কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সশস্ত্র পুলিশ রাখার প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে দিয়েছিল গার্ডেনরিচের হরিমোহন কলেজ। বস্তুত সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই এ বার কলকাতার কলেজগুলোর নির্বাচন চলাকালীন বাইরে সশস্ত্র পুলিশ রাখার ব্যবস্থা করছে পুলিশ। সরকারি ভাবে সে কথা স্বীকার না করলেও লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে কলেজের বাইরে লাঠিধারী পুলিশের সঙ্গেই থাকবে সশস্ত্র পুলিশ।
এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র বলেন, “পরিস্থিতি সামাল দিতে সব রকম ব্যবস্থাই নেওয়া হবে। কয়েকটি কলেজকে স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।”
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গার্ডেনরিচের হরিমোহন কলেজে নির্বাচনের সময়ে কলেজের বাইরে প্রচুর বহিরাগত জমা হয়। অভিযোগ ওঠে, কলকাতা পুলিশের থানা থেকে পাঠানো পুলিশের হাতে কোনও আগ্নেয়াস্ত্র না থাকায় দুষ্কৃতীরা আরও সাহসী হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি চরমে উঠলে আর সামলাতে পারেনি পুলিশ। লালবাজারের কর্তারা জানিয়েছেন, এ বার কলেজগুলির বাইরে যেন কোনও ভাবেই বহিরাগতেরা ভিড় করতে না পারে, সে ব্যাপারে বিশেষ নজর রাখা হবে। ছাত্রছাত্রীদের কাছে পরিচয়পত্র থাকাটাও জরুরি।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ৮৬টি কলেজের মধ্যে ৩৩টি কলেজকে ও ৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসকে স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। লালবাজার সূত্রে খবর, ওই ৩৩টি কলেজের মধ্যে রয়েছে গার্ডেনরিচের হরিমোহন কলেজ, সুরেন্দ্রনাথ কলেজ (ইভনিং), মহারাজা শ্রীশচন্দ্র কলেজ, শ্যামাপ্রসাদ কলেজ, আনন্দমোহন কলেজ। এ ছাড়া, রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস-সহ মোট ৪টি ক্যাম্পাস স্পর্শকাতর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
গার্ডেনরিচের হরিমোহন কলেজের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েই কি এ বার কলেজের বাইরে সশস্ত্র পুলিশ রাখার ব্যবস্থা করছে কলকাতা পুলিশ? উত্তরে লালবাজারের পুলিশকর্তারা শুধু জানিয়েছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে এ বার পুলিশের তরফ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আগামী জানুয়ারি মাসের ১৬ তারিখ, ১৮ তারিখ ও ২১ তারিখ কলকাতার কলেজগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন। মোট ৮৬টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলিতে ভোট হবে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন দিন ধরে ওই নির্বাচন চলাকালীন কলকাতা পুলিশের আটটি ডিভিশনকে তিন ভাগে ভাগ করে দেওয়া হবে। প্রথম দিনের নির্বাচনে থাকবে কলকাতা পুলিশের তিনটি ডিভিশন, দ্বিতীয় দিনে তিনটি ডিভিশন ও তৃতীয় দিনে দু’টি ডিভিশনের পুলিশ থাকবে।
এ দিকে, আচার্য-রাজ্যপাল বারবার ঘেরাও-রাজনীতির কড়া সমালোচনা করলেও তাতে যে কার্যত কোনও লাভই হচ্ছে না, সোমবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় বর্ষের একদল ছাত্রছাত্রী ফের তা প্রমাণ করলেন। এ দিন ওই পড়ুয়ারা অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে কম নম্বর দেওয়ার অভিযোগে সকাল থেকে বিভাগীয় প্রধানকে ঘেরাও করেন তাঁরা। ওই পড়ুয়ারা জানান, মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে তাঁদের অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন হয়। এ বার তাতে তাঁদের অত্যন্ত কম নম্বর দেওয়া হয়েছে, যা তাঁদের পাওয়ার কথা নয়। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানান তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের দাবি বিবেচনা করে দেখার আশ্বাস দেওয়ায় বিকেলে ঘেরাও ওঠে। উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন “যে পড়ুয়া লিখিত পরীক্ষায় ৪০-এ ৩০ বা তার বেশি নম্বর পেয়েছে, সে যদি মৌখিকে ১০-এর মধ্যে দুই পায়, তা হলে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। ছাত্রছাত্রীরা সেই প্রশ্নটাই তুলেছে। একে অগ্রাহ্য করা যায় না।” |