‘আমি ঢাকার ভানু’
ঢাকা থেকে কলকাতায় চলে এসে বদলেই গেল দেশ অন্ত প্রাণ এক ‘সাম্যময়’ ছেলের জীবন। পরবর্তীতে ‘বাঙাল’ ভাষাকে নিজের শিল্প-জীবন দিয়ে খ্যাতির অসীম উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। হাস্যকৌতুক শিল্পে নতুন এক ঘরানার জন্মও হয়েছিল তাঁর হাত ধরে। মঞ্চ-চলচ্চিত্র-শ্রুতিনাট্য— স্বরক্ষেপণই জানিয়ে দিত তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। ২৬ অগস্ট তাঁর জন্মদিন। তার আগে বাংলা সংস্কৃতির বিশিষ্ট শিল্পী ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য।
বাঙালি নাকি ‘স্ত্রী লিঙ্গ’! তা হলে শব্দটির লিঙ্গান্তর করলে কী হবে? কেন ‘বাঙাল’! ‘জনপ্রিয়’ এই ব্যাখ্যাটি বঙ্গ জীবনে হাস্যরসের মোড়কে যিনি পেশ করেছিলেন তাঁর নাম সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু কী বাঙালি-বাঙাল! ‘মাসীমা মালপো খামু’, ‘টিনের বাক্সে বারো টাকা’, ‘নাগো মিনু আমাগো থার্মোমিটারও নাই, বার্নলও নাই’, ‘দ্রিমু য্রখন ত্রখন স্রব ত্রাইতেই দ্রিমু’... এমন হাজারো সংলাপ বাঙালির মুখে মুখে ফিরত তখন! ফিরত কেন, এখনও তো নানা হাস্য-আলোচনায় ঘুরে ফিরে আসে এই সব সংলাপ। ভাবছেন, এ সবের স্রষ্টা হিসেবে খ্যাত মানুষটির নাম তো ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়! ঠিকই, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোশাকি নাম ছিল সাম্যময়। তাঁর পরিবার কমিউনিজমে বিশ্বাসী ছিল। তাই, মাতামহ যোগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের দেওয়া ‘সাম্যময়’ নাম নিয়ে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘রসিকতা’ ছিল— that I am communist, I bear it in my name.

অধুনা বাংলাদেশের বিক্রমপুরের মুন্সীগঞ্জে ১৯২০ সালের ২৬ অগস্ট ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম। অনেক প্রথিতযশা ব্যক্তির জন্ম হয়েছিল এই জেলায়। তাঁর বাবা ছিলেন জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, মা সুনীতি বন্দ্যোপাধ্যায়। ভানুবাবুর প্রাথমিক শিক্ষা পোগোস বিদ্যালয়ে, পরের ধাপগুলিতে জর্জস হাইস্কুল, জগন্নাথ কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছোটবেলা থেকেই কৌতুক ছিল তাঁর অত্যন্ত প্রিয় বিষয়। আর সে কারণেই বাংলা মঞ্চ-চলচ্চিত্র-শ্রুতিনাট্যে হাস্যকৌতুকের সংজ্ঞাটাই পাল্টে দিতে পেরেছিলেন তিনি। অভিনয় জীবনে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু কৌতুকশিল্পী ছিলেন এমন নয়, ‘সিরিয়াস’ অভিনয়েও তিনি ছিলেন অনবদ্য। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কলকাতায় কাটালেও নিজেকে ঢাকার ‘পোলা’ হিসেবে পরিচয় দিতে তিনি গর্ব বোধ করতেন।

দেশপ্রেমী
বাবা জিতেন্দ্রনাথ ছিলেন ঢাকার নবাব এস্টেটের সদর মোক্তার ও মা সুনীতিদেবী ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষা দফতরে কাজ করতেন। বাবা-মা সরকারি কর্মচারী ছিলেন বলে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধাচরণ নিষেধ ছিল বাড়িতে। তা সত্ত্বেও ১২ বছরের ভানু লুকিয়ে স্বদেশি আন্দোলনে যোগ দিলেন। ম্যাট্রিক পাশ করার পরে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে আইএ পাশ করার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ পড়তে এলেন তিনি। বুদ্ধিমান এই ছাত্রটিকে সব অধ্যাপকেরা ভালবাসতেন। জসীমুদ্দিন, মোহিতলাল মজুমদার, শহীদুল্লা, পদ্মরুদ্র ও আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসুর স্নেহধন্য ছিলেন তিনি। নিজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বেশির ভাগ সময়ে ভানুবাবু সত্যেন্দ্রনাথ বসুর ক্লাসে গিয়ে পড়া শুনতেন।

১৯৪০ সালে যখন বেশির ভাগ অনুশীলন সঙ্ঘের বিপ্লবীরা আরএসপি নামে বামপন্থী দল গঠন করলেন তখন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই দলের সঙ্গে যুক্ত হলেন। তিরিশের দশকের শেষের দিকে ছাত্রনেতা ভানু আন্দামান থেকে রাজনৈতিক বন্দিদের ফিরিয়ে আনা এবং তাঁদের মুক্তি আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করলেন। বিপ্লবী দীনেশ গুপ্তের সহচর ও স্বদেশি আন্দোলনে যুক্ত থাকায় রাজরোষে পড়ে ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হলেন ভানু। বিয়াল্লিশের ভারত ছাড়ো আন্দোলনেও তিনি ছিলেন সক্রিয়। দীনেশ গুপ্ত ছাড়াও তিনি বিনয় বসু, কেদারেশ্বর সেনগুপ্ত, রমেশ আচার্যের সংস্পর্শে আসেন। ১৯৪৬-এ বিপ্লবী অনন্ত সিংহের সান্নিধ্যে এসে তাঁর আদর্শ ও চিন্তাধারায় গভীর ভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়।

ঢাকা থেকে ‘পালিয়ে’
দেশভাগের অনেক আগেই ঢাকা থেকে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় চলে এলেন। তখন ১৯৪১ সাল। এসেই কর্মজীবনে ঢুকে পড়লেন, অফিসের নাম— আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি। ঢাকা থেকে কলকাতায় এসে প্রথম দু’ বছর তিনি অশ্বিনী দত্ত রোডে দিদির বাড়ি থাকলেও, পরে টালিগঞ্জের ৪২ নম্বর চারু অ্যাভিনিউতে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত পাকাপাকি ভাবে বসবাস। দিদির বাড়ি থাকাকালীন একটি ঘটনা ঘটে। তাঁর ভগ্নিপতি শ্রীবাদল গঙ্গোপাধ্যায় ছিলেন অত্যন্ত রাশভারী ও মেজাজি মানুষ। দিদির বাড়িতে নিয়ম খাওয়ার টেবলে সবাইকে একটি নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত থাকতে হবে। প্রায় দিনই ভানুবাবুর সময়ের এ দিক ও দিক হয়ে যেত। এক দিন এত দেরি হয়ে গেল যে, এসে দেখলেন, বাড়ির আবহাওয়া থমথমে। সবাই খেয়েছে কি না জানতে চাইলে কোনও উত্তর পাওয়া গেল না। দেখা গেল রান্নাঘরে শেকল তোলা। খবর নিয়ে জানতে পারলেন, আড্ডা থেকে ফিরতে দেরি করায় সকলের খাওয়া বন্ধ করে শেকল তুলে দিতে বলেছেন গৃহকর্তা। এই কথা শুনে তিনি চুপিচুপি শেকল খুলে খাওয়াদাওয়া সেরে আবার আড্ডায় বেরিয়ে পড়লেন। এই কথা জানাজানি হওয়ার পর ভগ্নিপতি তো হতাশ! যার জন্য আদেশ দিয়েছিলেন সে বাদে বাকি সবাই শাস্তি পেল!

বিয়ে ও মুখোমুখি ক্যামেরা
১৯৪৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি সঙ্গীতশিল্পী নীলিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিয়ে হয়। ‘সর্বহারা’ চলচ্চিত্রে ভানুবাবু অভিনয় করেছিলেন আর ওই একই ছবিতে গান গেয়েছিলেন নীলিমাদেবী। বন্দ্যোপাধ্যায় দম্পতির অভিনয়-সঙ্গীতের এমন ‘যুগলবন্দি’ সেই প্রথম। শুধু কী তাই, স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে যে ছবিটি প্রথম দেখেছিলেন তার নামও ‘সর্বহারা’।
‘পথে হল দেখা’ ছবিতে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিয়ের ঠিক ৩ দিন পর ২৬ ফেব্রুয়ারি চলচ্চিত্রের শ্যুটিং-এ প্রথম বার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালেন ভানুবাবু। পরের বছর অর্থাত্ ১৯৪৭-এ মুক্তি পাওয়া ‘জাগরণ’ চলচ্চিত্র দিয়ে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয় জীবনের শুরু। এ ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করেন সুধীরলাল চক্রবর্তী। আর ভানুবাবু অভিনয় করেছিলেন দুর্ভিক্ষপীড়িতের চরিত্রে। পরে অভিনয়ের কারণেই চাকরি জীবন থেকে নিজেকে ‘মুক্ত’ করেছিলেন ভানুবাবু। সেই বছরই ‘অভিযোগ’ নামে অন্য একটি ছবি মুক্তি পায়। এর পর ছবির সংখ্যা বাড়তে থাকে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘মন্ত্রমুগ্ধ’ (১৯৪৯), ‘বরযাত্রী’ (১৯৫১), ‘পাশের বাড়ি’ (১৯৫২) ইত্যাদি।

১৯৫৩ সালে মুক্তি পেল ‘সাড়ে চুয়াত্তর’। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁর অভিনয় গুণের কারণে চিনে ফেলল আপামর বাঙালি। এ ছবিরই সেই বিখ্যাত সংলাপ— মাসীমা মালপো খামু। পরের বছর মুক্তি পায় ‘ওরা থাকে ওধারে’— ঘটি-বাঙালের চিরন্তন ‘ঠেস’ নিয়ে এই ছবি এবং সেখানে ভানুবাবুর অভিনয় চিরস্মরণীয়।

অভিনেতার নামে চলচ্চিত্র ও চরিত্রের নাম বাংলা চলচ্চিত্র-ইতিহাসে বোধহয় ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঝুলিতেই রয়েছে— ‘ভানু পেল লটারি’ ও ‘ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিসট্যান্ট’।

রেকর্ড থেকে মঞ্চ
১৯৪৩-এ ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড-এ কৌতুক নকশা বের হয়। নাম ছিল ‘ঢাকার গাড়োয়ান’। শোনা যায়, এই শ্রুতিনাট্যের প্রেরণা তিনি ঢাকার গাড়োয়ানদের কাছ থেকেই পেয়েছিলেন।

তাঁর বিখ্যাত শ্রুতি নাটকের সংখ্যা অনেক— যেখানে বাঙাল ভাষাকে ব্যবহার করে হাস্যরসের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। তেমনই সংলাপ—
ভানু: আমি ত বাঙাল। আপনে কি?
চরিত্র: আমি আবার কি? বাঙালি।
ভানু: তাইলে কি খাড়াইল?
চরিত্র: কি আবার খাড়াইল?
ভানু: কথাডারে ব্যাকরণে ফেলান। আমি হইলাম বাঙাল আর আপনে হইলেন বাঙালি। তার মানে আমি হইলাম পুং লিঙ্গ আর আপনে হইলেন স্ত্রী লিঙ্গ।

মঞ্চ নাটকেও তিনি ছিলেন সফল অভিনেতা। সহজ জীবনের স্বাভাবিক হাস্যরসটুকু নিখুঁত, নিপাট ভাবে তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন আমজনতার মধ্যে। এই নিখাদ হাসির ক্যানভাসে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় অনন্য।
ভানু ও কালী বন্দ্যোপাধ্যায়
তাঁর উল্লেখযোগ্য নাটক— ‘মন্ত্রশক্তি’, ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’, ‘লালদিঘির দিনরাত্রি’, ‘শ্যামলী’ ইত্যাদি। ‘রণবীর’ নামের একটি নাটকে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। তখন ভানু ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।

অপেশাদার হিসেবে পাড়াতে অভিনয় করেছিলেন ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটকে, ‘চাণক্য’ চরিত্রে। এ নাটকে ‘চন্দ্রগুপ্ত’ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সাহিত্যিক হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়। ১৯৪৮ সালে ‘উত্তরসাথী’ ব্যানারে ‘নতুন ইহুদি’ নাটক মঞ্চস্থ হয়। নাটকটি প্রথম অভিনয় হয়েছিল ‘কালিকা’ হলে। অভিনয়ে ছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়, সুশীল মজুমদার, বাণী গঙ্গোপাধ্যায়, কানু বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। তবে পেশাগত ভাবে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম নাটক ‘আদর্শ হিন্দু হোটেল’— ১৯৫০-এ।

১৯৭০-এ সুনীল নাট্য সংস্থা কিনে নিয়ে ‘সুনীল নাট্য কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠা করেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৭৪-এ আরও একটি যাত্রা দল গঠন করেন— ‘মুক্তমঞ্চ’। এই দল নিয়েই গ্রামে গঞ্জের মাঠে মাঠে যাত্রা করে বেড়াতেন। ১৯৭৮ পর্যন্ত এই দুই দল নিয়ে ‘গোপাল ভাঁড়’, ‘বৈকুন্ঠের উইল’, ‘যমালয়ে জীবন্ত মানুষ’, ‘ভৈরব মন্ত্র’, ‘শ্রীযুক্ত আলিবাবা’ ইত্যাদি পালায় মাতিয়ে তুলেছিলেন গ্রামবাংলা, রাতের পর রাত।
উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মাঝে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়।
‘রঙ্গনা’য় ১৯৮০ সালে ‘জয় মা কালী বোর্ডিং’-এ অভিনয় করেন। পরে রঙমহলেও নাটকটি হয়েছিল।

শেষের সে দিন
ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের শেষ চলচ্চিত্র ‘শোরগোল’। ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮৪ সালে। এর কিছু দিন আগেই, ৪ মার্চ, ১৯৮৩— উনি প্রয়াত হয়েছিলেন। আজীবন আপামর বাঙালিকে হাসিয়ে নিজের শেষযাত্রায় উনি সবাইকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নিলেন। ব্যক্তি জীবনে খুবই গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ ছিলেন, যদিও রসবোধ ছিল ষোলআনা। সে জন্যই হয়তো মানুষকে আনন্দ দেওয়ার একটা সহজাত প্রতিভা তাঁর ছিল। তবে বাঙালি যত দিন থাকবে, বাংলা চলচ্চিত্রের গগনে এই ভানু যে থাকবেন স্বমহিমায় তাতে কোনও সন্দেহ নেই!

এই সময়ের শিল্পীর চোখে
পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়: তিনি অভিনয় করতেন সারা শরীর দিয়ে— ‘গৃহপ্রবেশ’ ছবিতে ভৃত্য চরিত্রে কেবলমাত্র ঘাড় ও মুখ নাড়িয়ে গৃহকর্তার প্রশ্নের উত্তর দেওয়া থেকে তা সুপ্রতিষ্ঠিত। আমার অভিনয় জীবন পরে শুরু হলেও, ওঁর সাহচর্য পেয়েছি বেশ কয়েক বছর। রেডিওতে অনুষ্ঠান করার সূত্রেই এই ‘রসিক সহচর’-এর সান্নিধ্যে আসা। বীরবল, মোল্লা নাসিরুদ্দিন, গোপাল ভাঁড়ের মতো প্রত্যুত্পন্নমতিত্বের জন্যই তাঁকে এই আখ্যা দেওয়া যায়। যে কোনও কথার জবাব থাকত তাঁর ঠোঁটের গোড়ায়।
তিনি ছিলেন ‘জাত’ অভিনেতা। ঈশ্বর সকল রকম উপাদান দিয়ে পাঠিয়েছিলেন তাঁকে। আর তিনি সেই সব উপাদান স্বমহিমায় প্রসারিত করেন তাঁর কর্মে। কেবলমাত্র কৌতুকাভিনেতা নয়, যে কোনও চরিত্রে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ‘টাকা আনা পাই’ ছবি তাঁর সেই অভিনয় দক্ষতার এক অনন্য নজির। তিনি ছিলেন আপন মহিমায় মহীরূহ।



খরাজ মুখোপাধ্যায়: বাঙাল ভাষাকে অস্ত্র করে ‘একটা অভিনয়’ জীবন কাটানো— কেবলমাত্র তাঁর পক্ষেই সম্ভব! তবে ‘তিনি শতাব্দীর সেরা কৌতুকশিল্পী’— এ কথা বললে তাঁর অভিনয় দক্ষতার যে বিশাল ব্যাপ্তি তাতে পূর্ণচ্ছেদ টেনে দেওয়া হয়। ‘নির্দিষ্ট শিল্পীর অনুপস্থিতিতে’ ছবিতে তাঁর অভিনয় অবিস্মরণীয়। মঞ্চেও তিনি ছিলেন সমান দক্ষ। তাঁর প্রয়াণের প্রায় তিরিশ বছরে অনেক একলব্যই তাঁকে অনুসরণ করেছেন, পরেও করবেন। তিনি কৌতুকাভিনয়ের পথপ্রদর্শক, শিক্ষক। অস্ত গিয়েও ‘ভানু’র আলো থাকবে চিরদিন।


শুভাশিস মুখোপাধ্যায়: তিনি ছিলেন এক সম্পূর্ণ অভিনেতা— নাটক, যাত্রা, সিনেমা, বেতার, সর্বক্ষেত্রেই তাঁর ছিল সমান সাবলীলতা। ‘আ গ্রেট কমেডিয়ন’, যাঁর তুলনা তিনি নিজেই। ‘কমেডি’র মূল মন্ত্র সংলাপ প্রক্ষেপণ ও ‘টাইমিং’, যা ছিল তাঁর জন্মগত। তাঁর অভিনয় জীবন হাসির ছলে ‘বাঙাল’ ভাষাকে যে মর্যাদার আসনে বসিয়েছিল, তা আজও অক্ষুন্ন। আর ‘সিরিয়াস’ অভিনয়েও তাঁর পারদর্শিতা অমলিন।
ভীষণ রোগা, লম্বা আর আজানুলম্বিত হাত— চেহারাতেই যেন ছিল হাসির রসদ। তবে ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন বেশ আবেগপ্রবণ। শুনেছি, জুনিয়র অভিনেতারা ঠিকমতো যোগাযোগ না করলে, তিনি সোজা উপস্থিত হতেন তাঁদের বাড়িতে।
তাঁর সঙ্গে অভিনয় করার সুযোগ না পেলেও, এক বার রেডিওতে একটা কাজের সূত্রে আলাপ হয়। ক্ষণিকের সেই পরিচয়ে বেশ কিছু ‘টিপস’ দিয়েছিলেন ভানুদা। তাঁকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম।

শিল্পী ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রায় ৩০০-র মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—
যমালয়ে জীবন্ত মানুষ পার্সোনাল অ্যাসিস্টেন্ট মৃতের মর্ত্যে আগমন ৮০-তে আসিও না মিস প্রিয়ংবদা
ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিন্ট্যান্ট ওরা থাকে ওধারে লেডিস সীট ভানু পেল লটারিনির্দিষ্ট শিল্পীর অনুপস্থিতিতে

প্রকাশিত বই: রসরচনা ‘চাটনি’, ১৯৫৫।

তথ্য: পাপিয়া মিত্র
সাক্ষাত্কার: শেলী মিত্র
—নিজস্ব চিত্র
 
 

 
 
 
 

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player

 
অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.