বহু দিন পর গোলে ফেরা র্যান্টি মার্টিন্স বনাম এডে চিডি!
ছ’ফুটের ‘তালগাছ’ জেমস মোগা বনাম চতুর এরিক।
মাঝমাঠের দুই সেরা পাসার সুয়োকা বনাম লালকমল ভৌমিক।
ম্যাচ জিতলেই শেষ চারে ওঠার নিশ্চয়তা দু’ই টিমের সামনেই।
মঙ্গলবার ইস্টবেঙ্গল বনাম ইউনাইটেড স্পোর্টস ম্যাচ ঘিরে তাই ময়দানে উত্তেজনা চরমে।
কিন্তু সরস্বতী পুজোর বিকেলের ম্যাচের আগে থেকে যে লড়াইটা চোরাস্রোতের মতো সবার অলক্ষ্যে বয়ে চলেছে, সেটা আর্মান্দো কোলাসো বনাম র্যান্টির সম্মানের যুদ্ধ। এক কথায় বলা যেতে পারে লড়াইটা গুরু বনাম শিষ্যের।
আর্মান্দোর ডেম্পোকে আই লিগ জেতানোর জন্য র্যান্টি এক সময় ‘গোলমেশিন’ হয়ে গিয়েছিলেন। এখন মঞ্চ বদলেছে। একে অন্যকে হারাতে পারলে খুশি হন দু’জনেই। বিশেষ করে আর্মান্দো লাল-হলুদে আসার পর সেটা আরও বেড়েছে।
পেশাদার যুদ্ধটা কেমন সেটা ম্যাচের আগের দিন দু’জনের কথাতেই পরিষ্কার।
ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে আর্মান্দো যেমন বলে দিয়েছেন, “ও তো আমারই হাতে তৈরি। ওর সবটাই আমার জানা।” যা শুনে র্যান্টির পাল্টা মন্তব্য, “আমাকে আটকানোর জন্য কোলাসো কী স্ট্র্যাটেজি নিতে পারেন, সেটাও আমার জানা আছে। কারণ, আমিও জানি ওর কোচিংয়ের ধরন এবং স্ট্র্যাটেজি।” |
আজ শিল্ডের গ্রুপ লিগের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলতে নামার আগে আর্মান্দোই অবশ্য এগিয়ে ১-০।
আর্মান্দো কলকাতায় আসার পর র্যান্টির মুখোমুখি হয়েছেন দু’বার। আই লিগ এবং কলকাতা লিগে। একবার ড্র হয়েছে। কলকাতা লিগে ইস্টবেঙ্গল জিতেছে। আর এখন যা পরিস্থিতি তাতে খাতায়-কলমে কিন্তু ইউনাইটেডের চেয়ে সামান্য হলেও এগিয়ে ইস্টবেঙ্গল।
ইউনাইটেডকে হারিয়েই শিল্ডের শেষ চারে যেতে চান লাল-হলুদের গোয়ান কোচ। আর সেটা যেতে হলে র্যান্টিকে আটকাতেই হবে, জানেন তিনি। র্যান্টির জন্য জোনাল মার্কিং ছাড়াও তাই ডবল কভারিং থাকছে। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের বড় সমস্যা তাদের রক্ষণ। কার্ড ও চোট সমস্যার জন্য উগা ওপারা, অর্ণব মণ্ডল, গুরবিন্দর সিংহ নেই। তাই প্ল্যান-বি তৈরি করে ফেলেছেন আর্মান্দো। রাজু গায়কোয়ারের সঙ্গে সৌমিক বা খাবরাকে স্টপারে খেলানোর কথা ঘুরছে তাঁর মাথায়।
আগের ম্যাচে বুসানের সান-মুনের বিরুদ্ধেই গোলে ফিরেছেন ইউনাইটেডের গোলমেশিন। সাবধানী আর্মান্দো তাই র্যান্টি-এরিক ঝড় আটকাতে চিডি এবং মোগাকে পাল্টা আক্রণে পাঠাচ্ছেন। কারণ, নাইজিরিয়া আর দক্ষিণ সুদানের যুগলবন্দিতেই কলকাতা লিগের শেষ ম্যাচে ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। আনায়াসেই।
কিন্তু লিগ আর শিল্ডএক নয়। গতবার ক্লাবের ‘সুখের সময়’-এ কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বেগুনি ব্রিগেডই। ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে। গোল করেছিলেন সেই র্যান্টি-ই। ক্ষতটা এখনও শুকোয়নি চিডির। এ দিন
গুরু আর্মান্দোর শিষ্য। |
নিজেদের মাঠে অনুশীলনের পর ইস্টবেঙ্গল স্ট্রাইকার বলছিলেন, “গত বার গোটা টুর্নামেন্ট ভাল খেলেও ওদের কাছে ফাইনালে হেরে গিয়েছিলাম। এ বার সে রকম হোক চাই না।” পাশাপাশি অবশ্য যোগ করলেন, “ভুললে চলবে না, ইউনাইটেড এখন আহত বাঘের মতো। ওদের হারানোর কিছু নেই। সাবধানে থাকতে হবে।” মোগা আবার বললেন, “ইউনাইটেড সব সময় ভাল সাইড। শুনেছি, আগের ম্যাচেও ভাল খেলেছে। লড়াইটা বেশ কঠিন হবে।”
সোমবার দুপুরে ইউনাইটেড প্র্যাকটিসে দেখা গেল, একটা ম্যাচ জিতে টিমের গুমোট ভাব অনেকটাই কেটে গেছে। তিন-চার মাসের বেতন না পাওয়ায় দু’দিন আগেও যে এরিককে শুকনো মুখে ঘুরতে দেখা যাচ্ছিল, তিনিও এ দিন চনমনে। বলেও দিলেন, “আমার আর র্যান্টির মধ্যে বোঝাপড়া এখন বেশ ভাল হয়ে গিয়েছে। ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে শেষ চারে যাওয়া নিশ্চিত করতে চাই।” লাল-কমল ভৌমিকও বললেন, “ইস্টবেঙ্গল খুব ব্যালান্সড দল। তবে নিজেদের সেরাটা দিয়ে জিততেই হবে।” ইউনাইটেডের জন্য খারাপ খবর, শেখ আজিম চোট পেয়ে বাইরে। বদলে অনুপম খেলবেন।
আর্মান্দো শিল্ডকে গুরুত্ব না দিলে কী হবে, ইস্টবেঙ্গল ফুটবলাররা কিন্তু এই টুর্নামেন্ট নিয়ে প্রচণ্ড সিরিয়াস। চিডি তো বলেই দিলেন, “কলকাতা ফুটবলের চাপ আমি জানি। এখানে শিল্ডের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। আর সব ম্যাচে জেতার অভ্যেস থাকাটাও তো ভাল।” তাই সিঙ্গাপুরের গেলাং ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে যে গোলগুলো যুবভারতীতে করতে পারেননি, সেগুলো ইউনাইটেড ম্যাচে করতে চান চিডি-মোগা-সুয়োকারা।
কিন্তু তাদের স্বপ্ন কি সফল হবে, যেখানে ইউনাইটেড মাঝেমধ্যেই গাঁট হয়ে ওঠে লাল-হলুদের? |
ওডাফা নিয়ে সিদ্ধান্ত আজ
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
ফেড কাপ থেকে ফিরে আসার পর চিকিৎসাধীন ছিলেন। মঙ্গলবার আবার পুরোদমে অনুশীলনে নেমে পড়লেন বাগান অধিনায়ক ওডাফা ওকোলি। রবিবার মহমেডান জেতার পর বাগান বেশ চাপে। তাদের সেমিফাইনালে যেতে হলে বুধবার হারাতেই হবে সঞ্জয় সেনের দলকে। তাই ওডাফা মাঠে নামতে মরিয়া। করিম বেঞ্চারিফা তাঁকে মাঠে নামাবেন কি না সেই ব্যাপারে অবশ্য ধোঁয়াশা রাখছেন। এ দিন অনুশীলনের পরে বাগান কোচ বলেন, “মঙ্গলবার অনুশীলনে দেখার পরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।” |
মঙ্গলবারে আই এফ এ শিল্ড
ইস্টবেঙ্গল: ইউনাইটেড (যুবভারতী ৩-১৫)।
গেলাং ইউনাইটেড: বুসান সান মুন (যুবভারতী ৬-৩০)। |