সারদা-সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হাইকোর্টে ইডি
কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি পারে। কিন্তু রাজ্যের ইডি কোনও ব্যক্তি বা সংস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে পারে না। এই অবস্থায় তাদের হয়ে সারদা গোষ্ঠীর সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের কাছে আবেদন জানিয়েছে রাজ্যের ইডি।
হাইকোর্টে রাজ্যের ইডি-র তরফে বলা হয়, আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্তের স্বার্থে সারদা গোষ্ঠীর সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা প্রয়োজন। কিন্তু রাজ্য ইডি-র সেই ক্ষমতা নেই বলেই উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। সারদার তছরুপ নিয়ে এত দিনে যে-সব রিপোর্ট হাইকোর্টে জমা পড়েছে, ইডি-র তদন্তকারীরা যাতে সেগুলি দেখার সুযোগ পান, এ দিন তারও অনুমতি চাওয়া হয়।
আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য অর্থ লগ্নি সংস্থা টাওয়ার ইনফোটেকের সম্পত্তি বিক্রি করার ভার সেবি-কে দিয়েছে হাইকোর্ট। কিন্তু সারদার ক্ষেত্রে এখনও তেমন কোনও ব্যবস্থা হয়নি। সারদার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্য ইডি-র এ দিনের আবেদনের ভিত্তিতে কোনও নির্দেশ দেয়নি উচ্চ আদালত। তবে সারদা কাণ্ডের সিবিআই তদন্তের আর্জি এবং সেই বিষয়ে জমা পড়া সব রিপোর্টের যথাযথ মূল্যায়নের জন্য হাইকোর্ট তিন সদস্যের একটি কমিটি গড়ে দিয়েছে।
হাইকোর্ট সূত্রের খবর, বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ অনুযায়ী সিট ও সারদা কমিশন প্রতি মাসে হাইকোর্টে একটি করে রিপোর্ট জমা দিচ্ছে। সেই সব রিপোর্টের কলেবর অতি বৃহৎ। হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার সেগুলি থেকে একটি সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট তৈরি করেছেন। কিন্তু সেটিও যথেষ্ট বড়। তাই সেই সব রিপোর্টের যথাযথ মূল্যায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন আইনজীবী লক্ষ্মীকান্ত গুপ্ত, আইনজীবী প্রণব দত্ত ও আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যকে নিয়ে একটি কমিটি গড়ে দেয়। তারা ওই সব রিপোর্ট যাচাই করে ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টে তার বিষয়বস্তু জানাবে। সিবিআই তদন্ত চেয়ে যে-মামলা হয়েছে, তার আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ইচ্ছা করলে সেই রিপোর্ট দেখতে পারেন।
সারদা তদন্ত নিয়ে এ দিন দিল্লিতে সিপিএম-কে একহাত নিয়েছে তৃণমূল। সংসদে চলতি অধিবেশন শুরুর দিনেই সারদা কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছিলেন বাম নেতৃত্ব। এ দিন সংসদ বসার আগে গাঁধী-মূর্তির সামনে অবস্থান করে বাম নেতৃত্বকেই আর্থিক দুর্নীতিগ্রস্ত বলে আক্রমণ হানেন সৌগত রায়, শুভেন্দু অধিকারী, সুখেন্দুশেখর রায়-সহ তৃণমূল সাংসদেরা। তাঁদের অভিযোগ, ২০০৮ সালে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জমানায় সারদা সংস্থার জন্ম হয়। সুতরাং তৎকালীন বাম সরকারই দোষী। বুদ্ধবাবু এবং তাঁর অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের বিরুদ্ধেও তদন্ত হোক। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফের সিবিআই তদন্তের দাবি জানায় সিপিএম। রাজ্যসভার সিপিএম সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা ফেরানোর বদলে সারদা কেলেঙ্কারিতে দোষীরা যাতে নিজেদের সম্পত্তি সরিয়ে নিতে পারে, তার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।”
শাসক দল ও বিরোধীদের চাপান-উতোরের মধ্যেই সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে জেরা করতে উদ্যোগী হয়েছে সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিস (এসএফআইও)। কিন্তু রবিবার অন্য মামলায় আলিপুরদুয়ার পাঠিয়ে দেওয়ায় দেবযানীকে এ দিন জেরা করতে পারেনি তারা। সুদীপ্ত সাঁতরাগাছি থানার একটি মামলায় পুলিশি হাজতে থাকায় তাঁকেও জেরা করা যায়নি। তবে এ দিন একাধিক সংবাদমাধ্যমের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন বিধাননগরের তদন্তকারীরা। তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষের কিছু প্রাক্তন সহকর্মীও আছেন তাঁদের মধ্যে। তাঁদের কাছ থেকে বেশ কিছু নথিও সংগ্রহ করা হয়েছে।
সারদার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বিষয়টি আবেদন-নিবেদনের স্তরে থাকলেও টাওয়ার ইনফোটেক সংস্থা তাদের ১৬৪টি সম্পত্তির তালিকা জমা দিয়েছে সেবি-র কাছে। সেবি এ দিন হাইকোর্টে জানায়, ওই সব সম্পত্তির দলিল তারা পেয়েছে। পরবর্তী শুনানির দিন সেবি-কে ওই তালিকা হাইকোর্টে জমা দিতে হবে। এসএফআইও এ দিন আদালতে জানায়, টাওয়ার সংস্থার সব অফিসই বন্ধ। তাই অনেক তথ্য মিলছে না। বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এসএফআইও-র প্রতিনিধিকে বলেন, “পুলিশের সাহায্য নিয়ে ওই সব অফিস খুলে তথ্য সংগ্রহ করুন।” তাঁর নির্দেশ, টাওয়ারের একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট চালু রাখতে হবে। তা থেকে সেবি পাঁচ লক্ষ টাকা নেবে। তদন্তের কাজে যিনি অ্যাকাউন্ট্যান্টের দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি এক লক্ষ টাকা পাবেন। হাইকোর্ট আগেই সব রাজ্যের মুখ্যসচিবদের সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে টাওয়ারের আমানতকারী চিহ্নিত করতে বলেছে। এ দিন শুনানিতে দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্য কোনও রাজ্যের প্রতিনিধি নেই। এ বার সেবি-কেই অন্যান্য রাজ্যের মুখ্যসচিবদের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব দিয়েছে কোর্ট।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.