|
|
|
|
কংগ্রেস নেতৃত্বকে দুষে ময়দানে পওয়ার, অন্যরাও |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও পটনা
৯ ডিসেম্বর |
চার রাজ্যে ভোট গোনার আগের সন্ধ্যায় কংগ্রেস নেতাদের ঘরোয়া আড্ডায় এক নেতা বলছিলেন, কাল যদি ফল খারাপ হয়, তবে সব থেকে আগে মুখ খুলবেন শরদ পওয়ার। এবং গোড়াতেই প্রশ্ন তুলবেন নেতৃত্বের বিষয়টি নিয়ে। এই ভবিষ্যদ্বাণী মিলিয়ে দেওয়ার জন্য কোনও পুরস্কার নেই। থাকলে ওই নেতাই পেতেন। কারণ, গত কাল ভোটবাক্সে ভরাডুবির পরে আজ প্রথম তোপটা এল মরাঠা নেতার কাছ থেকেই। যার নিশানা কংগ্রেস নেতৃত্ব।
এ দিন সকালে নিজের ব্লগে পওয়ার যা বলেছেন, তার মোদ্দা বিষয় হল: নেতৃত্বের দুর্বলতার জন্যই কংগ্রেস ডুবেছে। দেশের যুব সমাজ যে দৃঢ় নেতৃত্ব চাইছে, কংগ্রেস ও তার শরিকদের তা খতিয়ে দেখা উচিত।
কংগ্রেসেরই কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, কাল ভোটবাক্সে যা হয়েছে, তাতে পওয়ার যে ভুল কিছু বলেছেন, তেমন নয়। তাঁর জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও সেটাই করতেন। বস্তুত, কংগ্রেস তথা ইউপিএ সরকারের দুর্বল নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও। কিন্তু পওয়ার শরিক নেতা বলেই আজ তাঁর মন্তব্য অস্বস্তি বাড়িয়েছে কংগ্রেসের। পওয়ারের আসল উদ্দেশ্য, লোকসভা ভোটের আগে বেকায়দায় পড়া কংগ্রেসকে চাপে রেখে মহারাষ্ট্রে নিজের দলের আসন যথাসম্ভব বাড়িয়ে নেওয়া। সেই কারণেই এখন থেকে জমি তৈরি করে রাখতে চাইছেন তিনি।
শুধু পওয়ারই নন, লোকসভা ভোটের আগে যে কংগ্রেস বিরোধিতার আঁচ পাওয়া চার রাজ্যের ভোটে তা ভাবাতে শুরু করেছে ইউপিএ-র অন্য শরিক-সমর্থকদেরও। কংগ্রেস সংস্রবের জন্য লোকসভা ভোটে কতটা খেসারত দিতে হবে, মূলত সেই চিন্তাই চেপে বসছে আঞ্চলিক দলগুলিতে। উত্তরপ্রদেশের যুযুধান দুই আঞ্চলিক দলের অবস্থান এ ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ।
বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের ফল নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বহুজন সমাজ পার্টি নেত্রী মায়াবতী বলেন, কংগ্রেস যে এত খারাপ করবে, ভাবতে পারিনি। এটা আঁচ করতে পারলে দিল্লি ও মধ্যপ্রদেশে আরও সুসংহত ভাবে লড়াই করত বিএসপি। পরে মায়াবতীর দল সূত্রে বলা হয়েছে, এ বার দিল্লিতে সব আসনে মায়াবতী প্রার্থী দিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু কংগ্রেসের অনুরোধে বহু ক্ষেত্রে দুর্বল প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল। মধ্যপ্রদেশ-রাজস্থানেও শক্তিমান প্রার্থী দেওয়া হয়নি। তিনি নিজেও সে ভাবে প্রচার করেননি। এখন আফসোস হচ্ছে, বিএসপি আরও পরিশ্রম করলে বেশি আসন পেতে পারত।
কংগ্রেসের থেকে দূরত্ব রাখার বার্তা দিচ্ছেন মুলায়ম সিংহও। চার রাজ্যে বিপর্যয়ের পর আজ একাধিক সপা সাংসদ বলেন, মওকা বুঝে এ বার সমর্থন প্রত্যাহারও করে নিতে পারেন ‘নেতাজি’। আজ নেলসন ম্যান্ডেলার শেষকৃত্যে যোগ দিতে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, সনিয়া গাঁধী-সহ একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দেশে রওনা হন। তাতে থাকার জন্য মুলায়মকে অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি রাজি হননি। অনেকেই মনে করছেন, এ ভাবেই কৌশলে সনিয়া তথা কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছেন মুলায়ম।
এই অবস্থায় আজ কংগ্রেসকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিজেপি নেতারাও। দলের শীর্ষ সারির নেতা যশবন্ত সিনহা আজ বলেন, “জাহাজ ডুবছে এখন আর কেউই কংগ্রেসের সঙ্গে থাকতে চাইছে না।” একই সঙ্গে অবশ্য পওয়ারকে কটাক্ষ করে তাঁর মন্তব্য, “এই বোধদয়ের পরেও পওয়ার কংগ্রেসের সঙ্গে রয়েছেন কী ভাবে!”
তবে দিনের শেষে এই কৌতূহলও থাকছে যে, কংগ্রেসকে ছেড়ে পালানোর এই প্রবণতাই যদি কাজ করে, তা হলে লোকসভা ভোটে কাদের সঙ্গে জোট গড়বে তারা? বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এ দিন বিজেপির পক্ষে দাঁড়াননি ঠিকই, কিন্তু কংগ্রেসের হয়েও তিনি কিছু বলেননি। বরং তাঁর ভোট তৃতীয় শক্তির দিকে। মোদী-লহরের কথা উড়িয়ে দিলেন ‘ব্লোয়ারের হাওয়া’ বলে। কেন এ কথা বলছেন, ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নীতীশের বক্তব্য, যেখানে আম আদমি পার্টির মতো তৃতীয় শক্তি রয়েছে, সেখানে তাদেরই বেছে নিয়েছে মানুষ। নীতীশ বলেন, “এখানে তৃতীয় শক্তি হিসেবে আমরা আছি। তাই বিজেপির বদলে আমাদেরই বেছে নেবে মানুষ।”
এই অবস্থায় কী বলছে কংগ্রেস? দলের এক শীর্ষ সারির নেতা আজ বলেন, পরিস্থিতি যতই নেতিবাচক হোক, কংগ্রেসকে ছেড়ে যাবেন না লালু প্রসাদ। এবং সেটা এখন রাহুলরও বোঝা উচিত। নীতীশের সঙ্গে জোট গড়ার ঝোঁক ছেড়ে এখন লালু ও রামবিলাস পাসোয়ানকে নিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে জোট ঘোষণা করা উচিত সনিয়া-রাহুলের।
|
পুরনো খবর: ভুলে ভরা নীতিতেই ভরাডুবি কংগ্রেসের |
|
|
|
|
|