কেউ কাউকে ছুঁতে নারাজ ত্রিশঙ্কু দিল্লিতে
তিন অচ্ছুতের গল্পে এসে আটকে রয়েছে দিল্লিতে সরকার গঠন। কারও কাছেই সরকার গড়ার সংখ্যা নেই। আবার বিজেপি, আম আদমি পার্টি (আপ) ও কংগ্রেস কেউ কাউকে ছুঁতে নারাজ। সব চেয়ে বেশি আসন পাওয়া বিজেপি-ও জানিয়ে দিয়েছে, বিরোধী আসনে বসাকেই শ্রেয় মনে করছে তারা। ভোটের আগে যাদের তুলোধোনা করে ভোটে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন অরবিন্দ কেজরিয়াল, তাঁর পক্ষে এখন প্রকাশ্যে বিজেপি-র হাত ধরা বা তাদের সমর্থন নিয়ে দিল্লির তখ্তে বসা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দল ভাঙাভাঙি না হলে দিল্লিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠনের কোনও রাস্তা আপাতত দেখা যাছে না।
আপাত ভাবে বল এখন দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর নাজিব জংয়ের উঠোনে। কিন্তু প্রধান তিন পক্ষই পরস্পরকে অচ্ছুত মনে করলে তিনিই বা কী করতে পারবেন! কেউ সরকার গঠনের দাবি না জানালে সব চেয়ে বড় দল হিসেবে তিনি প্রথমে বিজেপি-কে ডাকতে পারেন। আপ চাইলে বিধানসভায় অনুপস্থিত থেকে তাদের উতরে দিতে পারে। কিন্তু তেমন সম্ভাবনার কথা এই মুহূর্তে কিন্তু শোনা যাচ্ছে না কারও মুখেই। একমাত্র কিরণ বেদী আপ ও বিজেপি-র মধ্যে একটা রফার প্রস্তাব দিলেও অরবিন্দ বা বিজেপি-র প্রথম সারির নেতারা কেউই তাতে আমল দিচ্ছেন না।
ফলে বিজেপি সরকার গড়তে রাজি না হলে লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিয়মানুযায়ী আমন্ত্রণ জানাবেন আপ-কে। তারাও রাজি না হলে বিধানসভা কয়েক মাস জিইয়ে রেখে রাষ্ট্রপতি শাসনের দিকেও এগোতে পারে দিল্লি। সে ক্ষেত্রে ফের নতুন করে ভোট হতে পারে রাজধানীতে।
তা হলে কি শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি শাসনের দিকেই যাচ্ছে দিল্লি?
অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে জয়ের আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছেন তাঁর
আম আদমি পার্টির এক নেতা। সোমবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
সেটা-ও কিন্তু নিশ্চিত করে বলে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, তলে-তলে কোনও দলই হাল ছাড়েনি। দিল্লিতে সরকার গড়ার জন্য কয়েক জন অন্তত আপ বিধায়কের সাহায্য দরকার হবে আঁচ করে আগেভাগে ক’জনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছিলেন বিজেপি নেতারা। কিন্তু অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা তা ফাঁস করে দেওয়ায় বিজেপি নেতৃত্ব এখন সতর্ক। গত কাল সংসদীয় দলের বৈঠকে এসে নরেন্দ্র মোদী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, দিল্লিতে সরকার গড়ার থেকেও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ লোকসভায় ক্ষমতা দখল করা। এখন দিল্লি বিধানসভায় সরকার গড়তে গিয়ে যদি দলের ভাবমূর্তিতে কোনও ভাবে আঁচ পড়ে, তবে গোটা দলকেই তার খেসারত দিতে হবে। ফলে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যদি কেউ সমর্থন দেয় তো ভাল, নয়তো সরকার গড়ার দিকে না এগোনোই ভাল।
এই বক্তব্যে সায় রয়েছে লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো নেতাদেরও। এই অবস্থানে অনড় থেকে দিল্লিতে ফের ভোট হলে তা হবে লোকসভার সঙ্গেই। সেই সময় বিজেপি-র পক্ষে যে হাওয়া থাকবে, তাতে দিল্লি বিধানসভার ভোটের ক্ষেত্রেও ফায়দা হতে পারে বলে মনে করছেন দলের নেতারা। দিল্লিতে দলের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হর্ষবর্ধন অবশ্য এখনই সরকার গড়ার পক্ষে। তিনি বলছেন, “আমরা বিরোধী আসনে বসতে রাজি। কিন্তু জনতা যা চাইবে, সেটাই শিরোধার্য।”
প্রথম বার ভোটের ময়দানে সাড়া ফেলে তাঁদের যত জন জিতেছেন, ফের ভোট হলে তাঁদের কত জন জিততে পারবেন, তা নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে অরবিন্দের দলেও। তার উপর ফের নির্বাচন মানে আরও বেশি অর্থ খরচ। তার জোগানও চাই। সম্ভবত সেই ভাবনা থেকেই অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দলের নেতা কুমার বিশ্বাসও এ দিন বলেন, “জনতা যখন বিজেপি-কেই সব থেকে বেশি ভোট দিয়েছে, তখন তাদেরই সরকার গড়ার চেষ্টা করা উচিত।”
তবে আপ যে কোনও মতেই বিজেপি বা কংগ্রেসকে সমর্থন করবে না, সেটাও তারা এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছে। আজ সকালে অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, জনতা তাঁদের বিরোধী আসনে বসার রায় দিয়েছে। তাই সরকার গড়ার দাবি জানাবে না আপ।
দীর্ঘমেয়াদি রাজনীতি করতে হলে কংগ্রেস বা বিজেপির সঙ্গে জোট গড়া বা তাদের কাউকে সমর্থন করা এই মুহূর্তে অন্তত সম্ভব নয় অরবিন্দদের পক্ষে। এমনকী আপ-এর বিধায়করা যদি বিধানসভায় অনুপস্থিত থেকে বা ভোট বয়কট করে সংখ্যালঘু বিজেপি সরকারকে গরিষ্ঠতা প্রমাণের সুযোগ করে দেয়, তাতে তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন দেখা দেবে জনমানসে। তা ছাড়া, সরকারে গেলে মানুষের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পালন করতে হবে। প্রতিনিয়ত জনতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হতে হবে তখন। তার থেকে এখন বিরোধী রাজনীতিতে থেকে নিজেদের আরও সংগঠিত করাই ঠিক কৌশল বলে মনে করছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও তাঁর এই মুহূর্তের সতীর্থরা।
তবে সরকার হবে কী ভাবে?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এগিয়ে এসেছেন অণ্ণা হজারে ও অরবিন্দের প্রাক্তন সহযোগী কিরণ বেদী। যিনি সম্প্রতি বিজেপি-র সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা রাখছেন। তাঁর প্রস্তাব এই রকম: মানুষ কংগ্রেসকে প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু বিজেপি-কে একটু বেশি ও তার পর আপ-কে মানুষের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। ফলে এই দুই দলের উচিত একসঙ্গে বসে সরকার গড়ার ব্যাপারে আলোচনা করা। দুই দলই ভোটের আগে যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেগুলির ভিত্তিতে একটি অভিন্ন ন্যূনতম কর্মসূচি তৈরি করে সরকার গড়ার চেষ্টা করা। কিরণের মতে, “অতীতেও অণ্ণা হজারের আন্দোলনের সময় বিজেপি এক মঞ্চে এসেছে। এখন আসতে আপত্তি কোথায়? অন্তত আপ-এর মধ্যে শান্তিভূষণের মতো নেতা বিজেপি-র লালকৃষ্ণ আডবাণী, রাজনাথ সিংহ, অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজের মতো নেতাদের সঙ্গে আলোচনা তো শুরু করতেই পারেন।” কিরণ নিজেও এই বিষয়ে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন।
কিন্তু জেটলি এ দিন বলে দিয়েছেন, “দিল্লির যা ফল এসেছে, তার ভিত্তিতে আমরা কাউকে সমর্থন করব না। বরং আম আদমি পার্টি ও কংগ্রেস মিলে সরকার গড়ুক।” কংগ্রেস আবার এই প্রস্তাব পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছে।
অঙ্কের হিসেব বলছে, কিরণের প্রস্তাব মতো বিজেপি-আপ জোট না- হলে কিংবা তিন পক্ষের কেউ কাউকে প্রকাশ্যে না ছুঁলেও কিন্তু সরকার পেতে পারে দিল্লি। এক, দল বদলের নিয়ম মেনে বেশ কিছু বিধায়ক দল পাল্টালে। সে সম্ভাবনা আপাত ভাবে নজরে না এলেও ভোটের রাজনীতিতে সেটা মোটেই অচেনা ঘটনা নয় এ দেশে। দুই, বিজেপি শেষ পর্যন্ত সরকার গড়তে রাজি হলে, আপ বা কংগ্রেস বিধানসভায় অনুপস্থিত থেকে তাদের গরিষ্ঠতা প্রমাণের সুযোগ করে দিতে পারে বিশেষ কোনও লক্ষ্যে বা গোপন রফার ভিত্তিতে। তিন, আম আদমি ও কংগ্রেসের পরোক্ষ জুটিও এ ভাবে সরকার দিতে পারে দিল্লিকে।
বিজেপি বা আপ কেউই যদি সরকার গড়ার আবেদন নিয়ে না যায় অথবা সরকার গড়ার আমন্ত্রণে সাড়া না দেয়, তবে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে পারেন লেফট্যানেন্ট গভর্নর। সে ক্ষেত্রে লোকসভা ভোটের সঙ্গে দিল্লিতে ফের অগ্নিপরীক্ষায় নামতে হবে বিজেপি, আপ ও কংগ্রেসকে। জল কোন দিকে গড়ায়, সে দিকেই সতর্ক নজর এখন তিন দলের।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.