পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত, লিগ শীর্ষে থাকা আত্মবিশ্বাসী একটা টিম।
অন্য দিকে পরপর দু’টো ম্যাচ হেরে চোটে জর্জরিত মানসিক ভাবে নুইয়ে পড়া একটা দল।
আজ শনিবার কল্যাণী স্টেডিয়ামে আই লিগের ধুন্ধুমার ম্যাচ খেলতে নামার আগে দুই শিবিরের আবহটা এরকমই।
অ্যাশলি ওয়েস্টউডের টগবগে টিমের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আগে মার্কোস ফালোপার গলায় সে জন্যই জেদ আছে, আত্মবিশ্বাস নেই। “বেঙ্গালুরু টিমটা খুব ভাল খেলছে। এখনও অপরাজিত। আমাদের কাছে কঠিন ম্যাচ কাল। তবে কিছু করতেই হবে। আমরাও তৈরি হচ্ছি। কুয়েত এফ সি-র কাছে শেষ ম্যাচে হারলেও আমরা কিন্তু খারাপ খেলেনি,” এ এফ সি কাপের সেমিফাইনালের হাইভোল্টেজ ম্যাচের পর ফের অগ্নিপরীক্ষা দিতে নামার আগের দিন বলে দেন লাল-হলুদের ব্রাজিলীয় কোচ। যুবভারতী থেকে ক্লাব তাঁবুতে ফিরে বুঝিয়ে দেন, আন্ডারডগ হিসাবে নামছেন তাঁরা।
বলবেনই বা না কেন? তাঁর প্রথম একাদশের পাঁচ ফুটবলারকেই তো পাচ্ছেন না তিনি। তাঁর মধ্যে ডিফেন্সেরই যে তিন জনকার্ডের জন্য উগা ওপারা নেই, চোটের জন্য অর্ণব মণ্ডলও অনিশ্চিত। গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো এ দিন আবার অনুশীলনেই চোট পেয়ে বসে গেলেন লেফট ব্যাক সৌমিক দে! |
তা হলে এ বারের আই লিগে পাঁচ ম্যাচে পাঁচ গোল করা শন রুনিকে রুখবেন কে? কে রুখবেন চতুর জন জনসনকে? “দু’জনকেই জোনাল মার্কিংয়ে রাখব,” বলার সময় ফালোপার গলায় যেন জোর নেই। থাকবেই বা কী করে? অনুশীলনে যে দু’জনকে স্টপারে খেলালেন সেই গুরবিন্দার সিংহ এবং রাজু গায়কোয়াড়ের মধ্যে তো এখনও সমঝোতাই গড়ে ওঠেনি। কেমন যেন নড়বড়ে জুটি। এদের কারও মধ্যে বিশাল চেহারার উগার শক্তিও নেই। যা দিয়ে রুখবেন বিপক্ষের জোড়া বিদেশি স্ট্রাইকারকে। রাত পর্যন্ত যা খবর তাতে সৌমিকের জায়গায় খেলবেন রবার্ট। ডান দিকে হয়তো অভিষেক দাশ।
এরকম একটা আপাতদৃষ্টিতে দুর্বল লাল-হলুদ ডিফেন্সকে পেয়েও কিন্তু উড়ছেন না বেঙ্গালুরুর কোচ অ্যাশলি। কারণ তিনি ব্রিটিশ। উচ্ছ্বাস দেখানো যাদের মজ্জায় নেই। “ইস্টবেঙ্গলকে আমি খুব একটা জানতাম না। কিন্তু এ এফ সি কাপে ওদের দেখার পর মনে হয়েছে খুব ভাল দল,” সঙ্গে অনুশীলন করে ফিরে ঘর্মাক্ত অবস্থায় রুনি-সুনীলদের কোচের সংযোজন, “আমরা প্রথম অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে এসেছি। কাউকে হাল্কা ভাবে নেওয়ার প্রশ্নই নেই। লিগ টেবিলে যেখানে আছি সেখানে থাকাই লক্ষ্য আমাদের।”
ঘরের মাঠে খেলে পাঁচ ম্যাচে চার জয়। একটি ড্র। অপরাজিত থাকার এই গর্বের মুকুট কি ফেডারেশনের এই ফ্রাঞ্চাইজি ক্লাব কল্যাণীতে অক্ষত রেখে ফিরতে পারবে? |
“আরে হয়তো দেখবেন এখানেই ওরা আটকে গেছে। মাথা থেকে এ এফ সি চলে গিয়েছে। আমাদের সামনে তো এখন শুধুই আই লিগ। ওটাকেই তো ফোকাসে রাখতে হবে, অনুশীলনের পর বলছিলেন এডে চিডি। হঠাৎ-ই বিতর্কে জড়িয়ে পড়া মোগার মুখে এ দিন একেবারে কুলুপ। কিন্তু উগা-সুয়োকার অনুপস্থিতিতে ফালোপার তাস তো চিডি-মোগা জুটিই। “চিডি-মোগা এবং আমি খুব ভাল বন্ধু। কোনও সমস্যা নেই। কাল আমরা সবাই মিলে ম্যাচটা জিততে চাই।” মাঠে নামার চব্বিশ ঘণ্টা আগে এসব বলেই টিমের ফুটোফাটা আটকানোর চেষ্টা করেন ফালোপা। হরমনজিৎ খাবরাকে এনে তিনি যেমন গতি আনতে চাইছেন মাঝমাঠে। মেহতাব হোসেন আর ডিকা আর লোবোর সঙ্গে খাবরা খেললে দখল নেওয়া যাবে মাঝমাঠের, অন্তত এই ভাবনা নিয়েই অনুশীলন করালেন ফালোপা।
ইস্টবেঙ্গল যখন দুই বিদেশি নিয়ে যুদ্ধে নামছে তখন বেঙ্গালুরু টিমে চার বিদেশিই শান দিচ্ছেন বুটে! তাদের প্রভাব এতটাই যে, রিজার্ভ বেঞ্চে চলে গিয়েছেন ভারতের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীই। “সুনীল এখন ষাট ভাগ ফিট। একশো শতাংশ ফিট হলেই ও নামবে,” বলে দিয়েছেন বেঙ্গালুরুর ব্রিটিশ কোচ। তাঁর আস্থা বরং রুনি-জনসন জুটিতেই।
তা হলে কি এই ম্যাচে অ্যাডভান্টেজ বেঙ্গালুরু-ই? বল গড়াতে শুরু করলে কিন্তু অনেক অঙ্কই ওলট-পালট হয়ে যায়। মেলে না অনেক হিসাব। দেখার, অনেক নেই-এর মধ্যে দাঁড়িয়ে ফালোপা ব্রিগেডের জার্সিতে মশালের আগুন জ্বলে কি না?
|