রাজ্যে পদ্মফুল ফোটাতে ভরসা নরেন্দ্র মোদীই। আপাতত তিন রাজ্যে বিধানসভা ভোটের সাফল্য তাদের শিবিরে বাড়তি উৎসাহ বয়ে এনেছে। সেই আবহে তিন রাজ্যের মডেলই পশ্চিমবঙ্গে ব্যবহার করতে চাইছে রাজ্য বিজেপি।
যে চার রাজ্যের বিধানসভার ফল বেরিয়েছে রবিবার, তার মধ্যে দিল্লিতে আম আদমি পার্টির উত্থানের ফলে বিজেপি ম্যাজিক সংখ্যা ছুঁতে পারেনি। কিন্তু সেখানে তারাই একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল। মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে বিজেপি-র তুঙ্গ সাফল্য। ছত্তীসগঢ়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়েও সরকার গড়ছে তারাই। এই সাফল্যে সওয়ার হয়েই পশ্চিমবঙ্গের মতো বিজেপি বিধায়কহীন রাজ্যেও পদ্মফুল ফোটানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন দলীয় নেতৃত্ব।
দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ জানাচ্ছেন, এ রাজ্যের মানুষের কাছে তাঁরা নিজেদের উন্নত প্রশাসক এবং উন্নয়নের কারিগর এই ভাবমূর্তি তুলে ধরতে চান। সে জন্য মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তীসগঢ়ে ঠিক কী উপায়ে সরকার চালিয়ে, কী ধরনের সুশাসন এবং উন্নয়ন দিয়ে হ্যাটট্রিক করা সম্ভব হয়েছে, রাজস্থানে অতীতে বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার সরকারের কর্মকাণ্ড কেমন ছিল, তা জেনে নিচ্ছেন এ রাজ্যের বিজেপি নেতারা। এ রাজ্যে লোকসভা ভোটের প্রচারে সুশাসন এবং উন্নয়নের সেই রূপরেখাই হবে তাঁদের হাতিয়ার। দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মোদীর গুজরাত মডেল তো আছেই! রাহুল বলেন, “প্রচারে আমরা মানুষকে বলব, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির দিকে দেখুন। সেগুলির সুশাসন এবং উন্নয়নের চেহারা দেখলেই বুঝবেন, পশ্চিমবঙ্গেও আমরাই বিকল্প!” এ ছাড়া, বিজেপি-র আর একটি তত্ত্ব হল কেন্দ্রে যারা সরকার গড়তে পারবে, লোকসভায় কেবল তাদেরই ভোট দেওয়া উচিত। অর্থাৎ কংগ্রেস বা বিজেপি ছাড়া অন্য কোনও দল যেমন বামফ্রন্ট বা তৃণমূলকে লোকসভায় ভোট দেওয়া উচিত নয়। প্রচারে রাহুলেরা সে কথাই বলবেন।
তিন রাজ্যের সাফল্যকে এ রাজ্যে কাজে লাগাতে ফেসবুক, ট্যুইটারের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও সক্রিয় হয়েছে বিজেপি। পাশাপাশি চলছে পথসভা এবং সংগঠনের তৃণমূল স্তর পর্যন্ত বৈঠক। রাহুলের দাবি, বিজেপি-র সঙ্গে মুসলিমদের দূরত্বও ঘুচতে শুরু করেছে। গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানের অভিজ্ঞতার নিরিখে এ রাজ্যেও মুসলিমেরা বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন। তিন রাজ্যের সাফল্য টাটকা থাকতে থাকতেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে রাজ্য বিজেপি-র পর্যবেক্ষক বরুণ গাঁধীর আগামী ১৭ এবং ১৮ ডিসেম্বর করণদিঘি এবং শিলিগুড়িতে সভা করার কথা। সর্দার বল্লভভাই পটেলের মূর্তি নির্মাণের যে প্রকল্প মোদী হাতে নিয়েছেন, তা-ও এখন এ রাজ্যে দলের জমি তৈরিতে সহায়ক হচ্ছে। গুজরাতের বনমন্ত্রী যশোবন্ত সিংহ, মুখ্য সচেতক আরশি পটেল, বিধায়ক সঙ্গীতা পাটিল, দলের রাজ্যসভা সাংসদ স্মৃতি ইরানি কলকাতা, আসানসোল, হাওড়ায় গুজরাতি সম্প্রদায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মহাজাতি সদনের অ্যানেক্স ভবনেও সোমবার দলের বৈঠক হয়েছে। সব ক’টি বৈঠকেরই উদ্দেশ্য পটেলের মূর্তি নির্মাণের জন্য লোহা সংগ্রহ করা এবং ১৫ ডিসেম্বর দৌড় সংগঠিত করা। দু’টোই দেশজোড়া কর্মসূচি। রাহুল এ দিন জানান, বল্লভভাই যে হেতু কৃষকদরদী ছিলেন, তাই তাঁর মূর্তির জন্য কৃষকদের ব্যবহৃত লোহা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সংগ্রহ করা হচ্ছে প্রত্যেক পঞ্চায়েত এলাকার মাটিও। ১৫তারিখ দেশ জুড়ে সকাল আটটায় দু’কিলোমিটার ‘ঐক্যের জন্য দৌড়’ কর্মসূচি এ রাজ্যের ২৫টি জায়গাতেও দেখা যাবে। কলকাতায় শ্যামবাজারে সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তির সামনে থেকে স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি পর্যন্ত ওই দৌড় হবে। থাকবেন স্মৃতি। তাঁর কথায়, “ঐক্যের জন্য দৌড় এত চমৎকার হবে যে, তা গিনেস বুকেও স্থান পেতে পারে!” |