পচন রোগে উজার হতে বসেছে ফালাকাটা ব্লকের বিঘার পর বিঘা শীতের সবজি খেত। একই রোগ দেখা দিয়েছে ময়নাগুড়ি ব্লকেও। রোগ প্রতিরোধের উপায় খুঁজে না পেয়ে দিশেহারা চাষিরা খেতে গরু ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। ঘটনায় উদ্বিগ্ন হলেও কৃষি কর্তারা দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো কোনও উপায় খুঁজে না পাওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। |
জলপাইগুড়ি জেলা উদ্যান পালন আধিকারিক সুভাষ গিরি বলেন, “একই জমিতে প্রতি বছর একই জাতের সবজি চাষের কারণে ওই রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যে সমস্ত সবজি খেত রোগে আক্রান্ত হয়েছে সেখানে আমাদের কিছু করার নেই। বাকি সবজি রক্ষার জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে পারি।” ফালাকাটা ব্লক কৃষি আধিকারিক আবু বক্কর সিদ্দিকি জানান, একে বৃষ্টি। তার পর তাপমাত্রার হেরফের কারণে সবজি খেতে ছত্রাক ও ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণ বাড়ছে। পচন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এলাকার তৃণমূল বিধায়ক অনিল অধিকারি বলেছেন, “পরিস্থিতি সামাল দিতে কৃষি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে।”
শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, নেপাল, অসম, বিহার-সহ বিভিন্ন বাজারে শীতকালীন আগাম সবজির বড় অংশ ফালাকাটা থেকে সরবরাহ হয়। এবারও চাষিরা প্রস্তুত ছিলেন। ব্লকের দুই হাজার হেক্টর জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, লঙ্কা, টমাটো, বিনস, লাউ, বরবটির মতো সবজির চাষ হয়েছে। কিন্তু পুজোর সময় কখনও বৃষ্টি কখনও কড়া রোদের কারণে ছত্রাক ও ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণে পচন রোগ মহামারির আকার নিতে চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। ওষুধে গাছ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। |
ফালাকাটা ব্লকে রোগের প্রকোপ বেশি জয়চাঁদপুর, গোকুলনগর, ডালিমপুর, তারাসুন্দর, শিলডাঙা ও ময়রাডাঙা গ্রামে। তবে কত জমিতে ক্ষতি হয়েছা তাপ এখনও তথ্য নেই কৃষি দফতরের হাতে। ব্লক কৃষি আধিকারিক বলেন, “প্রতিদিন চাষির কাছ থেকে খবর পাচ্ছি। কর্মীরা এলাকা ঘুরে খোঁজ নিচ্ছেন। এখনই ক্ষতির পরিমাণ বলা সম্ভব নয়। ব্লকে বেশি বেগুণ খেত নষ্ট হয়েছে।” ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলির চাষি অতুল বর্মন, নিরোদ তরফদার, চাণক্য নায়েক, তনয় মোদকের মত অনেকে সবজি খেতে গরু ছেড়ে দিচ্ছেন। তনয়বাবুর কথায়, “৩০ হাজার টাকা খরচ করে দুই বিঘা জমিতে বেগুন বুনেছিলাম। ফুলফল আসতে গাছ ঝিমিয়ে মরে যাচ্ছে। ওষুধ দিয়ে কাজ হচ্ছে না। তাই খেতে গরু ছেড়ে দিয়েছি।” একই দশা শিলডাঙা, ময়রাডাঙা, তালুকেরটারি, গলাকাটা গ্রামের ফুলকপি ও বাঁধাকপি চাষিদের। ময়নাগুড়ি ব্লকের খাগড়াবাড়ি-১ এবং দোমহনি-১ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ‘ডাউনিং মিল বিও’ রোগ ছড়িয়ে ফুলকপি খেত শুকিয়ে যাচ্ছে বলে চাষিরা জানাচ্ছেন। ঢলে পরা রোগে নষ্ট হচ্ছে বেগুন খেত। জলপাইগুড়ি মহকুমা কৃষি আধিকারিক হরিশ্চন্দ্র রায় জানিয়েছেন, ‘টেট্রাসাইক্লিন’ ছড়িয়ে সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে চাষিকে। |
উদ্যানপালন ও কৃষি কর্তাদের নিদান |
• একই জমিতে একই জাতের সবজি চাষ বন্ধ করা।
• মাটিতে নাইট্রোজেনের ঘাটতি মেটাতে ডাল শস্য চাষ।
• সবজি চাষের আগে মাটি, বীজ ও বীজতলা শোধন।
• উন্নতমানের বীজ ব্যবহার।
• সতর্কতা হিসাবে টেট্রাসাইক্লিন জাতীয় ওষুধের ব্যবহার। |
|
ছবি তুলেছেন রাজকুমার মোদক। |