দানের আশায় স্কুল চলবে এবং শিক্ষকেরা অন্যের দয়ায় বেঁচে থাকবেন, এটা চলতে পারে না বলে মন্তব্য করল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি অশোক দাস অধিকারী বৃহস্পতিবার নির্দেশ দেন, সরকারি আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা না-করে কোনও মাদ্রাসা বা স্কুলকেই আর অনুমোদন দেওয়া চলবে না।
রাজ্যের বহু এলাকাতেই স্থানীয় ছেলেমেয়েদের প্রয়োজনে কোনও ভাবে স্কুল বা মাদ্রাসা গড়ে তোলা হয়। সংগঠকদের উদ্যোগে প্রাথমিক ভাবে পঠনপাঠন চলে সেখানে। তার পরে সরকারি অনুমোদন ও আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানানো হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই অনুমোদন পেতে বছরের পর বছর গড়িয়ে যায়। কোথাও অনুমোদন মিলল তো অনুদান জোটে না। সারা বাংলায় এই ধরনের অজস্র স্কুল ও মাদ্রাসা আছে। বিশেষ করে বহু মাদ্রাসারই অনুমোদন ও অনুদানের বিষয়টি নিয়ে টানাপোড়েন চলছে দীর্ঘদিন ধরে। সেই বাম
জমানা থেকেই।
রাজ্যে পালাবদলের পরে কিছু কিছু মাদ্রাসাকে অনুমোদন দেওয়া হতে থাকে। মুর্শিদাবাদের শামসেরগঞ্জ থানা এলাকার লস্করপুরের ডাঙাপাড়া জুনিয়র মাদ্রাসা তেমনই একটি প্রতিষ্ঠান। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ওই প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয় রাজ্য মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ। কিন্তু ওই মাদ্রাসা এখনও কোনও রকম সরকারি আর্থিক সহায়তা পায়নি। মাদ্রাসা-কর্তৃপক্ষের হয়ে আখতারুজ্জামান এবং অন্যেরা তাই হাইকোর্টে মামলা করেন।
এ দিন সেই মামলার শুনানিতে বিচারপতি অশোক দাস অধিকারী নিজেই দানের মুখাপেক্ষী স্কুল বা মাদ্রাসা এবং অন্যের দয়ায় জীবনধারণ করতে বাধ্য হওয়া শিক্ষকদের প্রসঙ্গ তোলেন। তার পরেই জানিয়ে দেন, সরকারের আর্থিক বরাদ্দ ছাড়া এই ভাবে স্কুল বা মাদ্রাসাকে অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে না। সরকারি বরাদ্দের ব্যবস্থা করে তবেই নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিতে হবে। আবেদনকারী মাদ্রাসাকে যে-হেতু অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তাই তাদের আর্থিক অনুদানও প্রাপ্য। অবিলম্বে তাদের পাওনা টাকা মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশও দেন বিচারপতি।
আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী এক্রামুল বারি বলেন, লস্করপুরের ওই গ্রামীণ এলাকায় পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও মাদ্রাসা ছিল না। এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে একটি মাদ্রাসার দাবি জানাচ্ছিলেন। তার পরে কোনও ভাবে জুনিয়র মাদ্রাসা গড়া হয়। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মাদ্রাসা-কর্তৃপক্ষ অনুমোদন চেয়ে আসছিলেন। নতুন সরকারের আমলে অনুমোদন মিললেও অনুদান জোটেনি। টাকার জন্য বারবার আবেদন জানিয়েও কাজ হয়নি। রাজ্য সরকারের পক্ষে আইনজীবী কমলেশ ভট্টাচার্য বলেন, অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। সবটাই পর্ষদের বিষয়।
বিচারপতি তাঁর রায়ে জানিয়ে দেন, শুধু লস্করপুরের ওই মাদ্রাসা নয়, সরকারি আর্থিক বরাদ্দ ছাড়া বাস্তবে কোনও স্কুল বা মাদ্রাসাই চলতে পারে না। রাজ্যের অর্থসাহায্য ছাড়া কোনও স্কুল বা মাদ্রাসাকে অনুমোদন দেওয়া যাবে না। |