সরকার ফেলতে বিজেপি টোপ দিচ্ছে, আপের নালিশে হইচই
রাজধানীতে ক্ষমতায় বসার পর থেকেই বিতর্ক নিত্যসঙ্গী হয়েছে আম আদমি পার্টির। কখনও আফ্রিকার মহিলাদের সঙ্গে দলের আইনমন্ত্রীর আচরণ নিয়ে তো কখনও স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর ধর্নায় বসাকে কেন্দ্র করে। এর মধ্যেই আজ বিজেপির বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে তাদের সরকার ফেলার চেষ্টার অভিযোগ তুলে নতুন বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন আপ নেতৃত্ব। যদিও এই দাবির সপক্ষে কোনও তথ্যপ্রমাণ দেয়নি তারা। আপ নেতৃত্বের এই দাবি ঘিরে দিল্লির রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। আপের অভিযোগ উড়িয়ে বিজেপির বক্তব্য, প্রশাসনিক ব্যর্থতা থেকে নজর ঘোরাতেই আপ নেতারা এমন দাবি করছেন। বিষয়টি নিয়ে তদন্তের দাবিও তুলেছে বিজেপি।
আপ-এর তরফে দাবি , তাদের বিধায়কদের টাকা দিয়ে কিনে নিতে সক্রিয় হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী, অরুণ জেটলি ও বিধানসভার বিরোধী দলনেতা হর্ষবর্ধন। আপ বিধায়কদের কিনতে বিজেপি দশ থেকে কুড়ি কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ করতে চায় বলেও অভিযোগ দলের। কিছু বাণিজ্যিক গোষ্ঠী, সংবাদমাধ্যমের একাংশও নিজেদের স্বার্থরক্ষায় আপ-এর সরকার ফেলতে এই কাজে সামিল হয়েছে বলে, অভিযোগ।
মদন লাল
চলতি বিতর্কের সূত্রপাত গত কাল। সৌজন্যে আপ থেকে সদ্য বহিষ্কৃত বিধায়ক বিনোদকুমার বিন্নি। গত কাল বিন্নি ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করেন, তিনি ছাড়াও জেডিইউ বিধায়ক শোয়েব ইকবাল ও আপের মদন লাল-সহ চার-পাঁচ জন বিধায়ক কেজরিওয়ালের সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নিতে প্রস্তুত। কাল রাতে বিন্নির দাবি জানাজানি হওয়ার পরই তৎপরতা শুরু হয়ে যায় বিভিন্ন মহলে। দল যে অটুট আছে, এই বার্তা দিতে তড়িঘড়ি আজ সকালে সাংবাদিক বৈঠক ডাকেন আপ নেতৃত্ব। তাতে হাজির করানো হয় দিল্লির কস্তুরবা নগরের বিধায়ক মদন লালকেও।
দলের শীর্ষ নেতা সঞ্জয় সিংহের পাশে বসে মদনের দাবি, “আমি দলের সঙ্গেই আছি। দল ছাড়ার প্রশ্নই নেই।” এর পরেই তাঁকে বিপুল টাকার টোপ দেওয়ার অভিযোগ তোলেন তিনি স্বয়ং। এই দাবিকে সমর্থন জানিয়ে সঞ্জয় বলেন, “আপের জনপ্রিয়তায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে বিজেপি। মোদীরা ভাবছেন, আপের উত্থানে বিজেপির দিল্লি দখল করা শক্ত হয়ে পড়বে। তাই কেজরিওয়াল সরকারকে ফেলতে তৎপর হয়েছেন মোদী, জেটলি, হর্ষবর্ধনরা।”
আপের অভিযোগ, তাদের সরকার ফেলতে মূল কাণ্ডারী হিসেবে কাজ করছেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি। মদনের দাবি, ফল প্রকাশের দিন, অর্থাৎ ৭ ডিসেম্বর রাত ১২টা নাগাদ অরুণ জেটলির টিমের সদস্য বলে এক জন তাঁকে ফোন করেন। একটি আন্তর্জাতিক নম্বর থেকে ফোনটি এসেছিল বলেও দাবি তাঁর। দু’সপ্তাহ আগে উত্তরপ্রদেশের দুই ব্যক্তি সরকার ফেলার উদ্দেশ্য নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন বলে দাবি মদনের। বললেন, “তাঁদের মধ্যে এক জন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করেন। ওই ব্যক্তি বলেন, আপনি যদি আপের ন’জন বিধায়ককে ভাঙিয়ে আনতে পারেন, আপনাকে বিজেপির সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী করা হবে। এবং আপ ভাঙার পুরস্কার হিসেবে কুড়ি কোটি ও দলত্যাগী বিধায়কদের দশ কোটি টাকা দেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়।”
গুরুতর এই অভিযোগ আনলেও মদন লালের সম্বল শুধুই মৌখিক দাবি। যা নিয়ে সরব বিরোধীরা। বারবার কেন মদন লালকেই টাকার টোপ দেওয়া হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হোক বলে কটাক্ষ করেন বিজেপি নেতা বিজয় গোয়েল। আর মূল অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, সেই বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি বলেন, “আপের বিকল্প রাজনীতির গোটাটাই মিথ্যার ভিত্তিভূমিতে গড়া।” বিজেপি মুখপাত্র নির্মলা সীতারমন বলেন, “দিল্লিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েও বিধায়ক কেনাবেচার অভিযোগ এড়াতে সরকার গড়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিজেপি। এখন সরকার গঠনের পর কেন অহেতুক ঘোড়া কেনাবেচা করতে যাব আমরা?”
শুধু বিজেপি নয়, আপের নিশানায় একাধিক বাণিজ্যক সংস্থাও। আপ নেতৃত্বের বক্তব্য, ক্ষমতায় এসে বিদ্যুতের দাম কমিয়েছে আপ-সরকার। ওই বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির আয়-ব্যয়ের হিসেব খতিয়ে দেখতে তদন্তের নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সঞ্জয় সিংহের দাবি, ‘‘মোদী ছাড়াও রিলায়্যান্স ও আদানি সংস্থাও সরকার ফেলতে চাইছে।” এই দাবির স্বপক্ষেও প্রমাণ পেশ করেননি তিনি। সঞ্জয় বলেন, “কংগ্রেস ও বিজেপি কী ভাবে আপ-সরকারকে ফেলতে তৎপর, সেই প্রমাণ দিল্লিবাসীর সামনে তুলে ধরবে দল। সেই লক্ষ্যে ‘পোল খোল’ প্রচারেও নামব আমরা।”
বিন্নির মতোই আপ সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেওয়ার কথা গত কাল বলেছিলেন জেডিইউ বিধায়ক শোয়েব ইকবাল। আজ বিকালে অবশ্য কেজরিওয়ালের সঙ্গে বৈঠকের পরে তিনি বলেন, “সরকার প্রতিশ্রুতি পালনে তৎপর হয়েছে। এখনই সরকার থেকে সমর্থন তোলার কোনও প্রশ্ন নেই।” ফলে বিন্নি-শোয়েব বিদ্রোহে দিল্লি সরকার পড়ে যাওয়ার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তা আপাতত কেটে গেল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.