|
|
|
|
বিপর্যস্ত অন্ধ্র-ওড়িশায় মৃত ২১, ব্যাহত রেল চলাচল
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দু’সপ্তাহ-ও পেরোল না। তার আগেই ফের দুর্যোগের মুখে পড়ল অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশা। শুক্রবার রাত পর্যন্ত দুই রাজ্যে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার হয়ে অন্তত ২১ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। ঘরছাড়া লক্ষাধিক মানুষ। অতি-বৃষ্টির জেরে দেখা দিয়েছে বন্যাও। যার জেরে হাওড়া-চেন্নাই রুটে ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
পুজোর সময় ওড়িশা-অন্ধ্র উপকূলে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় পিলিন। বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল দুই রাজ্যের উপকূলীয় জেলাগুলি। তার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের তামিলনাড়ু উপকূলে হাজির হয়েছিল একটি শক্তিশালী নিম্নচাপ। সেটি স্থলভূমিতে না ঢুকে অন্ধ্র উপকূলের দিকে সরে আসায় ফের দুর্যোগ দেখা দিয়েছে ওই দুই রাজ্যে। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, আজ, শনিবার ওড়িশায় অতি-ভারী বৃষ্টি হতে পারে। |
বিদায়েও খেয়ালি বর্ষা। বন্যার পরে খটখটে নদী ইলাহাবাদে। |
ওড়িশার বিশেষ ত্রাণ কমিশনার প্রদীপ্তকুমার মহাপাত্র জানিয়েছেন, ১২টি জেলাতে অতি-ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে গঞ্জামের পরিস্থিতিই সব থেকে খারাপ। জলে ডুবে ও দেওয়াল চাপা পড়ে এ দিন রাত পর্যন্ত গঞ্জাম ও জগৎসিংহপুরে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। পিলিনের হানাতেও এই উপকূলীয় জেলাতেই সব থেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। বিশেষ ত্রাণ কমিশনার জানান, রাজ্যের ৮৫ হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ৩টি হেলিকপ্টার উদ্ধারকাজ করছে। নেমে পড়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা।
একই অবস্থা অন্ধ্রেরও। সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, টানা চার দিনের বৃষ্টিতে উপকূলীয় অন্ধ্রের একাধিক জেলা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১১ জনের। আড়াই লক্ষ হেক্টর জমিতে চাষের ক্ষতি হয়েছে। শ্রীকাকুলাম ও গুন্টুরে ৫৬ হাজার বাসিন্দাকে সরানো হয়েছে।
বন্যায় ব্যাহত হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব উপকূলীয় রেলের পরিষেবা। এক রেলকর্তা জানান, হাওড়ামুখী বেঙ্গালুরু দুরন্ত ও গুয়াহাটি-যশোবন্তপুর এক্সপ্রেস চিলিকা স্টেশনে আটকে পড়েছে। যাত্রীদের বাসে চাপিয়ে ভুবনেশ্বরের দিকে আনা হচ্ছে। সেখান থেকে তাঁদের হাওড়ামুখী বিশেষ ট্রেনে চাপিয়ে দেওয়া হবে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখপাত্র সৌমিত্র মজুমদার বলেন, “ভুবনেশ্বর থেকে বিশাখাপত্তনম পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় লাইন জলের তলায় রয়েছে। তবে পুরী পর্যন্ত ট্রেন চলছে।” পূর্ব উপকূলীয় রেল জানিয়েছে, ট্রেন সংক্রান্ত খবরের জন্য (০৬৭৪২) ৩০১৫২৫, ৩০৩৭২১, ০৮৪৫৫৮৮৫৯৩৬ নম্বরে ফোন
করা যাবে। |
নিম্নচাপে জল থইথই হায়দরাবাদ। |
রেল সূত্রের খবর, বৃষ্টির কারণে কয়েক দিন ধরেই হাওড়া-চেন্নাই রুটের ট্রেন নাগপুর দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু ওই রুটেও অতিরিক্ত ট্রেন হয়ে যাওয়ায় মুম্বই, মধ্যপ্রদেশগামী ট্রেন চলাচলেও বিঘ্ন হচ্ছে। সৌমিত্রবাবু জানান, আজ শনিবার, হাওড়া থেকে যশোবন্তপুর দুরন্ত এক্সপ্রেস, হাওড়া-সেকেন্দরাবাদ ফলকনামা এক্সপ্রেস, সাঁতরাগাছি-চেন্নাই এক্সপ্রেস ও সাঁতরাগাছি-কারুভেলি এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়েছে।
প্রতিবেশী রাজ্যের বিপদে প্রমাদ গুণছে বাংলাও। এর আগে পিলিনের প্রভাবেই অতিবৃষ্টি এবং বন্যার কবলে পড়ে দক্ষিণবঙ্গের একাংশ। এ বারেও তেমন হবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন সেচ-কর্তারা।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, শুক্রবার নিম্নচাপটি তেলঙ্গনা ও সংলগ্ন অন্ধ্রের উপরে রয়েছে। আজ, শনিবারেও নিম্নচাপটি ওই এলাকায় থাকবে। রবিবার নাগাদ সেটি উত্তর-পূর্ব দিকে সরে আসতে পারে। তবে বাংলার উপরে নিম্নচাপের বিশেষ আঁচ পড়বে না বলেই মনে করছেন আবহবিদেরা। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, নিম্নচাপ থেকে একটি অক্ষরেখা গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে বিস্তৃত রয়েছে। তার ফলেই বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে এ রাজ্যে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ এ দিন বলেন, “শনিবার দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি হবে। উপকূলীয় ও পশ্চিমের জেলাগুলিতে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।’’ সেচ দফতর সূত্রের খবর, বন্যার পরে পশ্চিমের নদীগুলির জল বিপদসীমার নীচে নামলেও তা ফের বাড়তে পারে। বাড়তে পারে জলাধারের জলস্তরও। সে ক্ষেত্রে ফের জল ছাড়তে হবে জলাধার থেকে। তাতেই ফের প্লাবিত হতে পারে পশ্চিমের জেলাগুলি। |
ছবি: এএফপি। |
পুরনো খবর: নিম্নচাপ-ঘূর্ণাবর্তের জোড়া হানায় দুর্যোগের ভ্রূকুটি |
|
|
|
|
|