মমতা-সংসারে ‘ব্যতিক্রম’
মোবাইলই নেই, আমন্ত্রণ কোথায়, বললেন রবীন্দ্র
মুখ্যমন্ত্রী নিজে ‘মোবাইল’। সময়ে-অসময়ে যে কোনও জায়গায় দৌড়ে যেতে পারেন। সেই সঙ্গে প্রযুক্তি-বান্ধব। এসএমএসে স্বচ্ছন্দ। দল এবং প্রশাসনে মোবাইল-বার্তার মাধ্যমেই সমন্বয় রাখতে সদা সচেষ্ট। এসএমএসে খবর পান। এসএমএসে নির্দেশ দেন।
মহাকরণে বছর পার করার দিকে এগোলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মোবাইল-সংসারে দু-এক জন দলছুট এখনও রয়ে গিয়েছেন! কলকাতায় শুক্রবার তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের দিন যেমন এক ‘ব্যতিক্রমে’র সন্ধান মিলল! কৃষিমন্ত্রী তথা সিঙ্গুরের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।
দলের রাজ্য সভাপতি নির্বাচন উপলক্ষে তৃণমূলের রাজ্য স্তরের সব নেতা এবং মন্ত্রীই এ দিন গিয়েছিলেন মহারাষ্ট্র
রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য
নিবাস হলে। ব্যতিক্রম কৃষিমন্ত্রী। মহারাষ্ট্র নিবাসে যখন সভা চলছে, সেই সময়ে কৃষিমন্ত্রী মহাকরণে। ওখানে যাননি কেন? রবীন্দ্রনাথবাবুর জবাব, “আমন্ত্রণ পেলে যাই। এ বার আমন্ত্রণ পাইনি। তাই যাইনি।”
তৃণমূলের অনুষ্ঠানে কি তা হলে বাদ পড়ে গেলেন কৃষিমন্ত্রী? তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা রেলমন্ত্রী মুকুল রায় জানাচ্ছেন, না। “আমরা সবাইকেই এসএমএস পাঠিয়েছি। রবীন্দ্রনাথবাবু হয়তো কোনও কারণে ‘মিস’ করেছেন। ওঁকে আমন্ত্রণ না-জানানোর কোনও প্রশ্নই ওঠে না!” বলছেন মুকুলবাবু।
তবে? আমন্ত্রণ তো ছিল? এ বার কৃষিমন্ত্রীর জবাব, “আমি মোবাইল ব্যবহার করি না। তাই আমন্ত্রণ পাইনি। অন্য বছর আমাকে আহ্বান করা হয়। এ বছরও হয়তো করা হয়েছে। কিন্তু সে আহ্বান আমার কাছে এসে পৌঁছয়নি।”
অর্থাৎ আমন্ত্রণের ‘মেসেজ’ গিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু ঠিকানায় ‘ডেলিভারি’ হয়নি! কারণ, কৃষিমন্ত্রীর ব্যাখ্যা, “স্কুলশিক্ষা দফতরের মন্ত্রী থাকার সময়ে আমার কাছে একটি মোবাইল ফোন ছিল। কিন্তু ওই দফতর ছেড়ে আসার সময়ে আমি মোবাইলও ছেড়ে এসেছি। আর কৃষি দফতরের কোনও মোবাইল ফোন আমার কাছে নেই।”
ঘটনাচক্রই হোক বা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা, কৃষিমন্ত্রী যখন তাঁর মোবাইল-হীন জীবনযাপনের কথা বলছেন, তাঁর মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী মোবাইল-নির্ভরতার কথা শোনাচ্ছেন দলীয় মঞ্চে! মহারাষ্ট্র নিবাসে এ দিনই মমতা দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, “কোথাও কিছু হলে বা সমস্যায় পড়লে নিজেরা আইন তুলে নেবেন না। আপনারা এসএমএস করে দলীয় নেতৃত্বকে জানাবেন। দরকারে মুকুল রায়, মদন মিত্র, ববি (ফিরহাদ) হাকিম বা পূর্ণেন্দু বসুকে এসএমএস করবেন। ওঁরা আমাকে ফরওয়ার্ড করে দেবেন।” ঠিক যে ভাবে প্রশাসনিক কর্তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দিনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ‘আপডেট’ নিয়ে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী।
বস্তুত, মহাকরণের কর্ণধারের কাজের ধরনের নিরিখে এ-ও এক ‘পরিবর্তন’। মমতার পূর্বসূরি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ব্যক্তিগত মোবাইল ছিল না। এখনও মোবাইল ব্যবহার করেন না। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও একই পাঠশালার ছাত্র! ব্যক্তিগত ভাবে আলাপী মানুষ, কথা বলতে ভালবাসেন। দলে সবাইকে নিয়ে চলতে চান। সংগঠনের প্রয়োজনে যখন-তখন যে কোনও জেলায় যে কোনও নেতার সঙ্গে যোগাযোগ তাঁর কাজের মধ্যেই পড়ে। কিন্তু মোবাইলে নেই!
অথচ বুদ্ধবাবু-বিমানবাবুর দলেরই নিরুপম সেন, মহম্মদ সেলিম, অশোক ভট্টাচার্যেরা এসএমএসে দড়। বিনয় কোঙার, মদন ঘোষের মতো কৃষক ফ্রন্টের নেতাদেরও মোবাইল আছে। পলিটব্যুরোর সদস্য, বিরোধী দলনতা সূর্যকান্ত মিশ্র তো নিয়মিতই এসএমএস-যোগে খবরাখবর নেন। ‘প্রয়োজন ভিত্তি’তে তাঁর এসএমএস আদানপ্রদানের তালিকায় বর্তমান রাজ্য মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য, এমনকী, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও আছেন!
রবীন্দ্রনাথবাবুরা তা হলে ব্যতিক্রমই? ‘সংখ্যালঘু’? রাজ্যের এক সরকারি আধিকারিকের সহাস্য টিপ্পনী, “কৃষিজমির দাবি ছেড়ে সিঙ্গুরই তো আধুনিক শিল্পের দিকে যেতে পারেনি! তার জনপ্রতিনিধি আর কী দোষ করলেন?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.