শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের সিবিআই তদন্তের দাবিতে রাজ্যপাল এমকে নারায়ণনের দ্বারস্থ হচ্ছে দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্ট। ফ্রন্ট সূত্রের খবর, আগামী শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারি বিকালে কলকাতায় রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করবেন জেলা ফ্রন্টের নেতারা। সেখানে দুর্নীতি কান্ড এবং ঘটনার জেরে তৎকালীন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামনকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনার সিবিআই তদন্তের দাবি রাজ্যপালের কাছে জানাবেন ফ্রন্ট নেতারা। ইতিমধ্যে ওই দাবিতে শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকায় সভা, মিছিল, মিটিং শুরু করেছে বামফ্রন্ট। চলছে সই সংগ্রহ অভিযানও।
দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য সোমবার বলেন, “নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই এসজেডিএ-তে যা যা হয়েছে তা ভাবাই যায় না। একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। যাতে শহরের বিধায়ক থেকে শুরু করে নেতা, আমলাদের নাম জড়িয়েছে। এতে সিবিআই তদন্ত যা হলে প্রকৃত সত্য মানুষের সামনে কোনও দিনই সামনে আসবে না বলে আমাদের আশঙ্কা। রাজ্যপালের কাছে সেই দাবিই জানানো হবে।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী তথা এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান গৌতম দেব জানান, দুর্নীতির বিষয়টি জানতে পেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথম তদন্তের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নিজেই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত জোরকদমে হচ্ছে। ১৫ জন গ্রেফতারও হয়েছেন। বহু টাকা উদ্ধার হয়েছে। সেখানে তদন্ত হচ্ছে না বললে কেউ মানবেন না।” তাঁর অভিযোগ, লোকসভা ভোটের প্রাক্কালে প্রচারের আলোয় থাকতে ও রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে কেউ কেউ চেষ্টা করছেন।
গত বছর ১৬ মে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে নিকাশি তৈরি এবং বাগডোগরা, মালবাজার, ময়নাগুড়ি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর কাজে অন্তত ৬০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করা হয়। প্রথমে পুলিশের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগও ওঠে। এর পরে গ্রেফতার করা হয় এসজেডিএ’র তিন বাস্তুকার-সহ ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার, কর্মী মিলিয়ে ১০ জনকে। জোড়াপানি নদী খাত সংস্কার কাজ, শহরে নিরাপত্তার স্বার্থে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর কাজ নিয়েও আলাদা ভাবে অভিযোগ করা হয়। অভিযোগ করা হয়েছে ই-টেন্ডার প্রক্রিয়ায় জাল নথি তৈরি করে ঠিকাদারদের অতিরিক্ত টাকায় কাজের বরাত পাইয়ে দেওয়া নিয়েও। সব মিলিয়ে প্রায় ১০০ কোটির দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
পুলিশ এসজেডিএ-র তৎকালীন চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, বোর্ড সদস্য তথা কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকার, প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মা, তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলার সভাপতি চন্দন ভৌমিককে জেরা করে। তার পরেই গ্রেফতার করা হয়েছিল তৎকালীন সংস্থার সিইও গোদালা কিরণ কুমারকে। তাঁকে ৭ দিনের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। ওই ঘটনার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সরিয়ে দেওয়া হয় পুলিশ কমিশনারকে জয়রামনকে। দুই দিনের মাথায় অবশ্য জামিন পান গোদালা কিরণ কুমার।
বামেদের অভিযোগ, গত দুই মাসে তদন্তের কাজ কার্যত কিছুই হয়নি। গত ৮ মাসে তদন্ত শেষ করে চার্জশিটও দিতে পারেনি পুলিশ। এই প্রসঙ্গে শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন অবশ্য বলেন, “পুলিশি তদন্ত চলছে। আরও ৩ জন ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসজেডিএ-র অন্য মামলাগুলিতেও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তদন্ত শেষ হলে তবেই চার্জশিট দেওয়া হবে।” পুলিশ সূত্রের খবর, গ্রেফতার হওয়া ওই ৩ ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধাররা নিজেরাই আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। সিবিআই তদন্তের দাবিতে এরই মধ্যে সই সংগ্রহ শুরু করে দেন ফ্রন্ট নেতারা।
অশোকবাবু জানান, রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার আগে শিলিগুড়িতেও কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ৭ ফেব্রুয়ারি গণ প্রতিবাদ মিছিল হবে। মহানন্দা সেতু লাগোয়া মোড় থেকে মিছিল শুরু করে তা শিলিগুড়ি আদালতের সামনে শেষে হবে। সেখানে বিক্ষোভ সমাবেশের পর জেলা প্রশাসনের হাতেও ওই দাবিপত্র দেওয়া হবে।
|