|
|
|
|
মুসলিম প্রসঙ্গে চাপের মুখেও অনড় রাহুল
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
ইনদওরের সভায় গত কালই এক নয়া সলতেয় আগুন ধরিয়েছিলেন রাহুল গাঁধী। আজ তা থেকেই বিতর্কের বিস্ফোরণ দেখল জাতীয় রাজনীতি। লোকসভা ভোটের আগে যে সংখ্যালঘু ভোটকে পাখির চোখ করে চলছে কংগ্রেস, আজ তাঁদেরই একাংশ ঘোর আপত্তি জানালেন রাহুলের মন্তব্য নিয়ে। অভিযোগ, মুসলিমদের দেশপ্রেম নিয়ে রাহুল যে প্রশ্ন তুলছেন, তা দুর্ভাগ্যজনক। আবার সংখ্যালঘুদের জাতীয়তাবাদের পক্ষে সওয়াল করে ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছে বিজেপি-ও।
ইনদওরে কাল এক সভায় রাহুল বলেন, তাঁর কাছে গোয়েন্দা সূত্রে খবর রয়েছে মুজফ্ফরনগরে গোষ্ঠী সংঘর্ষে ঘরছাড়া মুসলিম যুবকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। বিশেষ করে যে সব মুসলিম যুবক ওই সংঘর্ষে স্বজন হারিয়েছেন। তাঁর কথায়, “মুজফ্ফরনগরে যে ঘৃণার আগুন লাগিয়েছে সাম্প্রদায়িক শক্তি, তারই সুযোগ নিতে চাইছে বিদেশি শত্রুরা।” তবে রাহুল এ-ও জানান, ওই মুসলিম যুবকদের সঙ্গে কথা বলে তিনি তাঁদের ক্ষোভ প্রশমণের করার চেষ্টা করছেন।
রাহুলের এই মন্তব্য নিয়ে আজ সকাল থেকেই স্রোতের মতো আসতে শুরু করে প্রতিক্রিয়া। উত্তরপ্রদেশের মুসলিম ধর্মগুরু মৌলানা সইফ আব্বাস নকভি বলেন, “রাহুল এ কথা বলে ঠিক করেননি। সামগ্রিক ভাবে মুসলিম যুবকদের দেশভক্তি নিয়েই তিনি প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন।” সর্বভারতীয় মুসলিম পারসোনাল ল’বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মৌলানা কাবলে সাদিকের বক্তব্য, “এই মন্তব্যের জন্য রাহুলের শর্তহীন ক্ষমা চাওয়া উচিত।”
সংখ্যালঘুদের এই প্রতিক্রিয়ায় আজ স্বাভাবিক ভাবেই উৎসাহী হয়ে ওঠে বিজেপি। রাহুলকে ‘শাহজাদা’ বলে কটাক্ষ করে ঝাঁসিতে মোদী প্রশ্ন তোলেন, গোয়েন্দা-কর্তারা কেন ওই তথ্য রাহুলকে জানাবেন। তিনি তো মন্ত্রী নন, সাংসদমাত্র। গোটা সম্প্রদায়কে বদনাম করার জন্য রাহুলকে ক্ষমা চাইতে হবে। প্রসঙ্গত, বিজেপি-র বিরুদ্ধে ঘৃণার রাজনীতি করার অভিযোগ তোলার জন্য বিজেপি আজ রাহুলের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে নালিশও ঠুকেছে।
যাবতীয় সমালোচনার মধ্যেও কংগ্রেস কিন্তু আজ রাহুলের মন্তব্যকেই দৃঢ় ভাবে সমর্থনম করেছে। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক দিগ্বিজয় সিংহ থেকে শুরু শাকিল আহমেদ বলেন, বিজেপি-র ঘৃণার রাজনীতি নিয়ে রাহুল উত্তরপ্রদেশের সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু উভয়কেই সতর্ক করতে চেয়েছেন। কারণ গোষ্ঠী-সংঘর্ষে উভয় সম্প্রদায়ের মানুষেরই ক্ষতি হচ্ছে। অন্য দিকে, কংগ্রেস মুখপাত্র রনজিৎ সিংহ সুরজওয়ালার কথায়, গত কয়েক মাস ধরে উত্তরপ্রদেশে ঘৃণার রাজনীতি ছড়াচ্ছে বিজেপি। এ জন্য নরেন্দ্র মোদী তাঁর অন্যতম আস্থাভাজন অমিত শাহকে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, সাম্প্রদায়িক বিভেদের বাতাবরণ তৈরি করতে ভুয়ো সিডি ছড়ানো হয়েছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ অযোধ্যা যাত্রার ডাক দিয়েছে। তার পরেই মুজফ্ফরনগরে সংঘর্ষ বাঁধানো হয়েছে। কংগ্রেস মুখপাত্রের কথায় “বিজেপি-র এই জঘন্য রাজনীতি সম্পর্কে মানুষকে সজাগ করাটা দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে রাহুলের কর্তব্য। সেটাই করেছেন তিনি। তা ছাড়া গোয়েন্দা-কর্তারা রাজনীতিক ও সাংসদদের সঙ্গে আকছার কথা বলেন। ফলে গোয়েন্দা কর্তার সঙ্গে রাহুল বৈঠকে অনিয়ম কিছু হয়নি।”
কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, সুচিন্তিত ভাবেই এই বোমা ফাটিয়েছেন রাহুল। এ ব্যাপারে গত ক’দিন ধরেই সলতে পাকাচ্ছেন তিনি। শুধু সংখ্যালঘু নয় সংখ্যাগুরু উদার হিন্দুদেরও বার্তা দেওয়া ছিল রাহুলের লক্ষ্য। কেননা এটা ঠিকই যে, সংখ্যালঘু ভোট যাতে কংগ্রেসের অনুকূলে আসে সে ব্যাপারে রাহুলের চেষ্টা রয়েছে। কিন্তু তাঁর কাছে এ-ও পরিষ্কার যে, মেরুকরণের রাজনীতিতে কংগ্রেসের বিশেষ লাভ নেই। তাই বহুত্ববাদের কথা বলছেন তিনি। এটাই তুলে ধরছেন যে ঘৃণার রাজনীতি থেকেই সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসবাদের জন্ম হয়। বরং সাম্প্রদায়িক সদ্ভাবেই আধুনিক ভারতের উন্নয়ন সম্ভব। আর এ কথা বলে উদার হিন্দুদের কাছে টানার চেষ্টাও করছেন রাহুল। মোদ্দা বিষয় হল, আসন্ন ভোটে সাম্প্রদায়িকতা বনাম ধর্মনিরপেক্ষতার বিতর্ককেই বড় করে তুলতে চাইছেন রাহুল। তাই এ ব্যাপারে পিছিয়ে আসার প্রশ্নই নেই। |
|
|
|
|
|