দলীয় কর্মীদের ‘বার্তা’
কলেজে হাঙ্গামা বরদাস্ত নয়: মুখ্যমন্ত্রী
রাজ্যের বিভিন্ন কলেজে দলীয় নেতা-কর্মীদের ‘দাদাগিরি’ যে তিনি বরদাস্ত করবেন না, তা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার এক দলীয় কর্মসূচিতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কলেজের মধ্যে ঢুকে হাঙ্গামা করা চলবে না!” শিক্ষাক্ষেত্রে কোনও রকম ‘অরাজকতা’ বা ‘বিশৃঙ্খলা’ যে তাঁর সরকার প্রশ্রয় দেবে না, তা-ও বুঝিয়ে মমতা পরিষ্কার বলেছেন, “কোথাও কোনও সমস্যা হলে তা আমাদের (সরকারকে) জানান। আমাদের সরকার বিষয়টা দেখবে।”
অর্থাৎ, দলের বিভিন্ন নেতা যে ভাবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন, তা আর চলবে না। ঘটনাচক্রে, মমতা যেখানে ওই ‘বার্তা’ দিয়েছেন, সেখানে শ্রোতাদের মধ্যে ছিলেন ভাঙড় কলেজের ঘটনায় অভিযুক্ত দলের প্রাক্তন বিধায়ক আরাবুল ইসলাম এবং দলের ছাত্রনেতা শঙ্কুদেব পণ্ডা। ছিলেন তৃণমূলের প্রথম সারির সমস্ত নেতা। তাঁদের সামনে প্রকাশ্যেই মুখ্যমন্ত্রী ওই ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের দলের কর্মীরা ভদ্র ও সংযত। কিন্তু আরও সংযত আচরণ করতে হবে। এক দু’জনের জন্য দলের বদনাম বরদাস্ত করা হবে না।” ভাঙড় কলেজে আরাবুলের পরেই শঙ্কুও কলেজ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ‘হুমকি’ দিয়েছিলেন। মধ্য কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজে দলেরই ছাত্র সংগঠনের অন্তর্দ্বন্দ্বে গোলমালেও শঙ্কুর নাম জড়িয়েছে। গোলমালের জেরে কলেজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে কলেজ খোলে, পঠন-পাঠন শুরু হয়।
নিজের কুর্সি নিজের হাতে। দলীয় সভায় মুখ্যমন্ত্রী। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
তার পর গোলমাল হয় মধ্য কলকাতার সিটি কলেজে। এর আগে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ, নদিয়ার মাজদিয়া কলেজ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন কলেজের গোলমালে শাসক দলের নেতা-কর্মীদের একাংশের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের লক্ষ করে বলেন, “ছাত্র রাজনীতি যাঁরা করেন, তাঁরা মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করুন। জেলায় জেলায় ছাত্রদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখুন।” দলের যুব সংগঠনের নেতৃত্বকেও জেলায় জেলায় যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দেন মমতা। তৃণমূলের নেতৃত্বের একাংশের কথায়, “রাজ্যের বিভিন্ন কলেজে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতেই মুখ্যমন্ত্রী দলের নেতা-কর্মীদের সংযত হয়ে কাজ করার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন।” শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে প্রশাসনিক বিষয়ে ‘রাজনীতিকরণে’র তিনি যে ঘোর বিরোধী, তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ, “আইন নিজেদের হাতে তুলে নেবেন না।” ইতিমধ্যেই শিক্ষা ক্ষেত্রে ‘রাজনীতিকরণ’ বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছেন মমতা। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও একাধিক বার তা জানিয়েছেন। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণেও সেই উদ্দেশ্য স্পষ্ট।
বস্তুত, এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘণ্টাখানেকের ভাষণের মূল বক্তব্য ছিল দলীয় ‘অনুশাসন’। শুধু শিক্ষা ক্ষেত্রই নয়, রাজ্যের কোথাও সমস্যা মেটাতে দলীয় নেতা-কর্মীরা যেন ‘হাতে আইন তুলে না নেন’, তা-ও পরিষ্কার বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কলেজে তো বটেই, থানা বা বিডিও দফতরে ঢুকে ‘হাঙ্গামা’ যে তাঁর সরকার মেনে নেবে না, তা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “কোথাও কোনও সমস্যা হলে আমাদের (সরকার) জানান। আমরা ব্যবস্থা নেব।” রাজ্যের প্রধান শাসক দল হওয়ায় তাঁদের ‘দায়িত্ব’ তৃণমূল কর্মীদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে মমতা বলেন, “এক দিন টিভিতে ছবি দেখানোর জন্য দর্শনধারী হবেন না। মানুষের জন্য, উন্নয়নের জন্য কাজ করুন। পৃথিবী আপনার কাছে ছুটে আসবে।” মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ, “সরকারের উন্নয়নের কাজ নিয়ে বই প্রকাশিত হবে। ভাল করে পড়বেন। তার পর একই ভাষায়, একই সুরে প্রচার করবেন।” সরকারের বর্ষপূর্তি নিয়ে প্রচারের কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে আজ, শনিবার বেলা ১২টায় শ্যামবাজার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত ছাত্র-যুবদের মিছিল হবে। কাল, রবিবার বিকেলে হাজরা থেকে রাজাবাজার পর্যন্ত মিছিল হবে। ওই দিন ব্লকে ব্লকে শহিদ বেদি করা হবে। আগামী ১ জুলাই রাজ্যের প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের জন্মদিনে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের রাজ্য সম্মেলন হবে বলে ঘোষণা করেন মমতা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.