একা রামে রক্ষে নেই, তায় সুগ্রীব দোসর! এই প্রবাদের সঙ্গে অনায়াসে মেলানো যায় মোহনবাগানের হালফিলের অবস্থাকে!
সাউথ সিটি-র ফ্ল্যাটে যখন চোট সারাতে ব্যস্ত ওডাফা ওকোলি, তখন পুণেতে মুম্বই এফসি ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে সবুজ-মেরুন শিবিরে চরম অস্বস্তি এরিক মুরান্ডাকে নিয়ে। শুক্রবার সকালে প্র্যাক্টিসের সময় আবিষ্কার হয়, তাঁর পেশিতে চোট। যা পরিস্থিতি, তাতে শনিবারের ম্যাচে ফের দুই বিদেশি নিয়েই নামতে হবে করিম বেঞ্চারিফাকে।
ঘরের মাঠে সালগাওকর ম্যাচ জেতার পরে প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে পুণে রওনা দিয়েছিল করিম-ব্রিগেড। কিন্তু মুরান্ডার চোটের খবরে ফের দুশ্চিন্তার মেঘ ঢুকে পড়ল বাগানে। করিম অবশ্য পুণে থেকে ফোনে বললেন, “মুরান্ডাকে খেলানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। শনিবার সকালে ও কী অবস্থায় থাকে, তা দেখেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।” তবে ক্লাব সূত্রের খবর, কোনও ভাবেই মুরান্ডাকে মুম্বই এফসি ম্যাচে পাওয়া যাবে না। চোট না কি এতটাই গুরুতর! কিন্তু প্রশ্ন হল, এত চোট লাগার কারণ কী? |
কারণ একটাই। প্রাক-মরসুম শিবিরে না থাকা। পরিসংখ্যান ঘাঁটলেই দেখা যাবে, করিম যে সব ফুটবলারকে নিয়ে মরসুমের শুরুতে ট্রেনিং করিয়েছেন, তাঁদের চোট-আঘাতের কোনও সমস্যা নেই। দু’একটা ব্যতিক্রম ছাড়া, চুটিয়ে খেলছেন বাকি ফুটবলাররা। আর ওডাফা-মুরান্ডা? প্রথম জন প্রাক-মরসুমে আসেননি। পরের জন আই লিগ শুরুর পাঁচ দিন আগেই শহরে ঢুকেছেন। এই পরিস্থিতিতে কোচ কী করবেন? তবুও করিম বলছিলেন, “পর পর তিনটে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে হবে। মুম্বই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট তুলে নিতে পারলে, পরের ম্যাচগুলোতে দারুণ সুবিধা হবে। মানসিক ভাবেও ফুটবলাররা আরও বেশি চাঙ্গা হয়ে উঠবে।”
চোটের পাশাপাশি পুণের আবহাওয়া নিয়েও বেশ চিন্তায় বাগান। শুক্রবার সকালে প্র্যাক্টিস করে টিম হোটেলে ঢোকার পরে থেকেই অবিরাম বৃষ্টি হয়ে চলেছে। রাতের দিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বৃষ্টি থামার কোনও লক্ষণ নেই। এমনিতে পুণের বালেওয়াড়ি স্টেডিয়ামের অবস্থা ভাল। কিন্তু যে ভাবে বৃষ্টি নেমেছে তাতে মাঠের অবস্থা শেষপর্যন্ত কতটা ঠিক থাকবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশায় বাগান শিবির। করিম অবশ্য আবহাওয়া নয়, খালিদ জামিলের দলকেই বেশি গুরুত্ব দিতে চাইছেন। মোহন-কোচ বলছিলেন, “মুম্বইয়ের মাঝমাঠ খুব ভাল। যেমন ফিটনেস, তেমন গতি। আমি প্রথম এগারোতে এমন ফুটবলার রাখতে চাই, যারা সেই গতির মোকাবেলা করতে পারে।”
চার বছর আগে এই দিনেই (২৫ অক্টোবর) ইতিহাস রচনা করেছিলেন করিম। কলকাতা লিগে ইস্টবেঙ্গলকে ৫-৩ গোলে হারিয়ে চৌত্রিশ বছর পর পাঁচ গোলের শাপমুক্তি ঘটেছিল। ট্রফির খরার দুঃখ ভুলতে ফেসবুক, টুইটারে এখনও সেই আবেগ উপচে পড়ছে সবুজ-মেরুন সমর্থকদের। শুক্রবার সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে করিম বলছিলেন, “কোচিং জীবনে বহু ট্রফি জিতেছি। কিন্তু আমার জীবনে ওই দিনটা সব সাফল্যের উর্ধ্বে। আমার টিম হয়তো এখন খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তবু সে দিনের কথা মনে পড়লে আজও উদ্বুদ্ধ হই।” কিন্তু করিম যখন আনন্দের স্মৃতি নিয়ে মশগুল তখন তাঁর ক্লাবের জন্য খারাপ খবর এসেছে দিল্লির ফেডারেশন দফতর থেকে। যুবভারতীতে সালগাওকর ম্যাচ জেতার পর বোমা-পটকা ফাটিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন মোহন-সমর্থকরা। তার জেরে কুড়ি হাজার টাকা জরিমানা হল গঙ্গাপারের ক্লাবের।
পুণেতে কি সে দিনের ‘৫-৩ গোলের ম্যাচ’-এর কথা বলে করিম তাঁর এখনকার টিমকে তাতাতে পারবেন? উত্তর জানার জন্য আজ শনিবার রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে! |