|
|
|
|
নিদোর বন্ধুদের পাশে রাহুল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
৩ ফেব্রুয়ারি |
নির্ভয়া-কাণ্ডে ছাত্র-যুব অসন্তোষ যখন আছড়ে পড়েছে ইন্ডিয়া গেটে, তখন দেখা যায়নি তাঁকে। তবে দিল্লি বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের পরে সম্ভবত ঠেকে শিখেছেন রাহুল গাঁধী। তাই লোকসভা ভোটের মুখে অরুণাচলের ছাত্র নিদো টানিয়ামের মৃত্যু নিয়ে নিজে থেকেই সক্রিয় হয়েছেন তিনি। উত্তর-পূর্বের ছাত্রছাত্রীদের বিক্ষোভ মঞ্চে তাই আজ দেখা গিয়েছে তাঁকে। তিনি বলেছেন, টানিয়ামের পরিবার সুবিচার পাবেই।
রাহুলের সঙ্গে যন্তরমন্তরে বিক্ষোভকারীদের এই সাক্ষাতের দিনেই উত্তর-পূর্বের সমস্যা নিয়ে পদক্ষেপ করল কেন্দ্র। ওই অঞ্চলের সমস্যা সমাধানে একটি কমিশন গঠন করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। ঘটনাচক্রে আজই এই ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ। আরও তিন অভিযুক্তের খোঁজে উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা ও পঞ্জাবে তল্লাশি চালাচ্ছে তারা।
গত সপ্তাহে দিল্লির লাজপত নগর বাজারে একদল লোকের মারধরে টানিয়ামের মৃত্যু হয়। তার পরে উত্তর-পূর্বের এক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করেছিলেন রাহুল। কিন্তু আজ সন্ধ্যায় উত্তর-পূর্বের ছাত্রছাত্রীরা যখন যন্তরমন্তরে মোমবাতি জ্বালিয়ে ধর্না শুরু করেন, তখন রাহুল আগাম খবর না দিয়েই পৌঁছে যান সেখানে। বিক্ষোভকারীদের মাঝে গিয়ে হাঁটু মুড়ে বসেন। তার পর তাঁদের অভিযোগ মন দিয়ে পড়েন। একটি স্মারকলিপিও নেন তাঁদের কাছ থেকে। পরে বলেন, নিদোর সঙ্গে যা হয়েছে তা ঘোর অন্যায়। এটা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। রাহুলের কথায়, “এ দেশ সকলের। কোনও একটি গোষ্ঠীর নয়। তাই সকলের সমান মর্যাদা পাওয়া উচিত। আমরা তা সুনিশ্চিত করতে চাই। এবং সেটাই শেষ কথা।” |
|
যন্তরমন্তরে বিক্ষোভকারীদের পাশে রাহুল। সোমবার। ছবি: পি টি আই। |
তবে অনেকেই মনে করছেন রাহুল আজ কী বললেন, তার চেয়েও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, আজ যন্তর মন্তরে তাঁর উপস্থিতি। ঠিক এই কাজটাই যদি তিনি নির্ভয়া-কাণ্ডের সময়ে করতেন, তা হলে কংগ্রেসের উপরে মানুষের আস্থা এতটা নষ্ট হত না। উল্টে নির্ভয়া-কাণ্ডে কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে দিয়েছে যে আম জনতার সঙ্গে তাদের কতটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, দিল্লিতে আম আদমি পার্টির উত্থানের পর থেকে রাহুল বুঝেছেন কংগ্রেসকে আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে। আর আজ সেটাই করছেন তিনি। সমাজের সব অংশের সঙ্গে তাই আলোচনাও শুরু করেছেন রাহুল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, নিদো প্রসঙ্গে কাল রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল শিন্দের সঙ্গে কথা বলেছেন রাহুল। তার পরই দিল্লির পুলিশ কর্তাদের নর্থ ব্লকে বৈঠকে ডাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেখানে জানানো হয়, উত্তর-পূর্বের মানুষের নিরাপত্তাই শুধু সুনিশ্চিত করা নয়, বিভিন্ন থানায় তাদের দায়ের করা অভিযোগও দ্রুত খতিয়ে দেখতে হবে। উত্তর-পূর্বের সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর দফতর (পিএমও) থেকে আজ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে তিন থেকে পাঁচ জন সদস্যের একটি কমিশন তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দিল্লি ছাড়াও অন্য শহরে উত্তর-পূর্বের মানুষের সমস্যা খতিয়ে দেখবে ওই কমিশন। নির্দেশ পিএমও থেকে এলেও এর পিছনে মস্তিষ্কটা রাহুলের বলেই মনে করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ইতিমধ্যেই কমিশন তৈরির কাজ শুরু করেছে। কমিশন তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবে। পিএমও-র সুপারিশ, দিল্লি-সহ অন্য শহরে উত্তরপূর্বের মানুষের নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হোক। অন্য সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক উন্নত করা যায় কী ভাবে, ভাবতে হবে তা নিয়েও। উত্তর-পূর্বের সঙ্গে দেশের অন্য শহরগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার দিকেও জোর দিতে বলা হয়েছে।
নিদো টানিয়ামের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আজ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা শুরু করেছে দিল্লি হাইকোর্টও। এ ব্যাপারে পুলিশ ও কেন্দ্রকে পরশুর মধ্যে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। টানিয়ামের মৃত্যুর তদন্ত নিয়ে আজ আবার দিল্লির উপ-রাজ্যপাল নাজীব জঙ্গ ও মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মধ্যে মতান্তর তৈরি হয়েছে। টানিয়ামের মৃত্যুতে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেন কেজরিওয়াল। নাজীব জঙ্গ তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তবে কেজরিওয়ালের বক্তব্য, এ ব্যাপারে উত্তর-পূর্বের মুখ্যমন্ত্রীদেরও দাবি রয়েছে। তাই ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তই হবে।
টানিয়াম স্মরণে আজ কলকাতায়ও একটি মিছিল করেন কলকাতায় পাঠরত উত্তর-পূর্বের ছাত্রছাত্রীরা। সল্টলেকের এই মিছিলে হঠাৎই হাজির হন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য নেতারা। মিছিলে পা মেলান তাঁরা। কিন্তু মিছিল শেষে টিএমসিপি সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা মাইক হাতে নিতেই উত্তর-পূর্বের ছেলেমেয়েরা টিএমসিপি নেতাদের জানান, রাজনীতি তাঁরা চান না। নেতারা ক্ষুব্ধ হলেও পরিস্থিতি সামলান বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত। তিনি জানান, রাজনীতি নয়, সহমর্মিতা জানাতেই তাঁরা পাশে রয়েছেন। |
|
|
|
|
|