শিবশঙ্করকে লাথি-প্রদর্শন, হাত না মিলিয়ে বাংলার পাল্টা
টিম ফিরছে এক পয়েন্ট আর লক্ষ্মীর চোট নিয়ে
বিশ্রী আত্মসমর্পণে রঞ্জি ট্রফির শেষ আটের স্বপ্নে প্রায় জলাঞ্জলি। মুরলী কার্তিকের অশোভন কীর্তিকলাপে অশোক দিন্দাদের বিতর্কিত প্রত্যুত্তর। বাংলা অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল-র কুঁচকির চোট ও পরের ম্যাচে নামা নিয়ে সংশয়। উত্তেজিত সিএবি কর্তাদের সিনিয়র বসিয়ে টিমে জুনিয়র আনার প্রস্তাব ও দল নির্বাচনী বৈঠকে বদলের সম্ভাবনা।
রেলওয়েজের বিরুদ্ধে রঞ্জি ম্যাচের শেষ দিনে যা যা ঘটে গেল, খুব সংক্ষেপে এ রকম।
লক্ষ্মীর একক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও রেলের বিরুদ্ধে তিন পয়েন্ট মাঠে ফেলে এল বাংলা। প্রথম ইনিংসে লিড নেওয়ার জন্য সোমবার সকালে বাংলার দরকার ছিল আরও ৫৫ রান, হাতে তিনটে উইকেট, ৮৭-তে ব্যাট করছিলেন অধিনায়ক। বলা হচ্ছিল, যতক্ষণ লক্ষ্মী থাকবেন, বাংলাও থাকবে ম্যাচে।
বদলে কী হল?
লক্ষ্মীকে অসহায় ভাবে দেখতে হল কী ভাবে মাত্র আঠারো রানের মধ্যে বাকি তিনটে উইকেট পড়ে যাচ্ছে, ৯৫ নট আউট থেকেও দলকে বাঁচাতে পারছেন না! তিন পয়েন্ট তো বটেই, দু’ম্যাচ বাকি থাকতে শেষ আটের স্বপ্ন মোটামটি ধুলিসাৎ হচ্ছে।
ক্রিকেটকেও দেখতে হল, দু’টো টিমের মধ্যে ঝামেলা কতটা কদর্য চেহারা নিতে পারে! দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সাম্প্রতিক অতীতে এত জঘন্য ব্যাপার ঘটেনি, যা আজ ঘটল। আউট হওয়ার পর শিবশঙ্কর পালকে রেল ক্রিকেটারদের ‘লাথি’ দেখানো, রেল অধিনায়ক মুরলী কার্তিকের ‘নকল’ করে মাঠেই বাংলা ক্রিকেটারদের পাল্টা অঙ্গভঙ্গি, ম্যাচ শেষে বিপক্ষ টিমের সঙ্গে হাত মেলানোর প্রস্তাব বাংলা শিবির থেকে পত্রপাঠ ফেরানো কী হল না?
বাংলার সন্দীপন দাসকে ‘মাঁকড়ীয়’ টোটকায় রবিবার কার্তিক আউট করার পর যা বাঁধে এবং এ দিন আরও ভয়াবহ চেহারা নেয়। সোমবার সকালে লক্ষ্মীরা ব্যাট করতে গেলে, চারপাশ থেকে তীব্র গালিগালাজ চালু করে দেওয়া হয়। দিন্দা ব্যাট করতে এলে টিটকিরি, অকথ্য ভাষার প্রয়োগ আরও বাড়ে। কার্তিক মোটামুটি অপেক্ষাই করেছিলেন যে কখন দিন্দা ক্রিজে ঢুকবেন। তাঁকে এমন সব শব্দে ‘অভ্যর্থনা’ জানানো হয় যে, আম্পায়ারকে গিয়ে সেটা থামাতে হয়। তার পরেও থামেননি কার্তিক। মুখ আরও বেশি করে চলতে থাকে, লক্ষ্মীকে এ বার যেতে হয় আম্পায়ারের কাছে। বাংলার ইনিংস শেষ হওয়ার পর দিন্দা-শিবশঙ্কর যখন ড্রেসিংরুমে ফিরছেন, তখন তাঁদের উদ্দেশ্যে ‘লাথি’ দেখান রেল পেসার কৃষ্ণকান্ত উপাধ্যায়! পরে কৃষ্ণকান্ত জানান, শিবশঙ্করকে নয়, ওটা করেছেন দিন্দার ‘অভব্যতার’ উত্তর দিতে! ততক্ষণে যতটুকু অগ্নিসংযোগ প্রয়োজন ছিল, হয়ে গিয়েছে। সেটা আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় বাংলা ইনিংস শেষ হয়ে ম্যাচের ভাগ্য চুড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও রেলের অহেতুক গোটা দিন খেলতে চাওয়ার আব্দার! কার্তিক আম্পায়ারকে বলেন, তাঁরা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করবেন। উদ্দেশ্যবাংলাকে বাকি দিনটা খাটানো।

বিতর্কের কেন্দ্রে মুরলী। দিল্লিতে প্রেম সিংহের তোলা ছবি।
বাংলা শিবির থেকে যার উত্তর এল বিকেল নাগাদ। দলের একজন সিনিয়র ক্রিকেটারকে দেখা গেল এমন কিছু অঙ্গভঙ্গি করতে যা কার্তিককে সাধারণত করতে দেখা যায়! কার্তিক টিম নিয়ে বাংলা ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মেলাতে গেলে কেউ তাঁর দিকে পাল্টা হাত বাড়িয়ে দেননি! বরং কার্তিককে বলে দেওয়া হল মাঠ থেকে বেরিয়ে যাও। আমরা থাকব।
যে ব্যবহারের মধ্যে কোনও অন্যায় দেখছে না বাংলা ড্রেসিংরুম। অধিনায়ক বলছেন, “গত দু’দিনে যা হয়েছে, তার পর যদি আমার ছেলেরা হাত না মেলাতে চায় দোষ দেব না। আর আমাদের কুল ডাউন চলছিল। তাই বেরিয়ে যেতে বলা হয়েছে, যাতে কার্তিকরা বিরক্ত না করে। অত হ্যান্ডশেকের ইচ্ছে থাকলে অপেক্ষা করতে পারত। আর ম্যাচে কিছু না পড়ে থাকা সত্ত্বেও ওদের খেলতে চাওয়ার ইচ্ছেটা কি ঠিক?” সঙ্গে লক্ষ্মীর সংযোজন, “হাত মেলাতেই হবে সেটা আইসিসি কোথাও বলেনি। ক্রিকেটটা জেন্টলম্যানস গেম। মাঠে সেটা মেনে একটা টিমই খেলেছে। বাংলা।” কোচ অশোক মলহোত্র আরও চাঁচাছোলা, “আমাদের প্লেয়ারকে তো লাথিও দেখানো হল। উত্তরে আমার ছেলেরা যা করেছে, ঠিকই করেছে।”
রবিবারের ঘটনায় বাংলা কোচ ও দিন্দাকে ম্যাচ রেফারি কোনও শাস্তি দেবেন কি না, এখনও কিছু ঠিক নয়। রাতের দিকেও দেখা গেল, বাংলা শিবিরে হারের চেয়ে বেশি উত্তেজনা কার্তিকদের অভব্যতা নিয়ে। সিএবি-র রাতের উত্তেজনায় আবার কার্তিক নেই, বাংলা ক্রিকেটারদের বিশ্রী পারফরম্যান্স আছে। নির্বাচক প্রধান দীপ দাশগুপ্ত চেন্নাই থেকে ফোনে বললেন, “পয়েন্ট ফেলে আসাটা বড় নয়, যে ভাবে ফেলে এল সেটাই আসল। এ ভাবে ক্রিকেট হয় না।” সিএবি কর্তারা বলে দিচ্ছেন, যে ভাবে বাংলার দুই ক্রিকেটার শুভময় দাস এবং গীতিময় বসু ঢিকির-ঢিকির করে রান তুলেছেন, তাতে পরবর্তী ম্যাচে জায়গা হওয়াই উচিত নয়।
উত্তরপ্রদেশ ম্যাচের দল নির্বাচন মঙ্গলবারই। সেখানে বেশ কয়েকটা পরিবর্তনের সম্ভাবনা আছে। শোনা যাচ্ছে শুভময় বাদ পড়তে পারেন। আরও দু’এক জন ব্যাটসম্যানকে বাদ দেওয়া হতে পারে। অভিমন্যু ঈশ্বরণ, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের মতো জুনিয়রদের নাম উঠে আসছে। বৈঠকে কোচ-ক্যাপ্টেনের কাছে জানতে চাওয়া হবে, বিপর্যয়ের কারণ। তাতেও কতটা লাভ হবে সন্দেহ। কারণ বাংলা যদি উত্তরপ্রদেশ এবং তামিলনাড়ুর বিরুদ্ধে ছ’পয়েন্ট করে নিতে পারে, তবেই কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা যেতে পারে। নইলে নয়। যা কার্যত অসম্ভব বলেই ধরা হচ্ছে। গোদের উপর বিষফোঁড়া, বাংলা অধিনায়কের চোট কতটা গুরুতর সেটা এখনও বোঝা যাচ্ছে না।
যদিও বরাবরের অক্লান্ত যোদ্ধা লক্ষ্মী বললেন, “আমি নামছি। এই অবস্থায় বাইরে বসে থাকব নাকি?”

সংক্ষিপ্ত স্কোর: রেলওয়েজ ৩০৬ ও ১৯৩-২ (ভিল্লে ১০০ ন.আ.), ২৭০ (লক্ষ্মী ৯৫ ন.আ.)

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.