মোদীর মুখোমুখি দাঁড়াতে রাহুলের নামই চাইছে দল
গে তো দল বাঁচুক, তার পরে নিজেদের ঝগড়া!
কংগ্রেসে এখন তেমনই অবস্থা। না হলে যে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এবং দিগ্বিজয় সিংহকে রাহুল গাঁধী মধ্যপ্রদেশের নির্বাচনে এক মঞ্চে আনতে পারেননি, তাঁরা একজোট হয়ে যান! তার পিছনেও অবশ্য রয়েছেন রাহুল। কী ভাবে? দু’জনেই এ দিন কংগ্রেস সহ-সভাপতিকে চেয়েছেন দলের প্রধানমন্ত্রীর পদ প্রার্থী হিসেবে। দিগ্বিজয়ের বক্তব্য, ২০০৯ সালেও সনিয়া গাঁধী প্রধানমন্ত্রীর পদে মনমোহন সিংহের নাম ঘোষণা করেছিলেন। এ বারে তা হলে রাহুলের নাম ঘোষণা করে দল কেন যুদ্ধে যাবে না? আর জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বলছেন, “হয়তো সেই সিদ্ধান্তই শেষমেশ ফারাক গড়ে দেবে।”
কাল চার রাজ্যে ভরাডুবির পরে রাহুলের নেতৃত্ব নিয়েই দলের প্রশ্নে উঠে যাওয়ার কথা। সেখানে সিন্ধিয়া-দিগ্বিজয়রা এমন দাবি করছেন কেন?
দলের একটি অংশ বলছে, রাহুলের নাম ঘোষণা করে দেওয়ার পিছনে সব থেকে বড় কারণ, এই মুহূর্তে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে তুলে ধরার মতো মুখ দরকার। বিধানসভার ভোট প্রচারে পরোক্ষে এই লড়াইটা চলেছে ঠিকই। কিন্তু ফল থেকে দেখা যাচ্ছে, তাতে দলের লাভের বদলে ক্ষতিই হয়েছে। বরং মোদীকে জবাব দেওয়ার জন্য সরাসরি একটা মুখ থাকা জরুরি। সেই মুখ রাহুল ছাড়া আর কে-ই বা হবেন? আর এখন যা অবস্থা তাতে দল যদি ক্ষমতায় না-ই থাকে, তা হলে ঝগড়া করে কী হবে? তাই মধ্যপ্রদেশের দুই যুযুধান নেতা এখন ঝগড়া ছেড়ে দল বাঁচাতে রাহুলের নাম নিয়ে দরবার শুরু করেছেন।
এই দরবারের মুখে পড়তে হয় সনিয়া গাঁধীকেও। ভোটের বিপর্যয়ের পরে আজ জন্মদিনে তাঁর ব্যক্তিগত পরিসরটুকুও ছিল না। সকালে সংসদ ভবনে এসে শীর্ষ সারির কিছু নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বিকেলে চার রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকদের বৈঠকে ডেকে হারের ময়নাতদন্তে বসেন। ভোটে ভরাডুবির জন্য কৈফিয়তও তলব করেন।
সেই বৈঠকেও রাহুলের নাম ঘোষণার প্রসঙ্গটি ওঠে। দলের এক সাধারণ সম্পাদক সনিয়াকে স্পষ্ট জানান, একের পর এক ভোটে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, নেতৃত্বের বিষয়টি নিয়ে অস্বচ্ছতা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। লোকসভা ভোটের আগে তাই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা জরুরি। দলীয় কর্মীরা এখন মনমরা এবং দিশেহারা। এই ঘোষণায় তাঁরা বরং উজ্জীবিত হতে পারেন। কারণ, কোনও চমক বা জোরদার ঘোষণা ছাড়া তাঁদের মনোবল বাড়ানো এখন অসম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করার সম্ভাবনা কাল উস্কে দিয়েছিলেন সনিয়া নিজেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “দলের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী কে হবেন, তা উপযুক্ত সময়েই ঘোষণা হবে। এ নিয়ে দলই সিদ্ধান্ত নেবে।”
সনিয়ার ওই মন্তব্যের পরেই আজ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, প্রিয়া দত্তের মতো তরুণ নেতা-নেত্রীরা প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে রাহুলের নাম ঘোষণা করার দাবি তুলতে শুরু করেছেন। টিম রাহুলের নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এক সদস্য ঘরোয়া আলোচনায় বলেন, মনমোহন সিংহকে সামনে রেখে আর ভোটে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। তাঁর নেতৃত্বের দুর্বলতার ফলই তো ভুগতে হল রাহুলকে। নইলে যে দৃঢ় নেতৃত্ব দেশের যুব সম্প্রদায় চাইছে, তা দেওয়ার ক্ষমতা রাহুলের আছে। প্রশাসনিক অস্বচ্ছতা থেকে শুরু করে দুর্নীতি, সব নিয়েই তিনি আপসহীন। তাঁর মধ্যে আগ্রাসী মনোভাবও আছে।
দলে ও সরকারে এর বিরুদ্ধ মতের অভাব নেই। দলেরই একাধিক বর্ষীয়ান নেতা রাহুলের কাজের পদ্ধতিতে ক্ষুব্ধ। তাঁরা অনেকে জানালেন, নাম ঘোষণা করেও বিশেষ লাভ হবে বলে মনে হয় না। কারণ, ফলাও করে ঘোষণা না হলেও মানুষ তো জানতই যে, রাহুলই দলের প্রধান মুখ। তাঁকে সহ-সভাপতি করার ফলে বোঝাই গিয়েছিল, লোকসভা ভোটে কংগ্রেস জিতলে রাহুলই প্রধানমন্ত্রী হবেন। তাই নাম ঘোষণায় কাজের কাজ কিছু হবে না।
নেতৃত্বের দুর্বলতা নিয়ে এ দিন সরব শরিকরাও। সকলের আগে মুখ খুলেছেন এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার। এ দিন ব্লগে তিনি বলেন, “দুর্বল নেতৃত্বের জন্যই ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেসের। দেশের যুব সমাজ দৃঢ় নেতৃত্ব চাইছে। কংগ্রেস এবং শরিকদের উচিত তা গভীর ভাবে খতিয়ে দেখা।” এই ব্লগ পড়ার পরে অনেকেই বলছেন, পওয়ার নাম না করলেও এখানে তাঁর নিশানা রাহুলই।
তবে সকলেই যে এক কথা বলছেন, তা নয়। ফারুক আবদুল্লা যেমন মনে করেন না, শুধু রাহুলকেই দায়ী করা উচিত। রাহুলের নাম ঘোষণা নিয়ে অন্য সমস্যাও রয়েছে। কংগ্রেস নেতারাই বলছেন, সব থেকে বড় বাধা রাহুল নিজে। এত দিনেও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। মনমোহন তাঁকে মন্ত্রিসভায় আনতে চাইলেও রাজি হননি। এমনকী, একটা সময় তো মনে হচ্ছিল, এ বারে শীলা দীক্ষিত জিতলে রাহুল না তাঁকেই প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হতে বলেন!
এই অবস্থায় শুধু জ্যোতিরাদিত্য বা দিগ্বিজয় নন, জয়রাম রমেশ, জিতেন্দ্র সিংহের মতো কেন্দ্রীয় নেতারাও মনে করছেন, রাহুলের নাম প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে দিয়ে এখনই নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সন্মুখ সমরে নামা উচিত। আর সেই লড়াইটা করতে হবে সমানে সমানে। জনসভায় গিয়ে মাত্র দশ মিনিটের বক্তৃতা দিয়ে চলে এলে হবে না। নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে দীর্ঘ বক্তৃতায় রসিয়ে রসিয়ে কংগ্রেসকে আক্রমণ করছেন, ততটাই পাল্টা আগ্রাসনে মোদীর সব মিথ্যা ফাঁস করে দিয়ে কংগ্রেসের নীতি তুলতে ধরতে হবে, বলছেন তাঁরা।
এ সব দেখাশোনার পরেও বর্ষীয়ান নেতাদের কারও কারও জনান্তিকে সংশয়, এতেও কি দল বাঁচবে!

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.