ন্যূনতম ৫ টাকা করার ভাবনা
ঘুরপথে বাসের ভাড়া বৃদ্ধির ভাবনা রাজ্যের
ট্রাম-ট্যাক্সির পথে এ বার বাসও। পরিস্থিতির চাহিদা মেটাতে ‘ঘুরপথে’ বাসের ভাড়াও বাড়ানোর কথা গুরুত্ব দিয়ে ভাবছে রাজ্য সরকার।
পরিষেবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাস্তব থেকে মুখ ফিরিয়ে দাম না-বাড়ানোর নীতি আঁকড়ে ইতিমধ্যে রাজ্যকে বিস্তর মাসুল গুনতে হয়েছে। তার পরে ঠেকে শিখেছে সরকার। লোকসানে নাভিশ্বাস ওঠা সরকারি বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাকে অক্সিজেন জোগাতে স্থগিত মাসুলবৃদ্ধি কার্যকর করতে হয়েছে, বাড়াতে হয়েছে জ্বালানি-সারচার্জ। মাদার ডেয়ারির মতো সরকারি দুধ সংস্থা ‘মা শক্তি’ নামে দামি ব্র্যান্ড বাজারে ছেড়ে সস্তা দুধের উৎপাদন কমাচ্ছে। এই কৌশলে তারাও ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছে। প্রশ্ন উঠছিল, ধুঁকতে থাকা পরিবহণের জন্য দাওয়াইটি প্রয়োগ করা হচ্ছে না কেন?
শেষমেশ ওই পথেও পা ফেলেছে সরকার। ট্রামের লোকসান কমাতে উঠে যাচ্ছে দ্বিতীয় শ্রেণি, ফলে দু’টো কামরাতেই ন্যূনতম ভাড়া সাড়ে তিন থেকে বেড়ে হচ্ছে চার টাকা। ট্যাক্সির নৈশভাড়া বেড়েছে।
নিজস্ব চিত্র
আর এখন বাসের ন্যূনতম ভাড়া পাঁচ টাকা করার প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের দফতর। বস্তুত বাসের সঙ্কট কাটাতে গত এক বছরে পরিবহণ-কর্তারা কম বৈঠক করেননি। কিন্তু ভাড়াবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত না-হওয়ায় সুরাহা তো দূর, বরং সমস্যা বেড়েছে। পরের পর সরকারি-বেসরকারি বাস বসে গিয়ে আমজনতার ভোগান্তির পাশাপাশি ভাড়া না-বাড়ানোর ‘জনপ্রিয়’ প্রবণতা জেএনএনইউআরএম-প্রকল্পে কেনা আধুনিক বাসগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়েও বড় প্রশ্নচিহ্ন তুলে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবহণের একাধিক কর্তা।
কী ভাবে?
২০০৯-এ হাইকোর্ট ১৫ বছরের পুরনো সব বাস বাতিল করার পরে রাজ্য সরকার নতুন বাস কিনতে ৪৪ কোটি টাকার ব্যাঙ্ক-ঋণ নিয়েছিল, পরিবহণ পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের নামে। এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের ক্যামাক স্ট্রিট শাখা থেকে ৩৩ কোটি, বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের সরকারপুল শাখা থেকে ১১ কোটি। ওই অর্থে জেএনএনইউআরএমের ৫১২টি বাস কিনে বেসরকারি মালিকদের ন্যূনতম টাকায় বিক্রি করেছিল রাজ্য। শর্ত ছিল, বাসপিছু মাসে ২২ হাজার টাকা কিস্তি মেটাতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ মালিক শর্ত না-মানায় ওই ঋণের ফাঁস রাজ্য সরকারের গলাতেই ক্রমশ চেপে বসছে। কারণ, সব ব্যাঙ্কের কাছে ঋণের জামিনদার (গ্যারান্টার) সরকারই। মালিকেরা টাকা দিচ্ছেন না কেন?
মালিকদের বক্তব্য, এক দিকে জ্বালানি-যন্ত্রাংশের দাম বেড়েছে, অন্য দিকে রাস্তা খারাপ হয়েছে। অথচ ভাড়া না-বাড়ায় বাস চালিয়ে লাভ হচ্ছে না। অনেকেই বাস বসিয়ে দিয়েছেন, তাই কিস্তি মেটানো যাচ্ছে না। টাকা না-দিলে মালিকদের থেকে বাস বাজেয়াপ্ত করে সরকারি ভাবে চালানোর হুমকিও দিয়েছিলেন পরিবহণমন্ত্রী। কিন্তু তাতে সরকারেরই দায় বাড়বে বুঝে পরিকল্পনাটি পরিত্যক্ত হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাঁকে পরিস্থিতি সামলানোর ‘বিশেষ দায়িত্ব’ দিয়েছেন, পরিবহণের সেই বিশেষ সচিব জয়ন্ত সাহাকে দফতরের কর্তারা স্পষ্ট জানিয়েছেন, ভাড়া না-বাড়িয়ে শুধু আলোচনায় কোনও ফল হবে না।
পরিবহণ দফতর তেমনটাই ভাবতে শুরু করেছে। “কিন্তু সোজা পথে ভাড়া বাড়ানো চলবে না। ঘুরপথে কী ভাবে সম্ভব, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।” জানিয়েছেন এক পরিবহণ-কর্তা। এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে উঠে এসেছে বাসের ন্যূনতম যাত্রী-ভাড়া ৫ টাকা করার ভাবনা। উল্লেখ্য, বাসের ন্যূনতম ভাড়া কোনও রুটে ৪ টাকা, কোথাও ৫ টাকা। চারের স্টেজ তুলে দিয়ে সব রুটেই তা পাঁচ টাকা করার প্রস্তাব এসেছে দফতরের মধ্য থেকে। যেমন ট্রামের ক্ষেত্রে হয়েছে, ‘সস্তার’ দ্বিতীয় শ্রেণি বিলোপ করে। অফিসারদের একাংশের মতে, এতে বাস চালিয়ে আয়বৃদ্ধির সঙ্গে খুচরো-সমস্যারও খানিকটা সুরাহা হতে পারে। উল্লেখ্য, ইদানীং খুচরোর জন্য ‘বাট্টা’ দিতেই রোজ বেশ কিছু বাড়তি খরচ হচ্ছে বলে অনেক বাস-মালিক অভিযোগ তুলেছেন। মন্ত্রীর নিজের কী মত?
পরিবহণমন্ত্রী মদনবাবু বলছেন, “আমরা সব কিছু খতিয়ে দেখছি।” বাস-মালিকদের সংগঠন ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস’-এর যুগ্ম সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য সাফ বক্তব্য, পরিবর্ত আয়ের ব্যবস্থা না-করলে তাঁরা কিস্তির টাকা দিতে পারবেন না। ‘বিকল্প’ আয়ের উৎস হিসেবে তাঁরা ভাড়াবৃদ্ধি ও বাসে বিজ্ঞাপন লাগানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। যদিও পরিবহণ পরিকাঠামো উন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ধীমান মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, “জেএনএনইউআরএমের বাসে বিজ্ঞাপন দিতে একাধিক বার টেন্ডার ডেকেও সাড়া মেলেনি।”
অর্থাৎ, ভাড়া বাড়ানো ছাড়া রাস্তা খোলা নেই। সেই ‘বাস্তবসম্মত’ পথে রাজ্য কবে পা বাড়ায়, সেটাই দেখার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.