স্কুলশিক্ষা দফতর পেরেছে।
মুখ্যমন্ত্রীর দফতর কিন্তু পারল না!
নিয়ম ভাঙার দায়ে স্কুলশিক্ষা অধিকর্তার দফতরের ৫১ জন কর্মীর অর্ধদিবস ছুটি কাটা গিয়েছিল কয়েক দিন আগে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, অফিস ছুটির আগেই তাঁরা দফতর ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। সম্প্রতি সেই দফতরে আচমকা পরিদর্শনে গিয়ে ব্যাপারটা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর নজরে পড়ে। তাঁর নির্দেশেই ‘ফাঁকিবাজ’ কর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় স্কুলশিক্ষা দফতর।
কিন্তু শুক্রবারেই এর উল্টো ছবি দেখা গেল খাস মহাকরণে। এবং খোদ মুখ্যমন্ত্রীরই অধীন একটি দফতরে। সরকারি কর্মীদের কর্মসংস্কৃতি নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হওয়ায় নড়েচড়ে বসে ওই দফতর। এ দিন দেরিতে আসা কর্মীরা তার ফলও হাতেনাতে পেয়েও যান। সরকারের এক মুখপাত্র জানান, এ দিন ১১টায় অফিস ঢুকে ওই দফতরের ৩৯ জন কর্মী দেখেন, হাজিরা খাতায় লাল কালির দাগ পড়ে গিয়েছে। তাঁদের ‘অনুপস্থিত’ করে দেওয়া হয়েছে। ‘ফাঁকিবাজি’র জন্য পত্রপাঠ এই ব্যবস্থা নেওয়ার মধ্যে কর্মসংস্কৃতি নিয়ে সরকারের নড়েচড়ে বসার প্রমাণ ছিল। কিন্তু দিনের শেষে সেই তৎপরতার ছবিটা ফের পাল্টে গেল। দেরিতে আসায় ‘অনুপস্থিত’ দেখানোর বিষয়টি নিয়ে দিনভর চাপান-উতোর চলে। শেষ পর্যন্ত ওই অনুপস্থিত কর্মীদের ‘ছাড়’ দেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে বহাল তবিয়তে কাজে যোগ দেন তাঁরা।
তার পরেই প্রশ্ন ওঠে, নির্দিষ্ট সময়ের পরে অফিসে আসা সত্ত্বেও কাজে যোগ দেওয়ার সুযোগ মেলে কী ভাবে? হাজিরা খাতায় ‘অনুপস্থিত’ বলে চিহ্নিত করার পরেও সই করতে দেওয়ার ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, আইনের রক্ষকেরা এমন ‘বেআইনি’ কাজ করলেন কী ভাবে? একই সরকারের একটি দফতর যখন শৃঙ্খলার স্বার্থে ব্যবস্থা নিচ্ছে, অন্য দফতর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রাথমিক কাজে নেমেও পিছিয়ে আসে কেন?
এটা যে ‘নিয়মবিরুদ্ধ’ কাজ, সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তারা অবশ্য সেটা মেনে নিয়েছেন। তবে প্রশাসনের একটি অংশের মতে, ১১টায় অফিসে এলে যে হাজিরা খাতায় ‘অনুপস্থিত’ করে দেওয়া হবে, অনেকেই তা বুঝতে পারেননি। কারণ, মহাকরণের বেশির ভাগ দফতরের রেওয়াজ হল, নির্দিষ্ট সময়ের পেরিয়ে যাওয়ার পরে অন্তত দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত কোনও লাল কালির দাগ ছাড়াই হাজিরা খাতায় সই করতে পারেন কর্মীরা। সেটাই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ দিন আচমকাই তার ব্যতিক্রম হওয়ায় বেকায়দায় পড়ে যান ওই কর্মীরা।
দেরি করে হাজির হলে ‘অনুপস্থিত’ দেখানোর নিয়মটা ঠিক কী? নিয়ম অনুযায়ী কোনও কর্মী ১০টা ৪৫ মিনিটের পরে হাজির হলে তিনি সে-দিনের মতো অনুপস্থিত হয়ে যাবেন। অবশ্য সেই কর্মী অর্ধদিবস ছুটি নিতে পারেন।
এ দিনের ঘটনায় যাঁদের প্রথমে অনুপস্থিত করা হয়েছিল, তাঁরা ১১টাতেও অফিসে হাজির হননি। তা হলে তাঁদের ছাড় দেওয়া হল কেন?
প্রথমে ‘অনুপস্থিত’ দেখিয়েও পরে ওই কর্মীদের এই শর্তে ‘ছাড়’ দেওয়া হয় যে, আর কোনও দিন এমন ঘটনা ঘটলে নিয়ম মেনেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মহাকরণ সূত্রের খবর, দেরিতে আসার কারণ হিসেবে ওই কর্মীরা রেল ও সড়কপথে অবরোধের কথা জানান।
এ দিনের এই ঘটনা বাদ দিলে মহাকরণ-সহ বিভিন্ন সরকারি অফিসে কর্মীদের আসা-যাওয়ার ছবিটা অবশ্য আগের মতোই রয়েছে। |