দিন আসে, দিন যায়, তার ফাঁকেই ইতিহাসে ঢুকে পড়ে তার চলাচলের খবর। পুরনো দিনের শহুরে খবর দিয়ে চেনা যায় এখনকার
অতি পরিচিত শহরের অতীতটাকে, তার নাগরিক জীবনযাপন থেকে খেলাধুলো, সংস্কৃতি বা কূটকচালি থেকে রাজনীতির হাল।
পঞ্চাশ বছর আগের কলকাতা শহরের গতিবিধি চিনতে ২১ জুলাই ১৯৬২ থেকে ২০ অগস্ট ১৯৬২ এক মাসের কিছু বিশেষ খবর।
• ‘গন্ধাশহর’ কলিকাতা নগরীকে পরিচ্ছন্নতর করার অভিযান:শনিবার প্রত্যুষে ‘গন্ধাশহর’ কলিকাতাকে পরিচ্ছন্নতর করিয়া তুলিবার অভিযান শুরু হয়। জাতীয় স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীর কর্মীরা নগরীর রাজপথে আনাচেকানাচে আবর্জনা সাফাইয়ের কাজে হাত দেন। কলিকাতা কর্পোরেশন এবং রাজ্য সরকার একযোগে এক মাসের জন্য এই অভিযান শুরু করিয়াছেন।
রাজ্যপাল শ্রীমতী পদ্মজা নাইডু, মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন, মেয়র শ্রী রাজেন্দ্রনাথ মজুমদার এবং স্বায়ত্তশাসনমন্ত্রী শ্রীশৈলকুমার মুখোপাধ্যায় এইদিন সকালে দেড় ঘন্টা ধরিয়া নগর সাফাইয়ের উদ্যোগ পর্যবেক্ষণ করেন। তাঁহাদের উপস্থিতি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীর কর্মীদের মনে প্রেরণা জোগায়।
• মহানগরীকে পরিচ্ছন্ন করার অভিযান:আবর্জনাকীর্ণ কলিকাতা নগরীকে পরিচ্ছন্ন করিয়া তুলিবার নয়া অভিযানের দ্বিতীয় দিবস রবিবারও দুই দফায় আবর্জনা স্তূপ পরিস্কারের কাজ চলে। দুই দফায় ১০০ ট্রাক এবং ৮০০ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর কর্মীকে আবর্জনা অপসারণের কাজে নিযুক্ত করা হয়।
প্রখম দফায় ভোর ৬টা হইতে বেলা ১টা পর্যন্ত ৭০০ জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর কর্মী আবর্জনা সাফাইয়ের কাজে নিযুক্ত থাকে। আধঘন্টা বাদ দিয়া পুনরায় বেলা ২টা হইতে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সাফাইয়ের কাজ চলে। এই দফায় ১০০জন কর্মীকে এই কাজে নিযুক্ত করা হয়।
• পরলোকে পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রীকালীপদ মুখোপাধ্যায়:আমরা গভীর দুঃখের সহিত জানাইতেছি যে, পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্র (পুলিশ) মন্ত্রী শ্রীকালীপদ মুখোপাধ্যায় আর ইহজগতে নাই। সোমবার রাত্রি এগারটার সময় কলিকাতায় স্বগৃহে সন্ন্যাস রোগে তাঁহার আকস্মিক মৃত্যু ঘটে। নববঙ্গের স্রষ্টা ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের মৃত্যুর পর একমাসও কাটিল না, রাজ্য মন্ত্রিসভার অন্যতম প্রবীন সদস্য শ্রীমুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে বাঙ্গলাদেশে আবার কালাশৌচের ছায়া নামিয়া আসিল। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সৃষ্টি হইল এক বিরাট শূন্যতার।
মাত্র তেইশ দিনের ব্যবধানে বিধানচন্দ্র ও কালীপদের বিদায় গ্রহণে শুধু যে সরকারী প্রশাসনের শীর্ষের দুইটি শক্তিশালী স্তম্ভ ভাঙ্গিয়া পড়িল তাহাই নয়— রাজ্যের কংগ্রেসী মহলেও যে শূন্যতা দেখা দিল তাহা সহজে পূরণ হইবার নয়। ডাঃ রায়ের মৃত্যুর পর নূতন করিয়া মন্ত্রিসভা গঠনের ব্যাপারে শ্রীমুখোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেনকে যথেষ্ট সহায়তা করেন। শ্রীমুখোপাধ্যায় একমাত্র মন্ত্রী যিনি পশ্চিমবঙ্গের সবকটি মন্ত্রিসভায় আসন লাভ করিয়াছিলেন। অমন কি দেশ বিভাগের প্রাক্কালীন ‘ছায়া-মন্ত্রিসভার’ও তিনি সদস্য ছিলেন।
• বৃহত্তর কলিকাতা অঞ্চলে বিদ্যুত্ সঙ্কট:বৃহত্তর কলিকাতা অঞ্চলে বিদ্যুত্শক্তির অনটনজনিত সঙ্কট দূর করিবার জন্য যে পরিমাণ অতিরিক্ত বিদ্যুত্ শক্তির প্রয়োজন, ডি-ভি-সি’র পক্ষ হইতে তাহা মিটাইবার কোন স্পষ্ট আশ্বাস পাওয়া যায় নাই বলিয়া প্রকাশ। বিশ্বস্তসূত্রে আরও জানা যায় যে, বৃহত্তর কলিকাতা অঞ্চলের বর্তমান সঙ্কটের সম্ভাবনা এড়াইবার জন্য যেখানে ৩৫ হইতে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্শক্তির প্রয়োজন সেখানে রাজ্য সরকারের পক্ষ হইতে বহুতর যুক্তি-তর্কের অবতাড়ণার পর ডি-ভি-সি উহার একটা সামান্য অংশমাত্র সরবরাহ করিতে রাজী হইয়াছেন। প্রকাশ, প্রধানত পাটশিল্পের প্রয়োজন পূরণের জন্য ডি ভি সি কর্তৃপক্ষ বৈদ্যুতিক শক্তির প্রাপ্তির সাপেক্ষে অবিলম্বে কলিকাতা নগরীতে অতিরিক্ত চার মেগাওয়াট বিদ্যুত্ সরবরাহ করিতে রাজী হন।
সোমবার কলিকাতার কেন্দ্র, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার এবং ডি-ভি-সি’র পক্ষে প্রতিনিধিগণের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান বিদ্যুত্ সঙ্কট ও বিহারের চাহিদা এবং অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে আলোচনার জন্য দুইদিন বৈঠক হয়। ঐ বৈঠকে উপরোক্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
• স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রীকালীপদ মুখার্জির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া: মঙ্গলবার সকালে নিমতলা মহাশ্মশানে পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্র (পুলিস) মন্ত্রী শ্রীকালীপদ মুখোপাধ্যায়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া যথোচিত রাষ্ট্রীয় মর্যাদা সহকারে সম্পন্ন হয়। শ্রী মুখার্জির কনিষ্ঠ পুত্র মুখাগ্নি করেন। সেই সময় স্বতঃস্ফূর্ত ‘বন্দে মাতরম্’ ধ্বনির মধ্যে কলিকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী তাঁহার উদ্দেশ্যে শেষ অভিবাদন জানান।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এবং রাজ্য মন্ত্রিসভা শ্রীমুখার্জির শোকসন্ত্রস্ত পরিবারবর্গের নিকট প্রগাঢ় এক শোকবার্তা প্রেরণ করেন।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল শ্রীমতী পদ্মজা নাইডু এবং মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন মঙ্গলবার ভোরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গোকুল বড়াল স্ট্রীটস্থ বাসভবনে উপস্থিত হন এবং পরলোকগত নেতার প্রতি তাঁহাদের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মুখ্যমন্ত্রী শ্রীসেন এবং রাজ্য মন্ত্রিসভার অন্যান্য সদস্য নিমতলা শ্মশানে তাঁহার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন।
• শতকরা ৮০টি গৃহ হইতে জঞ্জাল সংগ্রহ বন্ধ:কলিকাতা মহানগরীর শতকরা প্রায় ৮০টি গৃহ হইতে কর্পোরেশনের মজদুরগণ আবর্জনা সংগ্রহ না করায় বহু বাড়ীতে জঞ্জাল স্তূপীকৃত হইয়া উঠিতেছে বলিয়া অভিযোগে প্রকাশ। ইহার দরুণ এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হইয়াছে।
এই কারণে সকালের দিকে বিভিন্ন রাজপথে গত কয়েকদিন ধরিয়া জঞ্জাল আদৌ দেখা যাইতেছে না। কিন্তু বিকালে রাস্তায় বাহির হইলে দেখা যায় যে, বহু জায়গায় জঞ্জাল স্তূপীকৃত হইয়া আছে। কর্পোরেশনের কনজারভেন্সি বিভাগের জনৈক মুখপাত্র এই মর্মে জানান যে, দৈনিক মোট ২২০০ শত টন আবর্জনা মহানগরী হইতে অপসারণ করা হয়। কিন্তু তিন চারদিন ধরিয়া দেখা যাইতেছে যে, সকালের দিকে মোট আবর্জনার অর্ধেকও পরিস্কার করা হয় না। উক্ত মুখপাত্র বলেন যে, বেলা বারটার পর হইতেই কর্পোরেশনের মজদুরগণ বিভিন্ন বাড়ি হইতে আবর্জনা সংগ্রহ করিতে সুরু করে এবং ঐ আবর্জনাদি রাজপথের বিভিন্ন জায়গায় জমা করে। ফলে বিকালের মধ্যে বহু এলাকায় জঞ্জাল স্তূপীকৃত হইয়া উঠে।
• কলিকাতার গঙ্গার উপর নূতন সেতু: কলিকাতায় গঙ্গার উপর প্রস্তাবিত নূতন সেতুটি প্রিন্সেপ ঘাটের নিকট নির্মিত হইবে বলিয়া আপাতত স্থির হইয়াছে।
কলিকাতা মেট্রোপলিটন পরিকল্পনা সংস্থা ঐ স্থান নির্বাচন করিয়াছেন। সেতুটি গঙ্গা হইতে ১২৫ ফুট উঁচু হইবে। হাওড়া পুলের উচ্চতা ৪৯ ফুট ইহার নীচ দিয়া বড় জাহাজ চলাচল করিতে পারে না। নূতন সেতুর তলা দিয়া যাহাতে বড় জাহাজ যাতায়াত করিতে পারে সেজন্য ইহাকে আরও উঁচু করিয়া নির্মাণের প্রস্তাব করা হইয়াছে।
নির্দিষ্ট স্থানটি সেতু নির্মাণের উপযোগী কিনা তাহা নির্ণয়ের জন্য মাটি খোঁড়া ও পরীক্ষার কাজও শীঘ্রই শুরু হইবে। বিভিন্ন অনুর্দ্ধান কার্য প্রায় এক বত্সর চলিবে।
রাইফেলহীন সৈনিক
ময়দানে যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভে ব্রোঞ্জনির্মিত
জনৈক সৈনিকের প্রতিমূর্তির হাত
হইতে রাইফেলটি অদৃশ্য হইয়াছে।
ফটো: আনন্দবাজার
• কলিকাতায় বিদ্যুত্ সঙ্কট: শুক্রবারও সেই একই অবস্থা চলে। বিদ্যুত্সঙ্কটের ফলে নাগরিকজীবনে সেই অস্বস্তি এবং শিল্পোত্পাদনের ক্ষেত্রে সেই অনিশ্চিত অবস্থার কোন পরিবর্তন এইদিন দেখা যায় নাই। অচিরে এই সঙ্কট কাটিয়া যাইতে পারে, এরূপ কোন আশা বা আশ্বাসও কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে পাওয়া যায় নাই।
শুক্রবার ডি-ভি-সি’র জেনারেল ম্যানেজার শ্রী এইচ এন রায়ের সহিত যোগাযোগ করিলে তিনি এইটুকু মাত্র জানান যে, বিকল ইউনিটগুলি চালু করিবার জন্য চেষ্টার ত্রুটি হইতেছে না। ইহার বেশী আপাতত তাঁহার কিছু বলিবার নেই।
তাঁহার বলিবার আর আছেই বা কি? সংকটের ঢেউ যে তাঁহার সদর দপ্তরেও হানা দিয়াছে। স্বয়ং জেনারেল ম্যানেজার শ্রীরায়কেও এইদিন বিকাল হইতে লণ্ঠন জ্বালাইয়া কাজ চালাইতে হইয়াছে বলিয়া প্রকাশ। বিকাল ৩টা নাগাদ এন্ডারসন হাউসস্থিত ডি-ভি-সি’র সদর দপ্তরে আলো-পাখা বন্ধ হইয়া যায়।
• পশ্চিমবঙ্গের বাজারে জাল ও ভেজাল ঔষধের ফলাও কারবার: পশ্চিমবঙ্গে নিম্নমানের ডিস্টিলড্ ওয়াটার এবং জাল ও ভেজাল ঔষধ তৈয়ারীর অভিযোগ সম্পর্কে রাজ্যের সরকারী ও বেসরকারী মহলে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হইয়াছে। শুক্রবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় এই উদ্বেগ প্রতিফলিত হয়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন সভায় ঘোষণা করেন যে, সাধারণভাবে ঔষধ তৈয়ারী এবং বিশেষভাবে জাল ঔষধাদি সম্বন্ধে তদন্তের নিমিত্ত রাজ্য সরকার একটি কমিশন নিয়োগের সিদ্ধান্ত করিয়াছেন। স্যার বীরেন মুখার্জি ঐ কমিশন নিয়োগের সিদ্ধান্ত করিয়াছেন। স্যার বীরেন মুখার্জি ঐ কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাজ্য সরকার জনস্বাস্থ্য দপ্তরের ডিরেক্টরকেও উহার সদস্য-সম্পাদক করা হইয়াছে।
• কলিকাতায় প্রধানমন্ত্রী: প্রধানমন্ত্রী শ্রী নেহরু শনিবার লখনউ হইতে বিমানে কলিকাতায় আসেন। রাত্রি ৮টা ৬মিনিটে (নির্দিষ্ট সময়ের ২১ মিনিট পরে) রাষ্ট্রপতি নিজস্ব বিমান রাজহংস তাঁহাকে বহন করিয়া দমদমে আসিয়া নামে। পৌঁছিবার কথা ছিল পৌনে আটটায়। দৌহিত্র রাজীবও তাঁহার সহিত আসিয়াছে।
রাজ্যপাল শ্রীমতী পদ্মজা নাইডু মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শ্রীঅতুল্য ঘোষ, কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী শ্রীঅশোক সেন, কলিকাতার মেয়র শ্রীরাজেন্দ্রনাথ মজুমদার, রাজ্যের মন্ত্রিসভার সদস্যগণ, চীফ সেক্রেটারী সহ পদস্থ সরকারি অফিসারেরা সকলেই প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাইবার জন্য বিমান বন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নেহেরু কলিকাতা বিমানবন্দরে অবতরণের পর গৃহীত চিত্র। আনন্দবাজার চিত্র।
• কলিকাতা এবং বঙ্গীয় মিউনিসিপ্যাল আইনের পরিবর্তন: সোমবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় স্বায়ত্তশাসন সংস্থাগুলির বিভিন্ন বিভাগকে অনুদান খাতে ব্যয়বরাদ্দের দাবি সম্পর্কে আলোচনাকালে স্বায়ত্তশাসনমন্ত্রী শ্রীশৈলকুমার মুখার্জী ঘোষণা করেন যে, কলিকাতা মিউনিসিপ্যাল আইন এবং বঙ্গীয় মিউনিসিপ্যাল আইনের পরিবর্তন সাধন নীতি হিসাবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার গ্রহণ করিয়াছেন। শ্রীমুখার্জী বলেন যে, এই সম্পর্কে একটি বাস্তববাদী পরিকল্পনা রূপায়ণকল্পে ইতিমধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিকে স্পেশাল অফিসাররূপে নিযুক্ত করা হইয়াছে। অধিকতর নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য বিধানের পরিপ্রেক্ষিতে কিভাবে ঐ দুইটি আইন পরিবর্তন সম্ভব হয়, স্পেশাল অফিসার তাহা পর্যালোচনা করিবেন এবং প্রয়োজনবোধে অন্যান্য রাজ্যের পৌরশাসন আইনও তিনি দেখিয়া লইবেন। আইনের বিধানাবলী পরিবর্তনের পূর্বে বিরোধী দলের সদস্যদের সহিত পরামর্শ করার আশ্বাসও তিনি দেন।
• কলিকাতা বিদ্যালয়ে শিশুদের বিনামূল্যে দুধ দেওয়া বন্ধ: কলিকাতার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিশুদের জন্য বিনামূল্যে যে দুধ বিতরণ করা হইত, বিষাক্ত ময়দার আতঙ্কে অনেক বিদ্যালয় কর্তপক্ষ তাহা বন্ধ করিয়া দিয়াছেন। প্রকাশ, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ঐ দুধ দান করিয়াছিলেন।
মহানগরীর নাগরিকেরা এখন এমনই শঙ্কিত যে, ময়দা, আটা ও গমজাত খাদ্যদ্রব্য গ্রহণেই তাঁহারা ইতস্তত করিতেছেন। অনেকে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে ময়দার নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠাইতেছেন। উক্ত স্কুলে এখন নদীয়ার আড়ংঘন্টা হইতে সংগৃহীত তেলের নমুনা পরীক্ষা করিয়া দেখিতেছেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের খাদ্য দপ্তরের কলিকাতাস্থ আঞ্চলিক অফিস হইতে ঐ ময়দা প্রায় ৩০০ জায়গায় পাঠান হইয়াছিল। ঐ সমস্ত কেন্দ্রে ময়দা ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে এবং সোমবারের মধ্যে অনেক জায়গা হইতে টেলিগ্রাফযোগে এই অফিসে জানান হয় যে, ঐ ময়দার ব্যবহার বন্ধ রাখা হইয়াছে।
•
চিত্তরঞ্জন হাসপাতালের ডাঃ বিসি রায় পেডিয়াটিক ও ক্যাজুয়ালটি ব্লক: কেন্দ্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ সুশীলা নায়ার রবিবার বিকালে কলিকাতার চিত্তরঞ্জন হাসপাতালের নূতন পেডিয়াট্রিক ও ক্যাজুয়ালটি ব্লকের উদ্বোধন করেন। ভবনটির নাম পরলোকগত ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের নামে রাখা হইয়াছে।
উদ্বোধন প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই আশা প্রকাশ করেন যে, যাঁহার মহত্ নাম এই ভবনটির সহিত আজ যোগ করা হইল—এই হাসপাতালটি যেন তাঁহার যোগ্য ধারক হইয়া ওঠে।
এই নূতন ভবনটির উপর পরে আর একতলা উঠিবে স্থির হইয়াছে। প্রস্তাব হইয়াছে, সুন্দরীমোহন এভিন্যুর উপর আর একটি আলাদা বাড়ী উঠিবে। এই বাড়ীটিতে হাসপাতালের ‘আউটডোর’ হইবে। এই বাবদ আড়াই লক্ষ টাকা ব্যয় ধরা হইয়াছে।
উদ্বোধন উপলক্ষে একটি সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান হয়। পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের সভাপতি শ্রীঅতুল্য ঘোষ ইহাতে পৌরোহিত্য করেন। উদ্বোধন অবশ্য খুব সহজে হয় নাই। কারণ অনুষ্ঠানের জন্য সংগৃহীত রূপার কাঁচি দিয়া ফিতাটি কাটা যায় নাই। শ্রীঅতুল্য ঘোষ সাহায্যের জন্য আগাইয়া আসেন। ফিতাটি খুলিয়া ফেলিতে চেষ্টা করেন। ইতিমধ্যে আর একটি কাঁচি সংগ্রহ করা হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনপর্ব সমাপ্ত হয়।
সোমবার কলিকাতার কিং জর্জ ডকে লেনিনস্ক নামক সোভিয়েট তৈলবৈহী
জাহাজের
এই চাকাটি ঘুরাইয়া পঃবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন
কেরোসিন
নামাইবার নলটির মুখ খুলিয়া দিতেছেন। ফটো: আনন্দবাজার
• কলিকাতায় টিউব রেল: কলিকাতায় টিউব রেল স্থাপন করা যায় কিনা, তত্সম্পর্কে একটি ফরাসী কোম্পানির বিশেষজ্ঞ দল এখানে আসিয়া তদন্ত করিতে পারেন বলিয়া নির্ভরযোগ্য মহলের আলাপ আলোচনায় জানা যায়।
প্রকাশ, এই ব্যাপারে একটি প্রস্তাব ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার সমীপে পেশ করা হইয়াছে। রাজ্য সরকার উহা অনুমোদন করিলে উক্ত কোম্পানির বিশেষজ্ঞগণ কলিকাতায় আসিবেন এবং তদন্ত করিয়া ছয় মাসের ভিতরে একটি রিপোর্ট পেশ করিবেন।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য, কয়েক বত্সর পূর্বে তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী স্বর্গগত ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে উল্লেখিত ফরাসী সংস্থার তরফ হইতে কলিকাতায় টিউব রেলওয়ে স্থাপনের সম্ভাবনা সম্পর্কে তদন্ত করিবার জন্য আসেন এবং এই ব্যাপারে কিছু প্রাথমিক কাজও করেন। পরে নানা কারণে উহা মাঝপথে বন্ধ হইয়া যায়।
• চুনী গোস্বামী ভারতীয় দলের অধিনায়ক: মোহনবাগান ক্লাবের খ্যাতনামা ফুটবল খেলোয়াড় চুনী গোস্বামী জাকার্তায় এশিয়ান গেমসে ভারতীয় দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হইয়াছেন বলিয়া বিশ্বস্তসূত্রে সংবাদ পাওয়া গিয়াছে।
ভারতীয় নির্বাচকমন্ডলীর চেয়ারম্যান শ্রী এম দত্তরায় টীম গঠনের জন্য ট্রায়াল ম্যাচে উপস্থিত থাকিতে পারেন নাই।
নির্বাচকমন্ডলীর অন্যান্য সদস্য সর্বশ্রী কে কে গাঙ্গুলী, এস এল ঘোষ, এন মহাপাত্র, নেলসন আইজ্যাক ও এম এ রহিম আজ মিলিত হইয়া দলের অধিনায়ক এবং চুড়ান্ত টীম গঠন করেন।
আগামী কাল ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের অফিস হইতে দলের অধিনায়ক ও চুড়ান্ত টীমের নাম ঘোষণা করা হইবে।
• রাজ্য সরকার কর্তৃক কলিকাতার উপকন্ঠে জমি দখলের সিদ্ধান্ত: পশ্চিমবঙ্গ সরকার কলিকাতার উপকন্ঠে দুইটি অঞ্চলে প্রায় তিনশত একর খালি জমি দখল করিবার সিদ্ধান্ত করিয়াছেন বলিয়া জানা যায়।
প্রকাশ, তন্মধ্যে অনুমান ২৬০ একর জমি বেহালা অঞ্চলে এবং ৪০ একর জমি দমদম অঞ্চলে দখল করা হইবে। ঐ সব অঞ্চলে দ্রুত উন্নয়ন ঘটিতেছে। ফলে জমি লইয়া ফাটকাবাজী সুরু হইয়াছে। উহা বন্ধ করিবার উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকার এইরূপ সিদ্ধান্ত করিয়াছেন বলিয়া জানা যায়।
বর্তমান প্রস্তাব অনুযায়ী দখলকৃত ঐ জমির উন্নতিবিধান করিয়া সঙ্গত মূল্যে উহার প্লট বিক্রয় করা হইবে। এই উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকার আর্থিক সাহায্যের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ জানাইয়াছেন।
• কলিকাতায় কাবুলীদের লগ্নী কারবার: কলিকাতায় প্রায় ৪০০ কাবুলীওয়ালা আছে। তন্মধ্যে ৩০০ কাবুলীওয়ালা টাকার লগ্নী ব্যবসা করে। আনুমানিক এক হিসাবে জানা যায় যে, কাবুলীওয়ালারা কলিকাতায় প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা লগ্নীতে খাটাইতেছে।
জনৈক কাবুলীওয়ালা বলে যে সে ৩৬ হাজার টাকা খাটায়। কিন্তু বিদেশীদের বসবাস-এর ব্যাপার যাহারা দেখাশুনা করে, সেই বিভাগটির কর্মচারীরা মনে করে যে উহার চেয়ে অনেক বেশী টাকা সে খাটায়। ঐ লোকটি গত ২০ বছর ধরিয়া কলিকাতায় বসবাস করিতেছে।
পুলিসের অনুসন্ধানে প্রকাশ, যে তিনশত কাবুলীওয়ালা টাকা লগ্নীর ব্যবসা করে, তাহাদের প্রত্যেকে গড়ে পাঁচ হাজার টাকা এই ব্যবসায় খাটায়।
চারিশত কাবুলীওয়ালার মধ্যে মাত্র ছয় জন পরিবার লইয়া এখানে এখানে বসবাস করে। আর সকলে একা থাকে।
• পরলোকে শ্রীযোগেন্দ্র নাথ মৈত্র: দেশবন্ধুর সহকর্মীর প্রবীণ কংগ্রেস-সেবী শ্রীযোগেন্দ্র নাথ মৈত্র থ্রম্বসিস রোগে আক্রান্ত হইয়া মাত্র দুই দিন রোগভোগের পর মঙ্গলবার রাত্রে তাঁহার কলিকাতাস্থিত বাসভবনে পরলোকগমন করেন। মঙ্গলবার অধিক রাত্রে কেওড়াতলামহাশ্মশানঘাটে তাঁহার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। মৃত্যুকালে তাহার বয়স ৭৪ বত্সর হইয়াছিল। শ্রী মৈত্র পাবনা জেলার শীতলাই-এর জমিদার ছিলেন। উত্তর বঙ্গের পাবনা তাঁহার প্রধান কর্মকেন্দ্র ছিল। তিনি ব্রাহ্মণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন ও তাহার সভাপতি ছিলেন। তিনি আদর্শ সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান ‘পাবনা হিতসাধন মন্ডলী’র প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। পাবনা, রাজসাহী, বগুড়া প্রভৃতি জেলার বহু স্থানে বহু স্কুল, কলেজ, টোল ইত্যাদি শিক্ষায়তনের প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন কাজের সহিত তিনি জড়িত ছিলেন। তিনি সঙ্গীত শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গেও আজীবন যুক্ত ছিলেন।
• বিধানচন্দ্র সপ্তাহের আজ উদ্বোধন: ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় স্মৃতিরক্ষা তহবিলে অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে আজ, রবিবার বিধানচন্দ্র সপ্তাহের উদ্বোধন হইতেছে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল শ্রীমতি পদ্মজা নাইডু এই দিন সকাল ৯টা হইতে ১১টার মধ্যে রাজভবনে সাধারণের নিকট হইতে অর্থ সংগ্রহ করিবেন। স্মৃতিরক্ষা কমিটির সম্পাদক শ্রীঅতুল্য ঘোষ তাঁহাকে সাহায্য করিবেন।
বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীপ্রফুল্লচন্দ্র সেন ৩টা হইতে সওয়া ৪টার মধ্যে বাগবাজার অমৃতবাজার পত্রিকাভবনে এবং সাড়ে ৪টা হইতে ৬টা পর্যন্ত সুতারকিন স্ট্রীটে আনন্দবাজার পত্রিকা ভবনে সাধারণের নিকট হইতে ঐ তহবিলে অর্থ সংগ্রহ করিবেন। স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি শ্রীতুষারকান্তি ঘোষ এবং সহ সভাপতি শ্রীঅশোককুমার সরকার উপস্থিত থাকিবেন।
• হাসপাতালে তিন জন ডাক্তার ছুরিকাহত: হাসপাতালের ভিতর পর পর চারজন ছুরিকাহত হইবার ঘটনার নজীর কলিকাতার ইতিহাসে নাই। সোমবার দ্বিপ্রহরে নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী দেখিতে গিয়া তিনজন চিকিত্সক ওয়ার্ডের মধ্যে আক্রান্ত ও ছুরিকাহত হন। ইহা ছাড়া জনৈক আগন্তুকও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ছুরির আঘাত পান। হাসপাতালে ভর্তি সঙ্কটাপন্ন জনৈক রোগীর হাতেই ঐ চারজন ছুরিকাহত হন বলিয়া অভিযোগ প্রকাশ। পুলিস ঐ সম্পর্কে শ্রীদেবেন হালদার নামে এক রোগীকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাহাকে পুলিস কেস হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
• কলিকাতার কলেজে কলেজে অধ্যক্ষদের দরজায় ছাত্রদের ধর্ণা: প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় কোর্সে এবং ডিগ্রি কোর্সে ভর্তির শেষ দিন ছিল সোমবার। এই দিন কলিকাতার যে কলেজেই গিয়াছি, ম্লান শুষ্ক মুখে ছাত্রদিগকে অধ্যক্ষদের দরজার বাহিরে ভিড় করিয়া দাঁড়াইয়া থাকিতে দেখিয়াছি। তাহারা ভর্তি হইতে চায়।
বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষদের সহিত এই সম্পর্কে আলোচনা করিয়া জানা গিয়াছে, কলিকাতার কোন কলেজেই বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তি হইবার জায়গা নাই, হিউমানিটির বিষয়ে ভর্তির সুযোগ এখনও অনেক কলেজেই আছে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, ছাত্রমাত্রেই প্রথমে বিজ্ঞান বিষয়ে এবং সেখানে ঠাঁই না মিলিলে বাণিজ্য বিষয়ে পড়িতে চায়। হিউমানিটিস যেন ‘অগতির গতি’—সে চাহিদা সকলের শেষে।
কলিকাতার একটি কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ জানান, অন্যান্য রাজ্যের ছাত্ররা কলিকাতার কমার্স কলেজগুলিতে আসিয়া এত ভিড় বাড়াইয়াছে যে এই রাজ্যের ছাত্ররা সেখানে পাত্তা পাইতেছে না।
• কলিকাতা অঞ্চলে বিদ্যুত্ ঘাটতি মিটাইবার ব্যবস্থা: কেন্দ্রীয় সেচ ও বৈদ্যুতিক দপ্তরের মন্ত্রী শ্রী হাফিজ মহম্মদ ইব্রাহিম আজ লোকসভায় জানান যে, কলিকাতা অঞ্চলে বৈদ্যুতিক শক্তির ঘাটতি মিটাইবার ব্যবস্থা সভায় করা হইয়াছে।
কলিকাতা অঞ্চলে বৈদ্যুতিক শক্তি সরবরাহের অবস্থা এবং এই সরবরাহ বৃদ্ধির প্রয়াস সম্পর্কে এক বিবৃতি প্রসঙ্গেই তিনি কথাগুলি বলেন।
এই বিবৃতিতে বলা হইয়াছে যে, (১) কলিকাতা অঞ্চলে বৈদ্যুতিক শক্তির চাহিদা অত্যন্ত বাড়িয়া গিয়াছে এবং এই চাহিদা কলিকাতা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কর্পোরেশনের বৈদ্যুতিক শক্তি উত্পাদন ক্ষমতা ও তত্সহ ডি ভি সি হইতে যে পরিমাণ বৈদ্যুতিক শক্তি পাওয়া যায় তাহা ছাড়াইয়া গিয়াছে। দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের বৈদ্যুতিক শক্তি উত্পাদন ব্যবস্থা হইতে প্রাপ্ত ১১ মেগাওয়াট বৈদ্যুতিক শক্তি সহ কলিকাতা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কর্পোরেশনের নিকট হইতে যে পরিমাণ বৈদ্যুতিক শক্তি পাওয়া যায়, তাহার মোট পরিমাণ ৩৭৬ মেগাওয়াট। সেক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক শক্তির সর্বোচ্চ চাহিদার পরিমাণ ৪১০ মেগাওয়াট। কাজেই বিকাল পাঁচটা হইতে যে সময় সর্বাধিক পরিমাণ বৈদ্যুতিক শক্তির প্রয়োজন হয়, সেই সময় ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৩৪ মেগাওয়াট এবং কলিকাতা ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কর্পোরেশনকে ভোল্টেজ হ্রাস ও মাঝে মাঝে বিভিন্ন অংশে বৈদ্যুতিক শক্তি সরবরাহের পরিমাণ হ্রাস-কার্য-সাধনের উপায়রূপে এই প্রকারের নানা ব্যবস্থার আশ্রয় গ্রহণ করিতে হইয়াছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও সমস্ত শিল্প কারখানায় বৈদ্যুতিক শক্তি সরবরাহ হ্রাস করিবার একটি প্রস্তাব বিবেচনা করিতেছেন।
• শতকরা ত্রিশটি ক্ষেত্রে পানীয় জলে দোষ: কলিকাতা মহানগরীর ‘পানীয় জল’ কতটা পানীয়? শতকরা ত্রিশটি ক্ষেত্রে জলের গুণ সন্তোষজনক নহে। সম্প্রতি কর্পোরেশনের চীফ এ্যানালিল্টের এক সমীক্ষায় এই তথ্য জানা গিয়াছে। গত ২১শে জুলাই যে সপ্তাহ শেষ হইয়াছে সেই সপ্তাহে কর্পোরেশনের পক্ষ হইতে বিভিন্ন এলাকায় ১১৮টি পানীয় জলের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাহার মধ্যে ৩৫টি ক্ষেত্রে পানীয় জলের গুণ সন্তোষজনক নহে বলিয়া প্রতিপন্ন হইয়াছে। ঐ রিপোর্টে দেখা যায় যে, ১৭ নম্বর এবং ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে যে ১৩টি ক্ষেত্রে পানীয় জলের নমুনা পরীক্ষা করা হয় তাহার সবগুলিতেই জল অসন্তোষজনক। বিশেষঞ্জগণ মনে করেন যে, পানীয় জলের সহিত যথাযথভাবে ক্লোরিন না মেশানোর দরুন জলের গুণ সন্তোষজনক না হইতে পারে।
•
কলিকাতার ল্যান্সডাউন জুট মিল: আজ লোকসভায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী শ্রী মনুভাই শাহ বলেন যে, কলিকাতার ল্যান্সডাউন জুট মিল আগানী নবেম্বর হইতে বন্ধ করিয়া দেওয়া হইবে বলিয়া জানান হইয়াছে। শ্রীইন্দ্রজিত্ গুপ্তের (কম্যু) অতিরিক্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, ঐপাটকলের যন্ত্রপাতি খুব পুরানো এবং পুনর্বিন্যাসের পক্ষে অনুপযুক্ত।
• এবারে সাপ নয়: এবারে সাপ নয়, মাছ। কলের জল বাহিয়াই গৃহপ্রবেশ ঘটিয়াছে। তবে বাজারে মত্স সংকট সত্ত্বেও গৃহস্থ ইহাতে খুসী হইতে পারেন নাই। আতঙ্কিত হইয়াছেন— মাছের সংখ্যা এক এবং মাছটি খয়রা মাছের বাচ্চা বলিয়া নয়, ভবিষ্যত ভাবিয়া। ঘটনাটি আজই শনিবার। জোড়াসাঁকো এলাকার রামমোহন সাহা লেনের এক বাড়িতে।
এ ব্যাপারে এ পাড়ায় যথেষ্ট নাম হইয়াছে। কারণ, গৃহস্থ শ্রীশঙ্কর বসু বলেন, চলতি সপ্তাহে এ পাড়ারই দুই বাড়িতে কলের জলের সঙ্গে দু’মুখো সাপের বাচ্চা বাহির হয়।
গৃহস্থ মনে করেনঃ জলের অভাব আছে। মাছও দুষ্প্রাপ্য। তবু জলের সঙ্গে সাপ-মাছ ফাউ আসিতে থাকিলে গৃহস্থের গলা শুকাইয়া কাঠ হইবে, তখন কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে কাঠফাটা চীত্কার করাও সম্ভব হইবে না।
• প্রথমে ষণ্ড বিতাড়ন, পরে খাটাল অপসারণ: আগামী সপ্তাহ হইতে কলিকাতার রাজপথে ‘ষণ্ড বিতাড়ন’ পর্ব সুরু হইবে। সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ খাটাল অপসারণ কাজও আরম্ভ হইবে। শনিবার লালবাজার পুলিশের সদর দপ্তরে পুলিশ কমিশনার এক বৈঠক আহ্বান করেন। ষণ্ড বিতাড়ন অভিযান কিভাবে কার্যকর করা যায় বৈঠকে তাহা আলোচনা হয়। ঠিক হইয়াছে, আগামী সপ্তাহে ২০টি ষাঁড় কলিকাতার রাজপথ হইতে ধরিয়া পানাগড়ের লালবাবা আশ্রমে পাঠান হইবে। ষাঁড়গুলিকে প্রথমে বেলগাছিয়া স্থিত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দিগ্ধপল্লীতে সইয়া যাওয়া হইবে। কয়েকদিন পর সেখান হইতে ট্রেনে পানাগড়ে পাঠান হইবে। নগরীতে প্রায় ২০০ বেওয়ারিশ বা ‘ধর্মের ষাঁড়’ আছে। ঐগুলি খুশীমাফিক রাস্তায় ঘুরিয়া বেড়ায়, ভীড়ের মধ্যে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়।
• হাওড়া স্টেশনে বাঘ: খাঁচার বাঘ আবার খাঁচায় বন্দী হয়েছে। কিন্তু তার আগে যে এমন কাণ্ড বাঁধিয়েছে যে, হাওড়া স্টেশনে দীর্ঘ চার ঘণ্টাকাল হৈ হৈ রৈ রৈ ব্যাপার। বাঘটির নাম লক্ষণ। কিন্তু লক্ষণ সুন্দরহনের রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার নয়, মধ্যপ্রদেশের রেওয়ার বাঘ। সে খাঁচা ভেঙ্গেও রেহাই পায়নি। বরং যন্ত্রনাই পেয়েছে। তাকে আরও মজবুত খাঁচার মধ্যে বন্দী হতে হয়েছে। সোমবার কর্ণচঞ্চল হাওড়া স্টেশনে হাজার হাজার যাত্রী মুক্তিকাতর তার ঐ যন্ত্রনা প্রত্যক্ষ করেছেন। অনেকে আশংকিত হয়েছেন। কিন্তু কটি মানুষ সহানুভুতি প্রকাশ করেছেন জানি না।
• নিম্নমানের ঔষধের সন্ধানে কলিকাতার বাজারে হানা: পশ্চিমবঙ্গের ভেষজ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ কলিকাতার এক দোকানে হানা দিয়া মহারাষ্ট্রে প্রস্তুত পেটেন্ট ঔষধের কিছু নমুনা হস্তগত করিয়াছে। মহারাষ্ট্র ও অন্যান্য কয়েকটি রাজ্যে তৈরী নিম্নমানের ঔষধ কলিকাতার বাজারে চলিতেছে বলিয়া ঐ দপ্তরে অভিযোগ আসিয়াছে। গত শনিবার হইতে এই হানা শুরু হইয়াছে। এদিকে মহারাষ্ট্রের ভেষজ পরিদর্শকদল ও এনফোর্সমেন্ট পুলিশ কলিকাতা এনফোর্সমেন্ট পুলিশের সহায়তায় নিম্নমানের ঔষধের সন্ধানে কলিকাতা মহানগরী চষিয়া ফেলিতেছেন। সোমবার তাঁহারা রাজ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রীর সহিত সাক্ষাত্ করেন। সোমবার মুচিপাড়া এলাকায় মালিকের অনুপস্থিতিতে তাঁহারা একটি কারখানার তালা ভাঙ্গিয়া কাগজপত্র আটক করেন। আরও ছয়টি ক্ষেত্রে তাঁহারা কাগজপত্র হস্তগত করিয়াছেন। ঐ দিন এই পরিদর্শকদল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ভেষজ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের কাগজপত্রও পরীক্ষা করেন। মহারাষ্ট্রে আটক পশ্চিমবঙ্গের নিম্নমানের ঔষধ সম্পর্কে তাঁহাদের অভিযোগ অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গ ভেষজ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ কত দূর কী করিয়াছেন তাহা এই পরিদর্শকদল নোট করিয়াছেন। মহারাষ্ট্রে পরিদর্শকদল নিজেরা অনুসন্ধান চালাইয়া কী জানিতে পারিয়াছেন, তাহা পশচিমবঙ্গ সরকারকে জানাইবার জন্য নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে।
• সাতাশ দিন পর
পৌরসভার শ্রমিকদের উপর আবার জঞ্জাল সাফের ভার: সাতাশ দিন পরে শুক্রবার হইতে মহানগরীর জঞ্জাল সাফের ভার আবার কর্পোরেশনের ১৪০০ মজদুরের উপর আসিয়া পড়িল। এইদিন সারা শহরে ২৫০টি লরী সকাল-বিকাল মিলাইয়া প্রায় ছয় শত ট্রিপ দেয়। গত কয়েকদিনের মত এইদিনও যে সারা শহর নির্জঞ্জাল ছিল, তাহা বলা যায় না। পর্বতপ্রমাণ না হইলেও অনেক স্থানে রাজপথের পাশে জঞ্জাল জমিয়া ছিল, তবে মোটামুটি সারা শহর ঘুরিয়া এই কথা মনে হইয়াছে যে, সাতাশ দিন আগে কলকাতা শহরের যে রূপ দেখিয়াছে, এখনকার অবস্থা সে তুলনায় অবশ্যই কিছু ভাল। শহরের আবর্জনা সম্পর্কে কর্পোরেশন কিছুটা সজাগ হইয়াছেন। কর্পোরেশনের নিজে জঞ্জাল সাফ ব্যবস্থা সরেজমিনে তদন্ত করিয়াছেন। —আনন্দবাজার চিত্র
• মহানগরীর ষণ্ড-বিদায়: অবশেষে কলিকাতা হইতে ষণ্ড বিতাড়ন সুরু হইল। পয়লা কিস্তিতে গত শুক্রবার বাইশটি যণ্ড পরাভব মানিয়াছে।
যত্রতত্র ভ্রাম্যমান এই ষণ্ড সম্প্রদায়কে বাগে আনিবার জন্য বিতাড়নকারীদের মুখ্যভূমিকা গ্রহণ করিয়াছিলেন স্বয়ং পুলিস কমিশনার। শনিবার রাজ্য পশুপালন মন্ত্রী শ্রীফজলুর রহমান বেলা চারটা নাগাদ অভিযানকারীদের হাতে নাস্তানাবুদ ঐ বাইশটি ষণ্ডের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করিবার জন্য বেলগাছিয়ায় যান। শুক্রবারের ঐ অভিযান পরিচালনার ভার লন কলিকাতা পুলিস এবং রাজ্য পশুপালন দপ্তরের কর্মচারিগণ। রাত্রি এগারটা নাগাদ কলুটোলা স্ট্রীট হইতে দুই ধারে সারি সারি পুলিস বেষ্টনীর মধ্যে ষাঁড়গুলিকে ধরিবার জন্য ফাঁদ পাতা হয়। শেষ পর্যন্ত রাত্রি তিনটা নাগাদ বাইশটি ষণ্ড নিরুপায় হইয়া অভিযানকারীদের কাছে আত্মসমপর্ণ করে। তার মধ্যে দুইটিকে ক্রেনে করিয়া তুলিতে হয়। ধৃত ষণ্ডদের আপাতত বেলগাছিয়ায় সরকারী দুগ্ধ কলোনীর কাছে একটি খোলা জায়গায় আটক করিয়া রাখা হইয়াছে। প্রতিটি ষণ্ডের জন্য বরাদ্দ করা হইয়াছে বাঁশ দিয়া ঘেরা ১৫*১০ ফুট স্থান।
• ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতাল:
ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের স্মৃতিরক্ষার্থে আধুনিক শিশু হাসপাতালটি নারিকেলডাঙ্গা মেন রোড এলাকায় নির্মিত হইবে বলিয়া আশা করা যায়। ঐখানে কুড়ি বিঘার কিছু বেশী উপযুক্ত জমির সন্ধান মিলিয়াছে।
কিন্তু মহানগরীতে এক খণ্ডে ত্রিশ বিঘার মত জমি পাওয়ার অসুবিধার ফলে স্মৃতিরক্ষা কমিটি শিশুদের জন্য পার্ক, গ্রন্থাগার, খেলাঘর, প্রেক্ষাগৃহ ইত্যাদি শহরের অন্যত্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত করিয়াছেন। উহার জন্য জমির সন্ধান চলিতেছে।
• ট্রামে-বাসে মুখোমুখি সঙ্ঘর্ষ: রবিবার বিপিন গাঙ্গুলী স্ট্রীট ও চিত্তরঞ্জন এভিন্যুর মোড়ে একটি বাস ও ট্রামে মুখোমুখি সঙ্ঘর্ষ হয়। ১৮ জন যাত্রী ইহাতে আহত হইয়াছেন। দুর্ঘটনাটি ঘটে দুপুর বারোটা বিশ মিনিটে।
আহতদের দুইজনের অবস্থা একটু গুরুতর। আহতদের নাম অরুণ সেন (২৩) ও নৃপেন্দ্রনাথ সিংহ রায় (৩২)। দুইজনকেই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হইয়াছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিত্সার পর ছাড়িয়া দেওয়া হয়। বাসটি ‘৩এ’ রুটের। বিপিন গাঙ্গুলী স্ট্রীট ধরিয়া পূর্ব হইতে পশ্চিমে যাইতেছিল। ট্রামটি বিপরীত দিক হইতে আসিতেছিল। এই সময়ই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার ফলে বাসটি অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাস চালককে গ্রেপ্তার করা হইয়াছে।
আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এই সকল প্রবন্ধের বানান ও ভাষা অপরিবর্তিত।
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website
may be copied or reproduced without permission.