কলেজের ভিতরে বহিরাগতদের প্রবেশ এবং নেশা করার অভিযোগ আগেই উঠেছিল। আসন্ন ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ঢাক বাজার সঙ্গে সঙ্গেই সেই বহিরাগতদের প্রবেশ বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ তুললেন মণীন্দ্রচন্দ্র কলেজের এক দল পড়ুয়া। আর সেই প্রবেশের প্রতিবাদ করতে গিয়ে একদল বহিরাগতের হাতে তাঁদের নিগৃহীত হতে হয় বলে অভিযোগ। দু’পক্ষেরই দাবি, তাঁরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থক।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন দুপুরে কলেজ চলাকালীন এক দল ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে বহিরাগত এক দল যুবকের ঝামেলা শুরু হয়। প্রথমে কথা কাটাকাটি, পরে তা হাতাহাতিতে পৌঁছয়। ঘটনায় দু’পক্ষেরই কয়েক জন পড়ুয়া আহত হয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এ দিনের ঘটনায় আহত কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান (অনার্স) দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর অভিযোগ, দুপুর আড়াইটে নাগাদ কলেজের বাইরে কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। আচমকা কলেজের প্রাক্তন কয়েক জন ছাত্র বহিরাগত কিছু ছেলেকে এনে তাঁদের উপরে চড়াও হন। অভিযোগ, কলেজের ভিতরে টেনে নিয়ে গিয়ে ওই ছাত্রীর উদ্দেশে উল্টোপাল্টা মন্তব্য ও মারধর করা হয়। এর পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, গত কয়েক মাস ধরেই কলেজের বেশ কয়েক জন প্রাক্তন ছাত্র এবং কলেজের টিএমসিপি-র নেতা রাজীব মিত্রের নেতৃত্বে স্থানীয় ছেলেদের কলেজের ভিতরে অবাধ প্রবেশ শুরু হয়েছে। এমনকী ফাঁকা ক্লাসরুমে বসে এরা নেশা করে বলেও অভিযোগ। আসন্ন নির্বাচনের কারণে বহিরাগতদের যাতায়াত বেড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ কলেজের আক্রান্ত পড়ুয়াদের। গত বৃহস্পতিবারও ওই কলেজে তৃণমূলেরই দুই দলের গোলমালে বেশ কয়েক জন আহত হন বলে অভিযোগ। সে দিনও বহিরাগত বেশ কয়েক জন কলেজের ভিতরে ঢুকে গোলমাল বাধিয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
কলেজে ছাত্র সংগঠন বলতে কেবল টিএমসিপি। তাদেরই দু’দলের মধ্যে বারবার গোলমাল বাধছে, যার জেরে ব্যাহত হচ্ছে পঠনপাঠন। কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে পুলিশ, প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে এগোনোর পরামর্শ দিয়েছে উচ্চশিক্ষা দফতর। সেই লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন গড়ে চার দফায় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দিন ঠিক করেছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও নির্বাচন শুরু হওয়ার ঘণ্টা বাজতে না বাজতেই অশান্ত, গণ্ডগোল মাথা চাড়া দিচ্ছে। যার বেশির ভাগ ঘটনাতেই প্রকট হচ্ছে টিএমসিপি-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এর পিছনে কারণ কী?
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সম্পাদক সুজিত শ্যাম মেনে নিচ্ছেন, কলেজে বহিরাগতদের প্রবেশের মাত্রা বেড়েছে ছাত্র ভোট হওয়ার ঘোষণা হতেই। সুজিতের অভিযোগ ওই ছাত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তমোঘ্ন ঘোষের বিরুদ্ধে। তমোঘ্নই বহিরাগতদের মদত দিচ্ছেন বলে সুজিতের মত।
তবে তমোঘ্ন জানান, দু’পক্ষের মধ্যে একটি ঝামেলা হয়েছে। যদিও এতে বহিরাগতেরা জড়িত নন বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, “আমি দু’পক্ষকেই বলেছি বসে আলোচনা করার জন্য। এখানে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ব্যাপার নেই।”
কিন্তু কলেজে বহিরাগতেরা কী করে প্রবেশ করছেন?
কলেজের অধ্যক্ষ মন্টুরাম সামন্ত বলেন, “বহিরাগতরা কলেজে প্রবেশ করেন বলে আমার জানা নেই। কেউ এ বিষয়ে অভিযোগও জানায়নি। তবে কলেজে বারংবার ঝামেলা হচ্ছে। সেই গোলমাল ঠেকাতেই পুলিশকে চিঠি দিয়েছি।”
|