অভিশপ্ত ডার্বির এক বছর পর
ওডাফা চান ভুলে যেতে, বিষ্ণু চান ফের ওই ম্যাচ খেলাতে
পায়ে পায়ে একটা বছর পার করে দু’জনেই রয়েছেন ফুটবল মাঠে। প্রথম জন যখন সোমবার সকালে সাউথ সিটির ফ্ল্যাট থেকে যুবভারতী যাচ্ছেন মোহনবাগানের অনুশীলনে, দ্বিতীয় জন তখন সদ্য গোয়ার মাটিতে পা দিয়েছেন আই লিগের ম্যাচ খেলাতে।
প্রথম জনের মোবাইলে ফোন করলে বাজছে, কিশোরকুমারের ‘ছু কর মেরে মন কো, কিয়া তুনে ক্যায়া ইশারা’। আর দ্বিতীয় জনের রিংটোন হরিহরণের গাওয়া, ‘ইয়েহ তো সচ্ হ্যায় কে ভগবান হ্যায়।”
এক বছর আগে নয় ডিসেম্বরের কলঙ্কিত ডার্বি ম্যাচের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে সে দিনের দুই কেন্দ্রীয় চরিত্র কিন্তু দুই ভিন্ন মেরুতে!
প্রথম জন ওডাফা ওকোলি যখন সেই ‘অভিশপ্ত’ ডার্বি ভুলে যেতে চান তখন দ্বিতীয় জন সেই ম্যাচের ‘বহু চর্চিত’ রেফারি বিষ্ণু চৌহান ফের ওডাফার ম্যাচে বাঁশি মুখে মাঠে নামতে মুখিয়ে। গোয়া থেকে ফোনে গুজরাত পুলিশের এই অফিসার বলেই দিলেন, “ওই স্মৃতি ভোলা যায় না কি! তবে কোনও রাগ, দুঃখ পুষে রাখিনি। বরং কবে ফের রেফারির পোশাকে যুবভারতীর টানেলে ওডাফার মুখোমুখি হব তার জন্য মুখিয়ে রয়েছি।”
আর ওডাফা? বিষ্ণু সে দিন তাকে ‘মার্চিং অর্ডার’ দিয়ে ম্যাচ থেকে বের করে দেওয়ার পরেই তো তুলকালাম শুরু হয়েছিল যুবভারতীতে। গ্যালারি থেকে উড়ে আসা ইটের টুকরোয় কপাল ফাটা রক্তাক্ত নবিকে নিয়ে ছুটতে হয়েছিল হাসপাতাল। আর দল তুলে নিয়ে নির্বাসনের মুখে পড়তে হয়েছিল শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবকে। অনুশীলনে এ কথা স্মরণ করিয়ে দিতেই চোয়াল শক্ত মোহনবাগান অধিনায়কের। তাঁর রিংটোনের মতোই মোলায়েম সুরে বললেন, “নয় ডিসেম্বরের ঘটনা মনে রাখতে চাই না। অতীতে কী হয়েছিল সব ভুলে গিয়েছি।” পরে যদিও বললেন, “ওটা আমার ফুটবল জীবনের খারাপ সময়। মনে হত ফুটবল জীবনটাই বুঝি শেষ হয়ে গেল। মানসিক যন্ত্রণা তাড়া করত। আমি পেশাদার। তাই ও সব ভুলে এখন নতুন করে লড়াই করছি।” আর বিষ্ণু চৌহান সম্পর্কে স্মৃতিচারণ? ওডাফা বলছেন, “নো কমেন্টস’।

সেই অসহনীয় স্মৃতি।
শুনে হাসছেন সে দিনের কেন্দ্রীয় চরিত্র বিষ্ণু। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “যাক ওডাফার প্রার্থনা’ শুনে ঈশ্বর আমাকে বা আমার স্ত্রী-সন্তানকে শাস্তি দেননি। কেন জানেন? সে দিন আমি কোনও ভুল করিনি।” এখানেই না থেমে গুজরাত সন্তোষ ট্রফি টিমের এই প্রাক্তন স্টপার বললেন, “ওডাফা না আমার বন্ধু, না শত্রু। মাঠে ফুটবলের আইন রক্ষা করাটাই আমার কাজ।”
ওডাফা তাঁর খবর না রাখলেও বিষ্ণু কিন্তু খবর রাখেন বাগান অধিনায়কের। বললেন, “কাগজে পড়লাম ফিটনেস সমস্যায় আই লিগের শুরুতে বেশ কয়েকটা ম্যাচ খেলতে পারেনি। এখন খেলছে। নিশ্চয়ই এ বার ভাল কিছু করবে। ও দেশের অন্যতম সেরা বিদেশি।” এ বারের আই লিগে এখনও পর্যন্ত চারটি ম্যাচ খেলিয়েছেন। তার মধ্যে দু’টোই কলকাতায় এসে। ইস্টবেঙ্গল-ডেম্পো। ইউনাইটেড স্পোর্টস-চার্চিল ব্রাদার্স।
আর সে দিন যার কপাল ফেটেছিল? সেই রহিম নবি অবশ্য ভুলেই গিয়েছিলেন মঙ্গলবার সেই ‘কুখ্যাত’ নয় ডিসেম্বরের বর্ষপূর্তি। সে দিন স্টেডিয়ামের যেখানে দাঁড়িয়ে চোট পেয়েছিলেন এ দিন দুপুরে সেখানে দাঁড়িয়েই স্ট্রেচিং করেছেন। টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে বললেন, “আমার স্ত্রী সোমা মনে করিয়ে দিল আজকের দিনটা। মনে করলেই শিউরে উঠি। একটু এ দিক ও দিক হলেই সে দিন অন্ধ হয়ে যেতাম। তাই ওই দিনটা মনে রাখতে চাই না।”
এক বছর আগে এই নয় ডিসেম্বরেই ম্যাঞ্চেস্টার ডার্বিতে গ্যালারি থেকে উন্মত্ত সমর্থকের উড়ে আসা মুদ্রায় বাঁ চোখ জখম হয়েছিল রুনির দলের রিও ফার্দিনান্দের। রুনির দেশে এই কাণ্ড যিনি ঘটিয়েছিলেন সেই ম্যাথু স্কট পরে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন ফার্দিনান্দের কাছে।
নবির শহরের সেই ‘বঙ্গজ ম্যাথু স্কট’টি কিন্তু অধরা রয়ে গিয়েছেন তিনশো পঁয়ষট্টি দিন পরেও। তিনি যেন এই কুকর্মটি ফের না করেন তার জন্য আর্জিতে ‘সাথ সাথ’ ওডাফা-বিষ্ণু-নবি।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.