কংগ্রেস ও বিজেপি-কে বাদ দিয়ে বিকল্প জোট তৈরির চেষ্টা আরও এক ধাপ এগোলো। সিপিআইয়ের পরে এ বার সিপিএমও তামিলনাড়ুতে এডিএমকে-নেত্রী জয়ললিতার সঙ্গে জোট চূড়ান্ত করে ফেলল।
চেন্নাইয়ে আজ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের সঙ্গে জয়ললিতার বৈঠকের পর এডিএমকে-নেত্রী জানান, লোকসভা ভোটে তাঁরা সিপিএমের সঙ্গে একজোট হয়ে লড়বেন। তামিলনাড়ুতে বামেদের সঙ্গে এডিএমকে-র নির্বাচনী সমঝোতা অবশ্য নতুন নয়। তিন বছর আগে রাজ্যের বিধানসভা ভোটেও দু’দল জোট করেছিল। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে যখন ফের বিকল্প ফ্রন্ট গঠনের চেষ্টা শুরু হয়েছে, তখন স্বাভাবিক ভাবেই এই জোট তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষত জয়ললিতার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর সুসম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে এডিএমকে বিজেপির হাত ধরবে কি না, সে প্রশ্ন উঠছিলই। এ দিন এডিএমকে-র সঙ্গে তাঁদের সমঝোতা চূড়ান্ত হওয়ার পরে সিপিএম নেতৃত্বও একে বিকল্প জোটের পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
দক্ষিণের মতোই পূর্ব ভারতেও আঞ্চলিক দলগুলিকে নিয়ে বিকল্প জোটের সলতে পাকানো শুরু হয়েছে। পুরনো জনতা পরিবারের দলগুলি ফের জোট বাঁধতে চাইছে। এ নিয়ে আলোচনার জন্য ৯ এবং ১০ ফেব্রুয়ারি এই পরিবারের চার নেতা নীতীশ কুমার, নবীন পট্টনায়ক, দেবগৌড়া এবং মুলায়ম সিংহ যাদব দিল্লিতে বৈঠকে বসছেন। এই গোষ্ঠীর সঙ্গে বামেদের মতোই যোগাযোগ রাখছে তৃণমূলও।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক দিন ধরেই ওড়িশায় নবীনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। তবে আজ ভুবনেশ্বরে গিয়ে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বৈঠকের পরে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় জানান, ওড়িশায় তাঁদের সঙ্গে কোনও দলেরই জোট নেই। লোকসভা ভোটে তাঁরা ওড়িশায় প্রার্থী দেবেন বলেও জানিয়েছেন মুকুল। বামেরা অবশ্য নবীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছেন। একই সঙ্গে বিহারে নীতীশের জেডিইউ-র সঙ্গে জোট নিয়েও আলোচনা চালাচ্ছেন।
সংসদে অধিবেশন শুরুর দিন, ৫ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে ১৪টি দল বৈঠকে বসছে। সেখানে জেডিইউ সভাপতি শরদ যাদব এবং দলের সাধারণ সম্পাদক কে সি ত্যাগী উপস্থিত থাকবেন। প্রাথমিক ভাবে আঞ্চলিক দলগুলির পরিকল্পনা হল, পুরনো জনতা দলের পরিবার এবং বামপন্থীরা মিলে একটি সংসদীয় ব্লক তৈরি করা। সেখানে অন্য দলও থাকবে। আজ নীতীশ জানিয়েছেন, ৫ তারিখের বৈঠকেই এই ব্লকের চেহারাটি স্পষ্ট হবে। নীতীশ বলেন, “প্রতিটি নির্বাচনে আলাদা রকমের রাজনৈতিক বিন্যাস তৈরি হয়। এ বারেও তাই হতে যাচ্ছে।”
সিপিএমের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হান্নান মোল্লা বলেন, “৫ তারিখের পরে ১৪ দলের সমন্বয়ের চেহারাটা বোঝা যাবে।” এই ১৪টি দলের মধ্যে ১১টি দলই এখন সংসদে উপস্থিত। লোকসভায় এই দলগুলির মোট সদস্য সংখ্যা ৯২ জন। তারা এক জোট হয়ে ইউপিএ-সরকারের কোনও নীতির বিরোধিতা করলে, তা কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বিকল্প জোট নিয়ে চিন্তায় বিজেপি নেতৃত্বও। কারণ ভবিষ্যতে যে সব দল এনডিএ-তে সামিল হতে পারে বলে বিজেপির আশা, তাদের অন্যতম এডিএমকে ইতিমধ্যেই বাম-শিবিরে। অন্য কয়েকটি দলও বিকল্প জোটের দিকেই পা বাড়াচ্ছে। যদিও বিজেপির দাবি, লোকসভা ভোটে তারা বিপুল সংখ্যক আসন পেলে এই দলগুলির অনেকেই সরকারে সামিল হতে চাইবে। বিজেপি নেতা অরুণ জেটলির যুক্তি, “তৃতীয় ফ্রন্ট নিয়ে যত শোরগোল হবে, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এনডিএ-সরকারকে নির্বাচিত করার ঝোঁক ততই বাড়বে। কারণ এনডিএ-র নিজের শক্তিতে সরকার গঠনের ক্ষমতা রয়েছে।”
বিকল্প জোটের নেতারা অবশ্য মানছেন, শেষ পর্যন্ত তাঁদের জোটের চেহারা কী হবে, তা এখনই বলা কঠিন। তাই এই জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে হবেন, তা-ও বলা সম্ভব নয়। বরং লোকসভা নির্বাচনের পরে জোট তৈরির সম্ভাবনাই বেশি বলে বারবার বলছেন এই জোটের নেতারা। আজ জয়ললিতা ও কারাট দু’জনেই জানিয়েছেন, কে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন, তা নিয়ে এখনই আলোচনা করা অর্থহীন। লোকসভার ফল বেরোনোর পরেই সেই প্রশ্ন উঠবে।
|