প্রাক্তনীর জয়ে খুশির হাওয়া আইআইটিতে
কৃতী ছাত্র। তবে চেহারায়, চলনে-বলনে আর পাঁচ জনের মতোই সাধারণ। যাকে বলে আম আদমি। ভেতরে অবশ্য একটা চাপা আগুন ছিল। আর সেটা চিনতে ভুল করেনি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খড়্গপুর আইআইটি। তাঁর সামাজিক আন্দোলনের স্বীকৃতি হিসেবে চার বছর আগেই আইআইটি কর্তৃপক্ষ ‘বিশেষ প্রাক্তনী’ সম্মানে ভূষিত করেছিলেন কেজরিওয়ালকে।
সালটা ২০০৯। সরকারি চাকরি ছেড়ে স্বেচ্ছায় সমাজকর্মী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নাম ততদিনে পরিচিতি পেতে শুরু করেছে। তিনি তখন লড়ছেন তথ্য জানার অধিকার আইনের জন্য। এই লড়াইয়ের জন্যই সে বছর ‘ডিস্টিংগুয়িশড্ অ্যালুমনি অ্যাওয়ার্ড’-এর প্রাপক হিসেবে কেজরিওয়ালকে বেছে নিয়েছিলেন আইআইটি কর্তৃপক্ষ। নির্বাচকদের অন্যতম ছিলেন খড়্গপুর আইআইটির অ্যালুমনি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের তৎকালীন ডিন অমিত পাত্র। ইলেকট্রিকাল বিভাগের অধ্যাপক অমিতবাবু বলেন, “তথ্যের অধিকার নিয়ে লড়াইয়ের স্বীকৃতি হিসেবে আমরা ওঁকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করি। আজ বুঝতে পারছি, আমাদের পাত্র নির্বাচন ভুল ছিল না।” ২০০৫ সালে সামাজিক আন্দোলনের জন্যই কেজরিওয়ালকে ‘সত্যেন্দ্র দুবে স্মৃতি পুরস্কার’ দিয়েছিল কানপুর আইআইটি-ও।

২০০৯ সালে খড়্গপুর আইআইটির অনুষ্ঠানে অরবিন্দ কেজরিওয়াল
(বাঁদিক থেকে দ্বিতীয় জন)। ছবি: খড়্গপুর আইআইটির সৌজন্যে।

১৯৮৫ থেকে ১৯৮৯, টানা চার বছর খড়্গপুর আইআইটিতে কাটিয়েছেন কেজরিওয়াল। মেকানিক্যাল বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি। থাকতেন নেহরু হলে (হস্টেল)। মেকানিক্যাল বিভাগের অধ্যাপক শঙ্করকুমার সোম ১৯৭৬ সাল থেকে খড়্গপুর আইআইটিতে রয়েছেন। অরবিন্দ কেজরিওয়ালকেও পড়িয়েছেন তিনি। শঙ্করবাবুর কথায়, “অরবিন্দ ভাল ছাত্র ছিল। কিন্তু ছাত্রজীবনে আলাদা করে ওকে মনে রাখার মতো কিছু করেনি। সেই স্মৃতি সত্যি আবছা।” তবে অরবিন্দ মানুষটা যে আলাদা ধাতের, সেই প্রমাণ শঙ্করবাবু পেয়েছেন গত বছর। অণ্ণা হজারের অনশন-আন্দোলন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, ম্যাগসেসাই পুরস্কারের সূত্রে অরবিন্দ কেজরিওয়াল তখন পরিচিত নাম। ‘প্যান আইআইটি’-র অনুষ্ঠানে তিনি এসেছিলেন কলকাতায়। শঙ্করবাবু গিয়েছিলেন খড়্গপুর আইআইটির ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর হিসেবে। ওই অনুষ্ঠানেই তাঁর দেখা হয়েছিল পুরনো ছাত্রের সঙ্গে। শঙ্করবাবুর কথায়, “অরবিন্দ নিজে এসে কথা বলল। জিজ্ঞেস করল, ‘স্যার চিনতে পারছেন?’ আমার সঙ্গে ছবি তুলল। খুব ভাল লেগেছিল।”
খড়্গপুর আইআইটিতে এখন পরীক্ষা শেষের ছুটি চলছে। হাতেগোনা কিছু ছাত্র হস্টেলে রয়েছেন এবং তাঁদের মুখে কেবল কেজরিওয়াল কাহিনী। রাজধানীর ভোটযুদ্ধে ‘আম আদমির পার্টি’ কী ভাবে কংগ্রেস-বিজেপির মতো খাস রাজনৈতিক দলগুলিকে বেগ দিয়েছে, তা নিয়ে চর্চা করছিলেন কেজরিওয়ালের নিজের বিভাগ মেকানিক্যালের গুটিকয় পড়ুয়া। তাঁদেরই এক প্রাক্তনীর কৃতিত্বে ওঁরা গর্ব অনুভব করছেন। সেই দলে ছিলেন চতুর্থ বর্ষের ছাত্র অয়ন হাজরা। ‘আম আদমি পার্টি’র সঙ্গে তার যোগাযোগ রয়েছে। অর্থ সাহায্যও করেছেন। অয়নের কথায়, “অরবিন্দ কেজরিওয়াল এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন। সাধারণ মানুষের শক্তি কতখানি, তা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন। বুঝিয়েছেন উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য শুধু ভাল চাকরি, ভাল কেরিয়ার নয়, সমাজ ও দেশের কাজেও আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।” মেক্যানিক্যাল বিভাগে গবেষণা করছেন সীতাংশুশেখর চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “যারা আইআইটিতে পড়তে আসে, তারা হয় বড় সংস্থার চাকরি করতে যায়, নাহলে উচ্চ প্রশাসনিক পদ সামলায়। কিন্তু এ ভাবে সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া, সত্যিই অভাবনীয়। গণতন্ত্রের পক্ষে এটা খুবই ভাল দিক।”
প্রাক্তনী কেজরিওয়ালকে সংবর্ধনা দেওয়া ইচ্ছে রয়েছে বর্তমান পড়ুয়াদের। এখন ছুটি থাকায় কোনও আয়োজন করা যাচ্ছে না। বি-টেক চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সৌগত নিয়োগী বলছিলেন, “অনেকেই ফেসবুকে ওঁকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। ইচ্ছে আছে ছুটি কাটলে বড় কিছু করার।”
আর কেজরিওয়ালের আদর্শ? আইআইটির বর্তমান পড়ুয়াদের মতে, সেই আদর্শ তাঁদের অনুপ্রাণিত করেছে। ভবিষ্যতে হয়তো তাঁরা সকলে সক্রিয় রাজনীতিতে যাবেন না। কিন্তু যিনি যে পেশাতেই থাকুন না কেন, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার মন্ত্র তাঁদের সবার অন্তরে থেকে যাবে। আর সে পথে শক্তি জোগাবে তাঁদেরই প্রাক্তনী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দেখানো পথ।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.