সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়ার জন্য আগেই ৮০ কোটি টাকা দিয়েছিল রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার এই খাতে আরও ৮৫ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে রাজ্যের অর্থ দফতর।
সারদা কাণ্ডের পরে গরিব আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য ৫০০ কোটি টাকার তহবিল গড়ার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার মধ্যে ১৫০ কোটি টাকা সিগারেটের উপরে বাড়তি কর বসিয়ে তোলা হবে বলে জানানো হয়। ওই তহবিলের জন্য দু’দফায় আপাতত ১৬৫ কোটি টাকা মঞ্জুর করল রাজ্য সরকার।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সরকার শুধু সারদা গোষ্ঠীর তছরুপে ক্ষতিগ্রস্তদেরই ক্ষতিপূরণ দেবে কেন? একই ধরনের অনেক বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ওই সব সংস্থার আমানতকারীরা ক্ষতিপূরণ পাবেন না কেন, এই প্রশ্ন তুলে আইনজীবী বাসবী রায়চৌধুরী কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থের মামলা করেছেন। এ দিন তার শুনানি শুরু হয়েছে। বাসবীদেবীর আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় আদালতে জানান, তাঁর মক্কেল ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিপক্ষে নন। কিন্তু শুধু সারদা গোষ্ঠীর কেলেঙ্কারিতে ক্ষতিগ্রস্তেরাই তা পাবেন কেন? সারদার মতো আরও অনেক অর্থ লগ্নি সংস্থাই বহু আমানতকারীকে ঠকিয়েছে। সরকারি উদ্যোগে সেই আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়নি।
সারদা গোষ্ঠীর তছরুপের তদন্তে সিবিআই-কে ডাকার আর্জি জানিয়ে ইতিমধ্যেই বিচারপতি অসীম চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে একটি মামলা হয়েছে। ডিভিশন সেই মামলা খারিজ করেনি। ওই মামলার সূত্র ধরেই বাসবীদেবী অন্য লগ্নি সংস্থার আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আর্জি জানিয়ে জনস্বার্থের মামলা করেছেন। সিবিআই তদন্ত প্রসঙ্গে বাসবীদেবীর আইনজীবী সুব্রতবাবু এ দিন আদালতে জানান, ওই তদন্তের আর্জি জানিয়ে যখন মামলা করা হয়েছিল, তখন বিষয়টির সঙ্গে রাজ্য সরকার যুক্ত ছিল না। কিন্তু এখন এক সাংসদ গ্রেফতার হয়েছেন। তিনি সারদা ও সরকারকে জড়িয়ে অনেক কথা বলেছেন। তাই সরকার আর সারদা কাণ্ডের তদন্ত করতেই পারে না বলে মনে করছেন সুব্রতবাবুরা।
সারদা কাণ্ডের তদন্তভার সিবিআই-কে দেওয়ার জন্য আরও একটি আবেদন হাইকোর্টে জমা পড়েছে। ৩ ডিসেম্বর আলাদা করে এই দু’টি মামলারই শুনানি হবে। সারদা এবং অন্যান্য বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টেও একটি মামলা চলছে।
সারদায় তছরুপের তদন্তে জানা গিয়েছিল, ওই গোষ্ঠী একই ঠিকানায় একাধিক সংস্থার নামে বেআইনি ভাবে লাইসেন্স নিয়েছে। কলকাতা পুরসভা এ দিন সেই সব লাইসেন্স বাতিল করে দিয়েছে। পুরসভার লাইসেন্স দফতর সূত্রের খবর, ৪৫৫ নম্বর ডায়মন্ড হারবার রোডের একটি বাড়িতে সারদার বিভিন্ন সংস্থার নামে ৪৮টি লাইসেন্স ছিল। কলকাতার নানা জায়গায় বিভিন্ন নামে ওই গোষ্ঠীর আরও ১৫টি লাইসেন্সের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “একটি বাড়িতেই বিভিন্ন নামে সারদা গোষ্ঠী একাধিক লাইসেন্স ছিল। খবর পাওয়ার পরেই পুরসভা তদন্ত শুরু করে সব লাইসেন্স বাতিল করেছে।” বেআইনি লাইসেন্স কী ভাবে দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে পুরকর্তারা এ দিন মুখ খোলেননি। |