী ব্যবস্থাগ্রহণ ব্যতীত জনসাধারণের এই দুর্ভোগ মিটিবে না বলিয়া তথ্যাধিক মহলের ধারণা।

শিয়ালদহ ডিভিশনে ট্রেন যাত্রীদের দুর্ভোগ: যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতির অভাবে শিয়ালদহ ডিভিশনের বহু রেল ইঞ্জিন ব্যাধিগ্রস্ত হইয়া পড়ায় এই ডিভিশনে ট্রেন চলাচল ব্যবস্থায় গুরুতর সঙ্কট দেখা দিয়াছে। ওয়াকিবহাল মহলের বিশ্বাস, অনতিবিলম্বে বৈদ্যুতীকরণ হইবে বলিয়া বাষ্পীয় ইঞ্জিনগুলির দিকে ঠিকমত নজর দেওয়া হইতেছে না। এই কারণে বর্তমানে শিয়ালদহ ডিভিশনে শতকরা ৯৫টি ট্রেনই বিলম্বে যাতায়াত করিতেছে বলিয়া অভিযোগ পাওয়া যাইতেছে এবং যাত্রীদেরও দুর্ভোগের চূড়ান্ত হইতেছে। আরও জানা গেল, খারাপ কয়লা ব্যবহারও ইঞ্জিন বিকল হওয়ার অন্যতম কারণ। অভিযোগে আরও প্রকাশ যে, ঐ ডিভিশনে রানিং স্টাফকে অনেক সময় খারাপ ইঞ্জিন লইয়া ট্রেন চালাইতে বাধ্য করা হয়। ফলে ছোটখাট দুর্ঘটনা হামেসাই ঘটিতেছে।

তিন কামড়া বিশিষ্ট ট্রাম: কলিকাতার কয়েকটি রুটে শীঘ্রই তিনকামরা বিশিষ্ট ট্রাম চালাইবার প্রস্তাব হইয়াছে। যে-সব পথে তিনকামরা বিশিষ্ট ট্রাম চালু করা হইবে সে-সব পথের কয়েকটি করিয়া দুই কামরা বিশিষ্ট ট্রাম অন্য পথে চালাইবার ব্যবস্থা হইবে। বৃহস্পতিবার কলিকাতা ট্রাম কোম্পানীর অস্থায়ী এজেন্ট শ্রী.ই.এইচ গ্যাসকেল এক বিবৃতিতে উপরোক্ত মর্মে জানান। তিনি আরও জানান যে, কলিকাতা ও হাওড়ার প্রত্যহ গড়ে ১০ লক্ষ ২৫ হাজার যাত্রী ট্রামে যাতায়াত করে। ভুলবশতঃ তিনি পূর্বে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক বৈঠকে ঐ সংখ্যা ১২ লক্ষ ৫০ হাজার বলিয়াছেন।

কলিকাতা, শনিবার, ২৬শে জ্যৈষ্ঠ, ১৩৬৯ (১৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৪ শকাব্দ) SATURDAY, JUNE 9, 1962

না না, মাছ বেচব না।
আজ জামাই এসেছে।

নিখিলবঙ্গ জামাতা দিবস: শুক্রবারের বৃষ্টির ঝাপট জামাই-বাবুদের বিশেষ কাবু করিতে পারে নাই। অফিস ছুটির পর বাড়ি ফিরিয়া (ব্যক্তি বিশেষে সোজা অফিস হইতেই) মাঞ্জা দেওয়া পোশাক গায়ে চাপাইয়া জামাই ষষ্ঠীর নিমন্ত্রণ রক্ষা করিতে তাঁহারা শ্বশুর বাড়ি ছুটিয়াছেন। কেহ সপরিবারে, কেহ কেহ বা পরিবারকে আগাম রওনা করিয়া দিয়াছিলেন। ‘এই মাগ্গি গন্ডার বাজারে তত্ত্ব করার সাধ্যি ক্রমেই চলে যাচ্ছে।’ মোটামুটি স্বচ্ছল এক গৃহস্থই মন্তব্য করলেন। ‘এটাকে আর এখন জামাইষষ্ঠী বলা চলে না, ক্রমশই এটা শ্বশুর-দশমীতে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, বুঝলেন।’ তিনি হিসেব দিলেন,‘এক জামাই, মেয়ে আর তাদের অকটা বাচ্চা—এর একটা মোটামুটি খরচ ধরুন না, তাহলেই কথাটা বুঝবেন।’ তাঁহার হিসাবে আজকার বাজারে জামাই ষষ্ঠীর ফর্দ-ধুতি-১৩, পাঞ্জাবী-১২, শাড়ি ইত্যাদি-২০, বাচ্চাটার একটা জামা-৯, মাছ মাংস-১৫, আম ইত্যাদি ফল-১০, দই মিষ্টি-১০, তরিতরকারী-৫, ঘি, তেল, মসলা-১০, টুকুটাকি খরচ-৫, একুনে-১০৯।

• কলিকাতার বাজারে মাছের দর এখনও আকাশ-ছোঁয়া: মত্স্য দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রীর গালভরা হাসিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করিয়া কলিকাতার বাজারে মাছের দর উর্ধাকাশেই বিরাজ করিতেছে। রাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে দাম কমিয়াছে কিন্তু মহানগরীর নাগরিকদল বাজারে গিয়া টের পাইতেছেন, সরকারী ভাষাটা নিছক রসিকতামাত্র। দর যে মগডালে সেই মগডালেই রহিয়াছে। সমস্যা সমাধানের সরকারী প্রচেষ্টা নিতান্তই বাচনিক এবং উহা কাগজী পরিকল্পনায় পর্যবসিত হইয়াছে। গত কয়েকদিন ধরিয়া কলিকাতার বিভিন্ন বাজারে কাটা পোনা প্রতি কিলো যথারীতি ৪ টাকা হইতে ৫ টাকায় অবাধে বিক্রয় করা হইতেছে। কাতলা, ছোট পোনা প্রভৃতির দর ৩ ও ৩ টাকার মধ্যে। ছোট শিঙ্গি ৩, ট্যাংরা, চিংড়ি ৪। ভাল রুইয়ের দর ৬। দোকানে সাজান এই মত্স্যের দিকে অঙ্গুলী নির্দেশ করিলে দোকানী হাসিয়া বলে ‘খাবার লোক কোথায়?’ মত্স্য মূল্য নিয়ন্ত্রণে মত্স্য দপ্তর এখনও সফল হয় নাই বলিয়া নাগরিকরা অভিযোগ করিতেছেন। কোন কোন বাজারে বিক্ষোভও চলিয়াছে। কিন্তু অবস্থা যথা পূর্বং।

কলিকাতায় চীনা ধোবিখানার আকস্মিক উদ্ভব: ১৯৫৪ হইতে ১৯৫৯ সালের মধ্যে কলিকাতায় ব্যাঙের ছাতার মত যে চীনা ধোবিখানা গজাইয়া উঠিয়াছে তাহাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে ভারত সরকার অবগত আছেন। শ্রীহিমতসিংকার এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মন্ত্রী শ্রী বি এন দাতার বলেন যে, ১৯৫০ সালে কলিকাতায় চীনাদের ৩২টি এই শ্রেণীর দোকান ছিল, ১৯৫৪ হইতে ১৯৬০ সালের মধ্যে আরও ৫০টি দোকান খোলা হয়। ১৯৫৫ সালেই সর্বাপেক্ষা বেশী খোলা হয়। সেই বত্সর ১৫ খানি দোকান খোলা হয়। ১৯৫৬ সালে খোলা হয় ১২ খানি। ১৯৬০ সালের পর আর নূতন দোকান খোলা হয় নাই। ইহাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে সরকার অবগত আছেন কিনা জিজ্ঞাসা করা হইলে বলা হয় যে, সরকার অবগত আছেন এবং তাহাদের কার্যকলাপ বন্ধ করিবার জন্য ব্যবস্থা অবলম্বন করা হইবে কিনা জিজ্ঞাসা করা হইলে শ্রীদাতার বলেন যে, ইতিমধ্যেই ব্যবস্থা অবলম্বন করা হইয়াছে।

কলিকাতা, সোমবার, ২৮শে জ্যৈষ্ঠ, ১৩৬৯ (২১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৪ শকাব্দ) MONDAY, JUNE 11, 1962
স্নায়ুরোগের চিকিত্সা ভবন মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ রায় কর্তৃক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন: স্নায়ু রোগ সম্পর্কে চিকিত্সা ও গবেষণার জন্য প্রস্তাবিত ‘বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি’র ভিত্তি প্রস্তর রবিবার কলিকাতার ভবানীপুর ৭নং দেবেন্দ্রলাল খান রোডে স্থাপিত হয়। ভারতে এই জাতীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ইহাই প্রথম প্রয়াস। ঐদিন বিকালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করিতে উঠিয়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় বলেন, মানব সভ্যতা যত বাড়িবে ততই শরীরের উপর মন, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুর প্রভাব বাড়িয়া যাইবে। সেইজন্যে স্নায়ুকে আয়ত্তে রাখার প্রয়োজনে জানা দরকার দেহের প্রত্যেক যন্ত্রের উপর মনের প্রভাব কতটা। দেহ ও মনকে স্ববশে রাখিতে হইলে স্নায়ুর শক্তি তথা দুর্বলতার কথাও জানা প্রয়োজন। মনের সাহায্যে শরীরকে কিভাবে আয়ত্তে আনা যায় মহাত্মা গান্ধী তাঁহার জীবনে উহার প্রকৃষ্ট উদাহরণ রাখিয়া গিয়াছেন বলিয়া ডাঃ রায় মন্তব্য করেন। তিনি এই আশা প্রকাশ করেন যে, প্রস্তাবিত ‘ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি’-তে স্নায়ুরোগের চিকিত্সার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মানসিক ও স্নায়বিক ক্রমবিকাশ সম্বন্ধে গবেষণা এবং শিক্ষাদান চলিবে।

কলিকাতা, মঙ্গলবার, ২৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৩৬৯ (২২শে জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৪ শকাব্দ) TUESDAY, JUNE 12, 1962
পরলোকে বাঙ্গলার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা শ্রী ছবি বিশ্বাস: বর্তমান বাঙ্গলার রঙ্গমঞ্চ ও চিত্রজগতের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা শ্রীছবি বিশ্বাস আর ইহজগতে নাই। সোমবার অপরাহ্নে মধ্যমগ্রামের নিকটে গঙ্গানগরে যশোর রোডের উপর এক শোচনীয় মোটর দুর্ঘটনায় শ্রীবিশ্বাস ঘটনাস্থলে নিহত হন। ঐ মোটরের আরোহী তাঁহার স্ত্রী শ্রীমতী নীহার বিশ্বাস এবং পৌত্র শ্রীমান জয়ন্ত এবং অপর দুই ব্যক্তিও (ভৃত্য ও মোটরচালক) আহত হন। তাঁহাদের সকলকেই আর জি কর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। শ্রীবিশ্বাসের স্ত্রী, পৌত্র এবং মোটরচালককে হাসপাতালে ভর্তি করিয়া পরিচারকটিকে প্রাথমিক চিকিত্সান্তে ছাড়িয়া দেওয়া হয়। মৃত্যুকালে শ্রীবিশ্বাসের ৬২ বত্সর বয়স হইয়াছিল। শ্রী বিশ্বাস ঐদিন মধ্যাহ্নের আহারান্তে বেলা ২টা নাগাদ তাঁহার রিজেন্ট পার্কস্থিত বাড়ী হইতে মোটরযোগে তাঁহার স্বগ্রাম বারাসতের নিকটবর্তী ছোট জাগুলিয়ায় যাইতেছিলেন। বেলা পৌণে তিন ঘটিকা নাগাদ মধ্যমগ্রামের নিকট গঙ্গানগরে বিপরীত দিক হইতে আগত একটি মালবোঝাই মোটর ভ্যানের সহিত শ্রী বিশ্বাসের মোটরটির সরাসরি ধাক্কা লাগে। চালককে পাশে বসাইয়া শ্রী বিশ্বাস নিজেই গাড়ী চালাইতেছিলেন। সংঘর্ষের ফলে শ্রী বিশ্বাসের গাড়ীখানির সম্মুখভাগ সাংঘাতিকভাবে বিধ্বস্ত হয়। ভ্যানের প্রচণ্ড ধাক্কায় মোটরের স্টিয়ারিংটি শ্রী বিশ্বাসের দেহকে বদ্ধ করে। দুর্ঘটনার পর ভ্যানটি উধাও হয়। পরে তাহাকে পুলিস গ্রেপ্তার করে।

কলিকাতা, বৃহস্পতিবার, ৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৩৬৯ (২৪শে জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৪ শকাব্দ) THURSDAY, JUNE 14, 1962
কলিকাতায় প্রায় পাঁচশতটি বাড়ীর অবস্থা বিপজ্জনক: লরী, মোটর, রেল, বিমান দুর্ঘটনা ত আছেই, তাহার উপর কলিকাতা মহানগরীতে বর্ষা পড়িতে না পড়িতেই কাঁচা ও পাকা বাড়ী ভাঙ্গিয়া পড়ার দুর্ঘটনা শুরু হইয়াছে। ভাঙ্গার মুখে শত শত বাড়ী আজও অভাঙ্গা অবস্থায় আছে এই মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায়। জরাজীর্ণ ঐ বাড়ীগুলির প্রায় পাঁচ শতটি কলিকাতা কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিপজ্জনক বলিয়া ঘোষিত হওয়া সত্ত্বেও আইনের বেড়াজালে ঐগুলি ভাঙ্গিয়া ফেলা সম্ভবপর হইতেছে না। অথচ জরাজীর্ণ ঐ বাড়ীগুলির মধ্যে কয়েকখানি ভাঙ্গিয়া পড়ায় দূষণ গত পাঁচ বছরে সতেরোজন মারা গিয়াছে। উত্তর ও মধ্য কলিকাতার জরাজীর্ণ ঐ বাড়ীর সংখ্যা সর্বাধিক বলিয়া জানা যায়। শুধু উত্তর কলিকাতা অঞ্চলেই দুই শতখানি গৃহ বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছিয়াছে বলিয়া প্রকাশ। উত্তর কলিকাতার বিপজ্জনক ঐ বাড়ীগুলি ভাঙ্গিয়া ফেলিবার পর যথাযথ মেরামত করিবার জন্য কর্পোরেশনের পক্ষ হইতে সংশ্লিষ্ট বাড়ীর মালিকগণকে একাধিকবার নোটিস দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু বাড়ীর মালিকগণ নানা অজুহাত দেখাইয়া মেরামতী কাজ বা বাড়ী ভাঙ্গিয়া ফেলিবার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা অবলম্বন করিতেছেন না বলিয়া অভিযোগে প্রকাশ। আরও অভিযোগ এই যে, পুরানো ভাড়াটিয়া উচ্ছেদ করিবার জন্য সংশ্লিষ্ট এক শ্রেণীর বাড়ীর মালিক ইচ্ছা করিয়া বাড়ীর মেরামতী কাজে হাত দিতেছেন না। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য, বাড়ীর ভাড়া অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়াতে সংশ্লিষ্ট বাড়ীর একশ্রেণীর মালিক নাকি পুরাতন ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ করিবার জন্য এই ‘নূতন কৌশল’ অবলম্বন করিয়াছেন।

কলিকাতা, শুক্রবার, ৩২শে জ্যৈষ্ঠ, ১৩৬৯ (২৫শে জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৪ শকাব্দ) FRIDAY, JUNE 15, 1962
মহানগরী হইতে বর্ষার জল নিষ্কাশনের সমস্যা: সামান্য বৃষ্টি হইলেই কলিকাতা মহানগরীর পথেঘাটে ইদানীং যে জল থৈ থৈ করে, তাহার কারণ অনুসন্ধান করিতে গিয়া মেয়র শ্রীরাজেন্দ্রনাথ মজুমদার এযাবত্ যে তথ্যাদি সংগ্রহ করিয়াছেন, তাহাতে কর্পোরেশনের প্রশাসনিক ত্রুটি-বিচ্যুতির এক শোচনীয় চিত্র উদঘাটিত হইয়াছে।
শহরের ময়লাজল অপসারণের জন্য একটি পাম্পিং মেসিন প্রায় তিন বছর আগে অকেজো হইয়া পড়ায় মেয়র শ্রীমজুমদার স্বয়ং তত্কালীন ওয়ার্কস কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে উহা অবিলম্বে মেরামত করিবার নির্দেশ দেন এবং তজ্জন্য কমিটি হইতে টাকাও মঞ্জুর হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত উহা অকেজো হইয়াই পড়িয়া রহিয়াছে।
মেয়র এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছেন যে, মধ্য কলিকাতার কোন কোন অঞ্চলে বর্তমানে বিপুল পরিমাণ জঞ্জাল স্তূপীকৃত হইয়া পড়িয়া থাকার দরুণও বৃষ্টির জল অপসারণের পথ বিঘ্নিত হইতেছে। ইহা ছাড়া মধ্য কলিকাতা অঞ্চলে ময়লাজল নিষ্কাশনের ১২ ইঞ্চি মেন পাইপে পলি সাফ করিবার যথোচিত ব্যবস্থা না থাকায় এই পাইপ ময়লা ও পলিতে প্রায় বন্ধ হইয়া গিয়াছে। ড্রেনেজ বিভাগের এক শ্রেণীর কর্মচারীর কাজে গাফিলতির দরুণও বর্তমানে সামান্য বৃষ্টিতেই কলিকাতার রাজপথে জল জমিয়া স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হইয়া পড়িতেছে।

• কলিকাতার ফুটবলে জটিল পরিস্থিতি:
হাওড়া ইউনিয়ন (১)
উয়াড়ী (০)
বৃহস্পতিবার এরিয়ান মাঠে হাওড়া ইউনিয়ন ও উয়াড়ী ক্লাবের প্রথম ডিভিশন ফুটবল লীগের খেলাটিকে কেন্দ্র করিয়া কলিকাতার ফুটবল ইতিহাসে এক জটিল পরিস্থিতির উদ্ভব হইয়াছে। খেলার শেষে এক শ্রেণীর উচ্ছৃঙ্খল দর্শক সমর্থক এবং কতিপয় খেলোয়াড় রেফারীর উপর হামলা করিয়া তাঁহাকে আহত করায় ক্যালকাটা রেফারীজ এসোসিয়েশন খেলা পরিচালনা করিতে অস্বীকার করিয়াছে। এইদিন সন্ধ্যায় শ্রীঅতুল্য ঘোষের সভাপতিত্বে আই এফ এ পরিচালক মণ্ডলীর যে সভা হয় তাহাতে সি আর এ’র প্রতিনিধি উক্ত সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন। শেষ পর্যন্ত সভাপতি শ্রী ঘোষের অনুরোধে ‘প্রতীক প্রতিবাদ’ হিসাবে রেফারীরা কেবল শুক্রবারের খেলা পরিচালনার ব্যাপারে ‘ֹধর্মঘটের’ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছেন। সুতরাং আই এফ এ’র তরফ হইতে শুক্রবারের সকল খেলা স্থগিত রাখা হইয়াছে। খেলাটিতে হাওড়া ইউনিয়ন ক্লাব ১-০ গোলে উয়াড়ী ক্লাবকে পরাজিত করিয়া লীগের ৯টি খেলার মধ্যে দ্বিতীয় জয়লাভ করিয়াছে। খেলাটি শেষ হইবার এক মিনিট পূর্বে পেনাল্টি কিকের সুযোগ হইতে হাওড়া ইউনিয়ন বিজয়সূচক গোলটি করে এবং এই পেনাল্টি লইয়াই গোলমালের সূত্রপাত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় ভবনে মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীদের প্রায়োপবেশন: বৃহস্পতিবার বেলা এগারটা হইতে চব্বিশঘন্টার জন্য মেডিক্যাল কলেজ-সমূহের ৮ জন ছাত্রী এবং ১৫০ জন ছাত্র কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারভাঙ্গা ভবনের একতলার বারান্দায় অবস্থান ধর্মঘট ও অনশন শুরু করিয়াছেন। বিকালের দিকে উপাচার্য শ্রীসুরজিতচন্দ্র লাহিড়ী অবস্থানকারীদের সহিত দেখা করিয়া তাঁহাদের অনশন ভঙ্গ এবং বিদ্যালয় ভবনে গত বাইশের ঘটনার জন্য অকুণ্ঠচিত্তে ক্ষমা প্রার্থনা করিতে অনুরোধ জানান। উপাচার্য শ্রীলাহিড়ী বলেন, মেডিক্যাল ছাত্রদের ব্যাপারে তিনি চিন্তিত এবং মর্মাহত। বাইশে মে একশ্রেণীর মেডিক্যাল ছাত্রদের আচরণের জন্য মেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীরা ক্ষমা প্রার্থণা করিলে তিনি তাঁহাদের বর্তমান সমস্যার সমাধানের জন্য বিশেষভাবে চেষ্টা করিবেন। তিনি বলেন, উহাতে ছাত্ররা রাজী হইলে উপাচার্য হিসাবে তিনি সিন্ডিকেটের সভায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি পেশ করিবেন—
১) জুলাই মাসে ফার্স্ট ও ফাইন্যাল এম-বি-বি-এস পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ
২) বাইশে মের ঘটনার জন্য কাহারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অবলম্বন করা হইবে না।
৩) মেডিক্যাল কলেজগুলিতে শিক্ষা ব্যবস্থা অনুসন্ধান করিবার জন্য তদন্ত কমিটি নিয়োগ। ইহা ছাড়া বাইশে মে’র ঘটনায় ধৃত মেডিক্যাল ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের জন্য সরকারকে অনুরোধ জানানোর চেষ্টা করিবেন।

কলিকাতা, শনিবার, ১লা আষাঢ়, ১৩৬৯ (২৬শে জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৪ শকাব্দ) SATURDAY, JUNE 16, 1962
কর্পোরেশনের সভা পণ্ড: অবিলম্বে টালিগঞ্জ এলাকায় পরিশ্রুত পানীয় জলের সমস্যা সমাধানের দাবিতে শুক্রবার পুরুষ ও মহিলা লইয়া কুড়িজনের এক প্রতিনিধিদল কর্পোরেশনের সভায় ঢুকিয়া মেয়র শ্রীরাজেন্দ্রনাথ মজুমদারের নির্দিষ্ট আসনের সম্মুখে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করিলে সভায় বিশেষ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। কারণ সভা চলাকালে সভাকক্ষে এই ধরণের বিক্ষোভ কর্পোরেশনের ইতিহাসে ইহাই প্রথম। মেয়র শ্রী মজুমদার বিক্ষোভকারীদের জানান যে, এইভাবে কোন অভাব-অভিযোগ জানান ন্যায়সঙ্গত নহে। কারণ ইহার দ্বারা সভার কার্য বিঘ্নিত হইবে। কিন্তু ইহার পরও বিক্ষোভকারিগণ বারবার পীড়াপীড়ি করায় সভা মুলতুবী রাখিয়া বিক্ষোভকারীদের অন্যতম প্রতিনিধি শ্রীনৃপেন ব্যানার্জির সহিত কাউন্সিলর ক্লাব রুমে এ সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা করেন। আলোচনাকালে মেয়র শ্রীমজুমদার শ্রীব্যানার্জিকে নাকি এই মর্মে আশ্বাস দেন যে, আগামী সোমবার তিনি নিজেই টালীগঞ্জ এলাকার বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শন করিবেন এবং অনতিবিলম্বে ঐ অঞ্চলের পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা কার্যকরী করিবার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করিবেন।

কলিকাতা, রবিবার, ২রা আষাঢ়, ১৩৬৯ (২৭শে জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৪ শকাব্দ) SUNDAY, JUNE 17, 1962
শনিবার রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অষ্টম অধ্যক্ষের মহাপ্রয়াণ: রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অষ্টম অধ্যক্ষ শ্রীমত্ স্বামী বিশুদ্ধানন্দজী মহারাজ শনিবার প্রাতে ৯-৭ মিনিটে মহাসমাধি লাভ করিয়াছেন। স্বামীজীকে চিকিত্সার জন্য কলিকাতায় পার্ক নার্সিংহোমে ভর্তি করা হইয়াছিল। দুইদিন পূর্বে তথায় তাঁহার মূত্রগ্রন্থিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। মহাসমাধিকালে তাঁহার বয়স ৮০ বত্সর হইয়াছিল। আমাদের হাওড়া অফিসের সংবাদে প্রকাশ যে, স্বামীজী গত দুই বত্সর যাবত মূত্রগ্রন্থির রোগে ভুগিতেছিলেন। ষোল মাস পূর্বে একবার তাঁহার দেহে প্রাথমিক ধরণের অস্ত্রোপচার হইয়াছিল। গত ১৩ই জুন তাঁহাকে পার্ক নার্সিংহোমে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারের পর তিনি ক্রমশ আরোগ্য লাভ করিতেছিলেন। কিন্তু শুক্রবার অপরাহ্ন হইতে তাঁহার অবস্থার অবনতি ঘটিতে থাকে। অবশেষে শনিবার সকালে তাঁহার জীবন-দীপ নির্বাপিত হয়। বেলা ১২-৩০ মিনিটে নার্সিং হোম হইতে স্বামীজীর নশ্বর দেহ রামকৃষ্ণ মিশনের প্রধান কার্যালয় বেলুড় মঠে লইয়া যাওয়া হয়।

কলিকাতা, সোমবার, ৩রা আষাঢ়, ১৩৬৯ (২৮শে জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৪ শকাব্দ) MONDAY, JUNE 18, 1962
কলিকাতায় ছেলেধরা: ছেলেটি এ যাত্রা রেহাই পাইয়া গেল। বুদ্ধি করিয়া প্রাইভেট গাড়ি হইতে নামিয়া পাশের গলিতে না লুকাইলে তাহাকে হয়তবা ছেলেধরার খপ্পরে পড়িয়া যাইতে হইত। ছেলেটির নাম অঞ্জন বসু। থ্রি বি, দীনবন্ধু লেনে তাহার বাড়ি। শনিবার বেলা দশটা নাগাদ সে তাহার বন্ধুর খোঁজে বাহির হইয়া মাণিকতলা স্ট্রীট এবং ডাফ স্ট্রীটের মোড়ের কাছে একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনার সম্মুখীন হয়। ঐ স্থান হইতে দুইজন অপিরিচিত লোক ছেলেটিকে হঠাত্ জোর করিয়া ধরিয়া একটি প্রাইভেট মোটর গাড়িতে তোলে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সে সংজ্ঞাহীন হইয়া পড়ে। কয়েক ঘন্টা পর তাহার চেতনা ফিরিলে সে দেখে, বালিগঞ্জের কাছে গাড়িখানি আছে। গাড়ীতে ঐ দুইটি লোক নাই। ঐ অবস্থায় ছেলেটি গাড়ী হইতে নামিয়া পাশের একটি গলিতে গিয়া লুকায় এবং পরে ত্রিকোণ পার্কের কাছে তাহার পিসির বাড়ি চলিয়া যায়। ছেলেটি অবশ্য মোটর গাড়ির নম্বর বলিতে পারে না। এইদিন শ্রীমান অঞ্জনের পিতা শ্রীভূপেন বসুর নিকট হইতেই ঐ ঘটনাটি জানা যায়।

কলিকাতা, বুধবার, ৫ই আষাঢ়, ১৩৬৯ (৩০শে জ্যৈষ্ঠ, ১৮৮৪ শকাব্দ) WEDNESDAY, JUNE 20, 1962
শিয়ালদহ ডিভিসনে যাত্রীদের দুর্ভোগ: শিয়ালদহ ডিভিসনে দেরীতে ট্রেন চলাচল কি অভ্যাসে পরিণত হইতে চলিয়াছে? দুই-এক মিনিট নয়, আধ ঘন্টা, এক ঘন্টা, দুই ঘন্টা পর্যন্ত। মাসের পর মাস এই অবস্থা চলিলেও গত দুই মাস ধরিয়া চরমে উঠিয়াছে। এমন দিন যায় না, যেদিন দেরীতে ট্রেন ছাড়া লইয়া শিয়ালদহ নর্থ স্টেশন অথবা অন্যকোন স্টেশনে গোলযোগ হয় না। আর যাত্রিসাধারণের দুর্ভোগ ক্রমেই বাড়িতেছে। রাত্রি আটটায় বাড়ি ফেরার কথা থাকিলে কেহ হয়ত গভীর রাত্রে বাড়ি ফিরিতেছেন। স্টেশনে স্টেশনে যাত্রীদের বিক্ষোভ এবং সেই সঙ্গে বাড়িতে বাড়িতে চিন্তার একশেষ। রেলওয়ে পুলিস অবস্থা আয়ত্তে আনিবার জন্য প্রায়ই হিমশিম খাইতেছেন, কিন্তু তাহা সত্ত্বেও রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নাকি এ পর্যন্ত নীরব আছেন, ইহাই অভিযোগ। প্রকাশ, রেলওয়ে পুলিস দেরীতে ট্রেন চলাচলের জন্য যে ঘটনাগুলি ঘটিতেছে, তাহার ধারা বিবরণী রেল কর্তৃপক্ষের নিকট নিয়মিতভাবে পাঠাইতেছে। বিভাগীয় কর্মচারীও নাকি তাহা যথাস্থানে পাঠাইতেছেন। কিন্তু ইহা সত্ত্বেও যাত্রীদের এই প্রাণান্তকর অসুবিধা দূর হইতেছে না।

বেলগাছিয়া সরকারী ডেয়ারী আগস্ট মাস হইতে চালু হইবে: আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ হইতে বেলগাছিয়া সরকারী ডেয়ারী চালু করিবার আয়োজন একরূপ সম্পূর্ণ হইয়াছে। প্রকাশ, প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু আগামী ডিসেম্বর মাসে এই ডেয়ারীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করিবেন। বেলগাছিয়া ডেয়ারীতে প্রতিদিন আড়াই হাজার মণ দুগ্ধ বীজাণুমুক্ত এবং পাত্রজাত করা হইবে। বর্তমানে হরিণঘাটায় দৈনিক এক হাজার মণ দুগ্ধ বীজাণুমুক্ত এবং পাত্রজাত করা হয়। বেলগাছিয়া ডেয়ারীতে দুগ্ধ উত্পাদন ব্যবস্থা থাকিবে না। দুগ্ধের সরবরাহের জন্য এই সংস্থা ঠিকাদার এবং হরিণঘাটা ডেয়ারীর উপর নির্ভর করিবে। নবজাত বেলগাছিয়া ডেয়ারীতে ভবিষ্যতে দৈনিক পাঁচ হাজার মণ দুগ্ধ বীজাণুমুক্ত এবং পাত্রজাত করা হইবে স্থির করা হইয়াছে। বেলগাছিয়ার রেললাইনের ধারে প্রায় ২৪ একর জমিতে বিস্তৃত এই ডেয়ারীতে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে সমস্ত কাজ হইবে। ১৫০০ গ্যালন ক্ষমতাবিশিষ্ট এক একটি আধারে দুগ্ধ ঢালাই হইতে আরম্ভ করিয়া পাস্তুরাইজিং যন্ত্র অথবা পাত্র ভর্তি করা পর্যন্ত সমস্ত কাজ যন্ত্রের সাহায্যে হইবে, কোথাও হস্ত দ্বারা স্পর্শ করিবার প্রয়োজন হইবে না।

পঙ্গপালের কলিকাতা অভিযান: পঙ্গপালেরা কলিকাতার নিকটে আসিয়া পড়িয়াছে। যে কোন সময় মহানগরীর বুকে তাহাদের আবির্ভাব হইতে পারে।
তিন মাইল গভীর এই পঙ্গপাল বাহিনী এখন নদীয়া জেলায় প্রবেশ করিয়াছে। তাহাদের আগমন পুরুলিয়া হইতে বর্ধমান ও মেদিনীপুরের পখ ধরিয়া।
এখন পাটের চারা সবে গজাইয়াছে। পঙ্গপালেরা যদি ক্ষেতে নামিয়া পড়ে তাহা হইলে বিপদের সম্ভাবনা। কৃষিদপ্তর শঙ্কিত হইয়াছেন। পঙ্গপাল প্রতিরোধের জন্য নিয়ন্ত্রণ বাহিনীকে প্রস্তুত থাকিতে বলা হইয়াছে।

 

জামাই ষষ্ঠী
আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এই সকল প্রবন্ধের বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত।
 
 
 


 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.