ডেভিস কাপে চিনা তাইপেকে ৫-০ চুরমারের ঢেউয়ে কি ভারতীয় টেনিসের অলিন্দে লড়াইয়ের নতুন সমীকরণ তৈরি হল?
লিয়েন্ডার বনাম মহেশ বনাম সোমদেব?
কারণ, ইনদওরে আনন্দ অমৃতরাজের নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন হিসেবে অভিষেক টাই সোমদেব-য়ুকি-সাকেতদের তরুণ ভারতীয় টেনিস দল জিতে ওঠার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সোমদেব বলে দিয়েছেন, “আর লি-হেশের দিকে তাকানোর দরকার নেই। ওদের দু’জনের দিক থেকে চোখ ফেরানোর সময় ভারতীয় টেনিসে এসেছে। ভারতীয় টেনিসে দু’জনের যদিও প্রচুর অবদান, তা সত্ত্বেও আমাদের নজর দেওয়া উচিত এখন যে গ্রুপটা খেলছে তাদের দিকে। নতুন ক্যাপ্টেনের দিকে নজর দেওয়া উচিত। কারণ, এই দলটাই ভারতীয় টেনিসের ভবিষ্যৎ।”
এবং সংবাদ সংস্থাকে এই কথা সোমদেব বলার পরে ভারতীয় টেনিসমহলে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে সোমবার। প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, তা হলে কি ভারতীয় টেনিস প্লেয়ারদের সংস্থার (আইটিপিএ) দুই অন্যতম শীর্ষকর্তা মহেশ-সোমদেবের মধ্যে বিরোধ লাগল? লিয়েন্ডার যে সম্প্রতি অভিযোগ করেছেন, টেনিস ফেডারেশন (এআইটিএ) এবং প্লেয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (আইটিপি) মধ্যিখানে পড়ে তিনি পিষ্ট হচ্ছেন, সেটাই ঠিক? নাকি লি-হেশের মতো সোমদেবের লক্ষ্য ভারতীয় টেনিসের অলিন্দে নিজের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করা? যেখানে নতুন নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেনের জমানায় ডেভিস কাপ দলে তিনিই সবচেয়ে সিনিয়র প্লেয়ার হিসেবে শেষ কথা বলবেন?
|
সোমদেবের মহাতাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় স্বয়ং ভারতীয় দলের কোচ জিশান আলি মোবাইলে প্রথমেই বললেন, “আমাকে আবার কেন ভারতীয় টেনিসের রাজনীতিতে জড়াচ্ছেন?” তা হলে সোমদেবদের দলের কোচ হিসেবে আপনারও মনে হচ্ছে, তাঁর এই মন্তব্যের পিছনে ভারতীয় টেনিস-রাজনীতির গন্ধ আছে? এ বার জিশানের সতর্ক মন্তব্য, “অতশত জানি না। তবে আমাদের এই দলটা শুধু ৫-০ জিতেছে বলেই নয়, সত্যিই এই টিমের মধ্যে ক্ষমতা আছে ডেভিস কাপে অনেক দূর এগোনোর। তরুণ রক্তের তো সব খেলাতেই দরকার, তাই না? তবে লিয়েন্ডার ‘অ্যাভেলেবল’ থাকলে স্বভাবতই এই দলে থাকত। আর মহেশের ব্যাপারে বলতে পারি, ও চিনা তাইপে টাইয়ে ভারতীয় দলে ঢুকতে পারেনি মানেই আগামী টাইয়েও পারবে না তা নয়। আসলে সব বিকল্পই আমাদের সামনে খোলা আছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
জিশান ঘুরিয়ে মহেশের ডেভিসে ফেরার আশা খারিজ না করলেও জয়দীপ মুখোপাধ্যায় পূর্ণ সহমত সোমদেবের মন্তব্যের সঙ্গে। আইটিপিএ প্রেসিডেন্টের কথায়, “সত্যিই তো! এই মুহূর্তে লিয়েন্ডার-মহেশ ডেভিস কাপ দলে কার জায়গায় ঢুকবে? তিন সিঙ্গলস-এক ডাবলস প্লেয়ার ফর্মেশনে দল হচ্ছে। সিঙ্গলসে বিকল্প রাস্তা খুলে রাখার লক্ষ্যে। ব্যাপারটা ভালই। কারণ তৃতীয় সিঙ্গলস প্লেয়ারকেই ডাবলস খেলানো হচ্ছে। সাকেত (মিনেনি) তো ইনদওরে ডাবলস-সিঙ্গলস দুটোই জিতল। একজন যে স্পেশ্যালিস্ট ডাবলস প্লেয়ার সেই বোপান্নাও বিশ্বমানের। তবে ভবিষ্যতের কথাও কেউ বলতে পারে না যে, মহেশদের আর কখনই দরকার পড়বে না! মনে রাখবেন, কোরিয়ায় গিয়ে ভারত কখনও ‘টাই’ জেতেনি। তবে এই মুহূর্তে সোমদেবের কথা যুক্তিযুক্ত।” |
সোমদেব উবাচ
• ‘লি-হেশের প্রচুর অবদান থাকলেও বর্তমান দলটাই ভারতীয় টেনিসের ভবিষ্যৎ।’
• ‘খেলায় মানসিকতা পাল্টানো সবচেয়ে কঠিন। ফেডেরার কেরিয়ারের
গোড়ায় আরও বেশি ডিফেন্সিভ প্লেয়ার ছিলেন।’
• ‘আইটিপিএ-র কোর গ্রুপের মধ্যে কোনও মতবিরোধ নেই।’
• ‘লিয়েন্ডার হয়তো কিছু কথা বলেছে। সেগুলো ফুলিয়েফাঁপিয়ে দেখানোও কিন্তু হতে পারে।’ |
|
নরেশ কুমার আবার সোমদেব ঠিক কী বলেছেন ফোনে শোনার পর প্রথমেই হো-হো করে হেসে উঠলেন। “কী বলব আর আমি এখনকার ভারতীয় টেনিস নিয়ে?” বলেও অবশ্য যোগ করলেন, “ডেভিস কাপে আমাদের কিন্তু একটা ভাল ডাবলস জুটির ভীষণই দরকার। দেখুন, ভাল জুটি রাতারাতি গড়ে ওঠে না। তার জন্য কয়েক মাস, এমনকী কয়েক বছরও দরকার পড়ে। সেই সময়টা কি ইদানীং আমাদের কোনও ডাবলস টিম পেয়েছে? তারুণ্য তো সব সময় খেলাধুলোয় ভাল। তা সত্ত্বেও সময়ই বলবে লিয়েন্ডারের মতো বিরাট অভিজ্ঞ সিনিয়রদের এখনও ভারতীয় টিমে দরকার কি না?”
আখতার আলি যেন সোমদেবের মন্তব্যের পাশে নিজেকে পঞ্চাশ-পঞ্চাশ রাখলেন। ছেলে জিশানের মতোই একদা ভারতীয় ডেভিস কাপ কোচ আখতার বলছিলেন, “টিমে ভাল জুনিয়র প্লেয়ার সব সময় ওয়েলকাম। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে, ডেভিস কাপে কোরিয়াকে আমরা কখনও ওদের দেশের কোর্টে হারাতে পারিনি। এপ্রিলে এই দলটা যদি সেটা পারে তা হলে সোমদেবের কথাই ঠিক প্রমাণ হবে। না পারলে তখন ফের লিয়েন্ডার-মহেশের অভাব বোঝা যাবে।”
লিয়েন্ডার এখন মুম্বইয়ে। ফেব্রুয়ারি শেষে দুবাই ওপেন খেলবেন। “আমার কথাই লিয়েন্ডারের কথা ধরে নিতে পারেন,” বলে মুম্বই থেকে ফোনে তাঁর বাবা ভেস পেজের মন্তব্য, “কারও ব্যক্তিগত ধারণা-মতামত নিয়ে কিছু বলতে চাই না। আর লিয়েন্ডার এ বছর দেশের হয়ে না খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় জাতীয় দলের ব্যাপারে মাথাটাথাও ঘামাচ্ছে না!” |