হেঁয়ালির ছন্দেই দিনে গরম, রাতে বাঘা শীত
বিদায় বেলাতেও ভেল্কি দেখাচ্ছে শীত! দিনের বেলায় খর রোদ আর গরম। রাতে ঠান্ডার ব্যাঘ্রবিক্রম। হেঁয়ালিতে বিভ্রান্ত মানুষ সারা দিন ঘামছেন। তবে রাতে শীতের দাক্ষিণ্যটুকু উপভোগ করছেন তারিয়ে তারিয়ে।
চলতি মরসুমে পদে পদে বাধা পাচ্ছিল শীত। ফলে দীর্ঘ জম্পেশ ইনিংস খেলা হয়ে ওঠেনি তার। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল শৈত্যপ্রবাহের কবলে। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, সোমবার বীরভূম ও পশ্চিম মেদিনীপুরের সর্বত্র এবং বর্ধমানের একাংশে শৈত্যপ্রবাহ বয়েছে। আজ, মঙ্গলবারেও ওই তিনটি জেলা এবং দক্ষিণবঙ্গের আরও দু’টি জেলায় শৈত্যপ্রবাহ (সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি কমে গেলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়) বইতে পারে বলে আবহবিদেরা জানান। তাঁদের আশ্বাস, কলকাতাতেও রাতে কনকনে ঠান্ডা মিলবে কয়েক দিন।
মাঘের এই শেষ ভাগটা আবহবিজ্ঞানের হিসেবে শীতের দ্বিতীয় ইনিংস খেলারই সময়। আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, সাধারণত শীতের মেজাজ চড়া থাকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। মূলত ওই সময়েই দক্ষিণবঙ্গে শৈত্যপ্রবাহের দাপট চলে। কিন্তু এ বার সেই হিসেব মেলেনি। ওই সময়ে শুধু বীরভূম শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছিল। তা-ও মাত্র এক দিন! ক্যালেন্ডার অনুযায়ী যখন ভরা শীত চলার কথা, তখনও কলকাতায় তাপমাত্রা সে-ভাবে কমেনি।
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, এ বার বায়ুমণ্ডলের কিছু পরিবর্তনের জেরে কয়েকটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা উত্তর ভারত থেকে সরাসরি বাংলার দিকে ধেয়ে এসেছিল। তার ফলে তৈরি হয়েছিল উচ্চচাপ বলয়। তাতে বাধা পেয়েছিল উত্তুরে হাওয়া। শীতের দাপট কমে গিয়েছিল মধ্য ভারত ও বাংলাদেশের ঘূর্ণাবর্তের জন্যও। শীতের দ্বিতীয় ইনিংসে সেই পশ্চিমী ঝঞ্ঝার দাপট কমেছে। উত্তুরে হাওয়ার পথে আর তেমন বাধা না-থাকায় জাঁকিয়ে বসেছে ঠান্ডা। দ্বিতীয় ইনিংসে উত্তুরে হাওয়ার দাপুটে ব্যাটিংয়ে মহানগরেও কাঁপুনি ধরছে। কিন্তু সেটা শুধু রাতে। এ দিন কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে তিন ডিগ্রি কম। দিনের বেলায় কিন্তু শীতের জাদু খাটছে না। রাতের ঠান্ডার রেশ সকাল হতে না-হতেই চড়া রোদ আর গরমে বেমালুম উধাও!
এমনটা হচ্ছে কেন?
আবহবিজ্ঞানীরা বলছেন, মাঘের শেষে এমনিতেই দিনের তাপমাত্রা বাড়ে। তার উপরে মেঘ না-থাকায় রোদের তেজ মালুম হচ্ছে বেশি। “আকাশে মেঘ না-থাকায় রাতে ভূপৃষ্ঠ থেকে বেশি পরিমাণে তাপ বিকিরণ হচ্ছে। রাতে যে কনকনে ঠান্ডা মালুম হচ্ছে, এটা তার অন্যতম প্রধান কারণ,” ব্যাখ্যা এক আবহবিদের।
মাঘের শেষ পর্বে শীতের এমন বাঘা দাপট কত দিন চলবে?
সময় বেঁধে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে হাওয়া অফিসের আশ্বাস, আজ সরস্বতী পুজোয় তো বটেই, আরও কয়েক দিন শীতের সঙ্গ পাওয়া যাবে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও বর্ধমানে শৈত্যপ্রবাহের সতর্কতা রয়েছে। কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির কাছে থাকবে।”
জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়েছে বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের একাংশেও। রাতে জামশেদপুরের তাপমাত্রা নেমে যাচ্ছে ন’ডিগ্রির কাছাকাছি। গয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছ’ডিগ্রিতে পৌঁছে গিয়েছে। পূর্ব ভারতে সমতল এলাকায় এটাই সর্বনিম্ন। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, উত্তরবঙ্গে অবশ্য রাতের তাপমাত্রা তেমন কমছে না। বরং সেখানে দাপট দেখাচ্ছে কুয়াশা। জলপাইগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি সকাল থেকেই ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়া থাকছে। ফলে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে নেমে যাচ্ছে অনেকটা। ওখানে কয়েক দিন এই পরিস্থিতিই চলবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.