রাজি দ্বিপাক্ষিক আলোচনাতেও
বনধে তালা দিয়ে উন্নয়নে গুরুঙ্গরা
পাতত আর বনধ নয়, জানিয়ে দিল মোর্চা। দিল্লিকে না জড়িয়ে সরাসরি রাজ্যের সঙ্গে আলোচনার বিষয়টিও মেনে নিল তারা। শুক্রবার দার্জিলিঙের রিচমন্ড হিলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে দু’টি বিষয়েই কথা দিয়ে এলেন রোশন গিরি-হরকাবাহাদুর ছেত্রীরা। জানিয়ে এলেন বিমল গুরুঙ্গের বার্তাও: পাহাড় অচল করা আন্দোলন থেকে সরে আসার ফলে কর্মী-সমর্থকদের কাছে কিছু শুনতে হলেও রাজি তিনি। বৈঠকের পরে মোর্চা নেতাদের পাশে দাঁড়িয়ে মমতার হাসিই বলে দিচ্ছিল, তাঁর এই পাহাড় সফর কতটা সফল।
পাহাড় আসার পরে দলীয় সমাবেশ থেকেই গুরুঙ্গদের বার্তা দিয়েছিলেন মমতা। বলেছিলেন, “আমার সঙ্গে ঝগড়া করুন, কিন্তু পাহাড়ের উন্নয়ন থামিয়ে দেবেন না।” শুধু পাহাড় নয়, সামগ্রিক ভাবেই বনধ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি রয়েছে। মোর্চার লাগাতার ধর্মঘটকে হাইকোর্টও বেআইনি বলে আখ্যা দিয়েছে। সেই রায় এড়াতে মোর্চা বনধের নাম বদল করে। এমনকী, মাসখানেক আগে লেপচাদের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মমতা যখন পাহাড়ে এসেছিলেন, তখনও বনধ করে তাতে বাধা দিতে চেয়েছিলেন গুরুঙ্গরা। আর সেই মোর্চাই এ দিন একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গেল। তাদের প্রতিনিধিদলের সদস্য হরকাবাহাদুর সকলের সামনেই বলেন, “বনধ আজ থেকে বনধ।” পাশে দাঁড়ানো মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে বলেন, “খুব ভাল জবাব।” এই ঘটনাকে রাজ্যের বড় জয় বলেই মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা।
জয়ের হাসি

পাহাড় অচল করা আন্দোলনের মেঘ কেটে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তাই খুশি।
রোশন গিরি, হরকাবাহাদুরদের সঙ্গে দার্জিলিঙে। শুক্রবার।
আন্দোলনের সময় মোর্চা নেতারা বারবার দিল্লি গিয়ে ধর্না দিয়েছেন। কংগ্রেস ও বিজেপির একাধিক শীর্ষ নেতার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন। সেটা পছন্দ ছিল না মমতার। তিনি চাইছিলেন, পাহাড় নিয়ে কোনও সমস্যা হলে আলোচনার জন্য গুরুঙ্গরা সরাসরি আসুন তাঁদের কাছে। তাই এ দিন বৈঠকে মোর্চা নেতাদের থেকে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার কথা শুনেও খুশি তিনি। রোশন, হরকাবাহাদুর, জিটিএ-র অস্থায়ী প্রাধন প্রাক্তন কর্নেল আলে-সহ মোর্চার সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে হাসি মুখে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “খুব ভাল আলোচনা হয়েছে। সব কিছু নিয়েই কথা হয়েছে। আমি বলেছি, আমার সঙ্গে যত খুশি ঝগড়া করুন। কিন্তু, বনধ করবেন না। ওঁরাও সাড়া দিয়েছেন। আমি খুশি।” তিনি জানান, উৎসবের মরসুম শেষ হলেই মোর্চার সঙ্গে ফের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবে রাজ্য। আরও বলেন, “এর পরে পাহাড়ের দাবি আদায়ের জন্য আমাদের (তৃণমূলের) সব সাংসদ একযোগে আপনাদের নিয়ে দিল্লি যাবেন। আরও বেশি বরাদ্দ আদায় করা হবে।”
এই স্বস্তির রেশ মিলেছে মুখ্যমন্ত্রীর ফেসবুক পেজ-এও। বিকেলে শিলিগুড়িতে নেমে বাংলা, ইংরেজির পাশাপাশি নেপালি ভাষাতেও তিনি লিখেছেন‘পাহাড়ে শান্তি, আমার শান্তি।...পাহাড়ের মানুষ খুশি, আমিও খুশি। পাহাড়ে হাসি অটুট থাকুক।’
এ দিন রিচমন্ড হিলে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ানো মোর্চা নেতাদের মুখেও ছিল হাসি। হরকাবাহাদুর বলেন, “আমাদের সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ মুখ্যমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন। আমাদের মধ্যে সামান্য কিছু সময়ের জন্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। তা আলোচনায় মিটে গিয়েছে।” তিনি স্পষ্ট করে দেন, “এখন থেকে পাহাড়ে আর বনধ হবে না। রাজ্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমরা চলব। আমাদের কাছে ত্রিপাক্ষিক নয়, দ্বিপাক্ষিক আলোচনাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি জানান, সরকারের সঙ্গে কোনও ভুল বোঝাবুঝি হলে প্রাথমিক ভাবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে বসেই তা মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হবে। রাজ্য ও মোর্চার এই দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পথ খুলে যাওয়াকে স্বাগত জানিয়েছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুও।
সরকারি সূত্রের খবর, এই বৈঠকের পরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দেকে টেলিফোনে বৈঠকের সার সংক্ষেপ জানান মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে দার্জিলিঙের অবস্থানগত গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে পাহাড় থেকে চটজলদি সিআরপি না তোলার অনুরোধও করেন। আপাতত মোর্চা নেতারাও পাহাড় থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী তোলার ব্যাপারে চাপাচাপি করছেন না।
পাহাড়ের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার দার্জিলিঙের রিচমন্ড হিলে।
অন্য দিকে, মোর্চার অন্দরের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড় সফর শুরুর পর থেকে রোজই গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক করেছেন গুরুঙ্গ। সেখানে প্রশাসনিক চাপ (লাগাতার মোর্চা নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়) ও তৃণমূলের রাজনৈতিক সম্মেলনে উপচে পড়া ভিড় নিয়ে বিশদে আলোচনা হয়। সেখানে জিটিএ সদস্যদের সিংহভাগ আন্দোলন থেকে সরে উন্নয়নে মনোযোগী হওয়ার মত দেন। তার পরেই সুর নরম করে পাহাড় অচলের রাজনীতি থেকে সরে এসে ‘সমঝোতার’ রাস্তায় হাঁটার বার্তা পাঠানো হয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
কিন্তু, ৪৪ দিন পাহাড় অচল করে রাখার পরে রাতারাতি আন্দোলন তুলে সমালোচনার মুখে পড়তে হবে না? মোর্চা সূত্রের খবর, সেই প্রশ্নে বৃহস্পতিবার রাতে দলীয় নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পরে গুরুঙ্গ জানিয়ে দেন, ঝড় সামাল দিতে তিনিই যাবতীয় অপ্রিয় সমালোচনার মুখোমুখি হবেন। এ দিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে সে কথা জানিয়ে দেন রোশন গিরিরা। এর পরে কার্শিয়ং-এর বিধায়ক রোহিত শর্মা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুযোগ করেন, তাঁর এলাকায় মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের কাজ থমকে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে জানান, বনধ-এর ভয়ে আগ্রহী সংস্থারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। একই কারণে পাহাড়ের রাস্তা, পর্যটন কেন্দ্র, রোপওয়ে-সহ নানা প্রকল্পের কাজ আটকে রয়েছে বলেও জানান তিনি। সরকারি সূত্রের খবর, বৈঠকে উপস্থিত মোর্চার প্রতিনিধিরাও বনধ হবে না বলে আশ্বাস দেন। জিটিএ-র স্থায়ী ‘চিফ এগজিকিউটিভ’ নিয়োগেরও নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। রোশন গিরি তাঁর কথায় সায় দেন।
হাসি মুখে বৈঠক মিটলেও তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, পাহাড়ে সংগঠনকে মজবুত করতে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়কে দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর মোর্চা? আগামী কাল, ২৭ অক্টোবর দার্জিলিঙের চকবাজারে পাল্টা সভা করবে গুরুঙ্গ। হাসি মুখে পাহাড় এখন চকবাজারের সেই মঞ্চের দিকেই তাকিয়ে।

ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.