‘কংগ্রেস বন্ধু দল’
আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনের ইঙ্গিত মমতার
রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে নয়, প্রায় অপ্রত্যাশিত ভাবেই দেশে লোকসভা ভোট এগিয়ে আসার সম্ভাবনা উস্কে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা ইউপিএ সরকারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক তৃণমূলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট এগোনোর সম্ভাবনার পাশাপাশি শুক্রবার দলীয় এক সভায় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সেই ভোটের জন্য ‘প্রস্তুত’ থাকতেও বলেছেন মমতা।
এ দিন মহারাষ্ট্র নিবাসে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি ‘নির্বাচিত’ হলেন সাংসদ সুব্রত বক্সী। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সুব্রতবাবু জেতার পর মমতা ঘোষণা করেন, আগামী ছ’বছরের জন্য সুব্রতবাবু দলের সভাপতি নির্বাচিত হলেন। সেই উপলক্ষেই ভাষণ দিতে গিয়ে দলনেত্রী বলেন, “একটি দল লোকসভার ভোট এগিয়ে আনার চেষ্টা করছে। আমি তো শুনেছি, ভোট ২০১৩ সালে এগিয়ে আনা হতে পারে।” কোন দল সেই চেষ্টা করছে, মমতা তা খোলসা করেননি। তিনি বলেন, “একটি দল লোকসভা ভোট এগিয়ে আনার জন্য মিটিং করেছে বলে শুনেছি।” কথাটি বলেই মঞ্চে উপবিষ্ট রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের উদ্দেশে মমতা বলেন, “কী মুকুল, তোমার কাছেও তো খবর আছে, একটা পার্টি ডিটেল (বিশদে) আলোচনা করেছে?” তবে যখনই ভোট হোক, তৃণমূল যে ‘প্রস্তুত’, তা জানিয়ে মমতা কর্মীদের বলেন, “নির্বাচন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যে কোনও দিন ভোটের জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।”
মহারাষ্ট্র নিবাসে এ দিন দলের সমস্ত সারির নেতা-মন্ত্রী, সাংসদ-বিধায়করা প্রায় সকলেই হাজির ছিলেন। দলের নেতাদের বক্তব্য, সেই কারণেই মমতা ওই সভায় আগামী দিনে দলের ‘দিশা’ নিয়ে মন্তব্য করেছেন। এবং তা করেছেন ‘সচেতন’ ভাবেই। মমতার এ দিনের বক্তৃতার পরবর্তী অংশ থেকে তৃণমূল নেতাদের বক্তব্য, ভোট এগিয়ে আনার প্রসঙ্গে নির্দিষ্ট করে কোনও দলের নাম না-বললেও মমতা ইউপিএ-তে তাঁদের জোট শরিক কংগ্রেসকেই বোঝাতে চেয়েছেন। কারণ, দেশে সাধারণ নির্বাচন এগিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তা নেবে কেন্দ্রীয় সরকার। যার নেতৃত্বে রয়েছে কংগ্রেস। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের কাছে কংগ্রেসকেই ওই সুপারিশ করতে হবে।
একইসঙ্গে মমতা এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, রাজ্য স্তরে যা-ই হোক না কেন, তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে জোট রাখতেই আগ্রহী। কেন্দ্রীয় স্তরে শরিক হিসেবে কংগ্রেস সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ রক্ষায় তিনি যে ‘সতর্ক’, তা মমতার বক্তব্যে পরিষ্কার। বস্তুত, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে রাজ্যের প্রতি ‘বঞ্চনা’ নিয়ে তাঁর অভিযোগের প্রসঙ্গে মমতা দায়ী করেছেন সংবাদমাধ্যমকে। স্বাস্থ্য ও উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্পে বকেয়া টাকা আদায়ে এবং বাম সরকারের ‘ঋণের বোঝা’ হাল্কা করতে কেন্দ্র ‘সহযোগিতা’ করছে না বলে একাধিক বার অভিযোগ করেছেন মমতা। প্রচ্ছন্ন ‘হুঁশিয়ারি’ও দিয়েছেন। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে তাঁর সেই বক্তব্য প্রকাশিত হওয়ার পরেই মমতা সুর ‘নরম’ করেছেন। মহাকরণে দাঁড়িয়ে বলেছেন, তাঁর মন্তব্য ‘বিকৃত’ করা হয়েছে। তিনি কোনও ‘হুঁশিয়ারি’ দেননি। ‘আবেদন’ করেছিলেন মাত্র। এ দিনও সেই প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন মমতা। কেন্দ্রের সঙ্গে তাঁর ‘চাপানউতোর’ প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যম তাঁর বক্তব্যের ‘অপব্যাখ্যা’ করছে বলেই মুখ্যমন্ত্রীর অভিমত। মমতার কথায়, “আমার কথাকে আবার ধমকাচ্ছে-চমকাচ্ছে বলে লেখা ঠিক নয়!” প্রসঙ্গত, মমতার নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের এক বছর পূর্তি হচ্ছে আগামী ২০ মে। আর সিপিএমকে পর্যুদস্ত করে মমতার জয়ের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামিকাল, রবিবার। তার প্রাক্কালে তাঁর সরকারের ‘সাফল্য’ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি ধৈর্য ধরতে রাজি। তাঁর কথায়, “কেন্দ্র যদি মনে করে, তা হলে আমাদের কিছু দেবে না। সহযোগিতা করবে না। কিন্তু আমরা আরও ধৈর্য ধরব।” তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন মমতা। বলেছেন, “ওরা আমাদের বন্ধু দল।আমরা একসঙ্গে থাকতে চাই। আমরা প্রত্যাশা করি ওরা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে।’’ তবে রাজ্যে আসন্ন ছ’টি পুরসভার ভোট ও পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে একটি কথাও বলেননি মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় স্তরে মমতা কংগ্রেসকে ‘বন্ধু দল’ বলে মন্তব্য করলেও রাজ্যের ছবিটা একেবারেই আলাদা। পুরভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস লাগাতার অভিযোগ তুলছে। তৃণমূল তাদের প্রার্থীদের ভয় দেখিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করাচ্ছে বলেও কংগ্রেসের অভিযোগ। এমনকী, তাদের ওই অভিযোগ নিয়ে তারা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে। এ দিনই কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল কমিশনে গিয়ে ওই মর্মে লিখিত অভিযোগ করেছে। মমতা অবশ্য সে বিষয়ে কোনও মন্তব্যে যাননি। রাজ্যে কংগ্রেসের একাংশের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বরাবরই ‘শীতল’। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্তরে তিনি যে কংগ্রেসকে ছাড়তে রাজি নন, তা মমতার এ দিনের বক্তব্যে স্পষ্ট।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.